রোকসানা মনোয়ার : মার্চ মাস প্রায় শেষ, আসছে এপ্রিল, বাড়বে তাপমাত্রা। গরমে অতিষ্ঠ হবে জীবন। তাই গরমে বিদ্যুৎ সরবরাহ
স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ কারণে এলএনজি আমদানি বাড়ানো
হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।
এখন পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি
স্বাভাবিক আছে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এপ্রিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কৃষিকাজে
সেচ পুরোদমে চালু হলে বিদ্যুৎ চাহিদা আরও বাড়াবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের যোগান বা
সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ খাত-সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে
প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম নতুন করে না
বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক থাকবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিদুৎ কর্মকতা প্রতিদিনের
সংবাদকে বলেন,
চৈত্র মাস চলছে, লোডশেডিং নেই বললেই চলে।
সামনে বৈশাখ; ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। চিন্তার কিছু নেই। এ
দেশে মৌসুম বিবেচনায় নিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর-কমানোর পরিকল্পনা করা হয়। সামনে
কৃষিজমিতে সেচের জন্য বিদ্যু চাহিদা কিছুটা বাড়বে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর
প্রস্তুতিও আছে। এরমধ্যে ভারতের গোড্ডা থেকে আদানির বিদ্যুৎ এবং বাগেরহাট থেকে
রামপালের বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও অনুকূলে চলে এসেছে। স্পট
মার্কেটে এলএনজির দামও কমে এসেছে। সমস্যা হবে না।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের ঐ কর্মকর্তা আরা বলেন, ‘রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাবে, এটি বিবেচনায় নিয়েই সরকার
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওই এলএনজির কারণেই
গ্যাসের যোগান বেড়েছে। কয়েকটি খাতে রেশনিং করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ
বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চৈত্র মাস চলছে, লোডশেডিং নেই বললেই চলে।
সামনে বৈশাখ; ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। চিন্তার কিছু নেই। এ
দেশে মৌসুম বিবেচনায় নিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর-কমানোর পরিকল্পনা করা হয়। সামনে
সেচে চাহিদা কিছুটা বাড়বে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তুতিও আছে। এরমধ্যে ভারতের
গোড্ডা থেকে আদানির বিদ্যুৎ এবং বাগেরহাট থেকে রামপালের বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত
হওয়ায় পরিস্থিতি আরও অনুকূলে চলে এসেছে। স্পট মার্কেটে এলএনজির দামও কমে এসেছে। সমস্যা
হবে না।
বিদ্যুৎ, সার কারখানা, ক্যাপটিভ,
যানবাহন (সিএনজি), আবাসিকে রান্না, বাণিজ্যিকসহ নানা খাতে দেশে বর্তমানে দৈনিক গড়ে গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার
হাজার এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট)। রাষ্ট্রীয় খনি থেকে দেশি-বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে
গ্যাস উৎপাদন এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি- এই দুইয়ে মিলে
সর্বোচ্চ সরবরাহ হয় তিন হাজার এমএমসিএফ। রমজান মাসে ইফতার, তারাবি
ও সেহরির সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ
বাড়িয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কমে এসেছে জানিয়ে পেট্রোবাংলার
চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘এখন প্রতি এমএমবিটিইউ
(মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজি খোলা বাজার থেকে ১২ থেকে ১৩
মার্কিন ডলারে কিনছে পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, এলএনজি আমদানির দীর্ঘমেয়াদি
চুক্তির আওতায় সব মিলিয়ে ৫৬টি জাহাজে এলএনজি আসবে। অন্যদিকে স্পট মার্কেট
(দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি না করে খোলা বাজার থেকে যে জ্বালানি কেনা হয়) থেকে জুন
পর্যন্ত ১২ কার্গো এলএনজি আসবে। এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও
স্বাভাবিক থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহ করা
হচ্ছে গড়ে প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে ৭২০ মিলিয়ন
ঘনফুট এবং গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মার্চ থেকে আগামী জুন
পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে
এগুচ্ছে সরকার। সে অনুযায়ী, আগামী জুনে স্পট মার্কেট থেকে
সর্বোচ্চ এলএনজি আমদানি করা হবে।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আওতায়
এলএনজি আসা অব্যাহত থাকলেও জানুয়ারি মাসে স্পট মার্কেট থেকে কোন এলএনজি আমদানি
হয়নি। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আমদানির
মাধ্যমে জানুয়ারিজুড়ে গড়ে ২৬শ’ থেকে ২৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ
করা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট স্পট মার্কেটের
এলএনজি যুক্ত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেও প্রতিদিন গড়ে ২৬শ’ থেকে ২৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ
করা হয়েছে। তবে মার্চ থেকে এলএনজির সরবরাহ বেড়েছে। ২৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসের
সঙ্গে ৭৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট
গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। জুন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস
সরবরাহে কাজ করছে পেট্রোবাংলা।
পেট্রেবাংলার তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল, মে, জুন মাসে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি
আমদানি কমবে। তবে এ সময় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বাড়বে।
গরম ও সেচ- দুই কারণে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত
দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ। ফলে এ সময় ঘিরে বিদ্যুৎ উৎপাদন
বাড়াতে বিশেষ নজর দেয় সরকার। এ বছর গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা হতে
পারে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ খাতে
এক হাজার পাঁচশ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন
হবে।
তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ
উৎপাদনে সর্বোচ্চ গ্যাসের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
বর্তমানে পেট্রোবাংলা দৈনিক এক হাজার ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, দুটি এলএনজি টার্মিনালের দৈনিক গ্যাস
সরবরাহ ক্ষমতা এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সাধারণত ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত
গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। পেট্রোবাংলা যদি সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদার সময় গ্যাস
সরবরাহ বৃদ্ধি করতে চায় তাহলে এলএনজির সরবরাহ আরও ১৭০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়াতে হবে।
গরম ও সেচে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগ
ইতোমধ্যে একটি বৈঠক করে জ্বালানি আমদানি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পায়রা
এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানি যাতে ডলার সংকট যাতে প্রতিবন্ধক না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের
সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
রমজানে রাজধানীর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক
প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, বিদ্যুৎতের সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য
সাবস্টেশন, ট্রান্সফরমার মেনটেইনেন্স চলমান আছে। কোন সমস্যা
হলে প্রত্যেকটি উপকেন্দ্রকে দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার
আবারও ঊর্ধ্বমুখী হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে
পারে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি গরমে মানুষের যেন াবদ্যুৎ প্রাপপ্তির সমস্যা না হয়।