রোকসানা মনোয়ার : পাইকারি ও খুচরা বাজারসহ কোথাও চালের ঘাটতি নেই। সরবরাহ স্বাভাবিক আছে, দুর্ভিক্ষ হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই এরপরও বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ছে চালের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংকটের খবরে হঠাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল ক্রয়, করপোরেট কোম্পানিগুলোর বাজার থেকে চাল ক্রয় এবং উৎপাদন খরচ বেশি এই তিন অজুহাতে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা, মাঝারি মানের বিআর আটাশ চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা, মোটা চাল স্বর্ণা ৪৬ টাকা এবং হাইব্রিড ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। পাইকারি বাজারে চিকন চাল প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। ৫০ কেজির বস্তা ৩৪০০ থেকে ৩৫৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে মানভেদে বিক্রি হয়েছিল ৬২ থেকে ৬৯ টাকা আর বস্তা ৩০০০ থেকে ৩৪০০ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৭৫ টাকা আর ৫০ কেজির বস্তা ৩২৫০ থেকে ৩৭৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৭২ টাকা, বস্তা ৩০০০ থেকে ৩১০০ টাকা। মাঝারি মানের প্রতি কেজি বিআর ২৮ নম্বর প্রতি কেজি চাল ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা আর বস্তা ২৭৫০ থেকে ২৮৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৫৫ টাকা, বস্তা ২৭০০ থেকে ২৭৫০ টাকা। মোটা চাল প্রতি কেজি স্বর্ণা মানভেদে ৫০ থেকে ৫২ টাকা আর বস্তা ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, বস্তা ২৩৫০ থেকে ২৪০০ টাকা। হাইব্রিড ধানের চাল বা সবচেয়ে মোটা চালের দাম কেজিতে ৪৬ টাকা আর বস্তা ২৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ৪১ টাকা কেজি, বস্তা ২০৫০ টাকায় বিক্রি হতো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বাজারে বর্তমানে যেসব চাল সরবরাহ রয়েছে, তা বোরো মৌসুমের। বোরোর শেষ পর্যায় ও আমনও উঠতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাজারে নতুন চাল আসছে। তারপরও দাম বাড়ছে হুজুগে। আগামী বছর সংকট হতে পারে সেই খবরে মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল কিনছে। আমনে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে ধানের দাম বেশি। এছাড়া করপোরেট কোম্পানিগুলো বাজার থেকে চাল কিনে নিচ্ছে এবং সরকারও এ বছর ধান ও চালের দাম বেশি নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা মানা হচ্ছে না কোথাও। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুদ করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তারা পরে বেশি দামে মিলমালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। এজন্য মৌসুমি ব্যবসায়ী কমানো, করপোরেট কোম্পানিগুলোর সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা, সংকটের খবর নিয়ে সবাইকে আরো সচেতন করতে প্রচার বাড়ানো এবং সরকারের মনিটরিং বাড়ানোর পরামর্শ ব্যবসায়ীদের।
সরকার এ বছর ধানের দাম বাড়িয়েছে ফলে সাধারণ কৃষক তো বেশি দামে ধান বিক্রি করছে। যদিও তাদেরও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এছাড়া বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো বেশি চাল কিনে নিচ্ছে। তারপর তারা আরো বেশি দামে প্যাকেটজাত করে বাজারে ছাড়ে। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছর সংকট হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। ফলে মানুষ হুজুগে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এজন্য করপোরেট কোম্পানিগুলোকে সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান নিতে হবে, সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে।
দেশের কিছু জেলায় আগাম জাতীয় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমন ধানের দাম বেশি ফলে চালেরও দাম বেশি। আগামী বছর বিশ্বে এবং দেশে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা থেকে অনেকেই বেশি পরিমাণে চাল কিনে রাখছেন বলে জানা গেছে। মানুষের মধ্যে যে ভয় কাজ করছে, সেটা দূর করতে প্রচার বাড়াতে হবে, নতুন ধান যখন ওঠে তখন কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী বা অসাধু ব্যবসায়ী দেখা যায়, তাদের কমাতে হবে এবং সরকারের আরো নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সারা বছরে মোট চালের চাহিদা ৩ কোটি ৬০ লাখ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৭৬ লাখ টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট চাল আমদানি হয় ১০ লাখ ৬৭ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৮ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে চাল মজুদ রয়েছে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮৮ টন এবং ধান ১১ হাজার ৬৩২ টন।