ভারী বৃষ্টির কারণে রাজধানীর
বাজারগুলোয় সবজির দাম চড়া। কাঁচাবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ অস্থিরতা। কখনো দাম
সামান্য কমলেও কয়েকদিনের মধ্যেই আবার বেড়ে যায়। গতকাল শুক্রবার বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় সবজির ও অন্য পণ্যের দাম আরো বেশি নেওয়া হয়।
জানা গেছে, বাজারে
প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। টমেটো ২০০ টাকা কেজি এবং পেঁয়াজের
দাম ১২০ টাকায় উঠেছে। উচ্চমূল্যের বাজারে নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। প্রতিনিয়তই
বাজারে এসে হিমশিম খেতে হয় এসব মানুষের। সবজির বাজারে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা
দাবি করছেন, বন্যায় ও বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন কমে গেছে, তাই দাম বাড়াতে হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর মেরাদিয়া হাটবাজার, গোড়ানবাজার, খিলগাঁও রেলগেট কাঁচাবাজারসহ
বেশকিছু বাজার সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে।
আজকের বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। সপ্তাহের ব্যবধানে টমেটো
কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে
২০০ টাকায়। মানভেদে প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০, শসা ৮০ থেকে ১২০,
কাঁচামরিচ ২৬০ ও ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে হঠাৎ করে
বেগুনের দাম কেজিতে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। বাজারে লম্বা বেগুন ১২০ টাকায় বিক্রি
হচ্ছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। আর সবুজ গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০
থেকে ১০০ টাকায়। কালো গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। খিলগাঁও রেলগেট
কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা ফজলে রাব্বি প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, বাজারে মানভেদে
প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০, কাঁকরোল ৮০ থেকে ৯০, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০, ঢ্যাঁড়শ
৭০ থেকে ৮০, পটোল ৫০ থেকে ৬০, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০, ধুন্দুল ৬০, ঝিঙা ৬০ থেকে ৮০,
বরবটি ১০০ থেকে ১২০, কচুরলতি ৮০ থেকে ১০০, কচুরমুখী ১০০ থেকে ১২০ ও মিষ্টিকুমড়া ৪০
টাকায়। প্রতিটি লাউ ৭০ থেকে ৮০, চালকুমড়া ৬০, ফুলকপি ৮০ ও বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে
বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচকলা ৪০, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
মেরাদিয়া হাটের পাশে শাক বিক্রি করছিলেন আয়শা বেগম। শাকের দাম জানতে চাইলে তিনি
বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে শাকের দাম অনেক বেড়েছে। আজকের বাজারে প্রতি আঁটি
লাউশাক ৫০, পুঁইশাক ৫০, ডাঁটাশাক ২০, লালশাক ৩০, পাটশাক ৩০, কচুশাক ২০, শাপলা ২০,
কলমিশাক ১৫ ও ডাঁটা ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
মেরাদিয়া বাজারে
এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুর রাজ্জাক জুয়েল। তিনি বলেন, লালশাক ছিল ১০ টাকা
করে। সেটা আজ কিনতে হচ্ছে ৩০ টাকা করে। বাচ্চাকে খাওয়াব বলে দুই আঁটি লালশাক
কিনেছি ৬০ টাকায়। আমি তো কিনতে পারছি, কিন্তু যাদের ইনকাম কম তারা শাক-ভাতও খেতে
পারবে না। শাক-ভাতেও এখন স্বস্তি নেই। প্রায় দেড় মাস ধরে কোরবানির ঈদের আগে থেকেই
বাজারে পেঁয়াজের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম
কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি
বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। বাজারে কমদামি ভারতীয় পেঁয়াজের সঙ্গে দেশি
পেঁয়াজ মিশিয়ে বিক্রি করছে অনেকেই এমনটি জানিয়েছেন।
দক্ষিণ বনশ্রীর এলাকার
মুদি দোকানি মেহেদী হাসান সৌরভ বলেন, গত সপ্তাহ দেশি পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা
কেজিতে বিক্রি করেছি। তবে এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা হয়েছে। এ দাম
শুনলে ক্রেতারা তেমন একটা কিনতে চায় না। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কম হলেও বাজারে
ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে নিম্নমানের
ভারতীয় পেঁয়াজ মিশিয়ে বিক্রি করছেন অনেকে। ফলে দেশি পেঁয়াজের দামে বিক্রি হচ্ছে কম
দামি ভারতীয় পেঁয়াজ। যদি ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যেত, তাহলে দাম হতো সর্বোচ্চ
৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। প্রতি কেজি
আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে, যা কয়েকদিন আগেও ছিল ৫০ টাকা করে।