
জামালপুর প্রতিনিধি :
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহত রিপন মিয়ার লাশ উত্তোলনে বাধাঁ দিয়েছেন মামলার বাদী আকতার হোসেন। তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে গত মঙ্গলবার লাশ উত্তোলন করতে গেলে বাধাঁ প্রদান করেন বাদী ও তার লোকজন। ফলে বাধাঁর মুখে কবর থেকে লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা উল হুসনা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম। এই ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। লাশকে পুজিঁ করে লাখ লাখ টাকা চাদাঁবাজির অভিযোগ উঠেছে মামলার বাদী আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট ঢাকা উত্তরায় নিহত হয় রিপন। ২৬ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই খাইরুল ইসলাম বলেন,ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহত রিপনের লাশ দাফন করা হয়েছে। তাই মামলাটি অধিক তদন্তের স্বার্থে লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর বিজ্ঞ আদালত রিপনের লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করতে এসে তার পরিবারের বাধাঁর মুখে পড়ি। ফলে লাশ উত্তালন করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা উল হুসনা বলেন, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলনের জন্য গেলে নিহত রিপনের পরিবারের লোকজন বাধাঁ প্রদান করেন। তাই লাশ উত্তোলন না করেই ফেরত আসি। এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের সিদ্ধান্তে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
মামলার বাদী আকতার হোসেন বলেন,তার ভাই রিপন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে এমন সকল প্রমানাদি তার কাছে রয়েছে। তাছাড়া লাশ উত্তোলনের বিষয়ে আগে থেকেই আমাকে অবহিত করা হয়নি,তাই বাধাঁ দেওয়া হয়েছে। আইনগত ভাবেই সকল কিছু মোকাবেল করা হবে।
জানা যায়, বকশীগঞ্জ পৌর শহরের চর কাউরিয়া সীমার পাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত রেজাউল করিমের ছেলে রিপন মিয়া ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানীতে কাজ করতো। প্রথম স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন তিনি। আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট বিকালে ঢাকার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে গুরুতর আহতবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চীন-মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। মারা যাওয়ার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৬ আগস্ট বকশীগঞ্জ উপজেলার পানাতিয়া পাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। এই ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর রিপন মিয়া পুুলিশের গুলিতে মারা গেছে দাবি করে ২৬ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন নিহত রিপনের বড় ভাই আকতার হোসেন। মামলায় ক্ষমতাচুত্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নামীয় ১৮জন ও অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামী করা হয়। নামীয় ১৮ জনের মধ্যে বকশীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর,সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম তালুকদার জুমান ও সমাজসেবক হাজী আমানুল্লাহসহ বকশীগঞ্জের ১৩ জনকে মামলায় আসামী করা হয়। মামলা দায়েরের পর আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাদাঁবাজির অভিযোগ উঠে। বিভিন্ন জনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন,মামলায় আসামী নাম অর্ন্তভুক্ত করণ এবং মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। গত ১৮ জানুয়ারি নিহত রিপনের স্ত্রী খাদিজা বেগম সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন।
খাদিজা বেগম বলেন,তিনি মামলা করতে চাইলে আকতার তাকে বাধাঁ দেয়। পরবর্তীতে তাকে কিছু না জানিয়ে চাঁদাবাজি করার জন্যই মামলার বাদী হয় আকতার হোসেন। অন্যায় ভাবে একটি পক্ষের কাছে সুবিধা নিয়ে বকশীগঞ্জে ১৩ জন নিরীহ মানুষকে মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তাছাড়া লাশকে পুজিঁ করে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য ও চাদাঁবাজি করেছে সে। ৫ আগস্টের আগে আকতার পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতো একটি কুড়েঘরে। মানুষের কাছে হাত পেতে চলতো তার সংসার। কয়েক মাসের ব্যবধানে আকতার হোসেন লাখপতি বনে গেছেন। পাকা বিল্ডিং করেছেন। দামী দামী আসবাবপত্র ও নতুন মোটরসাইকেল কিনেছে সে। নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানি না হয় সেজন্য আইন উপদেষ্ঠার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তবে তার সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আকতার হোসেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান,গুলিতে নয়,রিপন মারা গেছে ট্রাক চাপায়। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে একটি মহলের ইন্দনে মামলাটি করা হয়েছে। লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে। লাশ উত্তোলনে বাধাঁ দেওয়ায় বিষয়টি আরো সন্দেহের সৃষ্টি করেছে বলে দাবি তাদের। তাই দ্রুত লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছেন তারা।