দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত থাকলেও দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির আমদানি ও সরবরাহ কমায় আবারো পেয়াজের দাম উর্দ্ধমুখী হতে শুরু করেছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪ টাকা করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আবারো পেঁয়াজের দাম বাড়তি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা। তবে পেঁয়াজের দাম খুব একটা বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বন্দরের আমদানিকারকরা।
হিলি
স্থলবন্দর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ইন্দোর ও নাসিক এই দুই জাতের
পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও পেঁয়াজের দাম
পূর্বের তুলনায় বাড়তির দিকে রয়েছে। বুধবার (২১ জুন) বন্দরে যে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ
পাইকারিতে (ট্রাকসেল) ২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (২২ জুন)
বন্দরে সেই একই জাতের পেঁয়াজ কেজিতে ৪ টাকা করে বেড়ে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া নাসিক জাতের পেঁয়াজ ২৮ টাকা থেকে বেড়ে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
হিলি
স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা সেলিম হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে বাড়তি পরিমাণে পেঁয়াজ
আমদানি হওয়ায় পেঁয়াজের দাম নিন্মমুখী ছিল। দাম কম হওয়ায় আমাদের কিনতে যেমন সুবিধা
হয়েছিল পুঁজি কম লাগছিল তেমনি মোকামে ক্রেতাদের চাহিদামত পেঁয়াজ পাঠানো সম্ভব
হচ্ছিল সেই সঙ্গে মোকামে ক্রেতারা কম দামে পেঁয়াজ খেতে পারছিলেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বন্দর দিয়ে
বেশ কয়েকদিন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে। যার কারনে মোকামগুলোতে পেঁয়াজের চাহিদা
আগের তুলনায় খানিকটা বেড়েছে। কিন্তু সপ্তাহের প্রথমদিকের তুলনায় শেষের দিকে
পেঁয়াজের আমদানি কিছুটা কমে আসে। এতে করে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আবারো
দাম উর্দ্ধমুখী। আমরা একদামে পেঁয়াজ কিনে পাঠিয়েছি আবার বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে এসে
দেখি দাম উর্দ্ধমুখী। হঠাৎ করে আবারো পেঁয়াজের বাড়তি দামের কারনে আমাদের পেঁয়াজ
কিনতে সমস্যা হচ্ছে।
হিলি
স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পাওয়ার
পর থেকেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত রেখেছেন বন্দরের আমদানিকারকগণ। ঈদে
দেশের বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদাকে ঘিরে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ
বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। এতে করে দেশের বাজারে চাহিদার
তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ার কারনে দাম কমতে কমতে একেবারে নিন্মমুখী হয়ে এসেছিল।
সেই সঙ্গে প্রচন্ড গরমের কারনে পেঁয়াজের মান কিছুটা খারাপ হচ্ছিল এতে করে পেঁয়াজ
আমদানি করে কিছুটা লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছিল বন্দরের আমদানিকারকদের। যার কারনে
আমদানিকারকরা পেঁয়াজের লোডিং কমিয়ে দিয়েছেন ফলে সপ্তাহের শুরুর দিকের চেয়ে শেষের
দিকে পেঁয়াজ কম পরিমাণে প্রবেশ করছে।
এছাড়া
কুরবানির ঈদের ছুটির কারনে আগামী ২৭ জুন থেকে টানা ৬ দিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে
আমদানি রফতানি বন্ধ থাকবে। একইভাবে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি
বন্ধ থাকবে। এতে করে ওই সময়ে বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হবে না। এই কারনে
দেশের বিভিন্ন মোকামগুলোতে পূর্বের তুলনায় পেঁয়াজের চাহিদা খানিকটা বেড়েছে। এতে
করে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়ছে। তবে
দেশের বাজারে পেঁয়াজের সররবাহ স্বাভাবিক রাখতে ঈদের ছুটির কারনে বন্দর দিয়ে আমদানি
রফতানি বন্ধের পূর্বে যে কয়েকদিন বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি খোলা থাকবে এসময়ে বন্দর
দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। যেসব আমদানিকারকদের পেঁয়াজ
পাইপলাইনে রয়েছে সেসব পেঁয়াজের ট্রাকগুলোকে বন্ধের পূর্বেই দেশে প্রবেশ করানো হবে।
এতে করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে দাম খুব
একটা বাড়বেনা বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হিলি
স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, আমদানির অনুমতি দেয়ায় দীর্ঘ দু’মাস
২০দিন বন্ধের পর গত ৫ জুন থেকে পুনরায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।
এরপর থেকেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে শুরুর দিকে পেঁয়াজের
আমদানি কিছুটা কম থাকলেও পরবর্তীতে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ দিন দিন
বাড়ছিল।
তবে সপ্তাহের শেষের দিকে এসে পেঁয়াজের আমদানি
কিছুটা কমে যায়। যেখানে বন্দর দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো সেখানে
বুধবার বন্দর দিয়ে ৩৪টি ট্রাকে ১ হাজার ১৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। তবে
বৃহস্পতিবার আমদানির পরিমাণ কিছুটা বেড়ে এদিন ৪০টি ট্রাকে ১ হাজার ১৮৫ টন পেঁয়াজ
আমদানি হয়েছে। পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচাপণ্য ও দ্রুত পচনশীল তাই কাস্টমসের পরীক্ষণ
শুল্কায়ন ও আউটপাশ শেষে আমদানিকারকরা যেন দ্রুত খালাস করে নিতে পারেন সে লক্ষ্যে
বন্দর কর্তৃপক্ষ সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেখেছে।