দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি। এজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে চলছিল জাপার সংসদীয় দলের বৈঠক। রওশনের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরসহ দলটির ১৮ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দলের অভ্যন্তরে গত সাড়ে তিন মাস ধরে চলা বিবাদ ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা করেছেন সবাই। আলোচনা শেষে ‘অনৈক্য, ভুল বোঝাবুঝি ও মান-অভিমান’ ভুলে দলে ঐক্য ধরে রেখে এককভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলে কয়েক দফা বিবাদের পর গতকালই প্রথমবারের মতো রওশনের ডাকে সাড়া দিয়ে সংসদীয় দলের বৈঠকে যান জিএম কাদেরসহ দলটির এমপিরা। রওশন নিজের স্বাক্ষরে চিঠি দিয়ে সবাইকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে জানান জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে রওশন এরশাদ বলেন, ‘সবাইকে এক থাকতে বলেছি। ঐক্যবদ্ধ থেকে সবাইকে কাজ করতে বলেছি। আগামী নির্বাচনে আমরা এককভাবেই অংশ নিব, সেভাবে সবাইকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছি। সংসদেও সবাই যেন উপস্থিত থেকে গঠনমূলক আলোচনা করেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় গঠনমূলক কথা বলেন- সেই নির্দেশনা দিয়েছি।
বৈঠক শেষে জিএম কাদের বলেন, যে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল সেটি কেটে গেছে। আজকের বৈঠকেও কয়েক দফায় কথা বলার আগে কী বলবেন, সেবিষয়ে কানে-কানে উনি আমার মতামত জানতে চেয়েছেন। এর আগে ব্যক্তিগতভাবেও উনি আমাকে বলেছিলেন- তুমি দল চালাও, আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আসলে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো উনি যে নিজ বিবেচনায় করেছেন সেটি আমার মনে হয়নি। যাক, বৈঠকে সবাই দলের ঐক্যের উপরই জোর দিয়েছেন।
তবে এই বৈঠকে রওশনপুত্র সাদ এরশাদ এমপি উপস্থিত ছিলেন না। দলের দুই কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জানান, বৈঠকে তারা সবাই একদম খোলামেলা কথা বলেছেন। কার কী ভুল ছিল, কেন দলে বিবাদ- এনিয়ে তারাও সরাসরি কথা বলেছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে জাপার পথচলার ওপর তারা গুরুত্ব দিয়েছেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, ‘বৈঠকের মূল সিদ্ধান্ত হল- সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা : বৈঠক শেষে সবাই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কিছুক্ষণ পর জিএম কাদের, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলের কয়েকজন এমপি বেরিয়ে আসেন। এসময় তাদের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন দল থেকে বহিষ্কৃত ও সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাও। পরে তারা সবাই বিরোধীদলীয় উপনেতার (জিএম কাদের) কার্যালয়ে যান। কয়েক মিনিট পর জিএম কাদেরের কক্ষ থেকে বেরিয়ে জাপার এমপি অধ্যাপিকা রওশন আরা মান্নান জানান, ভেতরে জিএম কাদেরের কাছে রাঙ্গা ক্ষমা চেয়েছেন।
এ দিকে চেয়ারম্যান হিসেবে দল পরিচালনা এবং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জিএম কাদেরের ওপর আদালতের ‘অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা’ বহালই থাকলো। ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক নিষেধাজ্ঞা খারিজের আবেদন নাকচ করেছিলেন আগেই। সেই আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে জিএম কাদের যেই মিস আপিল করেছিলেন, সেটিও বৃহস্পতিবার খারিজ হয়ে গেছে। ফলে, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল থেকে গেল।