
মোঃ মুজাহিদ সরকার কিশোরগঞ্জ ঃ
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন দপ্তরী মোঃ নরু আলম। স্থানীয়দের অভিযোগ এটা শুধুমাত্র আজকের দৃশ্য না এই স্কুলে সচরাচর এমন দৃশ্য দেখা যায়।
গত ২৪ আগস্ট ইটনায় মহামান্য রাষ্টপতি তার বক্তব্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলেন গেছেন, যারা শিক্ষকতা করেন অনেকেই প্রতিদিন জেলা সদর থেকে শিক্ষকতা করতে ইটনায় আসেন আবার এইদিনই জেলা সদরে চলে যান, এতে করে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণ কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে, আপনারা যদি এলাকায় থেকে শিক্ষকতা করতে না পারেন, তাহলে চাকরি ছেড়ে চলে যান, এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
২৮ আগস্ট রোজ রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটায়(১১:৩০) ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংবাদ প্রতিবেদক সরজমিনে উপস্থিত হলে এমন দৃশ্য দেখেন। প্রথম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন ঐ ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্কুলের শিক্ষক না আমি দপ্তরী। তিনিও আরও জানান, স্যার-ম্যাডাম এখনও আসেন নাই এই জন্য আমি প্রথম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের একটু পড়াচ্ছি। প্রতিদিন এমন ভাবে ক্লাস নেন নাকি এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি মুচকি হাসি দিয়ে এড়িয়ে যান।
বেলা সাড়ে এগারোটায় স্যার-ম্যাডাম এখনও স্কুলে আসেন নাই এই প্রশ্নের জবাবে দপ্তরী মোঃ নরু আলম বলেন, প্রধান শিক্ষকের আত্মীয়ের চিকিৎসার জন্য তিনি আসেন নাই, বাকি স্যার ম্যাডাম মনে হয় রাস্তায় আছে, আসতেছেন। নির্দেশনা আছে স্কুল শুরু হবে সকাল ৯টায় এবং সকাল সারে নয়টায় ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২১৫ জন। বর্তমানে স্কুলটিতে ০৬ জন সরকারি শিক্ষক আছেন।
ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী মোঃ মাহাতুবুদ্দিন বলেন, আমিও স্কুলে এসে দেখি কোন স্যার ম্যাডাম নাই। স্যার ম্যাডাম বেলা সাড়ে এগারোটায় উপস্থিত নাই এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ আগেও শুনছি এখন আপনি, আমি এবং এলাকার মানুষ নিজ চোখে দেখলাম, এমন ভাবে হলে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা কীভাবে হবে।
ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাহেরা আক্তারের অভিভাবক মোঃ শাহাবুদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, এই স্কুলে স্যার-ম্যাডামরা যার যেমন ইচ্ছামতো আসেন আবার যায়, স্যার-ম্যাডাম যদি কিশোরগঞ্জ থাকেন আর আসতে আসতে যদি বেলা ১১-১২টা বাজে তাহলে পড়াশোনা কখন করাবে।
স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা এই স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী, আমাদের ছোট ভাই-বোন এই স্কুলে পড়াশোনা করেন, তাদের খোঁজ খবর নিতে আসলে দেখি স্যার-ম্যাডাম ক্লাস রেখে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত আছেন। একজন বলেন, একদিন আমি একজন ম্যাডামকে ক্লাস রেখে মোবাইলে কথা বলতে দেখে আমি প্রতিবাদ করলে আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেন।
উল্লেখ্য যে, বেলা ১২ টা বাজলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে ছুটি দিচ্ছেন দপ্তরী মোঃ নরু আলম। বেলা ১২টা পর্যন্ত স্কুলে উপস্থিত থেকে সংবাদ প্রতিবেদক কোন শিক্ষকদের দেখা না পেয়ে চলে আসার সময় একজন সহকারী শিক্ষক মোঃ ইকবাল হোসাইন আসেন।
ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি একজন রোগী নিয়ে হাসপাতালে আছি, এই ছুটির ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্যার কে জানিয়ে আসছি। বাকি শিক্ষক বৃন্দ স্কুলে বেলা সারে এগারোটায় উপস্থিত নাই এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি আসার আগে সবাই কে বলছি স্কুলে ঠিক সময় যাওয়ার জন্য। এখনও স্কুলে কেন আসে নাই, খোঁজ খবর নিতে হবে। কিছুক্ষণ পর তিনি ফোন দিয়ে জানান, দুইজন রাস্তায় আছে, আসতেছেন তখন ঘুরির কাঁটায় বেলা ১১:৪৭ বাজে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক কে উক্ত বিষয়ে অবগত করলে তিনি জানান, সাংবাদিকদের কে ধন্যবাদ জানাই আপনারা তথ্য পেয়ে, মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে আমাদের কে জানানোর জন্য। আমি অভিযোগ এবং সংবাদ প্রকাশিত হবার পর তদন্ত করে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা নিব। সরকারি দায়িত্ব অবহেলা করলে কেউ ছাড় পাবে না।