উত্তম কুমার মোহন্ত,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
হেমন্তের বিদায় কালে ভোরের হালকা কুয়াশায় নিমজ্জিত সবুজ ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু আর ঝরে থাকা শিউলি ফুলের মিষ্টি সৌরভ যেন পৌঁছে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস ছাড়া যেন শীতের আমেজেই পাওয়া যায় না। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে বসে সুস্বাদু খেজুরের রস খাওয়ার মজাটাই আলাদা। শীতের আগমনী বার্তা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগাম খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলবাড়ী উপজেলার খেজুর গাছিরা।
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার খেজুর রসের ঐতিহ্য। কুড়িগ্রাম জেলার জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ খেজুর গাছ সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে না পারার কারণে এই অঞ্চলের খেজুর গাছ অনেকটা বিলুপ্তির পথে। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়,ঝোলা গুড়,দানা গুর মুটা গুড়, বাটালী গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যেত। খেজুর রসের পায়েস রসে ভেজা পুলি পিঠা সহ-বিভিন্ন সুস্বাদ খাবারের তো জুরিই ছিল না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার এই সব সুস্বাদু ঐতিহ্য খেজুরের রস,গুড়। কিছুদিন আগেও গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গিয়েছিল রাস্তার দুই ধারে কিংবা অধিকাংশ বাড়ির পুকুর পাড়ে সারি সারি ভাবে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। খেজুর গাছগুলো কোন রকম পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো। শীত মৌসুমে রস গুড় উৎপাদন করে কয়েক মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করেন গ্রামের অনেক খেজুর গাছির পরিবার। খেজুর গাছ সংকটের কারণে প্রতিবছরের মতো এবছর চাহিদা অনুযায়ী রস ও গুড় পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন ফুলবাড়ীর গাছিরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা মেলে সকালের মিষ্টি রোদে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুটি চন্দ্র খানা গ্রামের হারান গাছি, খেজুর গাছের বুকচিরে রস সংগ্রহের প্রান্তিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি জানান,আমার নিজের কয়েকটি গাছ সহ-অন্যের প্রায় ৬০টির মতো গাছ লিজ নিয়েছি, এক সময় খেজুর রস ও গুড়ের জন্য হামার ফুলবাড়ী উপজেলার খ্যাতি ছিল। শীত কালে শহর থেকে মানুষ দলে, দলে ছুটে আসতো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস ও গুড় সংগ্রহের জন্য ওই সময় সন্ধ্যা কালীন গ্রামের পরিবেশটা খেজুর রসের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠতো। শীতে খেজুর গুড় দিয়ে গ্রাম বাংলার সেই আলোচিত ভাপা পিঠা খাওয়ার যেন জুরি নেই।
সদর ইউনিয়নের চন্দ্র খানা কালির হাট এলাকার খেজুর গাছ মালিক মিজানুর রহমান জানান,গাছিদের তিন/চার মাসের জন্য চার থেকে পাঁচ কেজি গুরের বিনিময়ে গাছগুলো আমরা ভাড়া দেই। অনেক পুরোনো গ্রামীণ ঐতিহ্য যাতে বিলীন না হয় অনেকটা স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার চেষ্টা করতেছি,বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে একসময় গ্রামীণ ঐতিহ্য খেজুর গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমাদের হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাইলে খেজুর গাছ সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।