শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী
বিশ্বাস অনেকটা মাটির মতো, ছোট ছোট পিঁপড়াদের মতো | মানুষ আধুনিক চামড়ার হাই-হিলের জুতো পড়ে মাটির উপর হাটতে হাটতে মাটিকে আঘাতে আঘাতে রক্তাত্ত্ব করে | মাটি গুমরে গুমরে কাঁদে তবে সে কান্নার কোনো শব্দ থাকেনা | কিংবা মাটির কান্নার শব্দ স্বার্থপর মানুষের কানে পৌঁছেনা | অথচ এই মাটি মানুষের খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে এতটুকু কার্পণ্য করেনা | মাটির উপর মানুষ ঘর বাঁধে | জীবনের এমন অনেক মৌলিক চাহিদার যোগান দেয় মাটি অথচ বিনিময়ে পায় অবহেলা | ত্যাগীরা সব কিছু এমন করে দিতে দিতে একসময় মূল্যহীন হয়ে পড়ে মানুষের পৃথিবীতে |
অথচ মানুষ খালি পায়ে যদি মাটিতে পা ফেলতো তবে হয়তো সেখানে জন্ম হতো আনন্দের, গড়ে উঠতো ভালোবাসার বন্ধন | হয়তো এটাই বিশ্বাস যা সব সময় সহজাত প্রকৃতির হয় | যা কৃত্রিমতাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মানুষের মতো মানুষদের অনুসন্ধানে বের হয় |
যেখানে বিশ্বাস গড়ে উঠে মনুষ্যত্ব চর্চায় | মনুষ্যত্ব খুব কঠিন একটা বিষয়, এটা অনেকটা অন্ধকারে লুকানো একটুকরো আলোর মতো | সে আলো যখন বিন্দু বিন্দু করে মানুষের ভিতরে জন্ম নিতে থাকে তখন মনুষ্যত্বের জন্ম হয় |
মানুষ নিজেকে খুব বড় ভাবতে গিয়ে ভুলে যায় ছোট ছোট পিঁপড়াদের কথা | পিঁপড়ার মতো খুব নগন্য একটা প্রাণীর মূল্য মানুষের পৃথিবীতে হয়তো নেই | অথচ পিঁপড়াদের বেঁচে থাকার লড়াইটা খুব কঠিন হয় | সেটা হয়তো মানুষের চোখে কখনো পড়েনা | কারণ বড় বড় মানুষেরা ছোট ছোট পতঙ্গদের কথা কখনো ভাবেনা | মানুষের জুতোর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় পিঁপড়ারা | কখনো কখনো মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়, কখনো আহত হয়ে জীবন বিপন্ন হয় তাদের | কিন্তু পিঁপড়ার কষ্টের কথা শোনার মতো মানুষ কি আর এখন আছে | হয়তো নেই | তারপরও সময় ও প্রকৃতির জন্য অপেক্ষা
সময় সব সময় চোখ খুলে জেগে থাকে | প্রকৃতি ঘুমায় | সময় প্রতীক্ষার পর প্রতীক্ষা করতে থাকে কখন ভাঙবে প্রকৃতির ঘুম | একদিন প্রকৃতি ঘুম থেকে জেগে উঠে | তখন সব হিসেবে নিকেশ পাল্টে যায়, যেমন পাল্টে যায় বিশ্বাসগুলো