ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে তলানিতে এসে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা। ঘটনার পর থেকে এরইমধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদেশ। বাণিজ্যিক সব চুক্তি স্থগিতের পাশাপাশি একে অন্যের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
এ অবস্থায় অন্য দেশ হয়ে প্রবেশ করা পাকিস্তানি পণ্যের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এক তিল পরিমাণ কোনও পাকিস্তানি পণ্যও যেন ভারতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৩ মে ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তির বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে তৈরি কোনো পণ্য সরাসরি বা ঘুরপথে আমদানি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং সরকারি নীতির স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এই নির্দেশিকার কোনও ব্যতিক্রমের জন্য অবশ্যই ভারত সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান থেকে সরাসরি খুব বেশি পণ্য ভারতে আসে না। তবে ঘুরপথে দুবাই হয়ে কিছু পণ্য ভারতে আসত। বিশেষত, পোশাক, মসলা বা ছোট যন্ত্রাংশের মতো কিছু পণ্য ঘুরপথে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করত; তাও খুব বেশি নয়। ভারতীয় বাণিজ্যমহলের অনেকের মতে, ঘুরপথেও যাতে কোনও পাকিস্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ না করে, তা নিশ্চিত করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর থেকেই মূলত ভারত এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ক্রমশ অবনতি ঘটতে শুরু করেছিল। ওই সময়ে ফল, সিমেন্ট, পেট্রোপণ্য, আকরিকসহ পাকিস্তান থেকে আসা বেশ কিছু পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছিল ভারত। বাণিজ্যিকভাবে ভারতের অন্যতম পছন্দের দেশের তালিকা থেকেও পাকিস্তানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে গত কয়েক বছরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে পাকিস্তান থেকে মাত্র ৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল ভারত। এক বছর আগেও যে পরিসংখ্যান ছিল, তার থেকে ২০ লাখ ডলারেরও কম মূল্যের আমদানি হয়েছিল ওই সময়ে।
এরই মধ্যে গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ভারত-পাকিস্তান চাপা বৈরিতা মুহূর্তেই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে বিশ্ববাসীর সামনে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকিতে কদর্য রূপ ধারণ করে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।
এদিকে পাকিস্তানি পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞাই শুধু নয়, পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। দেশটির ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ শিপিং’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাকিস্তানের পতাকা থাকা কোনও জাহাজই প্রবেশ করতে পারবে না ভারতীয় বন্দরে। একইভাবে কোনো ভারতীয় জাহাজও যাবে না পাকিস্তানের কোনো বন্দরে।
পহেলগাম হামলার পরদিনই বৈঠকে বসেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি। ওই বৈঠকের পরপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কূটনৈতিক পদক্ষেপ ঘোষণা করে মোদি সরকার, যার মধ্যে অন্যতম ছিল অটারী সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া।
উল্লেখ্য, অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দুদেশের মধ্যকার অন্যতম বাণিজ্যপথ ছিল। পরদিন পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ করে। ওই সময়ে ইসলামাবাদ জানিয়েছিল, ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এমনকি তৃতীয় কোনও দেশ ঘুরেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান।