Logo
শিরোনাম

জেনারেল আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগ নয়: কাদের

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

 ডিজিটাল ডেস্ক:


সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা ভিসানীতির প্রয়োগ নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 


তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নয় বরং অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন (ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১সি ধারা) অ্যাক্টের আওতায় পড়েছে।


মঙ্গলবার (২১ মে)  ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।



ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের মিশনকে জেনারেল আজিজের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। জেনারেল আজিজের বিষয়ে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা ভিসানীতির প্রয়োগ নয়, এটি অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন আইনের প্রয়োগ। 


এটা নিয়ে আমি আর কিছু বলবো না। এ নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কথা বলেছেন। আমরা এতটুকুই জানি, এটুকুই বললাম।


দ্বিতীয় ধাপেও উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, ভোটার উপস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক। রক্তপাত ছাড়া বিএনপি আমলে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়নি।


বিএনপির সরকারকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাকশাল একক কর্তৃত্ববাদী কোনো দল নয়। এটা জাতির প্রয়োজনে তখনকার বাস্তব অবস্থায় একটি জাতীয় দল। 


এটা একদলীয় কোনো শাসন নয়। জাতীয় এই দলে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল। মির্জা ফখরুল সাহেবরা যতই মিথ্যাচার করুক তথ্য প্রমাণ আছে। 


জিয়াউর রহমান বিশেষভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে আবেদন করে বাকশালের সদস্য পদ লাভ করেছেন। বাকশালের কমিটিতে ৭১ নম্বরে তার নাম ছিল। মিথ্যাচার করে লাভ নেই।


আরও খবর

গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণে আসবে সমতা

শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা সম্মান পাবে

প্রকাশিত:রবিবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

জামায়াতে ইসলামী মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, যারা কথায় কথায় আমাদের অন্য দেশে চলে যেতে বলত, তারাই এখন দেশের বাইরে। দেশ থেকে জুলুমকারী বিদায় হয়েছে, কিন্তু জুলুম বন্ধ হয়নি। দিনাজপুরে গোর-এ শহীদ ময়দানে কর্মী সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডা. শফিকুর রহমান।

জামায়াতের আমির বলেন, দেশে প্রতিটি খুন, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও ঘুসের বিচার হতে হবে। না হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। যারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিয়ে এই দেশকে মুক্ত করেছেন, আমরা তাদের সঙ্গে আছি। আমরা তরুণদের হাতে দেশ তুলে দিতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে তারা (ভারত) গোলাম বানাতে চেয়েছিল। আর শেখ হাসিনা তাদের এজেন্ট। তাই তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তারা আমাদের ১১ শীর্ষ নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। এই দিনাজপুরের একজন বিচারক বলতেন, তিনি না কি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। কিন্তু আমরা বলি তিনি শপথ ভঙ্গের বিচারপতি। তার বিরুদ্ধে এ কারণেই ফৌজদারি মামলা হতে পারে।

শাপলা চত্বরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বলে, শাপলা চত্বরে নাকি কোনো আলেমকে হত্যা করা হয়নি। সেখানে না কি আলেমরা রং ছিটিয়ে দিয়েছেন। কতটা নির্লজ্জ হলে একজন প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলতে পারেন। তারা মনে করেছিল জামায়াতের কর্মীদের গুম-খুন করে মাটির নিচে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু আজ তারা কই? তারা দেশের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাঁধা দিয়েছে। তারা নিজেরাও কিছু করেনি, আমাদেরও করতে দেয়নি।

হিন্দু ধর্মের লোকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখানে অন্য সম্প্রদায়ের দুজন মানুষ বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে আতঙ্ক থাকবে না। নির্বাচনের পর আর হামলা-মামলা হবে না। আমরা সনাতন ধর্মের মানুষ আতঙ্ক মুক্ত থাকতে পারব। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা এমন একটি দল খুঁজেন যারা আপনাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে। একটু বিবেক দিয়ে খুঁজলেই পাবেন।

তিনি আরও বলেন, রংপুরের পীরগঞ্জে গরু চরি করে, জমি দখল করে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দিয়ে কোনো তদন্ত ছাড়াই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বললেন জামায়াত অগ্নিসংযোগ করেছে। কিন্তু দুদিন পরই জুলুমের স্বীকার হিন্দুরা বললেন, এখানে জামায়াতরা আসেনি।

জামায়াত আমির আরও বলেন, তারা বলে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা আর বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না। কিন্তু আজ দেখেন, এই সমাবেশে এক পাশে পুরুষ, আরেক পাশে হাজার হাজার নারী। আমরা বলি, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা আরও দুটি জিনিস নিয়ে চলাফেরা ও কর্ম করবে। আর তা হলো সম্মান ও নিরাপত্তা। যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিল না।

জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রী কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রী কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান হেলাল ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন।


আরও খবর

গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণে আসবে সমতা

শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




১৬ বছর পর কারামুক্ত বিডিআরের ১৬৮ সদস্য

প্রকাশিত:শনিবার ২৫ জানুয়ারী 20২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

দীর্ঘ ১৬ বছর পর কারাগার থেকে বের হলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়া বিডিআর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ১৬৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এর আগে ২১ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত জামিনপ্রাপ্ত ১৭৮ জন আসামির নাম প্রকাশ করেন। এর মধ্যে ১৬৮ জনের তালিকা হাতে পেয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, ১৬৮ জনের তালিকা হাতে পেয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপরই বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

কারগার সূত্রে জানা যায়, মুক্তি পাওয়া ১৬৮ জন বিডিআর বন্দির মধ্যে কাশিমপুর-১ থেকে ২৬ জন, কাশিমপুর-২ থেকে ৮৯ জন, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি থেকে ১২ জন। আর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪১ জন বিডিআর বন্দি সদস্যকে মুক্তি দেওয়া হয়।

গত ১৯ জানুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলা ও হত্যা মামলার বিচারক একটি রায় দেন। সেখানে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ছাড়া বাকিদের জামিনের আদেশ দেন।


আরও খবর



চলমান পরিস্থিতিতে সরকারকে কঠোর হতে বলল বিএনপি

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। অথচ জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে, যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

রিজভী বলেন, বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে যার উপসর্গ এরই মধ্যে দৃশ্যমান।

সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।


আরও খবর

বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগ বেড়েছে

সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ আর নেই

প্রকাশিত:রবিবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, সাবেক সেনাপ্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ (বীর উত্তম) মারা গেছেন।

রবিবার সকাল পৌনে ৯টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কে এম শফিউল্লাহর সহকারী জিয়াউল হাসান মনির।

নব্বই-ঊর্ধ্ব সফিউল্লাহ দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েডে জটিলতা, ফ্যাটি লিভার, ডিমেনশিয়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন তার চলাফেরা চলে স্ট্রেচারে।

১৯৭১ সালে সফিউল্লাহ ছিলেন জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান। তার নেতৃত্বেই ওই রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সফিউল্লাহ ছিলেন ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার। পরে তিনটি নিয়মিত আর্মি ব্রিগেড (ফোর্স নামে পরিচিত) গঠিত হলে ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্বে আসেন সফিউল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘বীর উত্তম’ খেতাব পান।

১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জন্ম নেয়া কে এম সফিউল্লাহ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পরে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৯১ সালে দেশে ফিরে এলে তাকে এক বছর ওএসডি করে রাখা হয়। পরের বছর তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যান।


আরও খবর

বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগ বেড়েছে

সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




নির্বাচন ও রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ

প্রকাশিত:রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

গোলাম মাওলা রনি, সাবেক সংসদ সদস্য:

জামাত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে । ইতিমধ্যে ১০০ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে যারা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী মহড়া দিচ্ছেন ।

উল্লেখিত কাজটি বিএনপির করা উচিত ছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ! প্রার্থী ঘোষণা করে সংসদীয় আসনের সকল কমিটি বিলুপ্ত করে তা প্রার্থীর অধীন করে দিয়ে নিজ নিজ এলাকার সকল দায় দায়িত্ব প্রার্থীর উপর ছেড়ে দিলে আজকের অবস্থা তৈরি হতোনা । বিএনপি সময় মত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এখন তাদেরকে নির্বাচনের পিছে ঘুরতে হতোনা , উল্টো নির্বাচনই তাদের পিছনে ঘুরতো ! চাঁদাবাজির অভিযোগ অনেক অনেক কম হতো । সারা বাংলাদেশের প্রশাসন তাদের হাতে থাকতো । উল্লেখিত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের দলিল ! বিএনপির ম্যাগনাকার্টা শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলাম ২০২৪ সালের ১৬ই অগাস্ট তারিখে ! সেখানে বিএনপিকে নিয়ে যেসব আশংকা করেছিলাম তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছে দলটি ! যারা লিখাটি পড়তে চান তাদের জন্য - আ’লীগের পতনের দলিল! বিএনপির ম্যাগনাকার্টা দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৬ই অগাস্ট, ২০২৪ আওয়ামী লীগের পতন কেন হলো- এমন প্রশ্ন করা হলে আমার মতো মোটা মাথার লোকজন গড়গড় করে কয়েক শ’ কারণ বলে দিতে পারি যা হয়তো তেলাপোকা-টিকটিকিরাও বলতে পারবে। কিন্তু দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আওয়ামী লীগের পতনের নেপথ্য কারণ বিশ্লেষণ করার জন্য যে জ্ঞান-গরিমা দরকার তা আমার নেই। আমি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাদা চোখে যা দেখি বা শুনি তা বলি কিংবা লিখি। কিন্তু দার্শনিক হতে হলে কনফুসিয়াস-প্লেটো-এরিস্টটল-সক্রেটিস-ইবনে খালদুনের মতো প্রজ্ঞা থাকতে হবে। আর সেই প্রজ্ঞাবান যেহেতু দেশে নেই; সুতরাং আমি আমার সীমিত জ্ঞান নিয়ে আজকের শিরোনাম প্রসঙ্গে কিছু বলার চেষ্টা করব। আওয়ামী লীগের পতনের একনম্বর কারণ হলো, দলটি তার রাজনৈতিক দর্শন এবং রাজনৈতিক পথ ও মত ত্যাগ করে আমলা-কামলা-ব্যবসায়ী, দেশী-বিদেশী গোয়েন্দাদের কবলে পড়ে নিজের রাজনীতি থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। যেসব পদ-পদবি রাজনৈতিক ইংরেজিতে যার নাম পলিটিক্যাল অফিস, সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দায়িত্ব না দিয়ে কথিত জ্ঞানী-গুণী-পণ্ডিত-সফল ব্যবসায়ী-আমলা প্রমুখদের নিয়োগ দিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছে। ফলে পলিটিক্যাল অফিসগুলো প্রাণশূন্য হয়ে পড়েছিল এবং জনগণের সাথে অফিসের কর্তাদের কোনো সংযোগ ছিল না। এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান, আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রমুখের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে চমক দেখানোর চেষ্টা করেছে তা বুমেরাং হয়ে ধীরে ধীরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরিণতিতে নিয়ে এসেছে। দ্বিতীয় ধাপে এসে আওয়ামী লীগ অসৎ ব্যবসায়ী-অসৎ আমলা, তেলবাজ ও ধড়িবাজ সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের জালে আটকা পড়ে যায়। এদের কারণে আওয়ামী লীগের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেতে থাকে- তাদের হেদায়েতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা ভালো-মন্দের পার্থক্য করা, সঠিক পথ অনুসরণ করা, ভালো মানুষদের সম্মান করে যোগ্য পদে পদায়ন করার প্রয়োজন অনুভব করতে পারেনি। মন্দ লোকের আধিক্য এবং মন্দদের দাপটের কারণে ভালোরা ব্যাকফুটে চলে যায়। ফলে আওয়ামী লীগের কাছে মন্দ কাজ-মন্দ চিন্তা-গুনাহ-ব্যাভিচার-অবিচার ও অনাচার ক্রমেই আকর্ষণীয় মনে হতে থাকে। তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা-জুলুম-অত্যাচারের মাধ্যমে আনন্দ লাভ, অহমিকা বোধ, দাম্ভিকতা প্রদর্শন এবং দুষ্টের লালন-শিষ্টের দমন-ফ্যাশন বা স্টাইল হয়ে দাঁড়ায়। চোরাকারবারি-লুটেরা-মদ্যপ এবং চরিত্রহীনরা রাষ্ট্রের সম্মান ও মর্যাদাজনক স্থানগুলো দখল করে ফেলে। ফলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর মানুষের অভক্তি ও অশ্রদ্ধা দেখা দেয়। রাষ্ট্র পরিচালকরা দিন-দুপুরে লাখ লাখ মানুষের সামনে মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং জনগণের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না পেয়ে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ফলে অন্যায়-অনিয়ম সরকারি অফিস-আদালত এবং রাষ্ট্র পরিচালক আমলা-কামলাদের ব্যক্তিগত-পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের অলঙ্কারে পরিণত হয়। চতুর্থ ধাপে আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং এই দু’টি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল শুরু করে এবং ব্যাপক সফলতা লাভের পর নিজেদের ঘরের শ্রেণীশত্রু চিহ্নিত করে তাদের দুর্বল-অসহায় ও অকার্যকর বানানোর মিশন হাতে নেয়। নিজ দলের যোগ্যতম রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক জোটের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার লোকদের নিজেদের শ্রেণীশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে নানা উপায়ে তাদের অপমানিত, লাঞ্ছিত ও পদদলিত করে তাদের বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও ভালো কাজের সক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। পঞ্চম ধাপে এসে তারা সবাই মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের মানবিক গুণাবলি রহিত হয়ে যায়। নিলর্জ্জতা, বেহায়াপনা ও অহেতুক রঙ্গরস এবং ভয়ানক রাজনৈতিক খেলাধুলা নিত্যদিনের বিনোদনে পরিণত হয়। মধ্যযুগের রক্তপিপাসু জুলুমবাজদের মতো ক্ষমতার চেয়ারগুলো রক্তপিপাসু হয়ে পড়ে। মানুষের মৃত্যু দেখলে তাদের হৃদয় বিগলিত না হয়ে বরং উল্লসিত হতে শুরু করে। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক অভিশাপ তাদের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং সারা বিশ্বকে অবাক করে বাংলার জমিনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়। আওয়ামী লীগের পতনের উল্লিখিত সাদামাটা কারণগুলো পর্যালোচনা করে আগামী দিনের কর্মপন্থা অবলম্বন করতে না পারলে বিএনপির কপালে আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় দুর্ভোগ-দুর্দশা অনিবার্য হয়ে পড়বে। বিএনপি যদি সতর্ক না হয় এবং অতি দ্রুত ও জরুরিভাবে কার্যকর কিছু উদ্যোগ না নেয় তবে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তোলা তো দূরের কথা, উল্টো ৫ আগস্ট তাদের কাছে বিগত ওয়ান-ইলেভেনের চেয়েও ভয়াবহ আজাব হিসেবে হাজির হতে পারে। এ জন্যই শিরোনামে আমি আওয়ামী লীগের পতনের দলিলকে বিএনপির জন্য ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ হিসেবে উল্লেখ করেছি। চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিকে এক মুহূর্ত সময় ব্যয় না করে নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে : ১. বিএনপির সব পর্যায়ে রাজনৈতিক বিরোধ, অন্তর্দ্বন্দ্ব-হানাহানি তুঙ্গে। বেশির ভাগ নির্বাচনী এলাকায় দুই-তিনটি কমিটি রয়েছে। গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গত পাঁচ বছরে এলাকায় যেতে পারেননি প্রথমত, আওয়ামী লীগের মামলা-হামলার কারণে। দ্বিতীয়ত, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ যে, এক পক্ষ তার প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের ভাড়া করে অনেক জাতীয় নেতাকে সস্ত্রীক রক্তাক্ত করেছে। চলমান পরিস্থিতিতে অতীতের সেই বিরোধ কয়েক শ’গুণ বেড়েছে। বিশৃঙ্খল নেতাকর্মীরা যা শুরু করেছে, তা যদি আর দুই সপ্তাহ চলে তবে জনগণ বলা শুরু করবে যে, আগের জমানা ভালো ছিল। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী অপারেশন ক্লিনহার্টের মতো অভিযান শুরু করলে বিএনপি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে এবং আরেকটি মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। উল্লিখিত অবস্থা মোকাবেলার জন্য বিএনপির উচিত কালবিলম্ব না করে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা। জেলা কমিটিতে জেলার প্রার্থীরা উপদেষ্টা থাকবেন এবং জেলা কমিটি উপদেষ্টাদের পরামর্শে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাবেন। নির্বাচনী এলাকার সব কমিটি প্রার্থীর নিয়ন্ত্রণে চলবে। কোনো কমিটি প্রার্থীর কথা না শুনলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সেই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করবেন এবং সেভাবেই নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। ২. যেসব আমলা-কামলা এবং ব্যবসায়ীর কারণে বিএনপির পতন হয়েছিল এবং যেসব নেতার আর্থিক দুর্নীতি সর্বজনবিদিত, যেসব লোক যেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলীয় অফিসগুলোতে ভিড় জমাতে না পারে তা শতভাগ নিশ্চিত না করা গেলে মাইনাস টু থিওরি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাজার হাজার আমলা-কামলা যারা বিএনপি জমানায় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছিল তারা এক দিনের জন্যও নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীদের খোঁজ নেয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা বিএনপিকে পরিহার করেছে, না চেনার ভান করেছে- আর কেউ কেউ আওয়ামী আমলাদের চেয়েও বেশি মাত্রায় বিএনপিকে নির্যাতন করেছে। তারা সবাই চাকরি বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগকে সকাল-বিকাল আব্বা ডেকেছে। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেসব পুরোনো দলবাজদের তাড়াতে হবে এবং প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার শপথ নিতে হবে। ৩. বিএনপির মূল শক্তি তার কর্মী-সমর্থক এবং ভোটার, যারা কি না সংসদ সদস্য প্রার্থীর মাধ্যমে দলের নিউক্লিয়াসে যুক্ত থাকে। সুতরাং সংসদীয় পদ্ধতি মেনে সব দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্র্থীকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের মর্যাদা সমপর্যায়ের- এই বিশ্বাস ও আস্থা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধারণ করতে হবে এবং সেভাবেই নিজ দলের প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হলে তৃণমূল বিএনপিতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ৪. দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কিছু পদে দ্রুত পরিবর্তন আনা জরুরি। চাটুকার, দুর্নীতিবাজ এবং ইয়েস বস বলা লোকজন দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। ৫. আগামীতে দু’টি সম্ভাবনা মাথায় রেখে এগোতে হবে। প্রথমত আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট, মাইনাস টু থিওরি বাস্তবায়ন, বিএনপিকে নতুন ফাঁদে ফেলে ক্র্যাকডাউন ইত্যাদির মতো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে। দ্বিতীয়ত, যদি নির্বাচন হয় তবে আওয়ামী লীগসহ, কিংস পার্টি এবং কিংস পার্টির অনুগত ছোট পার্টির যন্ত্রণা মোকাবেলা করতে হবে। দলের ভেতরে-বাইরে যারা বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেছে ও তাদের টাকা নিয়ে রাজপথে সরকারবিরোধী লম্ফঝম্প করেছে এবং এখনো সব দরবারে বাতি জ্বালানোর চেষ্টা করছে, এদের কাছ থেকে দলকে ১৩৩ মাইল নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

জামাত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে । ইতিমধ্যে ১০০ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে যারা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী মহড়া দিচ্ছেন । 

উল্লেখিত কাজটি বিএনপির করা উচিত ছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ! প্রার্থী ঘোষণা করে সংসদীয় আসনের সকল কমিটি বিলুপ্ত করে তা প্রার্থীর অধীন করে দিয়ে নিজ নিজ এলাকার সকল দায় দায়িত্ব প্রার্থীর উপর ছেড়ে দিলে আজকের অবস্থা তৈরি হতোনা । 

বিএনপি সময় মত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এখন তাদেরকে নির্বাচনের পিছে ঘুরতে হতোনা , উল্টো নির্বাচনই তাদের পিছনে ঘুরতো ! চাঁদাবাজির অভিযোগ অনেক অনেক কম হতো । সারা বাংলাদেশের প্রশাসন তাদের হাতে থাকতো । 

উল্লেখিত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের দলিল ! বিএনপির ম্যাগনাকার্টা শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলাম ২০২৪ সালের ১৬ই অগাস্ট তারিখে ! সেখানে বিএনপিকে নিয়ে যেসব আশংকা করেছিলাম তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছে দলটি !

যারা লিখাটি পড়তে চান তাদের জন্য - 

আ’লীগের পতনের দলিল! বিএনপির ম্যাগনাকার্টা

দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৬ই অগাস্ট, ২০২৪ 

আওয়ামী লীগের পতন কেন হলো- এমন প্রশ্ন করা হলে আমার মতো মোটা মাথার লোকজন গড়গড় করে কয়েক শ’ কারণ বলে দিতে পারি যা হয়তো তেলাপোকা-টিকটিকিরাও বলতে পারবে। কিন্তু দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আওয়ামী লীগের পতনের নেপথ্য কারণ বিশ্লেষণ করার জন্য যে জ্ঞান-গরিমা দরকার তা আমার নেই। আমি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাদা চোখে যা দেখি বা শুনি তা বলি কিংবা লিখি। কিন্তু দার্শনিক হতে হলে কনফুসিয়াস-প্লেটো-এরিস্টটল-সক্রেটিস-ইবনে খালদুনের মতো প্রজ্ঞা থাকতে হবে। আর সেই প্রজ্ঞাবান যেহেতু দেশে নেই; সুতরাং আমি আমার সীমিত জ্ঞান নিয়ে আজকের শিরোনাম প্রসঙ্গে কিছু বলার চেষ্টা করব।


আওয়ামী লীগের পতনের একনম্বর কারণ হলো, দলটি তার রাজনৈতিক দর্শন এবং রাজনৈতিক পথ ও মত ত্যাগ করে আমলা-কামলা-ব্যবসায়ী, দেশী-বিদেশী গোয়েন্দাদের কবলে পড়ে নিজের রাজনীতি থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। যেসব পদ-পদবি রাজনৈতিক ইংরেজিতে যার নাম পলিটিক্যাল অফিস, সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দায়িত্ব না দিয়ে কথিত জ্ঞানী-গুণী-পণ্ডিত-সফল ব্যবসায়ী-আমলা প্রমুখদের নিয়োগ দিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছে। ফলে পলিটিক্যাল অফিসগুলো প্রাণশূন্য হয়ে পড়েছিল এবং জনগণের সাথে অফিসের কর্তাদের কোনো সংযোগ ছিল না। এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান, আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রমুখের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে চমক দেখানোর চেষ্টা করেছে তা বুমেরাং হয়ে ধীরে ধীরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরিণতিতে নিয়ে এসেছে।


দ্বিতীয় ধাপে এসে আওয়ামী লীগ অসৎ ব্যবসায়ী-অসৎ আমলা, তেলবাজ ও ধড়িবাজ সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের জালে আটকা পড়ে যায়। এদের কারণে আওয়ামী লীগের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেতে থাকে- তাদের হেদায়েতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা ভালো-মন্দের পার্থক্য করা, সঠিক পথ অনুসরণ করা, ভালো মানুষদের সম্মান করে যোগ্য পদে পদায়ন করার প্রয়োজন অনুভব করতে পারেনি। মন্দ লোকের আধিক্য এবং মন্দদের দাপটের কারণে ভালোরা ব্যাকফুটে চলে যায়। ফলে আওয়ামী লীগের কাছে মন্দ কাজ-মন্দ চিন্তা-গুনাহ-ব্যাভিচার-অবিচার ও অনাচার ক্রমেই আকর্ষণীয় মনে হতে থাকে।


তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা-জুলুম-অত্যাচারের মাধ্যমে আনন্দ লাভ, অহমিকা বোধ, দাম্ভিকতা প্রদর্শন এবং দুষ্টের লালন-শিষ্টের দমন-ফ্যাশন বা স্টাইল হয়ে দাঁড়ায়। চোরাকারবারি-লুটেরা-মদ্যপ এবং চরিত্রহীনরা রাষ্ট্রের সম্মান ও মর্যাদাজনক স্থানগুলো দখল করে ফেলে। ফলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর মানুষের অভক্তি ও অশ্রদ্ধা দেখা দেয়। রাষ্ট্র পরিচালকরা দিন-দুপুরে লাখ লাখ মানুষের সামনে মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং জনগণের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না পেয়ে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ফলে অন্যায়-অনিয়ম সরকারি অফিস-আদালত এবং রাষ্ট্র পরিচালক আমলা-কামলাদের ব্যক্তিগত-পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের অলঙ্কারে পরিণত হয়।


চতুর্থ ধাপে আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং এই দু’টি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল শুরু করে এবং ব্যাপক সফলতা লাভের পর নিজেদের ঘরের শ্রেণীশত্রু চিহ্নিত করে তাদের দুর্বল-অসহায় ও অকার্যকর বানানোর মিশন হাতে নেয়। নিজ দলের যোগ্যতম রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক জোটের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার লোকদের নিজেদের শ্রেণীশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে নানা উপায়ে তাদের অপমানিত, লাঞ্ছিত ও পদদলিত করে তাদের বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও ভালো কাজের সক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।


পঞ্চম ধাপে এসে তারা সবাই মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের মানবিক গুণাবলি রহিত হয়ে যায়। নিলর্জ্জতা, বেহায়াপনা ও অহেতুক রঙ্গরস এবং ভয়ানক রাজনৈতিক খেলাধুলা নিত্যদিনের বিনোদনে পরিণত হয়। মধ্যযুগের রক্তপিপাসু জুলুমবাজদের মতো ক্ষমতার চেয়ারগুলো রক্তপিপাসু হয়ে পড়ে। মানুষের মৃত্যু দেখলে তাদের হৃদয় বিগলিত না হয়ে বরং উল্লসিত হতে শুরু করে। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক অভিশাপ তাদের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং সারা বিশ্বকে অবাক করে বাংলার জমিনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।


আওয়ামী লীগের পতনের উল্লিখিত সাদামাটা কারণগুলো পর্যালোচনা করে আগামী দিনের কর্মপন্থা অবলম্বন করতে না পারলে বিএনপির কপালে আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় দুর্ভোগ-দুর্দশা অনিবার্য হয়ে পড়বে। বিএনপি যদি সতর্ক না হয় এবং অতি দ্রুত ও জরুরিভাবে কার্যকর কিছু উদ্যোগ না নেয় তবে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তোলা তো দূরের কথা, উল্টো ৫ আগস্ট তাদের কাছে বিগত ওয়ান-ইলেভেনের চেয়েও ভয়াবহ আজাব হিসেবে হাজির হতে পারে। এ জন্যই শিরোনামে আমি আওয়ামী লীগের পতনের দলিলকে বিএনপির জন্য ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ হিসেবে উল্লেখ করেছি। চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিকে এক মুহূর্ত সময় ব্যয় না করে নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে :


১. বিএনপির সব পর্যায়ে রাজনৈতিক বিরোধ, অন্তর্দ্বন্দ্ব-হানাহানি তুঙ্গে। বেশির ভাগ নির্বাচনী এলাকায় দুই-তিনটি কমিটি রয়েছে। গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গত পাঁচ বছরে এলাকায় যেতে পারেননি প্রথমত, আওয়ামী লীগের মামলা-হামলার কারণে। দ্বিতীয়ত, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ যে, এক পক্ষ তার প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের ভাড়া করে অনেক জাতীয় নেতাকে সস্ত্রীক রক্তাক্ত করেছে। চলমান পরিস্থিতিতে অতীতের সেই বিরোধ কয়েক শ’গুণ বেড়েছে। বিশৃঙ্খল নেতাকর্মীরা যা শুরু করেছে, তা যদি আর দুই সপ্তাহ চলে তবে জনগণ বলা শুরু করবে যে, আগের জমানা ভালো ছিল। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী অপারেশন ক্লিনহার্টের মতো অভিযান শুরু করলে বিএনপি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে এবং আরেকটি মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।

উল্লিখিত অবস্থা মোকাবেলার জন্য বিএনপির উচিত কালবিলম্ব না করে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা। জেলা কমিটিতে জেলার প্রার্থীরা উপদেষ্টা থাকবেন এবং জেলা কমিটি উপদেষ্টাদের পরামর্শে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাবেন। নির্বাচনী এলাকার সব কমিটি প্রার্থীর নিয়ন্ত্রণে চলবে। কোনো কমিটি প্রার্থীর কথা না শুনলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সেই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করবেন এবং সেভাবেই নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।


২. যেসব আমলা-কামলা এবং ব্যবসায়ীর কারণে বিএনপির পতন হয়েছিল এবং যেসব নেতার আর্থিক দুর্নীতি সর্বজনবিদিত, যেসব লোক যেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলীয় অফিসগুলোতে ভিড় জমাতে না পারে তা শতভাগ নিশ্চিত না করা গেলে মাইনাস টু থিওরি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাজার হাজার আমলা-কামলা যারা বিএনপি জমানায় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছিল তারা এক দিনের জন্যও নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীদের খোঁজ নেয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা বিএনপিকে পরিহার করেছে, না চেনার ভান করেছে- আর কেউ কেউ আওয়ামী আমলাদের চেয়েও বেশি মাত্রায় বিএনপিকে নির্যাতন করেছে। তারা সবাই চাকরি বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগকে সকাল-বিকাল আব্বা ডেকেছে। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেসব পুরোনো দলবাজদের তাড়াতে হবে এবং প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার শপথ নিতে হবে।


৩. বিএনপির মূল শক্তি তার কর্মী-সমর্থক এবং ভোটার, যারা কি না সংসদ সদস্য প্রার্থীর মাধ্যমে দলের নিউক্লিয়াসে যুক্ত থাকে। সুতরাং সংসদীয় পদ্ধতি মেনে সব দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্র্থীকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের মর্যাদা সমপর্যায়ের- এই বিশ্বাস ও আস্থা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধারণ করতে হবে এবং সেভাবেই নিজ দলের প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হলে তৃণমূল বিএনপিতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।


৪. দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কিছু পদে দ্রুত পরিবর্তন আনা জরুরি। চাটুকার, দুর্নীতিবাজ এবং ইয়েস বস বলা লোকজন দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না।


৫. আগামীতে দু’টি সম্ভাবনা মাথায় রেখে এগোতে হবে। প্রথমত আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট, মাইনাস টু থিওরি বাস্তবায়ন, বিএনপিকে নতুন ফাঁদে ফেলে ক্র্যাকডাউন ইত্যাদির মতো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে। দ্বিতীয়ত, যদি নির্বাচন হয় তবে আওয়ামী লীগসহ, কিংস পার্টি এবং কিংস পার্টির অনুগত ছোট পার্টির যন্ত্রণা মোকাবেলা করতে হবে। দলের ভেতরে-বাইরে যারা বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেছে ও তাদের টাকা নিয়ে রাজপথে সরকারবিরোধী লম্ফঝম্প করেছে এবং এখনো সব দরবারে বাতি জ্বালানোর চেষ্টা করছে, এদের কাছ থেকে দলকে ১৩৩ মাইল নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরও খবর

মিডিয়ায় ৩০ বছর...

সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আসলে জীবনটা কী? অনেকটা সময় নিয়ে ভাবলাম

মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫