সারা দেশে হঠাৎ করেই কনজাংটিভাইটিস (চোখের প্রদাহ) রোগীর সংখ্যা
বেড়ে চলেছে। ‘চোখ ওঠা’ নামে পরিচিত এই রোগে সব বয়সিরাই
আক্রান্ত হচ্ছে। তবে শিশুদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন অনেক
অভিভাবক সংক্রমণ হওয়ার ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। সংক্রমিতরা
বেশিরভাগই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে অনেকেই অবস্থার অবনতি হলে
হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শিশু
থেকে বৃদ্ধ সবার হচ্ছে। এক পরিবারের একজনের হলে পর্যায়ক্রমে অন্যদের হচ্ছে। দেশের
সর্বত্রই রোগটি ছড়িয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। চোখ ওঠা
রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কনজাঙ্কটিভিজি বা কনজাঙ্কটিভা বলে। ভাইরাসের
কারণে রোগটি হয়ে থাকে। রোগটি হলে কারো কারো কোনো চিকিৎসা ছাড়া এমনিতেই ভালো হয়ে
যায়। আবার কারো চিকিৎসা লাগে। সাধারণত বছরের এ সময়টাতেই চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে। এই
রোগ হলে চোখ গোলাপি অথবা লাল হয়ে যায়।
আক্রান্ত হলে এক
চোখে অথবা দুই চোখেই জ্বলতে পারে, সাথে চোখ লাল বা গোলাপি আকার ধারণ করতে পারে।
জ্বালাপোড়ার সাথে চুলকানি হয়। খচখচে ভাব হতে পারে, মনে হতে
পারে চোখে কাটা ফুটেছে। আবার চোখ থেকে পানি পড়ে, বারবার সাদা
ময়লা আসা, কিছু ক্ষেত্রে চোখে তীব্র ব্যথা হয়।
রোগটি এতই ছোঁয়াচে যে, চোখ ওঠা রোগীর
সংস্পর্শে না এসে কাছাকাছি থাকলে এ চোখ ওঠে যেতে পারে। কারণ ভাইরাসটি বাতাসে ছড়াতে
পারে। রোগীর ব্যবহার্য রুমাল, তোয়ালে, বালিশ,
টিসু অন্যরা ব্যবহার করলে তারা আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় দেখা
যায়, কাছাকাছি না থাকলেও অন্যদের হয় আবার খুবই কাছাকাছি
থাকার পরও চোখ ওঠে না। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কারো দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠলে
(অ্যান্টিবডি হয়ে গেলে) কাছাকাছি থাকলেও হয় না। ভাইরাসের সংক্রমণে প্রদাহ হয়,
চোখের মধ্যে থাকা খুবই সুক্ষ্ম রক্তনালী ফুলে যেতে পারে।
রক্তনালীগুলো ফুলে যায় বলেই চোখের রঙ লাল হয়।
এমন
রোগীর কাছাকাছি থাকলে একটু সাবধান থাকতে হয়। বারবার চোখে বা মুখে হাত না ছোঁয়ানোর
জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। যাদের চোখ ওঠে তাদের চোখ খুব চুলকাতে পারে। চোখে
হাত ছোঁয়াতে চাইলে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। আক্রান্তদের চোখের পানি টিস্যু দিয়ে
মুছে আবদ্ধ জায়গায় বা বাস্কেটে ফেলতে হবে। তা নাহলে রোগটি আশেপাশে যারা থাকবে
তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। তা ছাড়া চোখ ওঠা রোগীর ব্যবহার্য সামগ্রী না ধুয়ে অন্যদের
ব্যবহার করা উচিত নয়। চোখ ওঠা সমস্যা এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে অবশ্যই চোখের
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিশিষ্ট চক্ষু
বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: এম এ আজিজ জানিয়েছেন, বর্তমানে যে ভাইরাসে চোখ ওঠা রোগটি হচ্ছে এই
ভাইরাসটি চোখের কালো (কনজাঙ্কটিভা) অংশটিকে বেশি আক্রান্ত করে। তবে মাঝে মধ্যে
চোখের কর্নিয়াকেও আক্রান্ত করতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে চোখের
বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। তিনি মেশিনে চোখ পরীক্ষা করে কিছু ওষুধ দেবেন। বরং
আমি বলব, মেশিনে পরীক্ষা করে চোখের চিকিৎসা করালেই যথাযথ
চিকিৎসা হয়। চোখের ডাক্তার রোগীকে অ্যান্টি হিস্টাসিন দিতে পারেন। দিতে পারেন
চোখের অ্যান্টিবায়োটিক। একই সাথে তিনি লো স্টেরয়েডও দিতে পারে।
চিকিৎসক নর্মাল
স্যালাইন দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে বলতে পারেন। নরসল নামে চোখের ড্রপ পাওয়া যায়
ওষুধের দোকানে। রোগটি কর্নিয়াকে আক্রান্ত করলে যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা করা দরকার।
না হলে কর্নিয়াতে দাগ পড়ে যেতে পারে। ফলে রোগী পরে স্থায়ীভাবে ঝাপসা দেখতে পারেন।
অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস আরো বলেন, চোখ ওঠার রোগীর চোখের পানি পাতলা টিস্যু দিয়ে মুছে
নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে। চোখের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ভাইরাস থাকে। এই পানিটি খুব
সাবধানে মুছে টিস্যুই হোক বা অন্য কিছু হোক যত্রতত্র ফেলা যাবে না। অন্যরা এই
পানির সংস্পর্শে এলে তাদেরও চোখ ওঠা রোগটি হয়ে যেতে পারে। প্রথমে একটি চোখে সমস্যা
সৃষ্টি করলেও পরে আরেকটি চোখে সমস্যা হতে পারে। সাবধানে থাকলে, গরম সেঁক দেয়া হলে চোখে আরাম বোধ করবেন রোগী। এই রোগের সময় বাইরে না
যাওয়াই ভালো। বাইরে গেলে চোখে কালো চশমা পরে নিলে রোগী আরাম বোধ করবেন। কিন্তু
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।