
রোকসানা মনোয়ার :ঈদ মানেই নতুন পোশাক। ধনী-গরিব সবাই চায়, সাধ ও সাধ্য মতো নতুন পোশাক
কিনে ঈদের আনন্দে সারাদিন মেতে থাকে। কিন্তু এবার সেই আনন্দও মাটি হয়ে যেতে পারে
অনেকের। কারণ, নিত্যপণ্যের বাজারের আঁচ লেগেছে রাজধানীর
পাইকারি মার্কেট ও শপিংমলগুলোয়। ঈদ সামনে রেখে ক্রেতাদের ‘পকেট কাটা’র অভিযোগ উঠছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে।
করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাত তুলে রোজার শুরু থেকেই
পোশাকের বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনাকাল ও সরকারের বিধিনিষেধের কারণে ৩
বছরের (২০২০, ২০২১ ও ২০২২) ঈদে আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। এর
সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে ব্যবসায় দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। তাই এবারের
ঈদে ৩ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে, না হলে আগামীতে ব্যবসা
টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ঈদে পোশাকের শতকরা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ দাম
বাড়িয়েছেন তারা।
রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মৌচাক-মালিবাগ
এবং নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের চাহিদা মূলত
গজ কাপড়, থ্রিপিস ও পাঞ্জাবিতে। এই তিনটির পাশাপাশি শাড়ি ও
লেহেঙ্গা, গাউনসহ অন্যান্য পোশাকও বিক্রি হচ্ছে। দোকানগুলোও
গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সারিসারিভাবে সাজিয়ে রেখেছে দেশি-বিদেশি পণ্যগুলো। ক্রেতা
দেখলেই হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নানান কথা ও অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্টের
চেষ্টা করছেন তারা। তবে ক্রেতার পোশাক পছন্দ হলেই ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছেন। হাজার
টাকার কাপড়ে ন্যূনতম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মুনাফা করছেন। অর্থাৎ ক্রেতারা ২০২২ সালে
যে পোশাক ১ হাজার টাকায় কিনেছেন। এবছর সেটা ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
যারা দর-দাম কম করছেন না, তাদের আরো বেশি দাম দিয়ে কিনতে
হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এক কথা করোনার কারণে ৩ বছর ব্যবসা করতে পারিনি। পুঁজি খাটিয়ে
ব্যবসা ধরে রেখেছি, এবারের ঈদে পোষাতে হবে। অর্থাৎ তিন বছরের
লাভ এবার করতে হবে।
মার্কেটে আসা ক্রেতারা বলছেন, ঈদে পোশাকে শতকরা ২৫ থেকে ৪০
শতাংশ দাম বেড়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে বিক্রেতারা বলছেন,
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে একদিকে ডলারের দাম বেড়েছে। এতে করে
গত বছরের তুলনায় ডলার প্রতি ২০-২৫ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ
উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এছাড়া দোকান ও কর্মচারী ভাড়াসহ খরচের পর মুনাফা আসবে। সব কিছু
হিসাব করে এবার বেশি দামে পোশাক বিক্রি করতে হচ্ছে। ভারত-চীন থেকে শাট ও টি-শার্ট
আমদানি করে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ শপিং সেন্টারে বিক্রেতা শিমুল আহমেদ বলেন,
গত বছর ভালো ব্যবসা হয়েছে। এবছরও শবেবরাতের পর থেকে বিক্রি হচ্ছে
টুক-টাক। আশা করছি- আগামী সপ্তাহ থেকে বিক্রি বাড়বে।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম
শাহীন বলেন,
প্রত্যেক ঈদেই ঘরে পড়া ও সাধারণ পার্টিতে ঘুরে বেড়ানো পোশাকই বেশি
বিক্রি হয়। আমরা সেই চিন্তা করেই পোশাক উৎপাদন করেছি। ভারত, পাকিস্তান
এবং কাশ্মীর থেকে আমদানি করেছি। তবে এবার এসব পোশাকের দাম বেড়েছে শতকরা ৩০ থেকে ৪০
শতাংশ। গত বছর ১ হাজার টাকায় যে থ্রিপিস বিক্রি করেছি। এবছর সেই থ্রিপিস বিক্রি
করছি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। আমাদের কোন উপায় নেই, কারণ
ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের
কারণে সব কিছুর দাম বেড়েছে। এ কারণে ঈদেও পোশাকের দাম বেড়েছে। এবার ঠিকভাবে ব্যবসা
করতে পারলে আশা করছি করোনা ও সরকারের বিধিনিষেধের কারণে গত ৩ বছর যে লোকসান হয়েছে।
সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।