Logo
শিরোনাম

বেনজীরের সাভানা পার্কের নিয়ন্ত্রণ নিল জেলা প্রশাসন

প্রকাশিত:শনিবার ০৮ জুন ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪ |

Image

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শনিবার (০৮ জুলাই) সকাল থেকে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পার্কের যাবতীয় কার্যক্রম চালু থাকবে। এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুইটি দল পার্কে অবস্থান নেয়। এদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে পার্কের প্রধান ফটকের পাশে মাইকিং করে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যৌথভাবে এ ঘোষণা দেয়।

এ অভিযানে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজ বাবলী শবনম, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান, সহকারী পরিচালক সোহরাব হোসেন সোহেল, দুদক মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান ও গোপালগঞ্জ জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগানসহ জেলা প্রশাসন ও দুদক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৫ থেকে ২০২০ সালে র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং ২০২০ সাল থেকে থেকে ২০২২ পর্যন্ত আইজিপি থাকাকালীন সময়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল গ্রামে ৬২১ বিঘা জমির ওপর বেনজির গড়ে তোলেন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক। এ পার্কের জমির প্রায় সবই হিন্দু সম্প্রদায়কে ভয় দেখিয়ে, জোর করে এবং নানা কৌশলে কেনা হলেও অনেক জমি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।


আরও খবর



ফরিদপুরের সিংহপুরুষ মুফতী আব্দুল কাদের রহঃ

প্রকাশিত:রবিবার ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ১৪ অক্টোবর ২০২৪ |

Image

আমিনুল ইসলাম কাসেমী, শিক্ষক ও কলামিস্ট :

ফরিদপুর জামেয়া আরাবিয়া শামসুল উলুম মাদ্রাসার মোহতামিম মুফতী আব্দুল কাদের রহঃ ছিলেন একজন সিংহপুরুষ। রাজপথের লড়াকু সৈনিক। একজন  মর্দে মুজাহিদ আলেম। 


মুফতী আব্দুল কাদের সাহেবকে সিংহপুরুষ উপাধী আমি দেই নি। এটা দিয়েছিলেন, মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহঃ।  যিনি ফরিদপুর শহরের লাখো  জনতার মাঝে মুফতী আব্দুল কাদের সাহেবকে সিংহপুরুষ বলে সম্বোধন করেছিলেন। জনতার মুহু মুহু স্লোগানে ভরে গিয়েছিল সেদিন। ফরিদপুরের জনতা ব্যাংকের মোড় থেকে আলীপুর কবরস্হান মসজিদ পর্যন্ত লক্ষ জনতার সমাবেশ যেন উত্তাল তরঙ্গ। চারিদিক থেকে মিছিল আর মিছিল। পুরো ফরিদপুর শহর ছিল মিছিলের নগরী। চুতুর্দিক থেকে একেরপর এক শুধু মিছিল আসছে। বৃহত্তর ফরিদপুরের সকল জেলা- উপজেলা, মাগুরা, যশোর, এমনকি খুলনা থেকে  তৌহিদী জনতার আগমন ঘটেছিল। 


খুলনা শহর থেকে এক বড় কাফেলা, যশোর থেকে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত একদল সৈনিক, মাগুরা থেকে তৌহিদী জনতার বিশাল জমাত শরীক হয়েছিল। গোটা শহরটা দখলে ছিল ঈমানদার জনতার।  শুধু কালিমার জিকির  আর আল্লাহু আকবার ধ্বনি। যারা বাস্তবে দেখেছেন, তারা হয়ত বলতে পারবেন, সেটা কী দৃশ্য ছিল। 


মুফতী আব্দুল কাদের সাহেব ছিলেন, একজন মর্দে মুজাহিদ। শুধু নামে নয়। বাস্তবে তিনি দেখায়ে গিয়েছেন।   ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তিনি গর্জে ওঠতেন।  যখনই ইসলামের দুশমুনেরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে,তখনি মুফতী  সাহেব  হুঙ্কার দিয়ে ওঠেছেন। সত্যিকারের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেমিক ছিলেন তিনি। প্রিয় নববীর অবমাননাকারীদের কঠিন শিক্ষা দিয়েছেন। স্তব্ধ হয়েছে তাদের কার্যক্রম। তৌহিদী জনতার আন্দোলনের মুখে  নবীর দুশমুনেরা পালাতে বাধ্য হয়েছে। 


২০০৩ সনে ফরিদপুরের কবি জসিম উদ্দীন হলে   "কথা কৃষ্ঞকলি "  নাটকের মধ্যে হযরত ফাতিমা রাঃ  এর  চরিত্র অবমাননা করে নাটক মঞ্চস্হ হয়। এখবর এসে পৌছালো মুফতী আব্দুল কাদের সাহেবের কানে।  তিনি যেন ফুঁসে উঠলেন। তাঁর ঈমানী চেতনা যেন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন কঠিন আকারে। যে ভাবে ব্র্যাঘ্র গতিতে ছুটেছিলেন  ময়দানে।  নিজের অনুগত আলেম- উলামাদের নিয়ে  যেভাবে প্রতিবাদের তুফান উঠায়েছিলেন।  তাতে কম্পন শুরু হয়েছিল, নবী এবং সাহাবা দুশমুনদের অন্তরে।  বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত মানুষ ছুটে  এসেছিল ফরিদপুর শহরে।


মু্ফতী আব্দুল কাদের সাহেব লড়াকু সৈনিক। হার না মানা এক মুজাহিদের নাম। অদম্য সাহস। বৃহত্তর ফরিদপুরের সকল আলেমদের  এক প্লাট-ফরমে এনেছিলেন। যখনই তিনি ডাক দিয়েছেন, হাজার হাজার জনতা উপস্হিত হয়েছে।  আলেমগণ ছুটে এসেছে। একটি নাম মুফতী আব্দুল কাদের।  তাঁর নামেই জমা হয়েছে।  

দক্ষিণ বঙ্গের এক মহান ব্যক্তিত্ব। পদ্মার পারের ওলামা ত্বলাবা এবং আম জনতার  মধ্যমণি।   যার ব্যক্তিত্বের সামনে সবাই নীচু হয়েছে। মাথা উঁচু করার সাহস কারো ছিল না। 

এই ব্যক্তিত্ব অর্জনের পিছনে ছিল তাঁর সীমাহীন কোরবানী। যুগ যুগ ধরে বৃহত্তর ফরিদপুরের মানুষের খেদমতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন।  সর্বস্তরের মানুষের আস্হার প্রতীক হওয়ার পিছনে কত কাঠ- খড় পোড়াতে হয়েছে বছরের পর বছর তার হিসাব নেই। কত মেহনত, কত গায়ের ঘাম ঝরাতে হয়েছে, তা বর্ননা করে শেষ করা যাবেনা। হক- হক্কানিয়্যাতের উপর অটল- অবিচল থাকতে বহু ঝড়- ঝন্জা উপেক্ষা করেছেন। বহু নির্যাতন ভোগ করেছেন  দুশমুনদের।  বিশেষ করে হকের উপর টিকে থাকতে নবী - সাহাবীদের  শত্রুদের হাতে লাঞ্চিত- অপমানিত হয়েছেন। তবুও কিন্তু তিনি বিন্দু পরিমান সরে যান নি সত্য নীতি থেকে।


বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে  মুফতী আব্দুল কাদের সাহেবের গ্রহণযোগ্যতা ছিল  বর্ণনাতীত। এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে মুফতী সাহেবের কদম পড়ে নি।  এমন কোন দ্বীনি মারকাজ নেই, যেখানে তিনি যান নি। কারো দাওয়াতের অপেক্ষায় বসে থাকা নয়। বা কোন কিছুর বিনিময়ে নয়। একদম নিঃস্বার্থ ভাবে দ্বীনি প্রোগ্রামে হাজির হতেন। কারো কাছ থেকে বিনিময় গ্রহণ তো করেন নি, বরং ইকরাম এবং সু- পরামর্শ দান করেছেন। 


ফরিদপুর অঞ্চলে এমন কোন প্রতিষ্ঠান দেখাতে পারবে? যেখানে তিনি যান নি। স্বেচ্ছায় গিয়ে হাজির হতেন মাদ্রাসায় মাদ্রাসায়। খোঁজ- খবর নিতেন। 


আকাবির - আছলাফের যোগ্যউত্তরসুরী তিনি। দেওবন্দী ওলামায়ে কেরাম এবং দেওবন্দ থেকে আগত মেহমানদের মাথার তাজ মনে করতেন।  সেই ২০০০ সনে ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহঃ ফরিদপুর সফর করেছিলেন, তখন দেখেছিলাম, আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লা আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসা।  ফেদায়ে মিল্লাতের আগমনকে কেন্দ্র করে পুরো ফরিদপুর যেন সাজ সাজ রব। হাজারো  আলেম এবং সহস্রাধিক তলাবা নিয়ে ফেদায়ে মিল্লাতকে ইস্তেকবালের ব্যবস্হা, আবার ফেদায়ে মিল্লাতের প্রোগ্রামগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য তাঁর আন্তরিকতা দেখেছি অনেক কাছ থেকে। 


একজন নির্লোভ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। জীবনটা কেটেছে ভাঙা টিনের ঘরে। তাঁর  যে জনপ্রিয়তা, তাঁর যত ভক্ত- অনুরক্ত। ইচ্ছে করলে সুরম্য অট্রালিকায় বসবাস করতে পারতেন। ভক্তদের বহু প্রস্তাব এসেছে তাঁর টিনের চালা ফেলে বিল্ডিং করে দিবেন। কিন্তু এই দুনিয়া বিমুখ মানুষটিকে  দুনিয়ার কোন সম্পদের মোহ গ্রাস করতে পারিনি।  দুনিয়ার আরাম- আয়েশ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে নি।  সাধাসিধে যিন্দেগী। একদম সোজাসুজি চলাফেরা ছিল।


এক পাগড়ী ওয়ালা মুজাহিদ। চব্বিশঘন্টা যার মাথায় পাগড়ী বাঁধা দেখেছি। পাগড়ী ছাড়া মুফতী আব্দুল কাদের সাহেবকে দেখা গেছে, এরকম মনেহয় বলা যাবেনা। যেখানে যেতেন, পাগড়ী তাঁর মাথায় শোভা পেত। দীর্ঘ এক যুগ তাঁর কাছাকাছি ছিলাম। তাঁর সোহবতে সময় পার করেছি।  বহুবার সফর হয়েছে তাঁর সাথে দক্ষিণ বাংলার বিভিন্ন জেলাতে। এক গাড়ীতে,  এক সঙ্গে, অনেক সময় কেটেছে তাঁর মত ব্যক্তিত্বের সাথে।   তিনি আমাদের ছারে তাজ। আমাদের মাথার মুকুট। বারবার স্মরণ হয় তাঁর কথা। 


কদিন পরপর যিনি ফোন দিতেন। বাবাজী আসুন! ফোন নিজে দিতে না পারলে মুফতী মাহমুদ হাসান ফায়েক সাহেবকে বলতেন, মাওলানাকে ফোন দেন, অমুককে ফোন দেন। ফোন দিলে ছুটে যেতাম তাঁর খেদমতে। অত্যান্ত হৃদয় জুড়ানো কথা বলতেন।  কথাগুলো একদম হদয়ের গহীন থেকে বের হত।কোন ফাঁক- ফোঁকর থাকত না। 


ফরিদপুর অঞ্চলের বড় বড় সকল প্রোগ্রামের সভাপতির আসন অলংকৃত করতেন। সবশেষে সভাপতির ভাষণ। অল্প সময় কথা বলতেন, তবে নীরব নিস্তবদ্ধ হয়ে যেত ময়দান। কোন রংঢং ছিলনা। সাদামাটা কথা। তাতেই মনভরে যেত।


আজ প্রতিটি মুহুর্তে যেন স্মরণ হয় তাঁর কথা।  সেইরকম হৃদয়বান মানুষের বড্ড অভাব। তিনি চলেগেছেন, তবে তাঁর স্মৃতিগুলো আমরা ভুলতে পারিনা। বাতিল শক্তির আতঙ্ক ছিলেন যিনি। রাজপথের লড়াকু। তাঁকে মনে করবে চিরদিন এদেশের সর্বস্তরের মানুষ।


জীবন ও কর্মঃ


জন্মঃ


মুফতী আব্দুল কাদের সাহেব ১৯৪২ সনের ১৩ আগষ্ট ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার ( বর্তমান সালথা) রামকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মৌলভী হাবিবুর রহমান। মাতার নাম , আমেনা। 


শিক্ষাজীবনঃ 


প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের স্কুলে। এরপর তৎকালিন সময়ের সংস্কারক, দ্বীন ইসলামের অকুতোভয় সৈনিক আল্লামা আব্দুল আজিজ রহঃ এর প্রতিষ্ঠিত বাহিরদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে কিছুদিন লেখাপড়া করার পরে বিশিষ্ট বুজুর্গ হাফেজ ইব্রাহিম সাহেব রহ,  প্রতিষ্ঠিত বাকিগন্জ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে দুই বছর অত্যান্ত সুনামের সাথে লেখাপড়া করেন। 

 এরপর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চট্রগ্রাম চলে যান। প্রথমে চারিয়া মাদ্রাসায় কাফিয়া জামাত পর্যন্ত,  এরপর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। দাওরায়ে হাদীস হাটহাজারীতে।  ইসলামী আইন শাস্ত্র, ফিকাহ এর কোর্স কমপ্লিট করেন,  প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, মুফতীয়ে আজম, মুফতী ফয়জুল্লাহ রহঃ এর নিকটে।

ছাত্রজীবনে লেখাপড়ায় অত্যান্ত মনযোগী ছিলেন। সর্বদা কিতাব মুতালায় নিমগ্ন থেকেছেন। ছাত্রজীবনে অন্য কোন ফিকির, চিন্তা- চেতনায় সময় পার করেন নি। এমনকি বাড়ীতে আসা হত না। একবার একটানা তিনবছর পর বাড়ীতে এসেছিলেন। যখন নিজ গ্রামে পৌছলেন, তখন জানতে পারলেন, তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার ইন্তেকাল হয়ে গেছে। 

ছাত্রজীবন এভাবেই কেটেছিল। লেখাপড়া ছাড়া আর কিছু ছিলনা।  দুনিয়ার কোন ফিকির তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি তখন।


কর্মজীবনঃ 


আসলে বড়দের জীবনী থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে আমাদের। তাঁরা কত মুজাহাদা - কোরবানী দিয়েছেন, সেগুলো দেখে আমাদের ভাবতে হবে। আমরা তো ফারেগ হওয়ার পর ভাল কোন খেদমত না পেলে সময় নষ্ট করে দেই।  অনেকে দাওরার কিতাব না পেলে পড়াতে চান না। বাড়ী বসে থাকেন। বেহুদা কাজে ব্যয় করেন। কিন্তু মুফতী আব্দুল কাদের সাহেব কোন সময়ের অপচয় করেন নি।


তিনি যখন ফারেগ হয়ে এসেছিলেন, ফরিদপুরে বড় কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। যা ছিল সব ছোট ছোট। তবে তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল, ফরিদপুরে একটি বড় দ্বীনি ইদারা কায়েম করবেন। যার দ্বারা এদেশ থেকে অন্ধকার দুর করে  আলো ছড়াবে সে প্রতিষ্ঠান। সেরকম মন-মানসিকতা নিয়ে তিনি সামনে এগিয়েছিলেন। 


হাটহাজারী থেকে এসে তিনি সর্বপ্রথম নিজেদের বাড়ীর কাচারীতে গ্রামের ছেলেদের দ্বীন শেখাতে থাকেন। শুরুতে নিজের এলাকা থেকে অন্ধকার দুর করতে চেয়েছেন। অত্যান্ত  আগ্রহভরে তিনি দ্বীনের তা'লিম দিতে থাকেন। 


এরপর ডাক  আসে বাকিগন্জ মাদ্রাসা থেকে। সেখানে দুবছর সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন। এরপর শাহ ফরিদ দরগাহের পাশে এলাকার কিছু দ্বীনদার মানুষের সহযোগিতায় মাদ্রাসা গড়ে তোলেন। কিন্তু  একটি মহলের সমস্যার কারণে  আর সামনে বাড়তে পারেন নি।  

শহরের প্রাণ কেন্দ্র খান প্রেস যেখানে। এর দোতলায়  তিনি মাদ্রাসা খুলে দেন। সহযোগিতায় ছিলেন খান প্রেসের মালিক আলহাজ্জ আবুল কাসেম খান সাহেব। পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ল মাদ্রাসার খবর। মানুষ আসা- যাওয়া শুরু করল।শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখানেও পরিবেশটা অনুকুল হল না।


মুফতী আব্দুল কাদের সাহেব হাল ছাড়েন নি। দমে যান নি। তাঁর ইচ্ছা একটা বড় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান কায়েম করবেন ফরিদপুর শহরে।  তিনি পরামর্শ এর জন্য চলে  যান চট্রগ্রামে প্রাণপ্রিয় মুরুব্বী  হযরত থানবী রহঃ এর খলিফা আব্দুল ওয়াহাব রহ: এর কাছে।  তিনি পরামর্শ দেন, ফরিদপুর শহরে যেখানে জায়গা পাবেন, মাদ্রাসা গড়ে তোলেন।

মহান আল্লাহর খাছ অনুগ্রহ, মুফতী আব্দুল কাদের সাহেবের পাহাড়সম ইখলাছ- আমলের বহিঃ প্রকাশ বলা যায়। ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর  এলকায়  একাদশ শতাব্দীতে বাগদাদ থেকে  আগত এক মহান বুজুর্গ শাহ আব্দুর রহমান গন্জেরাজ রহঃ এর বংশধরগণ মসজিদ - মাদ্রাসার জন্য জায়গা দান করেন। সেই জায়গাতে ১৯৬৯ সনে টিনের দোচালা ঘর নির্মান করে মাদ্রাসার অগ্রযাত্রা শুরু করেন তিনি।


একদম হাটিহাটি পা পা করে পথ চলা। প্রথমে  মক্তব, এরপর হেফজখানা, এরপর কওমী মাদ্রাসার নেছাব অনুযায়ী তা'লিম। বহু ত্যাগ- তিতিক্ষা, কোরবানী- মুজাহাদা, এক কথায় মুফতী সাহেবের জীবনটা উৎসর্গ করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের জন্য। জীবনের কোন স্বপ্ন- সাধ তাঁর ছিল না। স্বপ্ন একটাই প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানো। অক্লান্ত পরিশ্রম। যে পরিশ্রমের কোন অন্ত নেই। যে কষ্টের কোন সীমা নেই। তিনি ফরিদপুর শহরের বুকে বিশাল এক প্রতিষ্ঠান দাঁড় করেছেন। আস্তে আস্তে সেটা দাওরায়ে  হাদীসে উন্নীত হয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে সুনাম ছড়িয়েছে। 


 এই প্রতিষ্ঠানে তাঁর জীবন কেটেছে। শরীরের রক্ত পানিকরা প্রতিষ্ঠান। যার মেহনতে তৈরী হয়েছে হাজার হাজার দ্বীনের দায়ী। যে প্রতিষ্ঠান হয়েছে, বৃহত্তর ফরিদপুরের আলেম- উলামাদের মারকাজ। যার ওছিলায় আরো হাজারো ইদারা গড়ে উঠেছে।


একজন নির্লোভ দুনিয়া বিমুখ ব্যক্তিঃ


দুনিয়ার মোহ তাঁকে গ্রাস করেতে পারিনি কোন দিন। সাদামাটা চলাফেরা।কোন আড়ম্বরিতা ছিল না।  মুখলিস দায়ী ছিলেন। দ্বীনি কাজকে প্রাধান্য দিয়েছেন। নিজের আরাম- আয়েশের কথা ভাবেন নি কোনদিন।  পুরো শহরে একচেটিয়া  ভক্ত- অনুরক্ত। ভালবাসার মানুষের অভাব ছিল না। কিন্তু  এগুলো নিজের কাজে ব্যবহার করেন নি। সবই প্রতিষ্ঠানের উন্নতির কাজে বিলিয়ে দিয়েছেন। কত ভক্ত  আসত দৈনন্দিন তাঁর কাছে।  হাদিয়া- তোহফায় ভরে যেত। সবই থাকত বালিশের নিচে। ওটা কোনদিন নিজের পকেটে যায় নি। অথচ সেগুলো তো তাঁর ছিল। কিন্তু নিজে কিছুই নেন নি। টাকাগুলো মাদ্রাসায় দান করেছেন। মাদ্রাসা উন্নয়নে বিলিয়ে দিতেন।


একজন প্রসিদ্ধ বুজুর্গ তিনি। যার দোয়া, যার নেক দৃষ্টিতে অনেকেই উপকৃত হয়েছে। বহু ডাক্তার ফেরত রোগী সুস্হ হয়েছে তাঁর ঝাড়- ফুঁকে। ঐ সমস্ত ব্যক্তিগণ হাদিয়ায় ভরে দিয়েছেন। কিন্তু সবই ব্যয় করেছেন দ্বীনি কাজে। নিজের ভাঙা টিনের ঘরে জীবন পার করে দিয়েছেন।


একজন আল্লাহর খাছবান্দা ছিলেন তিনিঃ


ঈর্ষনীয় ছিল তাঁর আমল। খোদার প্রেমে মাতুয়ারা সব সময়। কোন ছাত্র তাঁকে দেখেনি জামাত ত্যাগ করতে। কেউ তাঁকে দেখেনি ফজরের পরে ইশরাক না পড়ে জিকির - মুরাকাবা না করে মসজিদ থেকে বের হতে।  গভীর রাতে মহান প্রভুর সাথে কানাকানিতে মেতে ওঠতেন। রোনাজারী করতেন। এক খাছ দরবেশের সিফাত ছিল তাঁর মধ্যে।


রাজপথে মুফতী আব্দুল কাদের সাহেবকে যেমন দেখেছিঃ 


রাজপথের নির্ভীক লড়াকু। কোন শক্তিকে ভয় পান নি। হাফেজ্জীর খেলাফত আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন। এরপর তিনি কিন্তু রাজপথে। তাঁর কাজই ছিল বাতিলের মোকাবেলা করা। যখনই বাতিল শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে,তখনই গর্জে ওঠেছেন।

রাজনৈতিক প্রজ্ঞাছিল সীমাহীন। বৃহত্তর ফরিদপুরের আলেমদের এক মঞ্চে নিয়ে আসা ছিল তাঁর বড় অবদান। তাঁর জীবদ্দশায় আলেমদের ছিন্ন- ভিন্ন হতে দেন নি। এক জায়গায় রেখেছেন। বিভিন্ন কর্মসুচিতে এক প্লাট- ফরমে দাঁড় করেছেন।


তিনি হকপন্হী সকল আলেমদের সাপোর্ট করেছেন। কাউকে কটাক্ষ করেন নি। সকলে সার্বিক সহযোগীতা করেছেন। যারাই হকের মিশন নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন, সকলকে পুর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। 


রাজনৈতিক অঙ্গনের সকল ওলামায়ে কেরাম- পীর মাশায়েখদের সাথে তাঁর মধুর সস্পর্ক দেখেছি। কাউকে কটাক্ষ করেন নি। উদারতা ছিল তাঁর মধ্যে। যে উদারতা এখন রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় নিয়েছে।  কিন্তু তিনি ছিলেন যেন উদারতার মুর্তপ্রতিক। 


ইসলামী যে নেতাই ফরিদপুরে এসেছে, তাঁর কাছে গিয়েছেন। তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন। হিংসার রাজনীতি তিনি করেন নি।  


পীর মাশায়েখদের মধ্যে যারাই ইসলাহী মিশন নিয়ে কাজ করেছেন, সকলকেই সমর্থন জানিয়েছেন।  মাদানী সিলসিলা, থানবী সিলসিলা, সকলকেই ভালবেসে আগলে রেখেছেন এবং নিজের সহ কর্মিদের সেখানে হাজির করেছেন। সহকর্মিদের আত্মশুদ্ধির মেহনত করায়েছেন। 


দাওয়াত ও তবলীগের জবরদস্ত সাথী ছিলেন তিনিঃ


মুফতী সাহেব নিজে তবলীগে মেহনত করেছেন। চিল্লা দিয়েছেন অসংখ্যবার। শায়খুল হাদীস হেলাল উদ্দীন সাহেবকে সাথে নিয়ে চিল্লায় বেরিয়েছেন। সেটাতো সকলের জানা। এক সময় তাঁর প্রতিষ্ঠানের মসজিদে ফরিদপুরের তবলীগের মারকাজ ছিল।  তিনি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন তবলীগের মেহনতের সাথে। এমনকি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি তবলীগের কাজে শরীক থেকেছেন।

ইন্তেকালঃ ২০১১ সনের ৭ মে তিনি মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান। মহান আল্লাহর কাছে দুআ করি, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে সমাসিন করুন। আমিন।


আরও খবর



শুধু যাত্রাবাড়ি দিয়ে ৪০ জেলার মানুষ ঢাকায় ঢোকে

প্রকাশিত:সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ১৪ অক্টোবর ২০২৪ |

Image

সারা দেশ থেকে ঢাকায় ঢোকার রাস্তা মাত্র ৩টা। এর মধ্যে,গাবতলী দিয়ে ঢাকায় আসে ১৮ জেলার মানুষ। 

উত্তরা দিয়ে ৫ জেলার মানুষ। যাত্রাবাড়ি দিয়ে ৪০ জেলার মানুষ।

এই তিন পয়েন্টের বাইরে যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলোর ডিজাইন ভালো না। তাই প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহারের অযোগ্য। যেমন ধরেন বাবুবাজার সেতু পারতপক্ষে কেউ ব্যবহার করবে না কারণ পুরান ঢাকার যানজট পাড়ি দিতে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা লাগবে। ৩০০ ফিটের রাস্তা কেউ ব্যবহার করবে না কারণ রাস্তা সরু আর প্রায় ১৫ কিমি বেশি ঘুরতে হয়। ইত্যাদি।

.

এখন ফিরে আসি ওই তিন প্রবেশপথের প্রসঙ্গে। এই তিন প্রবেশপথের মধ্যে যেটা সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো উত্তরার রাস্তা। এটা দিয়ে ৫ জেলার মানুষ ঢাকায় ঢুকে। এই রাস্তায় আছে ৪ লেন মহাসড়ক, বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, দুইটা এক্সপ্রেসওয়ে (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর আশুলিয়া-ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে)।

.

উত্তরার রাস্তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ গাবতলী। এটা দিয়ে ১৮ জেলার মানুষ ঢাকায় আসে। এতে ৪ লেন মহাসড়ক আছে। তবে এক্সপ্রেসওয়ে নেই। রাতে এই রাস্তায় ব্যাপক যানজট থাকে।

.

এরপর আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ি। এটা দিয়ে ৪০ জেলার (চট্টগ্রাম, সিলেট, দক্ষিণবঙ্গ) মানুষ ঢাকায় আসে। এই প্রবেশপথটা সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে মজাদার প্রবেশপথ। সিলেট মহাসড়কের ৪ লেন, চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৬ লেন, মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ লেন = মোট ১৪ লেন সড়ককে একত্র করে ১ লেন বানানো হয়। 

.

বিষয়টি বুঝিয়ে বলি। প্রথমে সিলেট মহাসড়ক এনে চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সিলেটের ৪ লেন আর চট্টগ্রামের ৬ লেন মিলে জোর করে ৬ লেন করা হয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ছিল ১০ লেন। এই ৬ লেন এসে ঢুকেছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে। 

.

এদিকে বাম দিকে থেকে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ লেনও মেয়র হানিফে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ১৪ লেন মহাসড়কের চাপ নিয়েছে।

.

এখন হানিফ ফ্লাইওভার যে ঢাকায় ঢুকলো সেটার দিকে তাকাই। হানিফের এক্সিট পয়েন্ট দুইটা। একটা গুলিস্তান (২ লেন)। এই ২ লেন একেবারেই অব্যবহারযোগ্য। হকারদের জন্য গুলিস্তান দিয়ে কোন গাড়ি, বাস ঢোকার উপায় নেই। তাই গুলিস্তানের এক্সিট পয়েন্ট বাতিল। 

বাকি থাকলো চানখারপুল এক্সিট। শুধু এটাই কাজ করে। এটা মাত্র ১ লেন। দুটো গাড়ি পাশাপাশি দাঁড়ানোরও উপায় নেই। ১৪ লেন মহাসড়ক এনে জোর করে ১ লেন করা হয়েছে।

.

প্রশ্ন আসবে, তাহলে এই ট্রাফিক সিস্টেম কাজ করে কীভাবে?

উত্তর হলো, করে না।

প্রতিদিন চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২ কিলোমিটার, মাওয়া মহাসড়কে ২ কিলোমিটার আর সিলেট মহাসড়কে ৬ কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। প্রতিদিন যাত্রাবাড়ি থেকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে আসতে এত ৪০ জেলার মানুষ ৫ কিলোমিটার রাস্তায় ন্যূনতম ৩ ঘন্টা বসে থাকে।

.

এতো বড় ভোগান্তির কথা আপনি আমি জানি না কেন?

জানি না কারণ আমাদের মিডিয়া হাউজগুলো ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত। যাত্রাবাড়ির যানজট পাড়ি দিয়ে কোন ব্যক্তির পক্ষে সকাল ১০টায় উত্তর ঢাকায় গিয়ে অফিস ধরা রীতিমত সুপারহিউম্যানের কাজ। ফলে মিডিয়া ও সাংবাদিক এবং অন্য যারা আমাদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করেন তারা সবাই বাস করেন নিকেতন, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাও, বনানী বা ফার্মগেটের দিকে। ফলে ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ এবং ঢাকার সর্বাধিক জনসংখ্যাপূর্ণ ৪টি থানা কখনোই কোন মিডিয়াতে গুরুত্ব পায় না। যে কারণে এলাকা বিচারে এই গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ছাত্র ও পুলিশ যাত্রাবাড়িতে মারা গেলেও আমরা জানিনা।

.

এটা শুধু একটা উদাহরণ দিলাম। জাস্ট এলিট শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রতিটা উন্নয়ন প্রকল্পে সর্বনাশ হয়ে চলেছে।



আরও খবর



লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতি ১৫০০ কোটি টাকা ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী

প্রকাশিত:শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১১ অক্টোবর ২০২৪ |

Image

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :

লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৮৭০ কোটি টাকা। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে সদর উপজেলায়। জেলায় নিঃস্ব হয়েছেন প্রায় তিন লাখ কৃষক। বন্যার এক মাস পার হলেও ২০ ইউনিয়নের ৩ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী। 

স্থানীয়রা জানান, গত ২০ বছরে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখেনি লক্ষ্মীপুরের মানুষ। এক মাস পার হলেও অনেক এলাকা থেকে এখনো পানি সরেনি। রাস্তাঘাট বাড়িঘর হাঁটু পর্যন্ত পানি তলিয়ে রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানায়, গত ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হয় টানা বৃষ্টি ও বন্যা। এতে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। পানিবন্দী হন ৫ উপজেলাবাসী। ভেসে যায় ৫০ হাজার পুকুর ও ঘেরের ২৫০ কোটি টাকার মাছ। তলিয়ে যায় আমনের বীজতলা, আবাদসহ ৬০ হাজার হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় আরও জানায়, পানির তোড়ে ২০০ ব্রিজ-কালভার্ট এবং কাঁচা–পাকা ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার সড়কের ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অপর দিকে ৯ হাজার ৮৭০ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন, ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৫৬টি গবাদিপশুসহ বিভিন্নভাবে জেলায় বন্যায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জেলায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পুঁজিসহ সব হারিয়ে নিঃস্ব প্রায় তিন লাখ কৃষক। 

জেলার সদর উপজেলার চাঁদখালী গ্রামের খোকন হোসেন ও মোহাব্বত হোসেন জানান, এক মাস পার হলেও এখনো পানিবন্দী। অর্ধাহারে-অনাহারে খেয়ে–না খেয়ে দিন কাটছে। এরই মধ্যে পানিতে পচে গেছে ঘরের আসবাব। ঘরের ভিটেমাটি ধসে গেছে। কোথাও মাথা গোঁজার আশ্রয় নেই। বন্যার পানিতে সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে থাকতে হচ্ছে তাদের। কবে নাগাদ পানি কমবে সে আশায় দিন কাটছে তাদের। 

সদর উপজেলার বালাইশপুর এলাকার আদর্শ খামারের মালিক ফারুকুর রহমান বলেন, ‘চারটি পুকুর ও ঘেরের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। গবাদিপশুর গোখাদ্য নষ্ট হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকার। বন্যায় ক্ষতি ও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এই এলাকায় আমার মতো কয়েক হাজার খামারি নিঃস্ব হয়েছেন।’ 

৩০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানান জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ মিয়া। তিনি বলেন, ‘এবারের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ক্ষতির শিকার প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যে কৃষকই ৩ লাখ। এ ছাড়া জেলার ২০ ইউনিয়নের ৩ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে মানুষের। কাজ করে যাচ্ছি।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘আমন আবাদসহ মোট শস্যখেত রয়েছে ৯০ হাজার ৫৭৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৫৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল। যার ক্ষয়ক্ষতি ৬৩৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।’ 

জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের কাজ চলছে। পাশাপাশি খালগুলোর বাঁধ অপসারণ ও দুপারে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন উচ্ছেদ করে পানি চলাচল স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। সব মিলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৬৯ টন চাল ও ৬৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’ ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।


আরও খবর



সরকারি বরাদ্দ বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪ |

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত জনাব সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা, সকলের জন্য মানবাধিকার উন্নীত করা এবং সমতা ও ন্যাবিচারের উপর ভিত্তি করে সংস্কার করা। তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দ বিতরণে কোনো প্রকার দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। তিনি সাম্প্রতিক সহিংসতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দের উপকরণসমূহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতসহ সঠিকভাবে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।

আজ রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আগস্ট ২০২৪ মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মঞ্জুরিকৃত অর্থ উত্তোলনের ক্ষমতা জেলা প্রশাসককে প্রদান করার  জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে বিগত ২০০২ থেকে ২০০৬ সালে জারিকৃত এ সংক্রান্ত সকল পরিপত্রের শর্তাদি যথাযথভাবে প্রতিপালনের নির্দেশ প্রদান করেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা ও দারিদ্র্যবিমোচনে সরকারি বরাদ্দগুলো যথাযথ উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণের সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপযুক্ত প্রতিনিধি দ্বারা যে কোন মুহূর্তে পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানসহ সার্বিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার নির্দেশের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচি হতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য খাদ্য শস্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ১৫০ জনের প্রতি জনকে ৪০ কেজি হিসেবে ৬ মে. টন চাল, হতদরিদ্র ২০০ জন-এর মধ্যে প্রতি জনকে ২০ কেজি হিসেবে ৪ মে.টন চাল, খাগড়াছড়ি শহরে রাস্তার পাশে দরিদ্র অস্থায়ী দোকানদার এবং হতদরিদ্র ৫০০ জন মানুষের মধ্যে জন প্রতি ২০ কেজি হিসেবে ১০ মে.টন চাল এবং রাঙ্গামাটি শহরে রাস্তার পাশে দরিদ্র অস্থায়ী দোকানদার এবং হতদরিদ্র ৫০০ জনের প্রতি জনকে ২০ কেজি হিসেবে ১০ মে.টন চাল মোট ৩০ মে.টন চাল জেলা প্রশাসক খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি বরাবর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দিঘীনালা উপজেলায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ১৫০ জনের মধ্যে জন প্রতি ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল, জন প্রতি ৫ কেজি মসুর ডাল বাবদ ২ লাখ ২০ হাজার ৫ শত টাকা বরাদ্দের মঞ্জুরী প্রদান করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মালেকা পারভীন স্বাক্ষরিত পত্রে বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য (চাল) পার্বত্য এলাকার সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিতরণের পরবর্তী অগ্রগতি প্রতিবেদন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশনা রয়েছে। বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য ব্যবহারে বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এই মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখ জারিকৃত নীতিমালার প্রতিটি শর্ত যথাযথভাবে অনুসরণ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্যের হিসাব নিরীক্ষার জন্য যথোপযুক্তভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং খাদ্যশস্য ব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিবেদন যথাসময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে এবং বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য স্থানীয় গুদাম হতে যথাসময়ে উত্তোলন করতে হবে।  

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও তিন পার্বত্য জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।


আরও খবর



মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও মিছিল

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০১ অক্টোবর ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ১৪ অক্টোবর ২০২৪ |

Image
মোঃ শাকিল আহামাদ - জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী 

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি চাই এই দাবিতে রাজশাহীতে সাংবাদিকগণ মানববন্ধন ও মিছিল করেছে। 

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

বক্তারা বলেন  সৈরাচারী সরকারের তথ্য উপদেষ্টার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা জয়ের কাছে পাচারের  বিরুদ্ধে যখন কেউ লিখতে পারে নাই বলতে পারে নাই। তখন এই সাহসী সম্পাদক গবেষক লেখক পত্রিকায় লেখালেখি করেন  কারণে  স্বৈরাচারী সরকার দৈনিক আমার দেশ এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নামে মিথ্যা বানোয়াট মামলা করেছে যার কোন ভিত্তি নাই। 

ফ্যাসিট হাসিনার অজ্ঞাবহে আদালতের ফরমায়াশি রায় চলতে পারেনা। বানোয়াট মামলায় কারাবন্দি দৈনিক আমার দেশের মাজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।

আরও খবর