ভাবলে অবাক হবেন, কিন্তু বাস্তবতা হল ১ কেজি আমের দাম আড়াই থেকে ৩ লক্ষ রুপি। বিশ্বের মূল্যবান জাপানি 'মিয়াজাকি' আমের দেখা মিলল পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার দুবরাজপুরের এক মসজিদে। সম্পূর্ণ সতেজ একটি আপেলের মত দেখতে এই আম৷ ইতিমধ্যে এই আম দেখতে ওই মসজিদে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন৷
শুক্রবার জুমার নামাজের পর এই আম নিলামে চড়ালো মসজিদ কমিটি৷ নিলামের সেই অর্থ ব্যবহার করা হবে মসজিদের উন্নয়ন কাজে।
জাপানের কিউশু প্রদেশের মিয়াজাকি শহরকে 'king of fruit' বলা হয় ৷ সেই শহরেই একটি বিশেষ আমের ফলন হয়৷ গোটা বিশ্বে দামি আমগুলির মধ্যে অন্যতম এই 'মিয়াজাকি' আম- যা অনেকটা আপেলের মত দেখতে। শহরের নামানুসারে এই আমের নাম 'মিয়াজাকি'। এই প্রজাতির এক একটি আম ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজনের হয়৷ মসৃণ ত্বক ও লাল রঙের সৌন্দর্য্যের জন্য সূর্যদয়ের দেশে এই আমের অপর একটি নাম 'egg of sun'। আমের আঁটি ছোট হয়, শ্বাস বেশি হয়। তবে সব জলবায়ুতে এই আমের ফলন হয় না৷ দুষ্প্রাপ্য বলে প্রতি কেজি আমের দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আড়াই থেকে ৩ লক্ষ রুপি৷ ভারতের মতো বাজারে প্রতি পিস আমের দাম ১৫ হাজার রুপি হয়ে থাকে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বেটা-ক্যারোটিন, ফলিক অ্যাসিড। এই আমের প্রচুর গুনাগুনও আছে।
সেই দুষ্প্রাপ্য আমের দেখা মিলল বীরভূমের দুবরাজপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ইসলামপুর বনকাঠি পাড়ার গওসিয়া মসজিদে। ২০১৯ সালে এই মসজিদটি তৈরি করা হয়। এরপরেই প্রায় তিন বছর আগে স্থানীয় এক যুবক সৈয়দ নিজামুদ্দিন ওরফে সোনা এই গাছের চারা এনে মসজিদে লাগিয়েছিলেন৷ তবে নিজের হাতে ওই আমার চারা গাছ লাগানোর কয়েকদিন পরেই তিনি মারা যান। যদিও কোথা থেকে এই আমের চারা এই মসজিদে লাগানো হয়েছিল, তা কারো জানা নেই। সোনার সেই লাগানো গাছে চলতি বছর আমার ফলন হয়৷ যেহেতু আর পাঁচটি সাধারণ আমের থেকে এই আম একটু ভিন্ন দেখতে, তাই সহজেই সেটি সকলের নজরে আসে৷ প্রায় ৮ ফুট উচ্চতার এই গাছটিতে ১১ টি আম ধরে। এরমধ্যে ঝড়ে একটি আম পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ১০টা আমের মধ্যে এদিন একটি আম নিলাম করা হলো।
বিভিন্ন সূত্র মারফত মসজিদের লোকজন জানতে পারেন এই আমের মূল্য, গুণগত মান, দুষ্প্রাপ্যতার কথা৷ আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্বে দামি আম দেখতে মসজিদে ভিড় জমাতে থাকেন মানুষজন। মোবাইলের লেন্স বন্দি করেছেন আমগুলি৷
এদিন, এই গাছটি থেকে একটি মাত্র আম পাড়া হয় এবং সেটিকে বিক্রির জন্য দরপত্র (নিলাম) ডাকে মসজিদ কমিটি৷ তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই আম বিক্রির অর্থ মসজিদের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে৷ আগামী বছরগুলিতেও এই গাছটিকে পরিচর্যা করে আম বিক্রি করে এই প্রক্রিয়া চলবে বলে জানান তারা।
মসজিদের ইমাম মহম্মদ রফিউদ্দিন খান বলেন, 'প্রথমে আমরা জানতাম না যে এটা এত দামি আম গাছ৷ স্যোসাল সাইট দেখে জানতে পারি এটা 'মিয়াজাকি' আম। এটি সহজে পাওয়া যায় না, খুব দামি৷ তাই আমরা ঠিক করি একটা আম নিলাম করা হবে। পরবর্তীতে বাকি আমগুলিকে বিক্রি করার জন্য দরপত্র ডাকা হবে।'
সৈয়দ মোতায়ার হোসেন নামে মসজিদ কমিটির এক সদস্য জানান 'তিন বছর আগে আমার ভাই এই গাছটি এনে লাগিয়েছিলেন। তিনি এখন নেই, মারা গেছেন। মোবাইলের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে এটি একটি দুষ্প্রাপ্য আম গাছ। প্রথমে সবুজ, পরে বেগুনি, শেষে পেকে লাল রঙের হয়েছে আমগুলি। অন্য আমের চেয়ে আলাদা দেখতে৷'
দুষ্প্রাপ্য এই গাছটিকে সুন্দর রাখতে ও এর পরিচর্যা করতে স্থানীয় নার্সারী কিংবা গাছ বিশারদদের সাথে আলোচনা করা হবে বলে জানান মোতাহার।