এনামুল হক ফারুক, সংবাদকর্মী :
কোন সরকারী চাকরীর পরীক্ষা ব্যতীত সাবেক ক্ষমতাসীন দল, প্রভাবশালী আমলা ও অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সিনিয়র অফিসিয়ালদের প্রত্যক্ষ মদদে বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত কতিপয় কর্মচারীকে কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ক্যাডারভূক্তির জন্য নয়-ছয় চলছে বন অধিদপ্তরে।
বিগত সরকারের আমলে "স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন" শীর্ষক প্রকল্পে ১ম শ্রেণিতে ১২ জন- এর মধ্যে ১ জন পশু-চিকিৎসা কর্মকর্তা, ১ জন বাস্তসংস্থানবিদ, ১ জন মহামারী বিশেষজ্ঞ, ১ জন সর্পবিদ, ১ জন মৎস বিশেষজ্ঞ, ১ জন স্তন্যপায়ী প্রাণিবিদ, ১ জন পাখিবিদ ও ৫ জন বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং ২য় শ্রেণিতে ৭ জন- এর মধ্যে ১ জন উর্ধ্বতন ল্যাব টেকনিশিয়ান ও ৬ জন বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নেওয়া হয়। ২০১১ সালের জুলাই মাসে এই প্রকল্প শুরু হয়। প্রকল্প শেষে তাদের শর্তানুযায়ী চলে যাওয়ার কথা থাকলেও কোন এক অদৃশ্য জাদুকরী শক্তির প্রভাবে তারা ২০১৭ সালে রাজস্বে স্থানান্তরিত হয়।
বিগত সরকারের আমলের আরেকটি প্রকল্পের নাম "জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন"। এই প্রকল্পের কর্মচারীরাও (মোট ৫৭ জন) নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে ঐ একই শক্তির প্রভাবে ২০১৬ সালে রাজস্বে স্থানান্তরিত হয়। ২৫ জন ১ম শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ২৩ জন বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা, ১ জন বন্যপ্রাণী ও গবেষণা কর্মকর্তা এবং ১ জন গণ-সংযোগ কর্মকর্তা বন অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত আছে।
জুলাই বিপ্লব যখন তুঙ্গে, যখন ক্ষণে ক্ষণে রাজপথে ঝরে যাচ্ছিল একটা একটা করে তাজা প্রাণ, ঠিক তখনই সবার অলখ্যে ০১ আগস্ট ২০২৪ পিএসসির আলোচনাসভায় উঠে আসে উপযুক্ত প্রকল্প হতে রাজস্বে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের সরকারী চাকরীতে নিয়মিতকরণ ও স্থায়ীকরণের বিষয়টি। সরকার পতনের আভাস পেয়ে ঐদিনই এটা পাস হয়। বিজয় পরবর্তী সময়ে যখন নতুন সরকার বিভিন্ন দাবী দাওয়া আর ভাঙ্গা আইন ব্যবস্থা পুনর্গঠণে ব্যস্ত, ঠিক তখনই মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তাদের চাকরী নিয়মিতকরণ হয়। এই কাজটি এতোটাই গোপনীয়তার সাথে করা হয়েছে যে, মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়নি। এরই মধ্যে আবার তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ফাইল বন মন্ত্রণালয় ও পিএসসির গন্ডি পার হয়ে এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছে। এই ফাইল যেন চন্দ্র-সূর্যের চেয়েও গতিশীল। কোন বিপ্লব বা সরকার পতন- কিছুই এর গতি রোধ করতে পারেনি।
সম্প্রতি নেওয়া "বন অধিদপ্তর সংস্কার পরিকল্পনা" পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে এর ১৮ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে ২০ জন ক্যাডার বহির্ভূত সহকারী বন সংরক্ষকগণের বিসিএস বন ক্যাডারভূক্তি করতে হবে এবং ১৯ নম্বরে বলা হয়েছে যে সকল বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তাকে পদনাম পরিবর্তন করে বিসিএস বন ক্যাডারভূক্ত সহকারী বন সংরক্ষক হিসেবে পদয়ায়ন করতে হবে। উল্লেখ্য যে, সহকারী বন সংরক্ষক পদটি সরাসরি বিসিএস বন ক্যাডার দ্বারা ৬৭% ও পদোন্নতির মাধ্যমে ফরেস্ট রেঞ্জার হতে ৩৩% পূর্ণ করার বিধান আছে। অন্য কোনভাবে এই পদে ক্যাডারভূক্তি সম্পূর্ণ বেআইনি।
জুলাই বিপ্লবের চেতনা হচ্ছে বৈষম্য দূরীকরণের চেতনা। সেখানে নতুন বিসিএস এর মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগ না দিয়ে ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট প্রকল্প কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ ও ক্যাডারভূক্তি কি সিস্টেমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়ে যাওয়া পুরনো ভুতের অস্তিত্ব জানান দেয় না?কেন সত্যিকারের মেধাবীদের বঞ্চিত করে চাটুকারিতা ও মেধাহীন জাতি প্রাধান্য পাবে ?