বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সাভার’র
সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) A.D নুর হোসেন ও মোটরযান পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ঘুষ
দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তিনি দালালদের সরকারি আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে
অফিসের চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে ঘুষসহ নানামুখী দুর্নতিমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে উৎসাহিত
করেন বলে অভিযোগ।
গাড়ির
ফিটনেস, লাইসেন্স করতে গেলে ভোগান্তির শেষ থাকেনা সেবা নিতে আসা মানুষদের। সেইসাথে
আছে তার সিন্ডিকেটভূক্ত দালালদের নির্লজ্জ দৌরাত্ম। মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের
ইচ্ছে মতো টাকা দালালদের হাতে না দিলে কোনো কাজই হয় না এই অফিসে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার বিধান থাকলেও
উৎকোচের বিনিময়ে লার্নার (শিক্ষানবিশ) কার্ডধারীদের নিয়মিতই রেজিস্ট্রেশন দেয়া
হচ্ছে সাভারের বিআরটিএ অফিস থেকে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়ার
বিনিময়েও নেয়া হচ্ছে বাড়তি ঘুষের টাকা। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, দালালদের আখড়ায়
পরিণত হয়েছে এই সাভার কার্যালয়টি। এই অফিসের A.D নুর হোসেন ও মোটরযান পরিদর্শক আমিনুল খানের
যোগসাজশে গড়ে ওঠেছে দালালদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, লাইসেন্স প্রতি ৩ গুণ, ৪ গুণ টাকা
বেশি দিতে বাধ্য করা হয় ভুক্তভোগীদের।
এভাবেই
বিআরটিএ সাভার অফিসের AD নুর হোসেন ও মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান কথিত অফিস
স্টাফ ও দালালদের সাথে আঁতাত করে প্রতিমাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা
যায়।
রোড পারমিট, মালিকানা বদল, ফিটনেস,
চোরাই গাড়ির জাল কাগজ প্রস্তুত ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, নাম্বার প্লেট,
অকৃতকার্য মোটরযান চালকদের কাছ থেকে মোটা অংকের দক্ষিণা নিয়ে গ্যারান্টি সহকারে
ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিয়েই মূলতঃ এঁরা লুটপাট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
এতে প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হলেও A.D নুর হোসেন ও মোটরযান
পরিদর্শক আমিনুল গড়েছেন নামে বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড়।আমিনুল ইসলামের দপ্তরে
ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারী ফিস জমা বাদেও প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে নেন ৪/৫
হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি রোড মারমিট থেকে গোপনে হাতিয়ে নেন ৫০ হাজার
টাকা থেকে ২/৩ লাখ টাকা। চোরাই গাড়ির জাল কাগজ প্রস্তুতে নেন গাড়ির মূল্যমান ও
শ্রেণী বিশেষে ৫০ হাজার থেকে থেকে ২ লাখ টাকা। মালিকানা বদলের ক্ষেত্রে ২০ হাজার
থেকে ৫০ হাজার টাকা। কাগজে ত্রুটি থাকলে গোপনে হয় মোটা অংকের লেনদেন। গাড়ির ফিটনেস বাবদ নেন ২৫/৩০ হাজার টাকা করে।
এসব টাকার
৪০% নেন সহকারী পরিচালক ( ইঞ্জি:), ৩৫% টাকা নেন পরিদর্শক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম
খান,, আর বাকি ২৫% টাকা যায় অফিস স্টাফ আর দালালদের পকেটে। এডি ও পরিদর্শক
আমিনুলের যৌথ উদ্যোগে এই অসাধু উপায়ে অর্জিত টাকা থেকে হেড অফিস ম্যানেজের নামে
একটি অংশ চলে যায় দক্ষিণার নামে। এভাবেই
তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায় শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিজেদেরকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও শেখ
হাসিনার প্রিয়জন পরিচয় দিয়ে তারা কর্মস্থলগুলোতে স্ব-স্ব ক্ষমতার বলয়ে গড়ে তুলেছেন
শক্তিশালি সিন্ডিকেট।
জনশ্রুতি আছে জুলাই আগস্ট ২০২৪ এর ছাত্র আন্দোলন দমন করতে এডি নুর হোসেন ও
মোটরযান পরিদর্শক প্রতিরাতে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে করতেন গভীর
শলাপরামর্শ। আর ছাত্র আন্দোলন দমাতে লক্ষ লক্ষ টাকা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের
মাঝে বিতরণ করেন।
তবে ৫ই আগষ্ট পট পরিবর্তনে শেখ হাসিনা দিল্লি পালিয়ে গেলে এডি নুর হোসেন ও মোটরযান পরিদর্শক
আমিনুল টানা প্রায় ২ সপ্তা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান।
তবে
কিছুদিন পর সবকিছু স্বাভাবিক হতে থাকলে আস্তে আস্তে এঁরাও মাটি ফুঁড়ে বের হতে
থাকে। এরপর সপ্তাহ দুই ফেরেস্তা সেজে থাকলেও এখন আবারো শেখ হাসিনার দোসর এই চক্র
পূর্বের ন্যায় স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।
( চলবে)