ব্যাসেল নীতিমালার আলোকে সরকারি-বেসরকারি খাতের মোট ১০টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি সাত ব্যাংকেরই মূলধন ঘাটতির পরিমান দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।
এদিকে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মূলধন রেখেছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বরের শেষে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক খাতের গড় মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংক ২৯ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে ছিল। যা ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের গড় হার ছিল ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ১২ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা চার হাজার ২৫৬ কোটি, অগ্রণী তিন হাজার ৮৭৭ কোটি, সোনালী তিন হাজার ৬৩৯ কোটি, রূপালী তিন হাজার ৭৮ কোটি, বেসিক ২ হাজার ৫৩০ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে এক হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার ঘাটতিতে রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঘাটতি- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ৬৬১ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স এক হাজার ৮৮ কোটি ও ন্যাশনাল ব্যাংক ৪৫৭ কোটি টাকা।
এদিকে ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি বাড়লে তার প্রভাব পড়ে মূলধনে। বিভিন্ন সুবিধার কারণে মোট খেলাপি ঋণ সেভাবে বাড়েনি। তবে ২০২১ সাল শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকায়। মোট ঋণের যা ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন অনাদায়ী বা মন্দমানে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৯১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দমানে ছিল ৭৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা।
এদিকে ঝুঁকি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। সাধারণভাবে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি নূ্ন্যতম সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হয়। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি ব্যাংককে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ হারে মূলধন রাখার নির্দেশনা রয়েছে।