
ব্যাংকিং খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলা হয়। ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার চাকা সচল রাখতে ঋণ দেয়া এবং সময়মতো সে ঋণ আদায় করা। ব্যাংকের প্রধান সম্পদই হলো এ ঋণ। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরাপদ, কল্যাণমুখী খাতে বিনিয়োগসহ শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা অপরিহার্য। ব্যাংকের সঙ্গে যাদের লেনদেনের সম্পর্ক তারা বেশিরভাগই শিক্ষিত, সচেতন; সবারই চোখ-কান খোলা। সবাই জানে ও বুঝে, প্রশিক্ষিত ও সৎ কর্মকর্তার সমন্বয়ের সঙ্গে জনস্বার্থ, আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ছাড়া কোনো ব্যাংক সাফল্য অর্জন করতে পারে না। অতীত ও বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল স্পষ্ট। দেশের ব্যাংকিং খাতে সমস্যার শেষ নেই।
ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট না থাকায় মূলত খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগাভাগিসহ আমানত ‘খেয়ে ফেলা’য় সেখানেও খেলাপির সংখ্যা ভয়াবহ। মোটকথা, ঋণখেলাপিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশে টাকার তুলনায় ব্যাংক বেশি। বিশ্বের অনেক বড় বড় অর্থনীতির দেশেও এত ব্যাংক নেই, যতটা বাংলাদেশে রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৬১টি অনুমোদিত ব্যাংক রয়েছে। কিন্তু দেশের জিডিপির (GDP) আকারের দিকে লক্ষ্য করলে অর্থনীতি ও ব্যাংকের সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের বর্তমান জিডিপি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অথচ দেশটিতে ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ১৮টি। এর মধ্যে ৬টি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি ব্যাংক। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে আরেক উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটির ৩৪০ বিলিয়ন জিডিপির বিপরীতে ব্যাংক রয়েছে মাত্র ৫টি।
অন্যদিকে পাকিস্তানে ২৬২ বিলিয়ন জিডিপির বিপরীতে ব্যাংকের সংখ্যা ২২টি, ফিলিপাইনে ৩৬১ বিলিয়নের বিপরীতে ১৭টি, নাইজেরিয়ায় ৪৩২ বিলিয়নের বিপরীতে ২০টি ও মিশরে ৩৬৫ বিলিয়নের বিপরীতে ব্যাংকের সংখ্যা ৩৯টি। মূলত একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হলে, সেখানে বিদেশি ব্যাংকের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকেও এমনটা ঘটেনি। বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও কমেছে বিদেশি ব্যাংকের সংখ্যা।
বাংলাদেশে ব্যাংক করার ব্যাপারে ধনাঢ্যরা এত আগ্রহী কেন? কী তাদের উদ্দেশ্য? এসব নিয়ে সাধারণ মানুষ নানা প্রশ্ন করলেও তাদের কথা পাত্তা দেয়ার গরজ মনে করেনি কোনো সরকারই। কিছু দিন আগে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, এখন অনেকেই ব্যাংক করেন জনগণের টাকা লুটের জন্য। তা-ও মেঠো বক্তৃতায় নয়। তিনি কথাটা বলেছেন উচ্চ আদালতে শুনানিতে, যেখানে ছিলেন স্বয়ং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার এ বক্তব্যকে কথার কথা মনে করে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে না। শুধু অ্যাটর্নি জেনারেল নন, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকেও কঠিন পর্যবেক্ষণ এসেছিল ব্যাংকিং খাত নিয়ে।