উত্তম কুমার (যশোর) জেলা প্রতিনিধি :
যশোর পৌরসভায় মাসিক মিটিং এ উপস্থিত না হওয়ায় এক কাউন্সিলরের সম্মানী বন্ধ হয়েছে। আগামী মাসে এ সংখ্যা তিন এ দাঁড়াবে। এসব কাউন্সিলর সময়মত মাসিক মিটিং এ না আসায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর বাইরে শহর উন্নয়নে নেয়া হয়েছে এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সার্কিট হাউজের সামনের পুকুর ও লালদীঘির শোভাবর্ধন করা।
উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্যে আরও রয়েছে দড়াটানা ব্রিজ থেকে কাঠেরপুল ব্রিজ পর্যন্ত ভৈরবপাড়ে ওয়াকওয়ে, এইচএমএম রোডের সাথে লিংকওয়ে, কাঠেরপুল ব্রিজের দক্ষিণপাশে পিলখানা (কসাইখানা) তৈরি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টাউয়ার লাইট ও ডাস্টবিন স্থাপন। এছাড়া, শহরবাসীর যানজট ভোগান্তি থেকে রেহায় দিতে দ্রুতই অভিযানে নামছে পৌর প্রশাসক।
সোমবার পৌর পরিষদের মাসিক সভায় এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসাথে এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পৌর প্রশাসক।
ওই সভায় উপস্থিত কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেলা ১২টা থেকে মাসিক সভা শুরু হয়ে শেষ হয় ৩টায়। সভায় যশোর পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন, ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর কবীর সুমন ও সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ হোসেন নয়ন ছাড়া সকল জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতেই গত মাসের রেজুলেশন পাশ হয়। এরপর একের পর এক এজেন্ডা অনুযায়ী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আগস্ট মাসে ১৮ দিন সাবেক মেয়র হায়দার গণি খান পলাশের দায়িত্ব পালন করায় তাকে ২৪ হাজার টাকা সন্মানী ভাতা প্রদান ও গত মাসের সভায় ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন উপস্থিত না হওয়ায় তার সন্মানী ভাতা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসাথে এ সভায় অনুপস্থিত ওই তিনজন জনপ্রতিনিধির চলতি মাসের ভাতা না দেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দ্রুতই যানজট নিরসনে মাঠে নামবে পৌর প্রশাসন। কাঠেরপুল থেকে দড়াটানা ব্রিজ পর্যন্ত সিলিং করে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে। এছাড়া, এইচ এমএম রোড় থেকে ওই ওয়াকওয়েতে প্রবেশের জন্য একাধিক লিংক ওয়ে তৈরি করা হবে। শহরে নির্দিষ্ট কোনো পিলখানা না থাকায় যত্রতত্র পশু জবাই করা হয়।
এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় কাঠেরপুলের পাশে একটি পিলখানা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শহরের বিভিন্ন মোড় রাত হলেই অন্ধকারে রূপ নেয়। যার প্রেক্ষিতে সড়কের বাতি বাড়ানো ও টাওয়ার লাইট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমে দড়াটানা ও মণিহারে দ্রুতই বসানো হবে টাওয়ার লাইট। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এ লাইট সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন মোড়ে ডাস্টবিন যেগুলো আছে সেগুলো সংস্কার ও ডাস্টবিনের নিচে ঢালাই এবং নতুন করে আরও ডাস্টবিন বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যশোর শহরের লালদীঘি ও জেলা স্কুলের সামনের পৌরসভার লিজের পুকুরের সৌন্দর্য বাড়ানো হবে।
এছাড়া যশোর জেনারেল হাসপাতালে পৌরসভা থেকে সুইপারের ব্যবস্থা, পৌরসভায় পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দড়াটানার ভৈরব হোটেলের পাশে বার বার দখলে চলে যাওয়ায় কয়েকদিনের মধ্যে সেখানে বেঞ্চ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মাইকপট্টি হয়ে ইনস্টিটিউট স্কুলের পাশ দিয়ে যেয়ে পুলিশ প্লাজা হয়ে সরাসরি ভৈরব পাড়ের ওয়াকওয়েতে যুক্ত হবে এমন আরেকটি রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সভা থেকে। এছাড়া এ সভায় পৌরসভার যেসব সম্পদ লিজ দেয়া হয়েছে সেসব সম্পদ আইনসিদ্ধ ও বৈধভাবে বরাদ্দ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, কাউন্সিলর মোকসিমুল বারী অপু, রাশেদ আব্বাস রাজসহ সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়।
সভায় উপস্থিত থাকা কয়েকজন কাউন্সিলর ও কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, এ পর্যন্ত এমন নিয়ম মানা হয়নি যে কাউন্সিলররা মাসিক সভায় উপস্থিত না হলে তারা সম্মানী ভাতা পাবেন না। কিন্তু পৌর প্রশাসক প্রথম এ নিয়ম চালু করেছেন। এতে পৌরসভা ও কাজের দিকে প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা থাকবে বলে মন্তব্য করেন কেউ কেউ। তারা বলেন, এর আগে মেয়ররা রাজনীতি ও স্বজনপ্রীতিকে প্রাধ্যন্য দিতেন। অনেকেই মাসিক সভায়ও আসতেন না। এ নীতি চালুতে তারা সাধুবাদ জানান।
যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান গ্রামের কাগজকে বলেন, পৌরসভার নিয়ম রয়েছে যারা আসবেন না তাদের সম্মানী ভাতা কর্তন করা হবে। এখানে নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, তিনি গত ১৮ আগস্ট দায়িত্ব পেয়েছেন। এরপর থেকে পৌরবাসীর উন্নয়নে কাজ করছেন। এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে স্বীকার করে বলেন, যশোর পৌরসভাকে ঢেলে সাজানো হবে। যা হবে শহরবাসীর আশ্রয়স্থল।