অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে কাঁচা মরিচের বাজার। গেল সপ্তাহে প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এক লাফে এ সপ্তাহে ছাড়াল আড়াইশ টাকা। কয়েকটি বাজারে ২৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ব্যবসায়িরা বলছেন, মৌসুম শেষের দিকে। তাই ফলন কম হওয়ায় বাজারেও চাহিদা মতো আসছে না; এতে দাম আকাশ ছুঁয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের দাম আকাশচুম্বী। উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, মূল বাজার সংলগ্ন দোকানগুলোতে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে। রাস্তার পাশে টুকরিতে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। এদিকে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল বাজার কাঁচা মরিচের বড় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারে মরিচের দাম ২৬০ টাকা কেজি। অনেকেই ২৫০ গ্রাম মরিচ না কিনে, খরচ বাচাতে ১৫০ গ্রাম কিনেছেন।
মরিচের দাম এত কেন জানতে চাইলে ব্যবসায়ী হেদায়েতুল্লাহ মিন্টু বলেন, আমাদের করার কী আছে? পাইকারি বাজারে মরিচের দাম বেশি।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী লতিফ মুন্সী বলেন, এখানে বেশিরভাগ মরিচ আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। তবে ফলন কম হওয়ায় চাহিদা মতো মরিচ আসছে না। যা আসছে তার দামও আকাশছোঁয়া।
মরিচের দাম কবে কমবে জানতে চাইলে মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা হানিফ সওদাগর বলেন, পাইকাররা বলছেন, মরিচের চলতি মৌসুম শেষের দিকে। ক্ষেতে নতুন মরিচ উঠার পর দাম কমে আসবে।
কেবল ঢাকা নয়, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বেড়েছে মরিচের দাম। স্থানভেদে মরিচের দাম কেজিতে ১৮০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। খাগড়াছড়ি জুম পাহাড়ি মরিচের কেজি ৩২০-৪০০ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে নতুন মৌসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত মরিচের দাম আকাশচুম্বী থাকবে।
খাগড়াছড়ি : দীঘিনালায় স্থানীয় হাটবাজারে জুমে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। বিক্রেতারা জানান, জুমের নতুন মরিচ বাজারে আসতে আরও এক মাস বাকি আছে। এখন সরবরাহ কম। এ কারণে দাম বেড়েছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ হয়েছে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাঁচা মরিচের আবাদ হয়ে থাকে নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলায়।
বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের চাষি খোরশেদ হোসেন বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। ফলন ও দাম ভালো। যদি কয়েক দিনের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয় তাহলে মরিচ ক্ষেতের পাতা ঝরা সমস্যা থাকবে না।
সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের চকআতিতা গ্রামের চাষি রেজাউল করিম বলেন, এক মাস আগেও ৫০-৬০ কেজি দরে মরিচ বিক্রি করেছি। ১৫ দিন আগে ৭০-৮০টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে বাজার দর ভালো। এখন প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৯০-১৯৫টাকা দরে। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪০টাকা কেজিতে।
দয়ারামপুর বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রুপ চাঁদ ও মাবুল বলেন, কাঁচা মরিচের আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। ফলন কম হওয়ায় মরিচ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে। আমরা এক হাজার টাকায় ৫ কেজি মরিচ কিনে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছি।
উপজেলা নির্বাহী আফিসার নীলুফা সরকার জানান, কোনো ব্যবসায়ী যদি কাঁচা মরিচের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন বা দাম বাড়ান তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।