Logo
শিরোনাম

আলু পেঁয়াজ কাঁচামরিচ ও ডিমের দাম বেড়েছে

প্রকাশিত:বুধবার ০৫ জুন ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে গত সপ্তাহের তুলনায় আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও ডিমের দাম আরও বেড়েছে। দর বাড়ার তালিকায় রয়েছে রসুন, আদাসহ কয়েকটি পণ্য। তবে চাল, ডাল ও আটা-ময়দার দাম আগের মতোই রয়েছে।

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমাগার গেটে আলুর দর বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। আর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচামরিচ ও সবজির দাম বাড়তি। গরমে মুরগি মারা যাওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম। আর ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি কম হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি বলে দর বেড়েছে।

গত বছরের মে মাসে বাড়তে শুরু করে আলুর দর। এরপর আমদানির আলু আসার পর পণ্যটির দর কিছুটা কমে। এবার মৌসুমেও আলুর দর তেমন কমেনি। গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান সমকালকে বলেন, হিমাগারের গেটে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা দরে। এরপর পরিবহন খরচ ও ঘাটতি আছে। সব হিসাবনিকাশ করে ৫৫ টাকার কমে বেচলে লাভ থাকে না।

সরবরাহে ঘাটতির ছুতায় এক মাস ধরে কাঁচামরিচের বাজার চড়া। মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে। মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। সেই হিসাবে এক মাসে দর বেড়েছে দ্বিগুণের মতো।

দাম বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহখানেক আগে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এক সপ্তাহে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৩০০ টন কাঁচামরিচ আমদানিও হয়। তবে বাজারে এখনও পণ্যটির দর কমেনি।

ডিমের বাজারও চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। বাজারে বেশি বেচাকেনা হয় বাদামি রঙের ডিম। খুচরায় এ ধরনের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। হালি হিসাবে (৪টি) কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া সাদা রঙের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়।

ডিমের দর বাড়ার জন্য করপোরেটদের দায়ী করছেন ছোট খামারিরা। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বড় প্রতিষ্ঠান ও ঢাকার বড় পাইকাররা সিন্ডিকেট করে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করছে। এতে ছোট খামারিরা হুমকির মুখে পড়েছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় তেমন হেরফের দেখা যায়নি মুরগির বাজারে। ব্রয়লারের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগির প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানির অনুমতি থাকলেও ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে কম। ফলে দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। এতে দরও বাড়ছে। এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

গত সপ্তাহের মতো দেশি রসুন প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় ও আমদানি করা চায়না রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ১৫ দিনে আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে দেশি ও আমদানি করা প্রতি কেজি আদা ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। গত সপ্তাহে টমেটোর কেজি ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গতকাল তা বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বাজারে নতুন কচুরমুখি এসেছ, বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে। মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তি পেঁপের বাজার। গতকাল এক কেজি পেঁপে কিনতে গুনতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। শসার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। পটোল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও করলা আগের মতোই প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ৬০ টাকার আশপাশের দরে।


আরও খবর

বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগ বেড়েছে

সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে সাত হাজার অভিবাসী গ্রেপ্তার

প্রকাশিত:সোমবার ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলে রেখেছিলেন, দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে এসেই তিনি অবৈধ অভিবাসী তাড়ানো শুরু করবেন। আদতে তিনি করছেনও তাই।

গত ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ৭ হাজার ২৬০ জন নথিবিহীন অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে দেশটির অভিবাসন ও কাস্টমসবিষয়ক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। খবর নিউইয়র্ক পোস্টের।

এদের মধ্যে ৫ হাজার ৭৬৩ জনকে কারাগারে রাখা হয়েছে। শিগগিরই তাদের নিজ নিজ দেশ কিংবা কিউবার গুয়ান্তানামো কারাগারে পাঠানো হবে। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে আইসিই।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউইয়র্ক সিটি, ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের শিকাগো এবং ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এই নথিবিহীন অভিবাসীদের।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতি যৌন সহিংসতা, বন্দুক ও মাদকসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে বলে শনিবারের এক্সবার্তায় জানিয়েছে আইসিই।


আরও খবর



পাকিস্তান ভ্রমণে যুক্তরাজ্যের সতর্কবার্তা

প্রকাশিত:বুধবার ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

পাকিস্তানের বেশ কিছু অঞ্চলে ভ্রমণের ব্যাপারে নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশ, কমনওয়েলথ এবং ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এ সতর্কতা জারি করেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

সতর্কবার্তায় পাকিস্তানের যেকোনো সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের নির্দেশ দিয়েছে এফসিডিও। পাশাপাশি পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার বাজাউর, বান্নু, বুনের, চারসাদ্দা, ডেরা ইসমাইল খান, খাইবার, কোহাট, কুররম, লাক্কি মারওয়াত, লোয়ার দির, মোহমান্দ, ওরাকজাই, রাজধানী পেশোয়ার, সোয়াত, তাঙ্ক, উত্তর ওয়াজিরিস্তান, আপার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান, লোয়ার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান, মারদান, চিত্রল, মানসেরা জেলা— অর্থাৎ পুরো খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী সড়ক কারাকোরাম হাইওয়ে এবং তার-সংলগ্ন গিলগিট-বাল্টিস্তানের চিলাস জেলা, আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের সীমান্ত-সংলগ্ন ১০ মাইল এলাকা এবং বেলুচিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল ছাড়া প্রদেশটির কোনো এলাকায় ভ্রমণ না করতে নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে এফসিডিওর বিবৃতিতে।


আরও খবর



চলমান সংস্কার কাজের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ছয় মাসে বারবার যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে সেটা হলো- কবে হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শুরু থেকেই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে। সরকারের কাছে নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপও দাবি করেছে। সরকার স্পষ্ট করে তারিখ ঘোষণা না করলেও দুটি সময়সীমার কথা জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, চলমান সংস্কার কাজের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক পরিসরে সংস্কার চাইলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আর সংক্ষিপ্ত সংস্কার চাইলে ২০২৫ সালের মধ্যে ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার চাপ অব্যাহত রয়েছে। এমনকি দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ন্যূনতম সংস্কার শেষে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলোর এই চাপের মধ্যে অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে। সেই ইঙ্গিত আরও জোরালো হলো সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পর। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা আছেন তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রুত তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেনও- ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছেন।

ফখরুল বলেন, আমরা আশা করব, জনগণের যে প্রত্যাশা আছে, একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন তিনি। সেটার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

এদিকে একই দিন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারের আপত্তি নেই।

শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় নির্বাচন দ্রুত চায় বিএনপি। নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে বিএনপি। সরকারের পরিকল্পনা, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ নাগাদ নির্বাচন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসময় নির্বাচন চায় তখনই নির্বাচন হবে।

নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরে নির্বাচনের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সোমবার মানিকগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্ততি নেওয়ার কথা বলেছেন।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, কমিশনের কাছে ভালো নির্বাচন না করার কোনো বিকল্প নেই। দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক নেতারাসহ বিভিন্ন মহলের সহায়তা দরকার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে জাতীয় নির্বাচন হয়, সে লক্ষে প্রস্ততি নিচ্ছে কমিশন। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সবার চাহিদা অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন করতেই হবে, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই।

তবে ডিসেম্বর মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের অংশ এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের সংশোধনের কারণে আটকে আছে যাবতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি। কেননা এই দুটি আইনে কী কী সংশোধন আনা হবে—সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা ছাড়া কমিশনকে কোনো ধরনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।

এছাড়া এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদে প্রায় ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৬ জন নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন যারা ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি ভোটারযোগ্য হবেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভোট হলে তারা ভোট দিতে পারবেন না। এটাকে একটি জটিলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন আগামী বছরের জানুয়ারিতেও হতে পারে।

এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসিরউদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সংস্কার কার্যক্রমের কারণে প্রস্তুতিতে আমরা আটকে আছি। এখনো পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। দুটি আইন সংশোধন হবে নাকি বিদ্যমান আইনে কার্যক্রম শুরু করব সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। এ বিষয়ে সময়ক্ষেপণ হলে প্রস্তুতিতে আমরা পিছিয়ে যাব। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।

এদিকে বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করলেও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলো ততটা তাড়াহুড়োর পক্ষে না। তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হোক। এক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হলেও মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে দলগুলো। যদিও বড় দল হিসেবে বিএনপির চাওয়াই বেশি গুরুত্ব পাবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।


আরও খবর

বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগ বেড়েছে

সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




গুম কমিশনে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নেয় ২২ কোটি টাকা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

নগদ অর্থ ও জমি লিখে নেওয়ার তথ্য ফাঁস করায় ফের গুম করা হয় এক ব্যবসায়ীকে, ১০ বছরেও যিনি ফিরে আসেননি।এদিকে এখন পর্যন্ত গুম কমিশনে এক হাজার সাতশ অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে বেশিরভাগ র‌্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। গুম, অপহরণে পুলিশও কম হাত পাকায়নি। কেউ এখনো চাকরিতে বহাল আছেন, কেউ হয়েছেন গ্রেফতার। আবার পালিয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন। 


গুমসংক্রান্ত কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইনকোয়ারি (অনুসন্ধান) অব্যাহত রেখেছি। এটা তো এক দিনের ব্যাপার নয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের আমরা তলব করছি, ওদের কথা শুনছি। দরকার হলে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের কথাও দ্বিতীয়বার শোনা হবে। অনেক সময় উভয়পক্ষকে মুখোমুখি করছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা অনেক সময় ডিনাই (অস্বীকার) করছে। আমাদের অবশ্যই সত্যটা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের কাজই হলো সত্য অনুসন্ধ্যান।’ মার্চ বা এপ্রিলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। 


কেস স্টাডি-১ : গুমসংক্রান্ত কমিশনে ৬ জানুয়ারি অভিযোগ করেন খান মো. আক্তারুজ্জামান নামের এক ব্যবসায়ী। অভিযোগে বলা হয়, পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিনি। গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায়। বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। এ কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহদের দ্বারা গুমের শিকার হন। 


ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নেয় ২২ কোটি টাকা

নগদ অর্থ ও জমি লিখে নেওয়ার তথ্য ফাঁস করায় ফের গুম করা হয় এক ব্যবসায়ীকে, ১০ বছরেও যিনি ফিরে আসেননি

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের শুধু গুম করেই ক্ষ্যান্ত হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, অনেককে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার নগদ অর্থ ছাড়াও জমিও লিখে নেন। এছাড়া যারা ছাড়া পেয়ে বিষয়টি প্রকাশ করে বিচার চেয়েছেন তাদের ফের গুম করা হয়। এ রকম অনেকে আজও ফিরে আসেননি। গুম কমিশনের কাছে দেওয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে চাঞ্চল্যকর এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী এবং গুম কমিশন সূত্রে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি কেস স্টাডি পাওয়া গেছে। 


এদিকে এখন পর্যন্ত গুম কমিশনে এক হাজার সাতশ অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে বেশিরভাগ র‌্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। গুম, অপহরণে পুলিশও কম হাত পাকায়নি। কেউ এখনো চাকরিতে বহাল আছেন, কেউ হয়েছেন গ্রেফতার। আবার পালিয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন। 


গুমসংক্রান্ত কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইনকোয়ারি (অনুসন্ধান) অব্যাহত রেখেছি। এটা তো এক দিনের ব্যাপার নয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের আমরা তলব করছি, ওদের কথা শুনছি। দরকার হলে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের কথাও দ্বিতীয়বার শোনা হবে। অনেক সময় উভয়পক্ষকে মুখোমুখি করছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা অনেক সময় ডিনাই (অস্বীকার) করছে। আমাদের অবশ্যই সত্যটা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের কাজই হলো সত্য অনুসন্ধ্যান।’ মার্চ বা এপ্রিলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। 


কেস স্টাডি-১ : গুমসংক্রান্ত কমিশনে ৬ জানুয়ারি অভিযোগ করেন খান মো. আক্তারুজ্জামান নামের এক ব্যবসায়ী। অভিযোগে বলা হয়, পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিনি। গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায়। বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। এ কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহদের দ্বারা গুমের শিকার হন। 



ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘লে. কর্নেল আজাদ ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে আমাকে চোখ বেঁধে তৎকালীন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধানের নেতৃত্বে একটি কালো গাড়িতে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। চোখ বাঁধা থাকায় আমি স্থান চিনতে পারিনি। তবে পরবর্তীতে বুঝতে পারি, র‌্যাব হেডকোয়ার্টার্সের বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘরে ৩ দিন বন্দি ছিলাম। সেখানে থাকাবস্থায় ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে ৩০ (ত্রিশ) কোটি টাকা ও জমি দাবি করেন র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা। এরপর র‌্যাবের নজরদারিতে থেকে কয়েক দফায় নগদ ২২ কোটি টাকা দিয়ে জীবন ভিক্ষা পেয়েছিলাম। আমার কোম্পানির এজিএম অ্যাকাউন্টস মো. শহিদুল্লাহ ও ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী শুভকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ধাপে কোম্পানির ব্যাংক লোন থেকে টাকা তুলে দেই। এছাড়া আমার ও আমার স্ত্রীর নামে থাকা জমি বিক্রি করে টাকাগুলো দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও তারা থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ভয় দেখিয়ে আমার বেশ কিছু জমিও রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করে। সে সময় আমার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। আমার শরীরে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। নির্যাতনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে নিয়মিত থেরাপি নিতে হচ্ছে।’ র‌্যাব কর্মকর্তাকে টাকা দেওয়ার অডিও রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজের কিছু তথ্য-প্রমাণ অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান।


ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘গুমের শিকার হয়ে টাকা দেওয়ার পর থেকে আমার কোম্পানি অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে এবং ব্যাংকের ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে। অথচ আমাকে তুলে নেওয়া র‌্যাবের সেই কর্মকর্তার নামে-বেনামে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে।’ 


কেস স্টাডি-২ : রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকা থেকে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি অপহরণ হন ব্যবসায়ী মো. কুদ্দুসুর রহমান চৌধুরী। গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেন ব্যবসায়ী কুদ্দুসের মেয়ে ফারজানা আক্তার টুম্পা। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালে কর্নেল (অব.) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে র‌্যাব-৪ এর একজন কর্নেল, একজন ক্যাপ্টেন চোখ বেঁধে কুদ্দুসুর রহমানকে উঠিয়ে নিয়ে যান। ইলেকট্রিক শক দিয়ে ৪টি গাড়ি, ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার চেক, ২ লাখ টাকা এবং জমির দলিলে সই নেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কুদ্দুসুর রহমান। হাইকোর্টে রিট পিটিশনও দায়ের করেন তিনি। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি মিরপুর জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানের সামনে থেকে সাদা মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় কুদ্দুসুর রহমানকে। এভাবে তুলে নেওয়ার ১০ বছর পার হলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। তার ভাগ্যে কী হয়েছে সেটিও পরিবারের সদস্যরা আজও জানতে পারেননি। 


এদিকে ঘটনার ১ মাস পর পল্লবী থানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন কুদ্দুসুর রহমানের স্ত্রী মোছা. জোসনা বেগম। মামলাটি থানা পুলিশের পর পুলিশের বিশেষায়িত দুটি সংস্থা তদন্ত করে। কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি তার। এছাড়া অভিযুক্তদের আইনের আওতায়ও আনা যায়নি।


নিখোঁজ কুদ্দুসুর রহমানের পরিবারের দাবি, রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে গুম হন কুদ্দুস। আর ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিকানায় আছেন সাবেক এক প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা। ফলে মামলা করলেও আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাব খাটিয়ে সঠিক তদন্ত করতে দেওয়া হয়নি।


কুদ্দুসুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তার টুম্পা বলেন, ‘বাবাকে প্রথমে র‌্যাব তুলে নিয়ে গুম করে নগদ টাকা ও গাড়ি নিয়েছিল। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় ফের গুম হন। আজও বাবাবে খুঁজে পাইনি। আমরা এখনো আশা করছি বাবা বেঁচে আছেন।’ 


গুম কমিশন সূত্র বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে ঘটনার মিল রয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে চাক্ষুষ প্রমাণ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। নিরপেক্ষ সাক্ষীও পাওয়ার সুযোগ নেই। গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা কাজটি এমনভাবে করেছেন যাতে এগুলো পরবর্তীতে শনাক্ত করা না যায়। 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই প্রকাশ্যে আসতে থাকে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। গুমের অভিযোগ জমার ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলেও এখনো একে একে জমা পড়ছে অভিযোগ। সেসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে কমিশন।


এদিকে অভিযোগ পর্যালোচনা ও অনুসন্ধ্যান করে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টাকে। গুমসংক্রান্ত বেশিরভাগ অভিযোগ উঠেছে এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে গুমসংক্রান্ত কমিশন র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করে। 


গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় পাঁচ সদস্যের গুমসংক্রান্ত কমিশন। কমিশনের সভাপতি করা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশনের বিবেচনায় আনা হয়েছে। কমিশন গঠনের পর কয়েক দফা অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর অভিযোগ দায়েরের সময় শেষ হয়েছে। তবে এখনো অভিযোগ নিয়ে আসছেন ভুক্তভোগীরা।


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের শুধু গুম করেই ক্ষ্যান্ত হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, অনেককে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার নগদ অর্থ ছাড়াও জমিও লিখে নেন। এছাড়া যারা ছাড়া পেয়ে বিষয়টি প্রকাশ করে বিচার চেয়েছেন তাদের ফের গুম করা হয়। এ রকম অনেকে আজও ফিরে আসেননি। গুম কমিশনের কাছে দেওয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে চাঞ্চল্যকর এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী এবং গুম কমিশন সূত্রে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি কেস স্টাডি পাওয়া গেছে। 

ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘লে. কর্নেল আজাদ ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে আমাকে চোখ বেঁধে তৎকালীন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধানের নেতৃত্বে একটি কালো গাড়িতে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। চোখ বাঁধা থাকায় আমি স্থান চিনতে পারিনি। তবে পরবর্তীতে বুঝতে পারি, র‌্যাব হেডকোয়ার্টার্সের বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘরে ৩ দিন বন্দি ছিলাম। সেখানে থাকাবস্থায় ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে ৩০ (ত্রিশ) কোটি টাকা ও জমি দাবি করেন র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা। এরপর র‌্যাবের নজরদারিতে থেকে কয়েক দফায় নগদ ২২ কোটি টাকা দিয়ে জীবন ভিক্ষা পেয়েছিলাম। আমার কোম্পানির এজিএম অ্যাকাউন্টস মো. শহিদুল্লাহ ও ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী শুভকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ধাপে কোম্পানির ব্যাংক লোন থেকে টাকা তুলে দেই। এছাড়া আমার ও আমার স্ত্রীর নামে থাকা জমি বিক্রি করে টাকাগুলো দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও তারা থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ভয় দেখিয়ে আমার বেশ কিছু জমিও রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করে। সে সময় আমার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। আমার শরীরে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। নির্যাতনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে নিয়মিত থেরাপি নিতে হচ্ছে।’ র‌্যাব কর্মকর্তাকে টাকা দেওয়ার অডিও রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজের কিছু তথ্য-প্রমাণ অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান।


ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘গুমের শিকার হয়ে টাকা দেওয়ার পর থেকে আমার কোম্পানি অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে এবং ব্যাংকের ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে। অথচ আমাকে তুলে নেওয়া র‌্যাবের সেই কর্মকর্তার নামে-বেনামে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে।’ 


কেস স্টাডি-২ : রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকা থেকে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি অপহরণ হন ব্যবসায়ী মো. কুদ্দুসুর রহমান চৌধুরী। গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেন ব্যবসায়ী কুদ্দুসের মেয়ে ফারজানা আক্তার টুম্পা। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালে কর্নেল (অব.) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে র‌্যাব-৪ এর একজন কর্নেল, একজন ক্যাপ্টেন চোখ বেঁধে কুদ্দুসুর রহমানকে উঠিয়ে নিয়ে যান। ইলেকট্রিক শক দিয়ে ৪টি গাড়ি, ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার চেক, ২ লাখ টাকা এবং জমির দলিলে সই নেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কুদ্দুসুর রহমান। হাইকোর্টে রিট পিটিশনও দায়ের করেন তিনি। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি মিরপুর জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানের সামনে থেকে সাদা মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় কুদ্দুসুর রহমানকে। এভাবে তুলে নেওয়ার ১০ বছর পার হলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। তার ভাগ্যে কী হয়েছে সেটিও পরিবারের সদস্যরা আজও জানতে পারেননি। 


এদিকে ঘটনার ১ মাস পর পল্লবী থানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন কুদ্দুসুর রহমানের স্ত্রী মোছা. জোসনা বেগম। মামলাটি থানা পুলিশের পর পুলিশের বিশেষায়িত দুটি সংস্থা তদন্ত করে। কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি তার। এছাড়া অভিযুক্তদের আইনের আওতায়ও আনা যায়নি।


নিখোঁজ কুদ্দুসুর রহমানের পরিবারের দাবি, রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে গুম হন কুদ্দুস। আর ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিকানায় আছেন সাবেক এক প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা। ফলে মামলা করলেও আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাব খাটিয়ে সঠিক তদন্ত করতে দেওয়া হয়নি।


কুদ্দুসুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তার টুম্পা বলেন, ‘বাবাকে প্রথমে র‌্যাব তুলে নিয়ে গুম করে নগদ টাকা ও গাড়ি নিয়েছিল। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় ফের গুম হন। আজও বাবাবে খুঁজে পাইনি। আমরা এখনো আশা করছি বাবা বেঁচে আছেন।’ 


গুম কমিশন সূত্র বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে ঘটনার মিল রয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে চাক্ষুষ প্রমাণ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। নিরপেক্ষ সাক্ষীও পাওয়ার সুযোগ নেই। গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা কাজটি এমনভাবে করেছেন যাতে এগুলো পরবর্তীতে শনাক্ত করা না যায়। 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই প্রকাশ্যে আসতে থাকে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। গুমের অভিযোগ জমার ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলেও এখনো একে একে জমা পড়ছে অভিযোগ। সেসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে কমিশন।


এদিকে অভিযোগ পর্যালোচনা ও অনুসন্ধ্যান করে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টাকে। গুমসংক্রান্ত বেশিরভাগ অভিযোগ উঠেছে এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে গুমসংক্রান্ত কমিশন র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করে। 


গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় পাঁচ সদস্যের গুমসংক্রান্ত কমিশন। কমিশনের সভাপতি করা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশনের বিবেচনায় আনা হয়েছে। কমিশন গঠনের পর কয়েক দফা অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর অভিযোগ দায়েরের সময় শেষ হয়েছে। তবে এখনো অভিযোগ নিয়ে আসছেন ভুক্তভোগীরা।


আরও খবর



দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ম্যাটস শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত:সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

চার দফা দাবি আদায়ের নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। এরমধ্যে দাবি আদায় না হলে দুপুর থেকে একযোগে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মুজাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আজও আমাদেরকে দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে তিনদিন সময় নিয়েছে। তবে আমাদের অন্য তিনটি দাবির বিষয়ে কোনো সুরাহা দেয়নি। কোনো নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়নি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে যাব না। আমরা রাতেও শহীদ মিনারে অবস্থান করব এবং আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। যদি এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আমরণ অনশনে যাব।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটি টিম যখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ডাকে সাড়া দিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে গিয়েছিল, তখন আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রেস ক্লাবে অবস্থানের উদ্দেশ্যে শাহবাগ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু শাহবাগের দিকে যাওয়ার সময় আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। ওই হামলায় আমাদের ৬০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া সবমিলিয়ে ১২০ জনের মতো শিক্ষার্থী হামলায় আহত হন। তাদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যে পুলিশগুলো আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে, তারাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছিল। আমরা এই হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

এর আগে দাবি আদায়ে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। পরে এক ঘণ্টার সময় দিয়ে আল্টিমেটাম দেন। পরে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে লং মার্চ শুরু করেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাধা দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে লং মার্চ শুরু করেন তারা।

চার দফা দাবিগুলো হলো– বৈষম্যমুক্ত বাংলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ১৯৭৩-১৯৭৮ মোতাবেক উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিতে হবে, অনতিবিলম্বে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শূন্যপদে নিয়োগ প্রধানসহ কমিউনিটি ক্লিনিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে ম্যাটস সংস্কৃত ডিএমএফ ডিপ্লোমাধারীদের জন্য নতুন পদ সৃজন করতে হবে, অনতিবিলম্বে চার বছরের অ্যাকাডেমিক কোর্স বহাল রেখে পূর্বের মতো এক বছরের ভাতাসহ ইন্টার্নশিপ চালু করে অসংগতিপূর্ণ কোর্স কারিকুলাম সংশোধন করতে হবে এবং প্রস্তাবিত অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল শিক্ষা বোর্ড বাতিল করে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে নতুন বোর্ড গঠন করতে হবে।


আরও খবর

বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগ বেড়েছে

সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫