Logo
শিরোনাম

গুম কমিশনে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নেয় ২২ কোটি টাকা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

নগদ অর্থ ও জমি লিখে নেওয়ার তথ্য ফাঁস করায় ফের গুম করা হয় এক ব্যবসায়ীকে, ১০ বছরেও যিনি ফিরে আসেননি।এদিকে এখন পর্যন্ত গুম কমিশনে এক হাজার সাতশ অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে বেশিরভাগ র‌্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। গুম, অপহরণে পুলিশও কম হাত পাকায়নি। কেউ এখনো চাকরিতে বহাল আছেন, কেউ হয়েছেন গ্রেফতার। আবার পালিয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন। 


গুমসংক্রান্ত কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইনকোয়ারি (অনুসন্ধান) অব্যাহত রেখেছি। এটা তো এক দিনের ব্যাপার নয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের আমরা তলব করছি, ওদের কথা শুনছি। দরকার হলে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের কথাও দ্বিতীয়বার শোনা হবে। অনেক সময় উভয়পক্ষকে মুখোমুখি করছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা অনেক সময় ডিনাই (অস্বীকার) করছে। আমাদের অবশ্যই সত্যটা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের কাজই হলো সত্য অনুসন্ধ্যান।’ মার্চ বা এপ্রিলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। 


কেস স্টাডি-১ : গুমসংক্রান্ত কমিশনে ৬ জানুয়ারি অভিযোগ করেন খান মো. আক্তারুজ্জামান নামের এক ব্যবসায়ী। অভিযোগে বলা হয়, পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিনি। গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায়। বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। এ কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহদের দ্বারা গুমের শিকার হন। 


ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নেয় ২২ কোটি টাকা

নগদ অর্থ ও জমি লিখে নেওয়ার তথ্য ফাঁস করায় ফের গুম করা হয় এক ব্যবসায়ীকে, ১০ বছরেও যিনি ফিরে আসেননি

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের শুধু গুম করেই ক্ষ্যান্ত হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, অনেককে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার নগদ অর্থ ছাড়াও জমিও লিখে নেন। এছাড়া যারা ছাড়া পেয়ে বিষয়টি প্রকাশ করে বিচার চেয়েছেন তাদের ফের গুম করা হয়। এ রকম অনেকে আজও ফিরে আসেননি। গুম কমিশনের কাছে দেওয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে চাঞ্চল্যকর এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী এবং গুম কমিশন সূত্রে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি কেস স্টাডি পাওয়া গেছে। 


এদিকে এখন পর্যন্ত গুম কমিশনে এক হাজার সাতশ অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে বেশিরভাগ র‌্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। গুম, অপহরণে পুলিশও কম হাত পাকায়নি। কেউ এখনো চাকরিতে বহাল আছেন, কেউ হয়েছেন গ্রেফতার। আবার পালিয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন। 


গুমসংক্রান্ত কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইনকোয়ারি (অনুসন্ধান) অব্যাহত রেখেছি। এটা তো এক দিনের ব্যাপার নয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের আমরা তলব করছি, ওদের কথা শুনছি। দরকার হলে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের কথাও দ্বিতীয়বার শোনা হবে। অনেক সময় উভয়পক্ষকে মুখোমুখি করছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা অনেক সময় ডিনাই (অস্বীকার) করছে। আমাদের অবশ্যই সত্যটা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের কাজই হলো সত্য অনুসন্ধ্যান।’ মার্চ বা এপ্রিলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। 


কেস স্টাডি-১ : গুমসংক্রান্ত কমিশনে ৬ জানুয়ারি অভিযোগ করেন খান মো. আক্তারুজ্জামান নামের এক ব্যবসায়ী। অভিযোগে বলা হয়, পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিনি। গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায়। বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। এ কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহদের দ্বারা গুমের শিকার হন। 



ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘লে. কর্নেল আজাদ ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে আমাকে চোখ বেঁধে তৎকালীন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধানের নেতৃত্বে একটি কালো গাড়িতে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। চোখ বাঁধা থাকায় আমি স্থান চিনতে পারিনি। তবে পরবর্তীতে বুঝতে পারি, র‌্যাব হেডকোয়ার্টার্সের বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘরে ৩ দিন বন্দি ছিলাম। সেখানে থাকাবস্থায় ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে ৩০ (ত্রিশ) কোটি টাকা ও জমি দাবি করেন র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা। এরপর র‌্যাবের নজরদারিতে থেকে কয়েক দফায় নগদ ২২ কোটি টাকা দিয়ে জীবন ভিক্ষা পেয়েছিলাম। আমার কোম্পানির এজিএম অ্যাকাউন্টস মো. শহিদুল্লাহ ও ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী শুভকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ধাপে কোম্পানির ব্যাংক লোন থেকে টাকা তুলে দেই। এছাড়া আমার ও আমার স্ত্রীর নামে থাকা জমি বিক্রি করে টাকাগুলো দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও তারা থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ভয় দেখিয়ে আমার বেশ কিছু জমিও রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করে। সে সময় আমার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। আমার শরীরে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। নির্যাতনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে নিয়মিত থেরাপি নিতে হচ্ছে।’ র‌্যাব কর্মকর্তাকে টাকা দেওয়ার অডিও রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজের কিছু তথ্য-প্রমাণ অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান।


ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘গুমের শিকার হয়ে টাকা দেওয়ার পর থেকে আমার কোম্পানি অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে এবং ব্যাংকের ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে। অথচ আমাকে তুলে নেওয়া র‌্যাবের সেই কর্মকর্তার নামে-বেনামে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে।’ 


কেস স্টাডি-২ : রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকা থেকে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি অপহরণ হন ব্যবসায়ী মো. কুদ্দুসুর রহমান চৌধুরী। গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেন ব্যবসায়ী কুদ্দুসের মেয়ে ফারজানা আক্তার টুম্পা। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালে কর্নেল (অব.) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে র‌্যাব-৪ এর একজন কর্নেল, একজন ক্যাপ্টেন চোখ বেঁধে কুদ্দুসুর রহমানকে উঠিয়ে নিয়ে যান। ইলেকট্রিক শক দিয়ে ৪টি গাড়ি, ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার চেক, ২ লাখ টাকা এবং জমির দলিলে সই নেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কুদ্দুসুর রহমান। হাইকোর্টে রিট পিটিশনও দায়ের করেন তিনি। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি মিরপুর জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানের সামনে থেকে সাদা মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় কুদ্দুসুর রহমানকে। এভাবে তুলে নেওয়ার ১০ বছর পার হলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। তার ভাগ্যে কী হয়েছে সেটিও পরিবারের সদস্যরা আজও জানতে পারেননি। 


এদিকে ঘটনার ১ মাস পর পল্লবী থানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন কুদ্দুসুর রহমানের স্ত্রী মোছা. জোসনা বেগম। মামলাটি থানা পুলিশের পর পুলিশের বিশেষায়িত দুটি সংস্থা তদন্ত করে। কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি তার। এছাড়া অভিযুক্তদের আইনের আওতায়ও আনা যায়নি।


নিখোঁজ কুদ্দুসুর রহমানের পরিবারের দাবি, রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে গুম হন কুদ্দুস। আর ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিকানায় আছেন সাবেক এক প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা। ফলে মামলা করলেও আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাব খাটিয়ে সঠিক তদন্ত করতে দেওয়া হয়নি।


কুদ্দুসুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তার টুম্পা বলেন, ‘বাবাকে প্রথমে র‌্যাব তুলে নিয়ে গুম করে নগদ টাকা ও গাড়ি নিয়েছিল। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় ফের গুম হন। আজও বাবাবে খুঁজে পাইনি। আমরা এখনো আশা করছি বাবা বেঁচে আছেন।’ 


গুম কমিশন সূত্র বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে ঘটনার মিল রয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে চাক্ষুষ প্রমাণ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। নিরপেক্ষ সাক্ষীও পাওয়ার সুযোগ নেই। গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা কাজটি এমনভাবে করেছেন যাতে এগুলো পরবর্তীতে শনাক্ত করা না যায়। 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই প্রকাশ্যে আসতে থাকে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। গুমের অভিযোগ জমার ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলেও এখনো একে একে জমা পড়ছে অভিযোগ। সেসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে কমিশন।


এদিকে অভিযোগ পর্যালোচনা ও অনুসন্ধ্যান করে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টাকে। গুমসংক্রান্ত বেশিরভাগ অভিযোগ উঠেছে এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে গুমসংক্রান্ত কমিশন র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করে। 


গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় পাঁচ সদস্যের গুমসংক্রান্ত কমিশন। কমিশনের সভাপতি করা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশনের বিবেচনায় আনা হয়েছে। কমিশন গঠনের পর কয়েক দফা অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর অভিযোগ দায়েরের সময় শেষ হয়েছে। তবে এখনো অভিযোগ নিয়ে আসছেন ভুক্তভোগীরা।


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের শুধু গুম করেই ক্ষ্যান্ত হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, অনেককে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার নগদ অর্থ ছাড়াও জমিও লিখে নেন। এছাড়া যারা ছাড়া পেয়ে বিষয়টি প্রকাশ করে বিচার চেয়েছেন তাদের ফের গুম করা হয়। এ রকম অনেকে আজও ফিরে আসেননি। গুম কমিশনের কাছে দেওয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে চাঞ্চল্যকর এ রকম তথ্য পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী এবং গুম কমিশন সূত্রে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি কেস স্টাডি পাওয়া গেছে। 

ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘লে. কর্নেল আজাদ ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে আমাকে চোখ বেঁধে তৎকালীন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধানের নেতৃত্বে একটি কালো গাড়িতে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। চোখ বাঁধা থাকায় আমি স্থান চিনতে পারিনি। তবে পরবর্তীতে বুঝতে পারি, র‌্যাব হেডকোয়ার্টার্সের বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘরে ৩ দিন বন্দি ছিলাম। সেখানে থাকাবস্থায় ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে ৩০ (ত্রিশ) কোটি টাকা ও জমি দাবি করেন র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা। এরপর র‌্যাবের নজরদারিতে থেকে কয়েক দফায় নগদ ২২ কোটি টাকা দিয়ে জীবন ভিক্ষা পেয়েছিলাম। আমার কোম্পানির এজিএম অ্যাকাউন্টস মো. শহিদুল্লাহ ও ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী শুভকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ধাপে কোম্পানির ব্যাংক লোন থেকে টাকা তুলে দেই। এছাড়া আমার ও আমার স্ত্রীর নামে থাকা জমি বিক্রি করে টাকাগুলো দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও তারা থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ভয় দেখিয়ে আমার বেশ কিছু জমিও রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করে। সে সময় আমার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। আমার শরীরে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। নির্যাতনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে নিয়মিত থেরাপি নিতে হচ্ছে।’ র‌্যাব কর্মকর্তাকে টাকা দেওয়ার অডিও রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজের কিছু তথ্য-প্রমাণ অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান।


ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘গুমের শিকার হয়ে টাকা দেওয়ার পর থেকে আমার কোম্পানি অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে এবং ব্যাংকের ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে। অথচ আমাকে তুলে নেওয়া র‌্যাবের সেই কর্মকর্তার নামে-বেনামে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে।’ 


কেস স্টাডি-২ : রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকা থেকে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি অপহরণ হন ব্যবসায়ী মো. কুদ্দুসুর রহমান চৌধুরী। গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেন ব্যবসায়ী কুদ্দুসের মেয়ে ফারজানা আক্তার টুম্পা। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালে কর্নেল (অব.) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে র‌্যাব-৪ এর একজন কর্নেল, একজন ক্যাপ্টেন চোখ বেঁধে কুদ্দুসুর রহমানকে উঠিয়ে নিয়ে যান। ইলেকট্রিক শক দিয়ে ৪টি গাড়ি, ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার চেক, ২ লাখ টাকা এবং জমির দলিলে সই নেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কুদ্দুসুর রহমান। হাইকোর্টে রিট পিটিশনও দায়ের করেন তিনি। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি মিরপুর জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানের সামনে থেকে সাদা মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় কুদ্দুসুর রহমানকে। এভাবে তুলে নেওয়ার ১০ বছর পার হলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। তার ভাগ্যে কী হয়েছে সেটিও পরিবারের সদস্যরা আজও জানতে পারেননি। 


এদিকে ঘটনার ১ মাস পর পল্লবী থানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন কুদ্দুসুর রহমানের স্ত্রী মোছা. জোসনা বেগম। মামলাটি থানা পুলিশের পর পুলিশের বিশেষায়িত দুটি সংস্থা তদন্ত করে। কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি তার। এছাড়া অভিযুক্তদের আইনের আওতায়ও আনা যায়নি।


নিখোঁজ কুদ্দুসুর রহমানের পরিবারের দাবি, রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে গুম হন কুদ্দুস। আর ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিকানায় আছেন সাবেক এক প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা। ফলে মামলা করলেও আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাব খাটিয়ে সঠিক তদন্ত করতে দেওয়া হয়নি।


কুদ্দুসুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তার টুম্পা বলেন, ‘বাবাকে প্রথমে র‌্যাব তুলে নিয়ে গুম করে নগদ টাকা ও গাড়ি নিয়েছিল। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় ফের গুম হন। আজও বাবাবে খুঁজে পাইনি। আমরা এখনো আশা করছি বাবা বেঁচে আছেন।’ 


গুম কমিশন সূত্র বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে ঘটনার মিল রয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে চাক্ষুষ প্রমাণ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। নিরপেক্ষ সাক্ষীও পাওয়ার সুযোগ নেই। গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা কাজটি এমনভাবে করেছেন যাতে এগুলো পরবর্তীতে শনাক্ত করা না যায়। 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই প্রকাশ্যে আসতে থাকে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। গুমের অভিযোগ জমার ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলেও এখনো একে একে জমা পড়ছে অভিযোগ। সেসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে কমিশন।


এদিকে অভিযোগ পর্যালোচনা ও অনুসন্ধ্যান করে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টাকে। গুমসংক্রান্ত বেশিরভাগ অভিযোগ উঠেছে এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে গুমসংক্রান্ত কমিশন র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করে। 


গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় পাঁচ সদস্যের গুমসংক্রান্ত কমিশন। কমিশনের সভাপতি করা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশনের বিবেচনায় আনা হয়েছে। কমিশন গঠনের পর কয়েক দফা অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর অভিযোগ দায়েরের সময় শেষ হয়েছে। তবে এখনো অভিযোগ নিয়ে আসছেন ভুক্তভোগীরা।


আরও খবর



আসলে জীবনটা কী? অনেকটা সময় নিয়ে ভাবলাম

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

শামীমা নাছরিন, সিনিয়র সাংবাদিক :

ভেবে মনে হলো, জীবনটা আসলে যুদ্ধ। টিকে থাকার লড়াইয়ে হাজার রকমের প্রচেষ্টার সমন্বয়। একটা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই আরেকটা যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে। যেন সিনেমার সিকোয়েন্স। 

অবশ্য, বাবা-মার সামর্থ্য থাকলে ছোটবেলায় লড়াইটা কম করতে হয়। কিন্তু জীবনে যখন একা চলার প্রয়োজন হয় বা নিজের মতো করে গড়ে তুলতে হয় তখনই যুদ্ধটা শুরু হয়। শুধুমাত্র সময়ের সঙ্গে এর ধরণটা বদলে যায়।

শিক্ষা জীবনে পড়ালেখায় ভালো করা নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। পরীক্ষায় কে কার চেয়ে ভালো ফল করতে পারবে এ নিয়েই মূলত যুদ্ধ। শিক্ষা জীবন শেষে চাকুরির জন্য যুদ্ধ। তবে, চাকুরির পাশাপাশি পরিবারের চাপে বিয়ে না করা ইস্যুতে যুদ্ধ করে মেয়েরা। যেসব মেয়েরা চাকুরি-সংসার দুটোই সামলান তারা জড়িয়ে পড়ে মহাযুদ্ধে। ঘর-বাহির করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হলেও  জিতে যায় বিবাহিত মেয়েরা। তবে, নতুন যুদ্ধ শুরু হয় মা হওয়ার পর। বাচ্চার দেখভাল করতে গিয়ে সংসার ও চাকরি নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধে নামে মায়েরা। এ সময় পরাজিত হয়ে চাকুরি ছেড়ে দেয় অনেকে। চাকরি ছাড়লেও যুদ্ধ কিন্তু শেষ হয় না। কাঁধে দায়িত্ব চাপে সংসার ও সন্তানের। সন্তানের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে খারার তৈরি এবং স্কুল-কোচিং বা অন্যান্য শিখন কার্যক্রমে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে পড়ে মায়েরা। তিন বেলা স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সন্তানকে আনা নেওয়ার জন্য সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে তারা। এক সময় সন্তান বড় হয়ে গেলে যুদ্ধ হয় নিজের শরীরের সঙ্গেই। জীবন পরিক্রমায় শরীরটাই যেন যুদ্ধক্ষেত্র হয়। আজ এ রোগ তো কাল সে রোগ। এভাবেই যুদ্ধ করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে মৃত্যুর কাছে হেরে যায় মানুষ।

তাই দুইদিনের জীবনে এতো প্যারা নিয়ে লাভ নেই। আল্লাহ আমাদের জন্য যা কিছু নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে। আমরা শুধু সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রেখে দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক রাখতে পারি।


আরও খবর

মিডিয়ায় ৩০ বছর...

সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব অন্যতম। যদিও এটা সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী পালিত হয় না। কিন্তু এটি খুব জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি সংস্কৃতি। এটাকে ঐক্য এবং বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অর্থাৎ আজ সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো।

প্রতি বছর ১৪ জানুয়ারি নানা আয়োজনে পালন হয় সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব। সাকরাইন শব্দটি সংস্কৃত শব্দ সংক্রাণ থেকে এসেছে। যার আভিধানিক অর্থ হলো বিশেষ মুহূর্ত। অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই বলা হয় সাকরাইন। মকর সংক্রান্তি বা পৌষ মাসের শেষ দিন হিন্দু জমিদারেরা তাদের জমিদারিতে ব্রাহ্মণ ও প্রজাদের আতিথেয়তা দেন। উন্মুক্ত মাঠে ভোজ উৎসব হয়। বিতরণ করা হয় চাল, গুড়, তেলের তৈরি পিঠা ও ডাবের পানি। এটি বাস্তু পূজা নামে পরিচিত। এ উপলক্ষে বিক্রমপুরে কুস্তি, লম্বদান ইত্যাদি প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এই হলো সংক্রান্তির ধর্মীয় দিক।

যুগের পরিক্রমায় সাকরাইন একটি নিজস্ব উৎসব যা ঢাকার জনপ্রিয় ও দীর্ঘ সাংস্কৃতিক চর্চার ফল। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানো, বাড়ি ঘর ছাদে জমকালো আলোকসজ্জা, আগুন নিয় খেলা, সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও ফানুশে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। ছোট বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত হয় প্রতিটি বাড়ির ছাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যা ও উৎসবের মুখরতা। সাকরাইন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় পুরান ঢাকার নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, লক্ষ্ণীবাজার, নয়াবাজার, তাঁতীবাজার, গেন্ডারিয়া ও সূত্রাপুর এলাকায় ঘুড়ি, নাটাই ও মাঞ্জা দেওয়া সুতা বেচাকেনার ধুম পড়েছে। সন্ধ্যা নামলেই সাকরাইন। শাঁখারীবাজারের দোকানগুলোতে আকার ও মান ভেদে নানা ধরনের ঘুড়ি দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভোয়াদার, চক্ষুদার, দাবাদার, রুমালদার, চিলদার, রকেট, স্টার, টেক্কা, শিংদ্বার, রংধনু, গুরুদার, পান, লাভসহ রয়েছে অসংখ্য ঘুড়ি। আকারভেদে একেকটা ঘুড়ির দাম ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।আবার নাটাইয়ের পসরাযুক্ত ঘুড়ির দাম ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং সুতার দাম হাঁকানো হচ্ছে মান ভেদে ৮০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা রাজু হাওলাদার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সাকরাইনের মূল আনন্দ হলো ঘুড়ি ওড়ানো। ছাদে উঠে আমরা ঘুড়ি উড়াই। অন্যের ঘুড়ি কেটে দেওয়ার মধ্যেই আসল মজা। তাই এবার ১০টি ঘুড়ি ৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এই দেখা মিলে নানা রকম রঙিন ঘুড়ি, সুতা ও নানা রকমের নাটাই। এছাড়া সাকরাইন উৎসব ঘিরে সন্ধ্যার পর পুরান ঢাকার অলি-গলিতে এবং অনেক ভবনের ছাদে দেখা চলে ডিজে পার্টি।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা উৎসব বড়ুয়া প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমার জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা ঢাকায়। সাকরাইন উপলক্ষে নানা রকমের পিঠাপুলি ও বিভিন্ন স্বাদের খাবার রান্না করা হয় বাড়িতে বাড়িতে। সারা দেশে এই সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে থাকলেও সাকরাইন উপলক্ষে কিছুটা ধরে রেখেছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। আগে ডিজে পার্টি না থাকলে ইদানীং ছেলেরা সাকরাইন উপলক্ষে ভবনের ছাদে ডিজে পার্টির আয়োজন করে। কিছু বলতে পারি না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে থাকতে হয়।

কলতাবাজারের বাসিন্দা আছমা বেগম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সাকরাইনের রাতে ছাদে গান-বাজনা চলে, আর ঘরে ঘরে ভালোমন্দ রান্না করা হয়। আসলে ছোট থেকে দেখে আসছি বলে এখন আর এই রান্নাবান্নার কাজটা বাদ দিতে পারি না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করি।


আরও খবর

সড়কে আজও চলছে না কাউন্টারভিত্তিক বাস

মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




খাগড়াছড়িতে ৭ মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন

প্রকাশিত:শনিবার ২৫ জানুয়ারী 20২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

খাগড়াছড়ির উপজেলার ৭টি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের টাওয়ারে সংযোগ বিচ্ছিন্ন যন্ত্রাংশ লুটপাতের অভিযোগ উঠেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে টাওয়ার সংশ্লিষ্টরা। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া টাওয়ার গুলো সব বেসরকারি টেলি সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান রবি কোম্পানীর বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল

নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, গেল ২২ জানুয়ারী ভোরে একযোগে জেলার দীঘিনালা, মানিকছড়ি মাটিরাঙায় হামলার ঘটনা ঘটে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ' সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবী করে না পাওয়ায় হামলা বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে

দীঘিনালার বাবুছড়ার কার্বারী পাড়া, বাঘাইছড়ি মুখ, জারুলছড়ি, বড়াদম সাধনাটিলা এলাকার টি টাওয়ারের নেটওয়ার্কিং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এছাড়া যন্ত্রাংশ রুমে ভাংচুর লুটপাত করা হয়েছে। একই সাথে মাটিরাঙা মানিকছড়িতে আরও দুটি টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়

বিষয়ে রবি কোম্পানীর স্থানীয় এক প্রতিনিধি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রতিবছর মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আসছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। এবছরও চাঁদা চাওয়া হয়েছে। তবে কি কারণে টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তা বলা যাচ্ছে না। কোম্পানীর মার্কেটিং নেটওয়ার্কিং টিম আলাদা ভাবে অপারেটিং হয়। নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাপনা টিমকে বিষয়ে জানানো হয়েছে। তারা উদ্যোগ নিবে

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, খাগড়াছড়ির কয়েকটি উপজেলায় রবি কোম্পানীর কয়েকটি টাওয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। বিষয়ে আইনগত ভাবে কেউ এখনও অভিযোগ করেনি

এদিকে, খাগড়াছড়ি ছাড়াও রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে রবি কোম্পানীর টাওয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে খবর শোনা যাচ্ছে। এতে করে দুই জেলার লক্ষাধিক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন


আরও খবর



গজারিয়া থেকে বাল্কহেড চুরি করে শ্যামপুরে বিক্রি, ৩০টন মালামাল-সহ আটক ৪

প্রকাশিত:শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

খবর নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন বাউশিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত চর বাউশিয়া ফরাজীকান্দি নদীর ঘাট হতে এমবি মাছিয়াতা দরবার শরীফ নামক একটি বালুবাহী বাল্কহেডের স্টাফগণ বাল্কহেড খরচ বাবদ নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলসহ বালু আনার জন্য সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরবর্তীতে বাল্কহেডের স্টাফগণ  উক্ত বালুবাহী বাল্কহেড চুরি করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। 


গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি. নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এমন সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলকে দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত অবগত করা হয়। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নৌ পুলিশ জোরদার অভিযান পরিচালনাসহ তাদের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। অভিযান পরিচালনাকালে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি.  নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আলমগীর হোসেন এর নেতৃত্বে নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চল ও নৌ পুলিশ ঢাকা অঞ্চলের যৌথ অভিযানে ডিএমপি, ঢাকার শ্যামপুর থানার সহায়তায় পোস্তগোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একজন আসামীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে চোরাইকৃত বাল্কহেডটির ৪১১টি কাটা অংশ (ওজন প্রায় ৩০টন) উদ্ধার করা হয়। তৎক্ষণাৎ ডিএমপি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চোরচক্রের আরো তিনজন সহযোগীসহ শাহাদাত হোসেন (২৪), সাদ্দাম হোসেন (৩৩), মোঃ শফিকুল ইসলাম (৫৫) ও নাছিমা (৫০) সহ মোট চারজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। এই সংক্রান্তে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানায় মামলা রুজু হয়েছে। অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতারে জোর অভিযান অব্যাহত আছে।


আরও খবর



মাইজভান্ডার মহান ২৭ মাঘ পবিত্র খোশরোজ শরীফে লাখো ভক্ত জনতার ঢল

প্রকাশিত:শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

"খোদাভীরুতা অর্জন করতে হলে আল্লাহর নেক বান্দাদের সোহবতে যেতে হবে।"

আওলাদে রাসুল (ﷺ), শাহ্জাদায়ে গাউছুল আযম শাহ্সূফী ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী মাইজভান্ডারী (মাঃজিঃআ)।

মাইজভান্ডার দরবার শরীফের অন্যতম প্রাণপুরুষ হুজুর গাউছুল ওয়ারা শায়খুল ইসলাম হযরত শাহ্সূফী আল্লামা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানীর (ক.) ৮৮তম খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে ৬-১০ ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ৫দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি চলছে মাইজভান্ডার দরবার শরীফে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারী) খোশরোজ শরীফের সমাপনী দিবসের আখেরি মুনাজাত একইসাথে মাইজভান্ডার রহমানিয়া মইনীয়া দরসে নেজামী আলিম মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানার সালানা জলসা সম্পন্ন হবে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) খোশরোজ শরীফের উদ্বোধনী দিবসের কর্মসূচির মধ্যে বাদ ফজর খতমে কুরআন, খতমে খাজেগান, খতমে গাউছিয়া মাইজভান্ডারীয়া আদায়ের মাধ্যমে বাদ যোহর থেকে খতমে বুখারী, বাদে আছর তাসাউফ ভিত্তিক আলোচনা ও দোয়া মুনাজাতের সাথে ২৭ শে মাঘ খোশরোজ শরীফ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ৫দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক দিন বাদ মাগরিব থেকে ওয়াজ মাহফিল, হালকায়ে জিকির ও সেমা মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খোশরোজ শরীফের প্রতিদিন এবং সমাপনী দিবসে ছদারত ও আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফ গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া মনজিলের সাজ্জাদানশীন হযরত শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভান্ডারী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারী) লাখো ভক্ত জনতা ও মুসল্লীকে সাথে নিয়ে তিনি পবিত্র জুমার নামাজের খোৎবা ও ইমামতি করেন। এ সময় তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা সত্যবাদী তথা আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে থাকার আদেশ করেছেন। আর এটি খোদাভীরতা অর্জন করার সহজতম উপায়। তাছাড়া যেকোনো বিষয়ে কারো কাছ থেকে কোনো কিছু শেখার এবং গ্রহণ করার এটি একরকম স্বীকৃত এবং পরীক্ষিত পদ্ধতি। তিনি আরো বলেন, কারো কাছ থেকে কিছু হাসিল করতে হলে তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে থাক, তাঁর খেদমতে সংযোগ বৃদ্ধি করা আবশ্যক। তবেই তার কাছ থেকে কিছু নিতে পারবে। তাসাউফে ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের সোহবতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ মানুষের হেদায়েতের জন্য কিতাব ও রিজাল (আল্লাহর নির্বাচিত ও প্রিয় বান্দাদের) পাঠিয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেই যুগে যুগে মানুষ আল্লাহর প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। বিএসপি চেয়ারম্যান বলেন, আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাদের সোহবত থেকে দূরে থাকলে সত্যিকার অর্থে তাক্বওয়া বা খোদাভীরতা অর্জন অনেকাংশে অসম্ভব বলা যায়। এই খোদাভীরুতা না থাকায় আজকে যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতন হচ্ছে। উশৃংখলতা মারামারি হানাহানি লুটপাট ভাঙচুর মব জাস্টিসের মত ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারী বলেন, এই অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ কে আলোকিত সমাজে রূপদান করতে হলে আবাল বৃদ্ধ বণিতা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই আল্লাহর ওলিদের সোহবত এখতিয়ার করতে হবে। খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়া, হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও মইনীয়া যুব ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন খতমে কুরআন, খতমে গাউছিয়া, খতমে খাজেগান, রওজায় গিলাফ চড়ানো, ফ্রি চিকিৎসাসেবা, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, হুজুর কেবলার দেশ বিদেশের দুর্লভ আলোকচিত্র চিত্র ও ভিডিও প্রদর্শনী, মাদকের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খোশরোজ শরীফে অংশগ্রহণে দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ভক্ত জনতার উপস্থিতিতে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠছে। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় পুরো মাইজভান্ডার দরবার শরীফকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। খোশরোজ শরীফে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি আন্জুমানের এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবেন। 

সার্বক্ষনিক মনিটরিংয়ের জন্য দরবার শরীফের নায়েবে মুন্তাজেম শাহ্জাদা সৈয়দ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানী, শাহ্জাদা সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানীর নেতৃত্বে তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৫দিনের খোশরোজ শরীফের কর্মসূচি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উপজেলা ও থানা প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। খোশরোজ মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে সালাতু সালাম শেষে দুর্দশাগ্রস্থ মুসলিম উম্মাহ্ ও নিপীড়িত মানবতার মুক্তি কামনায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন হযরত শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী। পরে সকলের মাঝে তবারুক পরিবেশন করা হয়।


আরও খবর