Logo
শিরোনাম

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কুয়েটে আমরণ অনশন শুরু

প্রকাশিত:সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫ |

Image

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আলোচনার প্রস্তাব গ্ৰহণ করলেও আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অনড় রয়েছেন। সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকাল পৌনে ৪টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আমরণ অনশন শুরু করেন। এ সময় ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম আলোচনার জন্য সেখানে যায়। শিক্ষার্থীরা জানান, এক দফা দাবি আদায়ে তারা এ অনশন শুরু করেছেন।

এ সময় ছাত্র কল্যাণ পরিচালকসহ শিক্ষকদের একটি টিম সেখানে আসেন এবং আলোচনা করবেন বলে জানান। এর আগে তারা সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার কথা জানান।

অনশন চলাকালে কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার সেখানে উপস্থিত হয়ে হ্যান্ডমাইক দিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আলোচনায় সমস্যা সমাধান সহজ হয়। যার যার অবস্থানে অনড় থাকলে সমস্যা আরও বাড়ে। আমরা সমস্যার সমাধান চাই।’

রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার চত্বরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীরা উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। দাবি পূরণ না হলে সোমবার দুপুর ৩টা থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তারা।


আরও খবর



ঢাকা ও এর আশপাশে তীব্র গরমের আভাস

প্রকাশিত:শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫ |

Image

রাজধানী ঢাকা এবং আশপাশের অঞ্চলে আজও তীব্র গরম অনুভূত হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজকের দিনটিতেও বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই এবং আবহাওয়া থাকবে একেবারে শুষ্ক। ফলে গরমের তীব্রতা থেকে রাজধানীবাসীর স্বস্তি মিলবে না।

২৬ এপ্রিল সকালে দেওয়া ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ থাকবে পরিষ্কার। এসময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। সেইসঙ্গে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৭৯ শতাংশ। এসময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্য উঠবে ভোর ৫টা ২৭ মিনিটে। এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় কোনো ধরনের বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি বলেও জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সারা দেশের আজকের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে রাজশাহী বিভাগসহ দিনাজপুর, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।


আরও খবর



পাঁচ দশকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

প্রকাশিত:শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ |

Image

দেশে ১৯৭৬ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর পর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়। সে হিসাবে পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপের পারদ চড়ছে চলতি বছরও। পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বাড়ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে সে তুলনায় বাংলাদেশে বৃদ্ধির হারটা একটু বেশি। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এভাবে উচ্চ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে ভেঙে পড়তে পারে জনস্বাস্থ্য।

 

একজন মানুষ ঠিক কতটা তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, তা নিয়ে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার একটি গবেষণা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা অনেকের ওপর পরীক্ষাটি চালিয়েছেন। তাদের ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৫৭ শতাংশ আর্দ্রতায় টানা ৯ ঘণ্টা রেখে দেখেছেন, বেশির ভাগই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেউ টানা ৯ ঘণ্টা থাকতেই পারেনি, আর যারা বেশি সময় ছিল তাদের বমি, ডায়েরিয়া, ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে।

দেশে বিগত কয়েক বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশন বেড়ে গেছে অনেক বেশি। রাজধানী ঢাকার মতো জনবহুল শহরে মানুষের শারীরিক ও মনোজগতে বড় পরিবর্তন হচ্ছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মানুষ ও প্রাণিকুলে মহামারীসহ নানা রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‌জনস্বাস্থ্যের ভাষায় স্বাস্থ্য হলো মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার নাম। প্রকৃতি কোথাও আক্রান্ত হলে সেটা মানুষকেও কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত করবেই। আমাদের তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে চলছে, প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য তো বটেই, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও এটা হুমকি। আমরা গত কয়েক দশকে অনেক নতুন নতুন রোগ-বালাইয়ের নাম শুনেছি। তাছাড়া অনেক বিরল রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়তে দেখা গেছে। এগুলো সবই প্রকৃতিকে আক্রান্ত করার ফল।

বাংলাদেশে যেভাবে প্রকৃত তাপমাত্রা ও অনুভূত তাপমাত্রা বাড়ছে, এতে গোটা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমরা বলি, মানুষ হলো প্রকৃতির সন্তান। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির একটা কারণ তো আছেই। এর বাইরে যেভাবে দ্রুত তাপমাত্রা বেড়ে চলছে, এটা চলতে থাকলে ইকোসিস্টেমে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে আমরা বায়ুদূষণের কারণে ভুগছি। বায়ুদূষণের কারণে যেসব রোগ-বালাই বাড়ছে, সেগুলো সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আমরা ডেঙ্গু নিয়ে ভুগছি। ডায়রিয়ার প্রকোপও বাড়ছে। এগুলো সবই অতিরিক্ত তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে গত বছর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালএ পাঁচ দশকের তাপমাত্রা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রির বেশি। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলে, ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি। আর রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে দেশের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়েই বেড়েছে। সেই সময় থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে প্রতি বছর গড়ে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত বিপর্যয়সহ নানা কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঢাকায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে গণপরিসর, সবুজ ও জলাশয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়াকে।

দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয় এপ্রিলকে। এ বছর চলতি মাসে দেশে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালও দেশের সাত জেলায় তাপপ্রবাহ ছিল। তাপ বাড়ার এ প্রবণতা আজও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে যেভাবে প্রকৃত তাপমাত্রা ও অনুভূত তাপমাত্রা বাড়ছে এতে গোটা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণ ছাড়াও মানবসৃষ্ট নানাবিধ কারণে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা ব্যাপকতর হচ্ছে বলে জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌বাংলাদেশে এপ্রিলে গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকে। মে মাসে তীব্র গরম থাকার পর জুনে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে বর্ষার আগমন ঘটলে তাপমাত্রার তীব্রতা কমতে থাকে। গত বছরটা ছিল আমাদের জন্য ব্যতিক্রম। তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত গরম তার স্বাভাবিক মাত্রাতেই আছে।

আন্তর্জাতিক ওয়েদার বিশ্লেষণ বলছে, এ বছর তাপমাত্রা গতবারের মতো রেকর্ড ভাঙবে না। বৃষ্টিবাদলও হবেএমনটা জানিয়ে ড. মনিরুজ্জামান বলেন, এখানে সমস্যা যেটা হচ্ছে, ঢাকাসহ দেশের নগর এলাকায় মানবঘটিত কারণে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে ইটভাটা, অত্যধিক কলকারখানা, আনফিট যানবাহন, বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতে এসির সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে তীব্র বায়ুদূষণ, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য পোড়ানোএসবই গরমের অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা হয়তো আগের চেয়ে অল্প বেড়েছে, কিন্তু গরমের অনুভূতি ৫-৭ ডিগ্রির মতো বেশি মনে হয়। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করাসহ টেকসই উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশের মতো এলাকায় মরুভূমির গরম অনুভূত হবে। ফলে এখানের জনস্বাস্থ্য ও কৃষি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির আধার, বৃক্ষ নিধন আর কংক্রিটের আচ্ছাদনের কারণে ঢাকা পরিণত হয়েছে আরবান হিট আইল্যান্ডে। ফলে নগরীর তাপমাত্রা ৩৪-৩৬ ডিগ্রি থাকলেও তার অনুভূতি ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছে। যে কারণে গরমের মৌসুমে এ নগরীর তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। বিভিন্ন এলাকায় পানিরও তীব্র সংকট তৈরি হয়। বাড়ে রোগ-বালাইয়ের প্রবণতাও।

প্রায় চারদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় উষ্ণ তাপপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যে কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেও তাতে তাপ কমেনি। আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, এখন যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে তা আজ পর্যন্তও চলতে পারে। রোববার থেকে দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তাতে কিছুটা কমতে পারে তাপমাত্রা।

ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও উষ্ণ তাপপ্রবাহের বেশ কয়েকটি কারণ দেখছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, এর মূলে রয়েছে ভূমি আচ্ছাদনের (সবুজ, পানি ও ধূসর বা কংক্রিট আচ্ছাদন) মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট, কংক্রিটের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা অনুপস্থিত, কাচনির্মিত ভবন ও এসিনির্ভর ভবনের নকশা তৈরি, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, বনায়ন না করাসহ বহুবিধ কারণ রয়েছে। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্প-কারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতিক্ষুদ্র কণার কারণেও নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রাকৃতিকভাবেই ঢাকা শহরে কয়েক দশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় বিদ্যমান ছিল। কিন্তু নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। নির্মল বাতাস, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, শীত ও গরমের তীব্রতা থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দেয়া নগর কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব বলে মনে করেন খোদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, নগরবাসীকে পরিবেশগত ক্ষতি থেকে বাঁচাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রথমত, আমরা গণপরিসর ও জলাশয় ব্যবস্থাপনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। যেগুলো বেদখল, সেগুলো উচ্ছেদ চালিয়ে দখলমুক্ত করছি। আবার নতুন নতুন জায়গায় গণপরিসর সৃষ্টি করছি। দ্বিতীয়ত, রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আমরা সবুজায়নের কাজ করছি। এতে বস্তিবাসী আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।

তাপপ্রবাহের কারণে দেশে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। এতে ফল ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি গবেষকরা বলছেন, রোদ বা সূর্যের আলো কৃষির জন্য ক্ষতিকারক নয়, বরং উপকারী। কিন্তু অতি তাপমাত্রা বা তাপপ্রবাহ কিংবা শৈত্যপ্রবাহ কৃষির জন্য সহায়ক নয়। সেই অসহিষ্ণু পরিস্থিতির ওপর দিয়েই যাচ্ছে এখন দেশের মানুষ।

কৃষিবিদরা বলছেন, তাপপ্রবাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ভালো ফলনের জন্য ফলমূল ও ফসলের গাছের গোড়ায় পানি পৌঁছানো জরুরি। গাছের গোড়ায় পানি নিশ্চিত করা গেলে তাপমাত্রা আরো ২-৪ ডিগ্রি বৃদ্ধিতে গাছের কোনো ক্ষতি হবে না। গাছের ক্ষতি না হলে ফল ও ফসলেরও কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা না। কিন্তু তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে বৃষ্টির প্রবণতাও। বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তাপপ্রবাহ তথা হিট শকে মাঠের বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে, বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে ধানে চিটা ধরার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ধানে ফুল অবস্থায় পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধানগাছের গোড়ায় সর্বদা দুই-তিন ইঞ্চি পানি ধরে রাখা দরকার।

আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, জামরুলসহ সব ধরনের ফল ও ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আম ও লিচু ঝরে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কৃষিবিদরা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে পোকামাকড় ও রোগ-বালাই তেমন না থাকলেও দীর্ঘমাত্রায় তাপপ্রবাহে ধান নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, এতে আমাদের দেশেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমরা যেভাবে কংক্রিট আচ্ছাদন দিয়েছি, তাতে তাপমাত্রাকে সহনশীল রাখার চেষ্টা না করে আমরা তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণ মূলত অতিমাত্রায় কংক্রিটের আচ্ছাদন। সেই সঙ্গে সবুজ, জলাশয় ও গণপরিসর কমে আসা। তাপমাত্রা মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্য আর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে। আপাতত অতিরিক্ত তাপ থেকে স্বস্তি দিতে তীব্র গরমের দিনে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, স্কুল বন্ধ রাখা, রাস্তায় সুপেয় পানি সরবরাহ করাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আমরা পরিকল্পনা করছি রাজধানীতে গাছের আধিক্য কীভাবে বাড়ানো যায়। তবে এ তাপপ্রবাহ সমস্যার স্বল্পমেয়াদি কোনো সমাধান নেই। রাজধানীর ক্ষেত্রে মধ্যমমেয়াদি সমাধান হলো ঢাকাকে সবুজায়ন করা আর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হলো বিকেন্দ্রীকরণ, যার নীতিগত সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে।



আরও খবর



প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপানো বন্ধের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৫ এপ্রিল 20২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫ |

Image

বিজি প্রেসের কর্মচারীরা বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির ও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন, সম্প্রতি ওঠা এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেখান থেকে আর কোনো প্রশ্নপত্র না ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিএসসি ভবনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

এ সময় পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, বিসিএসসহ পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত সব নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি। বারবার বিজি প্রেস থেকে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা আমরা গণমাধ্যমে জেনেছি। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বিজি প্রেস থেকে বিসিএসের কোনো প্রশ্নপত্র আর ছাপানো হবে না।

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত এখনও চলছে। তবে যতটুকু তথ্য-উপাত্ত আমরা পেয়েছি, তাতে পুরোপুরি ওই পরীক্ষাটি বাতিল করার মতো পর্যাপ্ত কারণ পাইনি।

পিএসসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, এখন সিআইডির তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে পিএসসির পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরও খবর



এক মুঠো চালের জন্য জেলেদের বুক ফাটা কান্না

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ১৪ মে ২০২৫ |

Image

ভোরের সূর্য ওঠার আগেই বরগুনার আমতলি ফকিরঘাটে ভিড় জমায় সাগরের সাহসী সন্তানরা। একসময় যাদের হাতের জালে ধরা পড়তো সাগরের সোনা, আজ তাদের হাতে কিছুই নেই। চোখে শূন্যতা, মুখে হতাশা। ট্রলারগুলো নিশ্চুপ, জালগুলো ছেঁড়াআর মানুষগুলো নীরব, অথচ বুকের ভেতর চলছে কান্নার তীব্র গর্জন।


সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে যারা জীবন কাটিয়েছেন, আজ সেই জীবনের সামনে শুধুই অনিশ্চয়তা। ১৫ দিন ধরে চলা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা হাজারো জেলের ঘরে এনেছে হাহাকার, আর পাতে এনে দিয়েছে ফোঁটা ফোঁটা ক্ষুধা। প্রায় আট হাজার নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জেলে আজ বাঁচার জন্য তাকিয়ে আছেন এক মুঠো সাহায্যের দিকে। কিন্তু এখনো তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি সহায়তার চালের এক দানাও।


ষাটোর্ধ্ব মোশাররফ হোসেন এক কোণে বসে আকাশের দিকে চেয়ে কাঁদছেন। তার কণ্ঠ রুদ্ধ, চোখের জল অবিরাম গড়িয়ে পড়ছে।


"ঝড়-তুফান, সাগরের কাঁচা ঢেউসবকিছুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আজ... আজ তো নিজেরই যুদ্ধ জীবন বাঁচানোর। সরকার যদি চাল না দেয়, আমরা না খেয়ে মরে যাবো।" তার কাঁপা কণ্ঠের এই মর্মস্পর্শী আহাজারি যেন আঘাত হানে মানবতার শেষ প্রাচীরে।


আরেক কোণে দাঁড়িয়ে শহিদুল ইসলাম, ছোট্ট মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন। মেয়ের ক্ষুধার্ত চোখ যেন হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে তার দিকে। মাথা নিচু করে শহিদুল ফিসফিস করে বলেন, "মাছ ধরতে জীবন বাজি রাখি। আজ মেয়েটার ভাতের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। একজন বাবার চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে?" 

মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তালতলীতে প্রায় আট হাজার নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন, যাদের কেউই এখন সাগরে যেতে পারছেন না। সাগরের হাওয়ায় এখন আর মাছের ঘ্রাণ নেইভেসে আসছে দুর্ভিক্ষের গন্ধ। প্রতিবছর নিষেধাজ্ঞার সময় কিছু খাদ্য সহায়তা মিললেও, এবারের নিষেধাজ্ঞায় এখনো কোনো বরাদ্দ এসে পৌঁছায়নি। সাগরের গর্জন আজ আর তাদের কাছে রোমাঞ্চ নয়, বরং মৃত্যুর সুর হয়ে বাজছে।


উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, "নীতিমালা অনুযায়ী সাগরে নিষেধাজ্ঞা থাকে। আগেরবার খাদ্য সহায়তা ছিল, এবার বিলম্ব হয়েছে। চাল আসলে দেওয়া হবে।" কিন্তু তার কথাগুলো যেন ক্ষুধার্ত পেটের গহীন আর্তনাদের সামনে একটি তুচ্ছ আশ্বাসমাত্র। চাল কবে আসবে, তা কেউ জানে না। আর ততদিন ক্ষুধা আগুন হয়ে পুড়িয়ে দেবে তাদের শরীর ও আশা।


ফকিরঘাট নয়, উপকূলের সবখানেই একই ছবি। শীর্ণকায় জেলেরা ছেঁড়া গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করছে। শিশুদের কান্না মিলিয়ে যাচ্ছে সাগরের বাতাসে। "ভাত দে মা, ক্ষুধা পেয়েছে"শত শত শিশুর এই চিৎকার যেন আকাশকেও ভারী করে তুলেছে।

এই বাস্তবতা কেবল দারিদ্র্যের গল্প নয়এ হলো লজ্জার গল্প। যেখানে রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তা আর মানবতার ব্যর্থতা মিলেমিশে একটি জাতির বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে। জীবনের যুদ্ধ তো তারা জিতেছে বারবার, কিন্তু আজতালতলীর সাগরপাড়ে বসে থাকা এই হাজারো জেলে হারছে ক্ষুধার কাছে।


আরও খবর



হযরত আবু আয়ুব আনসারী (রাযিঃ)'র জীবনী

প্রকাশিত:রবিবার ২০ এপ্রিল ২০25 | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫ |

Image

সাহাবী হযরত আবু আয়ুব আনসারী (রাযি.)'র জিয়ারতে হযরত শাহসুফি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভাণ্ডারী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী :

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাযি. একজন বিশিষ্ট আনসারী সাহাবী। তাঁর মূল নাম খালিদ ইবন যায়দ। আবূ আইয়ূব তাঁর উপনাম। তিনি আনসারদের খাযরাজ গোত্রের শাখা বনূ নাজ্জারের লোক। তিনি আকাবার বায়আতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন প্রথম কয়েক মাস তাঁর বাড়িতেই অবস্থান করেছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনী আল-কাসওয়া তাঁর বাড়ির সামনে এসে থামলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। একমাস পর্যন্ত তিনি এ বাড়ির মেহমান হয়ে থাকেন। এটা হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. -এর এক বিশেষ মর্যাদা। প্রথমদিকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের নিচ তলায় থাকতেন এবং আবূ আইয়ূব রাযি. নিজে উপর তলায়। একদিন উপর তলায় পানি পড়ে গেল। তিনি ও তাঁর স্ত্রী একটা কাপড় দিয়ে সে পানি মুছে ফেলার চেষ্টা করেন, যাতে তা নিচে গড়িয়ে না পড়ে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কষ্ট না পান। তারপর তার অনুরোধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর তলায় উঠে আসেন। যখন মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তার পাশে বাসস্থান নির্মিত হয়, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে চলে আসেন।

এই সৌভাগ্যের কারণে এ উম্মতের দৃষ্টিতে তার এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এমনকি সাহাবীগণও তার সে মর্যাদা উপলব্ধি করতেন। বর্ণিত আছে, তিনি একবার বসরায় আগমন করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. তখন বসরার গভর্নর। তিনি হযরত আবূ আইয়ূব রাযি.-কে নিজ বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। এজন্য তিনি নিজ বাড়িটি তার জন্য খালি করে দেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আবৃ আইয়ূব রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যা করেছিলেন, তিনিও তাঁর সঙ্গে সেরূপ ব্যবহার করতে চান। পরে তিনি হযরত আবূ আইয়ূব রাযি.-কে জিজ্ঞেস করেন তাঁর কোনও ঋণ আছে কি না এবং থাকলে তার পরিমাণ কত? হযরত আবূ আইয়ূব রাযি. বললেন তার বিশ হাজার দিরহাম ঋণ আছে। হযরত ইবন আব্বাস রাযি. তাঁকে চল্লিশ হাজার দিরহাম প্রদান করেন, সেইসঙ্গে বিশজন গোলাম এবং ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।

হযরত মুআবিয়া রাযি. যখন আমীরুল মুমিনীন পদে অভিষিক্ত, তখন দামেশকে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. তাঁর সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাঁকে নিজ আসনে পাশাপাশি বসতে দিয়েছিলেন।হিজরতের পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুস'আব ইবন উমায়র রাযি. ও আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি.-এর মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপিত করে দিয়েছিলেন।

বদর, উহুদ, খন্দক ও বায়আতুর রিযওয়ানসহ প্রতিটি জিহাদ ও অভিযানে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পরও তিনি জিহাদে অংশগ্রহণের ধারা অব্যাহত রাখেন। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত উমর ফারূক রাযি., হযরত উছমান গনী রাযি. ও হযরত আলী রাযি.- এ চারও খলীফার আমলে তিনি নিয়মিত জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। হযরত আলী রাযি. যখন ইরাক গমন করেন, তখন মদীনা মুনাউওয়ারায় তাঁকে নিজ স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করে যান। তিনি হযরত আলী রাযি.-এর সঙ্গে খারিজীদের বিরুদ্ধেও জিহাদে তৎপর ছিলেন। জিহাদে অংশগ্রহণের স্পৃহা তার মধ্যে এত বেশি ছিল যে, শেষ বয়সে তাঁর বার্ধক্যের সময়ও তিনি রোম অভিযানে শরীক হবার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং স্বীয় পরিবারের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি জিনিসপত্র  গুছিয়ে রওয়ানা হন। উক্ত অভিযানের নেতৃত্বভার ছিল য়াযীদ ইবন মু'আবিয়া (রা)-এর উপর। অন্যান্য বড় বড় সাহাবীর ন্যায় তিনিও একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবে রোম তথা কুসতুনতুনিয়া (কন্সটান্টিনোপল) অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এ সফরে মুসলিম বাহিনীর মধ্যে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বহু মুসলিম মুজাহিদ। ইন্তিকাল করেন। আবূ আয়ূব (রা)ও উক্ত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেনাপতি য়ায়ীদকে তিনি ওয়াসিয়াত করেন যে, শত্রুভূমির যতদূর তোমরা যেতে পার তার শেষ সীমানায় আমার লাশ দাফন করবে। অতঃপর এ সফরেই ৫২ হি. (মান্তরে ৫০, ৫৫ হি.) তিনি ইন্তিকাল করেন। মুসলিম বাহিনীর সকল সদস্য তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেন এবং য়াযীদ তাঁর জানাযায় ইমামতি করেন। অতঃপর ওসিয়ত মুতাবিক সকল সৈন্য অস্ত্র সজ্জিত হয়ে রাতের বেলা কুসতুনতুনিয়া প্রাচীরের পাদদেশে তাঁর লাশ দাফন করেন। দাফন শেষে কাফিরদের বেআদবীর আশঙ্কায় য়াযীদ তাঁর কবর মাটি সমান করে দেন। সকালবেলায় রোমক বাহিনী মুসলমানদেরকে জিজ্ঞেস করল, রাতের বেলা তোমাদেরকে খুব ব্যস্ত দেখলাম, কী ব্যাপার? মুসলমানগণ উত্তর দিলেন আমাদের নবীর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইন্তিকাল করেছেন। তার দাফন-কাফনে 'আমরা ব্যস্ত ছিলাম। তবে তাঁকে 'আমরা কোথায় দাফন করেছি তা তোমরা জান। সাবধান! তাঁর কবরের সাথে কোনরূপ বেআদবী করা হলে জেনে রাখো, ইসলামের এ বিশাল সাম্রাজ্যের কোথাও তোমাদের ঘণ্টাধ্বনি বাজতে পারবে না। (সিয়ারুস সাহাবা, ৩/১খ, ১০৯, ১১০) ইবন সা'দ (রা) বলেন, রোমবাসী আজও উক্ত কবরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে এবং তার যথাসাধ্য সংস্কারও তারা করে। অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষের সময় তারা উক্ত কবরের উসীলায় বৃষ্টি কামনা করে থাকে। (তাবাকাত, তখ., পৃ. ৪৮৫)


উল্লেখ্য মুসলিম বাহিনী এর আগের অভিযানে কনস্টান্টিনোপল জয় করতে সক্ষম হননি। দীর্ঘদিন অবরোধ করে রাখার পরও যখন শহরবাসী আত্মসমর্পণ করতে রাজি হলো না, তখন একপর্যায়ে অবরোধ তুলে নিয়ে এ বাহিনী ফিরে আসে। বস্তুত এ সৌভাগ্য লেখা ছিল সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ'র ভাগ্যে। তিনি হিজরী ৮৫৭ সালে এক মহাবিস্ময়কর সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এ নগর জয়ে সক্ষম হন। জয়লাভের পর তিনি হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি.-এর কবর খুঁজে বের করেন এবং এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি জামে আবূ আইয়ূব নামে খ্যাত। পুরো মহল্লাটিকেই ‘আবূ আইয়ূব মহল্লা' বলা হয়ে থাকে।

হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি.-এর সূত্রে ১৫০টি হাদীছ বর্ণিত আছে। তার মধ্যে ৭টি আছে বুখারী ও মুসলিম শরীফে। হযরত বারা' ইবন আযিব রাযি. হযরত জাবির ইবন সামুরা রাযি., হযরত আবূ উমামা বাহিলী রাযি., হযরত যায়দ ইবন খালিদ জুহানী রাযি. ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি.-এর মত বিশিষ্ট সাহাবীগণও তাঁর থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।


আবূ আয়্যূব খালিদ ইব্‌ন যায়দ আন-নাজ্জারী (রা)

প্রকৃত নাম খালিদ ইব্‌ন যায়দ, উপনাম আবূ আয়ূব। এ উপনামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। মদীনার খাযরাজ গোত্রের শাখা বানু নাজ্জার এ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশলতিকা হল, আবূ আব্বার খালিদ ইবন যায়দ ইবন কুলায়ৰ ইবন ছা'লাবা ইবন আবদ ইবন 'আওফ ইবন পানম ইবন মালিক ইবনিন-নাজ্জার আল-আনসারী আন-নাজ্জারী আল-খাযরাজী। তাঁর মাতার নাম ছিল যাহরা বিনত সা'দ ইবন কায়স। বংশ গৌরবের সাথে সাথে তাঁর পরিবারও ছিল খুবই সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত। তিনি ছিলেন স্বীয় গোত্রের নেতা।

আবূ আয়ূব আনসারী (রা) আকাবার শপথে অংশগ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ শেষে মদীনায় ফিরে তিনি জোরে শোরে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। তিনি স্বীয় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের ঈমানের দাওয়াত দেন। দাওয়াতের প্রথমদিকে তাঁর স্ত্রীও ইসলাম গ্রহণ করেন। হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে মুস'আব ইবন 'উমায়র (রা)-এর সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কা থেকে হিজরত করে প্রথমত মদীনার অদূরে কুবা পল্লীতে উঠেন। কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করার পর তিনি ইয়াছরিব তথা মদীনায় রওয়ানা হন। কাসওয়া নাম্নী এক উষ্ট্রীর পিঠে তিনি সওয়ার ছিলেন। এ সময় সম্ভ্রান্ত লোকজন এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সকলেরই আন্তরিক কামনা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সা) আমার বাড়িতে মেহমান হোন । রাসূলুল্লাহ (সা) সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন

خلوا سبيلها فانها مامورة

"উষ্ট্রীর রাস্তা ছেড়ে দাও। সে এ ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছে।” কোথায় থামতে হবে তা সে নিজেই খুঁজে নিবে। অতঃপর উষ্ট্রীটি আবূ আয়ূব আনসারী (রা)-এর বাড়ির সামনে গিয়ে বসে পড়ল। আবূ আয়ূব আনসারী (রা) সামনে এসে বললেন, এখানে আমার ঘর। অনুমতি দিলে মালপত্র নামিয়ে নিই।

রাসূলুল্লাহ (সা)-কে স্বীয় গৃহে মেহমান হিসেবে নেয়ার আরো বহু আগ্রহী সাহাবী যেহেতু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশে। লটারী করা হল। লটারীতেও আবূ আয়ূব আনসারী (রা) বাড়িতেই মেহমান হলেন। মসজিদে নববী ও তৎসংলগ্ন হুজরাসমূহ নির্মাণের পূর্ব পর্যন্ত ছয়মাস তিনি আবূ আয়ূব আনসারী (রা)-এর বাড়িতে মেহমান হিসেবে ছিলেন। এ সময় প্রাণ ভরে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সেবা-যত্ন ও মেহমানদারী করেন। তাঁর একটি দ্বিতল গৃহ ছিল। তিনি তার উপরতলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বসবাসের জন্য দেন। কিন্তু সাক্ষাৎপ্রার্থীদের ভীড় ও যাতায়াতের কথা চিন্তা করে রাসূলুল্লাহ (সা) নিচের তলাটি গ্রহণ করেন। একবার ঘটনাক্রমে উপর তলায় রক্ষিত পানির পত্র ভেঙ্গে পানি পড়ে গেল। ছাদ যেহেতু মামুলি ধরনের ছিল, তাই উক্ত পানি নিচে গড়িয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কষ্ট হবে মনে করে তাঁদের একমাত্র কম্বলখানি দিয়ে পানি মুছে ফেললেন এবং কম্বল অভাবে শীতের রাতে আবূ আয়্যব (রা) ও তাঁর স্ত্রী ঘরের এক কোণে বসে বিনিদ্র রজনী যাপন করলেন। সকাল বেলা তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে ঘটনা বর্ণনা করে তাঁকে উপর তলায় তাশরীফ নেয়ার আবেদন করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) সে আবেদন গ্রহণ করে উপরতলায় বসবাস করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) যতদিন তাঁর বাড়িতে ছিলেন ততদিন বেশির ভাগ সময়ই আবূ আয়ূব (রা) তাঁর খানার ইনতিজাম করতেন।

অন্যান্য আনসারগণও খানা পাঠাতেন। আহারের পর যে খাবার উদ্বৃত্ত থাকত, রাসূলুল্লাহ (সা) তা আবূ আযব (রা)-এর গৃহে পাঠিয়ে দিতেন। আবূ আয়ূব সে খাবারের যেখানে থেকে রাসূলুল্লাহ (সা) আহার করেছেন, আঙ্গুলের চিহ্ন দেখে দেখে সেখান থেকে আহার করতেন। এভাবেই তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বরকত লাভে ধন্য হন। একদিন আবূ আয়ূব (রা)-এর গৃহে ফেরৎ যাওয়া খাবারে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আঙ্গুলের কোন চিহ্ন ছিল না। আবূ আয়ূব পেরেশান হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে এসে আহার গ্রহণ না করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, খাবারের মধ্যে রসুন দেয়া হয়েছে, যা আমি পছন্দ করি না। তখন আবূ আয়ূব (রা) বললেন, আপনি যা অপছন্দ করেন আমিও তা অপছন্দ করি। (মুসলিম, ২খ, ১৯৭)

আবূ আয়ূব আনসারী (রা) ছিলেন একজন সাহসী বীর যোদ্ধা। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবদ্দশায় তিনি বদর, উহুদ, খন্দক, হুদায়বিয়াসহ সকল যুদ্ধেই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ইন্তিকালের পরও তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় জিহাদে ব্যয় করেন। 'আলী (রা)-এর খিলাফত আমলে খারিজীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ‘আলী (রা)-এর ছিল তাঁর উপর অবিচল আস্থা। তাই তিনি যখন ইসলামী খিলাফতের রাজধানী কুফায় স্থানান্তর করলেন তখন আবূ আয়ূব আনসারী (রা)-কে মদীনার গভর্নর নিযুক্ত করে যান।

রাসূলুল্লাহ (সা)-কে দীর্ঘদিন খিদমত করা এবং তাঁর প্রতি প্রগাঢ় মহব্বত থাকার কারণে সকল সাহাবী ও আহলে বায়তের লোকজন আবূ আয়ূব আনসারী (রা)-কে খুবই সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখতেন। তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। ইবন 'আব্বাস (রা), 'আলী (রা)-এর পক্ষ থেকে বসরার গভর্নর ছিলেন। এ সময় আবূ আয়ূব (রা) তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য বসরা গমন করেন। ইবন 'আব্বাস (রা) তাঁকে পেয়ে মহা সমাদর করলেন। তিনি বললেন, আমি চাই আপনি যেমন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অবস্থানের জন্য নিজের ঘর খালি করে দিয়েছিলেন তদ্রূপ আমিও আজ আপনার জন্য আমার ঘর খালি করে দেব। এই বলে তিনি স্বীয় পরিবার পরিজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিলেন এবং ঘরের সকল সামানপত্রসহ আবূ আয়ূব আনসারী (রা)-কে সোপর্দ করলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ইন্তিকালের পর খলীফাগণ বায়তুল মাল থেকে আব্বু আয়ুব আনসারী (রা)-কে মাসিক চার হাজার দিরহাম ভাতা প্রদান করতেন। 'আলী (রা)-এর খিলাফত আমলে তিনি এটা বাড়িয়ে বিশ হাজার দিরহাম করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি যেমন তাঁর অগাধ ভালোবাসা ছিল তেমনি তাঁর হাদীছের প্রতি ছিল তাঁর প্রচণ্ড আকর্ষণ। তাই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি একটিমাত্র হাদীছের জন্য মিসর সফর করেন। আমীর মু'আবিয়া (রা)-এর শাসনামলে তাঁর পক্ষ থেকে মিসরের গভর্নর ছিলেন 'উকা ইবন 'আমির আল-জুহানী (রা) । আবূ আযাব (রা) জানতে পারেন যে, উকবা ইবন 'আমির আল-জুহানী (রা) বিশেষ একটি হাদীছ বর্ণনা করেন, যা তাঁর নিজের জানা নেই। অতঃপর তিনি এই একটিমাত্র হাদীছ শোনার জন্য বার্ধক্য সত্ত্বেও মিসর রওয়ানা হন। 'উকবা (রা)- এর বাড়িতে পৌঁছে তিনি 'মুসলমানদের দোষ গোপন' সম্পর্কিত হাদীছটি জিজ্ঞেস করলেন এবং বললেন, বর্তমান সময়ে আপনি ছাড়া এ হাদীছটি আর কেউ জানে না। অতঃপর হাদীছটি শ্রবণের পর তিনি উটের পিঠে আরোহণ করে সোজা মদীনায় চলে আসেন। (মুসনাদে আহমদ, ৪খ., পৃ. ১৫৩)

তাঁর চরিত্রের তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল ঃ (ক) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা; (খ) ঈমানের জোশ এবং (গ) সত্য ও ন্যায় কথা বলা। প্রথমটির নিদর্শন পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ (সা)-কে মেহমানদারীর ঘটনায়। দ্বিতীয়টির নিদর্শন পাওয়া যায় বার্ধক্যের সময় জিহাদে গমন এবং শত্রু ভূমির সীমান্তে তাঁর লাশ দাফনের ওসিয়াত করায় এবং তৃতীয়টির নিদর্শনও রয়েছে অসংখ্য ঘটনায়। রোম যুদ্ধ চলাকালে জাহাজে বহু বন্দী ছিল। আবূ আয়ূব আনসারী (রা) তাদের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখলেন বন্দীদের মধ্যে এক মহিলা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে তিনি তার কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করায় লোকজন বলল, 'তার সন্তানকে তার থেকে ছিনিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তখন আবূ আয়ূব (রা) তার ছেলের হাত ধরে এনে মহিলাটির হাতে দিয়ে দিলেন। তদারককারী কর্মকর্তা আমীরের নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ পেশ করলে আমীরের জিজ্ঞাসাবাদে আবূ আয়ূব (রা) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এ ধরনের নির্যাতন করতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, ৫খ., পৃ. ৪১৩)


আবূ আযাব আনসারী (রা)-এর চার সন্তানের নাম জানা যায়, যারা তার ইন্তিকালের পরও জীবিত ছিলেন। তারা হলেন, আবূ মানসুর আযাব, এর নাম থেকেই তাঁর উপনাম হয় আবূ আযাব, "উমারা, মুহাম্মদ ও আবদুর রহমান। শেষোক্তজনের মাতার নাম ছিল উম্মু হাসান বিনত যায়দ ইবন ছাবিত (রা)। তিনিও ছিলেন উঁচু পর্যায়ের একজন মহিলা সাহাবী। পুত্রদের ইন্তিকালের পর তার কোন বংশধর ছিল বলে জানা যায় না।তিনি ছিলেন অতিশয় লজ্জাশীল। কূপের পাড়ে গোসল করলে তিনি তারচতুস্পার্শ্বে কাপড় টানিয়ে নিতেন।আবু আয়ূব আনসারী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বেশ কিছু হাদীছ রিওয়ায়াত করেছেন। মুসনাদ বাকী ইবন মাখলাদ-এ তাঁর ১৬৫টি হাদীছের কথা উল্লেখ হয়েছে। যার মধ্যে বুখারী ও মুসলিম-এ যৌথভাবে সাতটি, শুধুমাত্র বুখারীতে একটি এবং শুধুমাত্র মুসলিম-এ পাঁচটি হাদীছ রিওয়ায়াত করা হয়েছে। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে তা থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন : জাবির ইবন সামুরা, আল বারা' ইবন 'আযিব আল- মিকদাম ইবন মা'দী কারিব, 'আবদুল্লাহ ইবন "আব্বাস ও যায়দ ইবন খালিদ আল-জুহানী প্রমুখ (রা)। আর তাবিঈদের মধ্যে 'আবদুল্লাহ ইবন য়াযীদ আল-খাতমী, জুবায়র ইবন নুফায়র, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব, উরওয়া ইবনুয-যুবায়র, মূসা ইবন তালহা, আতা ইব্‌ন য়াযীদ আল- লায়ছী ও তাঁর আযাদকৃত দাস আফলাহ, আবূ সালামা, ইব্‌ন 'আবদির রাহমান, আবদুর রাহমান আবী লায়লা, মুহাম্মদ ইব্‌ন আবী লায়লা, মুহম্মাদ ইবন কা'ব ও আল-কাসিম আবূ 'আবদির-রাহমান প্রমুখ (র)।


আরও খবর