শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :
নওগাঁয় চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে লিটন মোল্লা ওরফে ভুট্টু (৩৬) কে দিন-দুপুরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন (মারপিট) করায় দীর্ঘ ২৫ দিন হাসপাতাল বেডে যন্ত্রনায় ছটফট করে অবশেষে মৃত্যু হয়েছে লিটন মোল্লা ওরফে ভুট্টুর।
নিহত লিটন মোল্লা ওরফে ভুট্টু নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতীপুর বাজার এর পার্শ্ববর্তী ভীমপুর ভেবরী পাড়া গ্রামের মৃত মিরাজ মোল্লার ছেলে।
নিহতের পরিবার ও স্থানিয়রা জানান, সরস্বতীপুর বাজার এর পার্শ্ববর্তী ভীমপুর ভেবরী পাড়া গ্রামের মৃত মিরাজ মোল্লার ছেলে লিটন মোল্লা ওরফে ভুট্টু ছোট থাকতেই তার মা ও বাবার মৃত্যু হয়। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা লিটন মোল্লা ওরফে ভুট্টু বাসের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এরিমাঝে সরস্বতীপুর বাজার দীঘির পাড়ে অবৈধ্য ভাবে গড়ে তোলা (পুরাতন যানবাহন) ভাঙ্গার কারখানা মালিক একই গ্রামের মামুন লিটন মোল্লা ওরফে ভুট্টু কে তার কারখানাতে শ্রমিক হিসেবে কাজে নেয়। এক পর্যায়ে কারখানাতে কাজ করতে না চাওয়ায় কারখানা মালিক মামুন তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরিমাঝে লিটন মোল্লা ওরফে ভুট্টু কারখানাতে কাজ করা বন্ধ করেন। ঘটনার দিন গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪ টারদিকে লিটন মোল্লা ওরফে ভুট্টু তার শ্রমের পাওনা টাকা নিতে ঐ কারখানাতে গেলে সে সময় কারকানা মালিক মামুন আলী সরদার এর নের্তৃত্বে সাইদুল দেওয়ান, দুলাল দেওয়ান ও রামিম দেওয়ান সহ কয়েকজন লিটন মোল্লা ভুট্টুকে প্রথমে ভাংরি কারখানার ভেতর আটক করে রেখে অমানবিক নির্যার্তন চালান। এক পর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্য সেখান সাইদুর দেওয়ান এর বাড়িতে নিয়ে আবারো অমানবিক নির্যাতন ( মারপিট) করাকালে বাজারের ব্যবসায়ী ওতার স্বজনরা ঘটনাটি জানতে পেরে সেখান থেকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় লিটন মোল্লা ভুট্টুকে উদ্ধার পূর্বক দ্রুত চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করালে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঐ দিনই দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে বগুড়াতে রেফার্ড করেন। স্বজনরা ঐ রাতেই তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান এবং সরস্বতীপুর বাজারের দোকানী, (বয়লার) ধান চাতাল মালিক ও গ্রামের লোকজন চাঁদা টাকা তুলে তার চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন। এরি মাঝে অবস্থা সংকট জনক হওয়ায় চিকিৎসক সাথে থাকা স্বজনদের বলেন, এরোগীর অবস্থা খুবই ঝুকিপূর্ণ সময়ের অপেক্ষা এজন্য বাসায় নেওয়া ভালো বলে গত সোমবার সন্ধার দিকে ছাড়পত্র দিলে স্বজনরা তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে আনার মাত্র কয়েক ঘন্টা ব্যবধানে বুধবার পূর্বরাত ২টারদিকে দীর্ঘ ২৬ দিন মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটপট বা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে লিটন মোল্লা ভুট্টুর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে অভিযুক্তরা সবাই পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট অন্তে মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক ময়না তদন্ত শেষে বুধবার বিকেলে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলে ঐ দিন সন্ধায় দাফন সম্পূর্ণ করা হয় বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজন সহ স্থানিয়রা।
নিহত ভুট্টুর বোন মাবিয়া সুলতানা সুলতানা জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর মামুন সরদার তার সহযোগীরা চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার ভাইকে আটক রেখে অমানবিক নির্যাতন করেন। পরে স্থানিয় বাজারের ও গ্রামের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে দীর্ঘ ২৬ দিন চিকিৎসা শেষে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত মঙ্গলবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু অর্থাভাবে তাকে ঢাকা নিতে না পেরে ঐদিন তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার পর তার মৃত্যু হয়। নিহত ভুট্টুর স্ত্রী জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন এর আর্থিক সহযোগিতায় দীর্ঘ ২৬ দিন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও শেষ পর্যন্ত অর্থাভাবে তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে না পেরে বাড়িতে নিয়ে এসে রাখি। কয়েক ঘন্টা ব্যবধানে বুধবার রাত ২ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন বলেন, ভুট্টুকে মারপিটের ঘটনার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর তার চাচা মান্নান মোল্লা বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।