বুলবুল আহমেদ সোহেল ঃ
আজ ২৯ নভেম্বর বক্তাবলী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলীতে নিরস্ত্র ১৩৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। একই সঙ্গে গানপাউডার ছিটিয়ে পুড়িয়ে দেয় ২২টি গ্রাম। বক্তাবলী পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। স্বজন হারানোর ব্যথা ও কষ্ট নিয়েও শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রতি বছরই পালিত হয় এই দিবসটি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জ বাসীর দাবি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি সহ গণ কবরগুলোকে বদ্ধভূমি হিসেবে চিহ্নিত করে তা রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি উদ্যোগ নেয়া হোক। সরকারি সূযোগ সুবিধার আওতায় নেয়া হউক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে ।
বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল বক্তাবলী। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জায়গাটি নিরাপদ হিসেবে বেছে নেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। এখানে ঘাঁটি বানিয়ে চলে প্রশিক্ষণের কাজ। এখান থেকেই বিভিন্ন স্থানে চালানো হয় অভিযান। গ্রামবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। রাজাকাররা এ খবর পৌঁছে দেয় হানাদার বাহিনীর কাছে। ১৯৭১ সালের এই দিন ভোরে হানাদার বাহিনী ঘিরে ফেলে বক্তাবলী। মুক্তিযোদ্ধারাও গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। চার ঘণ্টা চলে সম্মুখযুদ্ধ। একপর্যায়ে হানাদার বাহিনী বক্তাবলী পরগনার ২২টি গ্রামের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। নদীর পারে সারী বেঁধে বেঁধে দাড় করিয়ে ব্রাস ফায়ারসহ বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
দিনটি স্মরণ করে আজও আঁতকে ওঠে প্রতক্ষদর্শী পরিবার গুলো। তাদের আক্ষেপ যুদ্ধ পরবর্তি বঙ্গবন্ধু মুজিব সরকারের সময় তারা আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। এর পর আর কোন সরকারই তাদের খবর রাখেননি।
গণহত্যার শিকার শহীদদের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি ১৩৯ জনকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে দুঃস্থদের আর্থিক সহযোগীতা দেয়া হউক। তাদের পরিবারের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা কোঠার সুযোগ সুবিধা দেয়া হউক।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে ২৯ নভেম্বর দিনটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য বেদনাবিধুর । স্বাধীনতাযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একসঙ্গে এত মানুষ হত্যার ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই। পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র ১৭ দিন আগে ঘটে বক্তাবলীর হৃদয় বিদারক এ হত্যাযজ্ঞ। নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবি শহীদদের পরিবার গুলোকে যথাযোগ্য মর্যাদাসহ সরকারি যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত বক্তাবলী বাসী।
সংসদ সদস্য একেএম শামীম বলেছেন, পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ১৩৯ জন গণহত্যার শিকার হয়েছে। শহীদ মুক্তিযুদ্ধা স্বীকৃতি ও তাদের পরিবারদের যথাযথ মর্যাদা দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উপস্থাপন করা হবে।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা এখানকার গণকবর গুলোকে বদ্ধ ভূমী স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করবে। যাতে ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে নবম প্রজন্ম।
এদিকে দিনটি স্মরণে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে আজ। সকালে বক্তাবলী কানাই নগর বিদ্যালয় সংলগ্ন শহীদদের স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, স্মরণ সভা ও দোয়ামাহফিলের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হবে।