
রোকসানা মনোয়ার : নগর
এলাকায় জায়গার স্বল্পতা থাকায় অপেক্ষাকৃত কম জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত
করতে ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন জরুরি।
নতুন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য পর্যাপ্ত
উন্মুক্ত স্থান রেখে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট প্লট একত্রীকরণ। এর ফলে বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট
ইমারত নির্মাণ করা যাবে। জমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও কমে যাবে।
তাছাড়া যত্রতত্র নগরাঞ্চল
সম্প্রসারণ কমিয়ে আনা এবং শহরের নিচু জমি ও কৃষিজমির সুরক্ষা করাও এর অন্যতম
উদ্দেশ্য।
ড্যাপের লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন
এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতে সেখানকার নাগরিক সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে
ঢাকাকে একটি উন্নত বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা।
২০৩৫ সালের মধ্যে একটি বিস্তৃত
এলাকাজুড়ে পরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তুলে আরও ২.৬ কোটি লোকের বাসস্থান নিশ্চিত করার
লক্ষ্যও রয়েছে ড্যাপের।
ঢাকার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা যেমন
লালবাগ, বংশাল, সবুজবাগ এবং গেন্ডারিয়ায় বড় ধরনের
সংস্কারের পরিকল্পনা করেছে ড্যাপ। এই এলাকাগুলোতে প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ জন বাস
করে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ।
কেন্দ্রীয় ঢাকায় প্রতি একরে ২০০
জন এবং পুরান ঢাকার এলাকায় প্রতি একরে ২৫০ জনের ঘনত্ব বজায় রাখতে চায় ড্যাপ।
আবাসন খাতের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা
বলছেন, প্লট হাউজিং স্কিমের পরিবর্তে ব্লক-ভিত্তিক ব্যবস্থা করা আবাসন খাতকে
হুমকির মুখে ফেলবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ড্যাপের ঢাকায় ভবন নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়ন না
করার জন্য অনুরোধ করেছিল রিহ্যাব। তারা আশঙ্কায় করেছিল, এ পরিকল্পনা
আবাসন খাতের ২৬৯টি সহযোগী শিল্পকেও প্রভাবিত করবে।
এ সময় ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক
আশরাফুল ইসলাম রিয়েলটরদের দাবিকে 'সম্পূর্ণ অযৌক্তিক' বলে
অভিহিত করেন।
তিনি সেসময় বলেন, "আমরা ২০৩৫
সালের ঢাকার ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে পরিকল্পনাটি তৈরি করেছি যাতে কোনো এলাকা অতিরিক্ত
জনবহুল না হয়। পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা মিশ্র ভূমি ব্যবহারের জন্য কিছু
নিয়ম-কানুন প্রস্তাব করেছি।"
ড্যাপ ২০১৬-২০৩৫ এ যা আছে
প্রকল্প এলাকাকে ছয়টি স্বতন্ত্র
প্রধান অঞ্চলে এবং ৭৫টি উপ-অঞ্চলে বিভক্ত করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে
আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকাসহ কৃষি, প্রাতিষ্ঠানিক,
জলাশয়, বনাঞ্চল, উন্মুক্ত
স্থান, যোগাযোগ, বন্যা প্রবাহ ইত্যাদি
এলাকাসমূহ পরিকল্পনায় চিহ্নিত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজউকের ১৫২৮
বর্গকিলোমিটার এলাকার ৬০ শতাংশ শহরাঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায়
২২৮ কিলোমিটার আন্তঃআঞ্চলিক সংযোগ সড়ক রয়েছে, যা বাড়িয়ে
২৯১ কিলোমিটার করা হবে। এছাড়া সংগ্রাহক সড়কটিকে ১২০০ কিলোমিটার প্রসারিত করার
পরিকল্পনাও রয়েছে।
পাশাপাশি, শহরে ২০২
কিলোমিটার সাইকেল লেন এবং ৫৭৪ কিলোমিটার জলপথ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
নতুন ড্যাপে বুড়িগঙ্গা নদীকে
ঘিরে একটি সাংস্কৃতিক অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে
সংরক্ষণ করে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার পরামর্শও রয়েছে পরিকল্পনায়।
ঢাকার চারদিকে মোট ১৩টি আন্তঃজেলা
বাস টার্মিনাল এবং ২টি ট্রাক টার্মিনালের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
জনমানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী
বিদ্যমান রাসায়নিক গুদামসমূহ পর্যায়ক্রমে স্থানন্তরের সুপারিশ করা হয়েছে
পরিকল্পনায়।