হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
সপ্তাহজুড়ে বাজারে নতুন পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল
সোমবার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। খুচরা বাজারে দাম
বেড়ে আবারও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ। গত বছর এ সময় নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি
হয়েছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। ভরা মৌসুমে এ পণ্যের দাম কেন বেড়েছে- এ প্রশ্ন
ভোক্তাদের। সরকার প্রায় এক মাস আগে বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করলেও পেঁয়াজের
বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। উল্টো অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গতকাল সোমবার রাজধানীর
বিভিন্ন বাজারে দাম বাড়ার এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারের বেশিরভাগ দোকানেই নতুন
পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিদরে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)
তথ্যানুযায়ী, রবিবার রাজধানীতে প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানান, রবিবার নতুন
পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, ঠিক এক দিন আগে এটার দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০
টাকা। গত মাসে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছিল। তাই ওই সময়ও নতুন পেঁয়াজ বিক্রি
হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল্লাহ আল মামুনের
সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ৪-৫ দিন আগে পেঁয়াজ কিনলাম ৮০ টাকায়, আজ (সোমবার) কিনতে এসে
দেখি দাম হয়ে গেছে ১০০ টাকা। ২-১ দিনের মধ্যে হঠাৎ কীভাবে দাম ২০ টাকা বেড়ে যায়?
দেশে বাজার মনিটরিং বলে কী কিছু আছে? যারা অসাধু ব্যবসায়ী তারা হঠাৎ সবকিছুর দাম
বাড়িয়ে দিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে ফেলে। গুলশানসংলগ্ন লেকপাড় বাজারে
দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন সিরাজুল ইসলাম।
হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ
সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি মূলত পাবনা থেকে পেঁয়াজ কিনে
এনে এখানে খুচরা বিক্রি করি। এছাড়া মাঝে মাঝে ঢাকার কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন
পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনি। পাবনায় এখন পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০
থেকে ৮৫ টাকায়। পরিবহনসহ সব খরচ মিলিয়ে ঢাকার খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ সোমবার
বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি দরে। পাবনায় প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার
৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। মূলত রবিবার থেকেই এমন দাম বেড়েছে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, মূলত নতুন বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলা শেষের দিকে। প্রায় দেড় মাস
আগে এ পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে, এখন কৃষকের সেই পেঁয়াজ শেষের দিকে। ফলে সরবরাহ
কমতে শুরু করেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে
গেছে। এখন কৃষকের মূল পেঁয়াজ যেটা বছরজুড়ে পাওয়া যায়, সেই পেঁয়াজ উঠতে কিছুদিন সময়
লাগবে। সে পর্যন্ত এমন বাড়তি দাম থাকতে পারে।
মালিবাগ বাজারের ক্রেতা গার্মেন্টকর্মী রেজাউল
করিম বলেন, ‘এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা হওয়ায় আধা কেজি পেঁয়াজ
কিনেছি। বাজারে সব জিনিসের দাম অতিরিক্ত বেশি, এর মধ্যে আবারও বাড়ল পেঁয়াজের দাম।
সবকিছুর দাম এভাবে বাড়তে থাকলে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের সংসার পরিচালনা করাই
কঠিন হয়ে পড়বে।’ বাড্ডা এলাকার মুদিদোকানি রহমান মিয়া
বলেন, ‘আজ দোকানে বিক্রির জন্য কয়েক পাল্লা পেঁয়াজ কিনে এনেছি। সেখানে প্রতি
পাল্লা (৫ কেজিতে এক পাল্লা) দাম পড়েছে ৪৭০ টাকা, মানে প্রতি কেজি পড়েছে ৯৪ টাকা। এরপর
আছে পরিবহন খরচ।
সব মিলিয়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি
পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১০০ টাকায়। মাত্র তিন দিন আগে পাইকারি ৭০ টাকায় কিনে, বিক্রি করেছি
৮০ টাকা কেজিদরে।’ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র প্রতিদিনের
সংবাদকে জানায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। তাই বাজারে এ পেঁয়াজের
সরবরাহ কমে গেছে। এর ফলেই দাম বাড়ছে। গত শনিবার পাইকারদের থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে
পেঁয়াজ কিনে ৯০ টাকায় বিক্রি করেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে আগামী মাসে নতুন হালি
পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এর আগে পর্যন্ত দাম কিছুটা বাড়ন্ত থাকবে।
শ্যামবাজার বণিক সমিতির সহসভাপতি ও পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ বলেন,
মুড়িকাটা পেঁয়াজ যা উৎপাদন হয়েছে, তা আমরা খেয়ে ফেলেছি। ফলে এ পেঁয়াজ এখন মৌসুম
শেষ হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ সংকট আছে। এতেই দাম বাড়ছে। কবে নাগাদ পেঁয়াজের দাম
স্থিতিশীল হতে পারে- এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে সারা বছর যে পেঁয়াজ
আমরা পাই, তা হালি পেঁয়াজ। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে এ পেঁয়াজ বাজারে আসা
শুরু হবে। অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে নতুন পেঁয়াজ এলে বলা যাবে দাম কোনদিকে যাবে।
এর আগে দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ আছে।
এফবিসিসিআইয়ের
ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে হলেও
উত্তোলন তো বন্ধ নেই। তাহলে সরবরাহ সংকট হবে কেন? বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
অন্যদিকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে বলেন,
সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের অনুমতি দেওয়া আছে। যে যেখান
থেকে ইচ্ছে আমদানি করুক, কোনো বাধা নেই। কিন্তু এরপর কেউ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে
কিনা, সেটা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।
দাম বৃদ্ধির পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে
অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা বলেন, আমরা এ মুহূর্তে উৎপাদনকারী উৎসগুলোয়
গিয়ে পরিস্থিতি যাচাই করছি। বর্তমানে আমাদের মহাপরিচালক বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোয়
পরিদর্শনে আছেন। সেখানকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়া কয়েকদিন আগেও আমরা পেঁয়াজ
নিয়ে দেশব্যাপী অভিযান চালিয়েছিলাম। এখন যেহেতু আবার দাম বেড়েছে, তাই আবারও হয়তো
আমরা পদক্ষেপ নেব।