বুলবুল আহমেদ সোহেল :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চলছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে চলছে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। দেশের ঐহিত্যবাহী লোককারু শিল্পের নিদর্শন সংগ্রহ সংরক্ষন, প্রদর্শন ও পুনরুজ্জীবিত করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্যই প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন। দর্শনার্থীদের কাছে সব আয়োজন ঠিকঠাক থাকলেও অভিযোগ উঠেছে মূল ভিষণ থেকে সরে যাচ্ছে ফাউন্ডেশন, চারুকারু শিল্পীদের দেয়া হয়নি পর্যাপ্ত স্টল, কনস্ট্রাকশন কাজ বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক রূপ।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভেতরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন কারুশিল্প যাদুঘর এবং লোক ও কারুশিল্প যাদুঘর। গ্রাম বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এ দুটি যাদুঘরে স্থান পেয়েছে প্রাচীন লোক ও কারুশিল্প। মাসব্যাপী এ উৎসবেকে কেন্দ্র করে পুরো ফাউন্ডেশন চত্বরকে সাজানো হয়েছে বর্নিল সাজে। প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রদর্শন করছে লোক জীবন প্রদর্শনী,গ্রাম্য নালিশ,কনে দেখা, বিয়ে,জামাইকেও পিঠা আপ্যায়নের দৃশ্য, গ্রামীন খেলা হা-ডু-ডু ও কানামাছি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কারুশিল্পীদের প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ, নাগর দোলা, মুন্সিগঞ্জ ও মৌলভী বাজারের শীতল পাটি, মাগুরা ও ঝিনাইদহের শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি ও মুখোশ, চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁওয়ের জামদানী নিয়ে অংশ গ্রহন করেছেন চারু কারু শিল্পিরা।
এদিকে দর্শনার্থীদের বিনোদনকে আরো প্রানবন্ত করতে ফাউন্ডেশনের ভেতরের লেকে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় লোকজ এই উৎসবে থাকছে পালাগান, বাউল ও জারিসারি গানের।করোনা ভাইরাসের কারনে গত কয়েক বছর মেলা বন্ধ থাকায় এবার অন্তত একলাখ দর্শনার্থী লোকজ এ উৎসবে অংশ নেবেন বলে আশাবাদী আয়োজকরা।
মেলায় দর্শনার্থীরা গ্রামীন এসব ঐতিহ্যে দেখে ও ছেলে মেয়েদের পরিচয় করিয়ে দিতে পেরে অনেকটাই আবেগ আপ্লুত।
এদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিল্পিরা জানালেন প্রতিবছরই এ মেলায় অংশ গ্রহণ করেন তারা। তবে প্লাস্টিক ও বিদেশী পণ্যের দাপটে আজ বিপন্ন হওয়ার পথে এসব গ্রামীন ঐতিহ্য। বংশ পরম্পরায় অংশ গ্রহন কারী এসব শিল্পীরা বললেন সরকারী ভাবে পিষ্ট পোষকতা ছাড়া এ শিল্প ধরে রাখা যাবেনা। তারা বললেন যাদের জন্য এ মেলার আয়োজন তাদেরকেই অবমূল্যায়ন করা হয়েছে এবার। কয়েকটি স্টলেই দুজন করে শিল্পকে দেয়া হয়েছে।
মেলা পরিদর্শনে আসা কবি শাহেদ কায়েস বলেন, ফাউন্ডেশনের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাচ্ছে। চারু কারুশিল্পীদের প্রমোট করা,আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করা ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষেই জয়নুল আবেদিন প্রতিষ্ঠা করেছিল এ ফাউন্ডেশন। প্রতিবছর মেলার আয়োজন ছাড়া তেমন কোন কার্যক্রমই চোখে পড়েনা। আবার যাদের জন্য এ মেলার আয়োজন তাদেরকেও অবহেলা করা হচ্ছে। ১শটি স্টলের মধ্যে ৩২ স্টল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে শিল্পীদের। কোন কোন স্টলে দুজন শিল্পীকে বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে। এখানেতো অন্তত ৬৪ জেলার জন্য ৬৪টি স্টল বরাদ্ধ দিয়ে দেশের সব প্রান্ত থেকে অন্তত একজন করে শিল্পীকে জড়োকরা সম্ভব। তা না করে বেশীরভাগ স্টল দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের। যারা এখানে প্লাস্টিক ও চায়না প্রডাক্ট বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। কোটি টাকার বাজেটে বিভিন্ন ভবন তৈরী হচ্ছে। যা এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনিষ্ট করা হচ্ছে।
এসব ব্যাপারে ফাউন্ডেশনের পরিচালক এস এম রেজাউল করিম বলেন,তিনি মাত্র একমাস হয়েছে দায়িত্বে বসেছেন। অভিযোগ গুলো তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেবেন। এ বছর কর্মরত কারুশিল্পীদের প্রদর্শনীর জন্য ৩২টি স্টল সহ ১০০টি স্টল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। মেলা চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।