রোকসানা মনোয়ার : ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে
খেলাপ ঋণ। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণও। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও
বেসরকারি খাতের আটটি ব্যাংক । সেপ্টেম্বর
শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা।
ঘাটতির তালিকায় রয়েছে সরকারি অগ্রণী,
বেসিক, জনতা ও রূপালী ব্যাংক। আর বেসরকারিতে বাংলাদেশ কমার্স, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের
নাম।
করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে
নানামুখী সুবিধা দিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ পরিশোধেও বিভিন্ন ছাড় দিয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের শুরুতে তা তুলে নেয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খেলাপি
ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, সব ধরনের ব্যাংক যেসব ঋণ দেয় তার
গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রভিশন হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ
শেষ পর্যন্ত মন্দ ঋণে পরিণত হলে তাতে যেন ব্যাংক আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে,
সেজন্য এ প্রভিশন সংরক্ষণের নিয়ম রাখা হয়েছে।
ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ
শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্ন বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয়
২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ
প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক
শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। জুন শেষে এ
চার ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বেসিক ব্যাংকে
চার হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। জুনে যা ছিল চার হাজার ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর পরেই
অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি তিন হাজার ৫২১ কোটি টাকা। জুনে ছিল দুই হাজার ৯৭৩ কোটি ২২
লাখ টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। তিন হাজার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ
টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। জুনে রূপালীর ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৯৬২ কোটি
১০ লাখ টাকা৷
চতুর্থ অবস্থানে থাকা জনতা
ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমে হয়েছে ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। জুনে যা ছিল ৬৪০
কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বেসরকারি চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি আট হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর
মধ্যে শুধু ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঘাটতি সাত হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৯ লাখ
টাকা। জুনে ঘাটতি ছিল সাত হাজার ১১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৪ কোটি ৬৮ লাখ
টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা
ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।