মইনুল ইসলাম মিতুল : রাজধানীতে ক্রমেই বাড়ছে কিশোর অপরাধ। কিশোর গ্যাং উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। গ্যাংয়ের অধিকাংশ সদস্যই ছিন্নমূল ও বস্তিবাসী। যাদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর। মাদক সেবন ও চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত তারা। মাদক বিক্রি, জমি দখল, চুরি-ছিনতাই এমনকি হত্যা মামলাও রয়েছে অনেক কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে।
রাজনৈতিক পেশিশক্তির ঢাল ও মাদক কারবারের স্বার্থে কিশোর অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংগত কারণে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন এলাকার প্রভাবশালী কিছু রাজনৈতিক নেতা ও মাদক কারবারি। তবে কিশোর অপরাধ রুখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তালিকাভুক্ত করা হয়েছে থানাভিত্তিক কিশোর গ্যাং লিডার, সদস্য ও পৃষ্ঠপোষকদের।
পুলিশের তথ্য বলছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের ৭টি থানায় অন্তত ২৫টির বেশি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এসব গ্যাংয়ে পাঁচ শতাধিক সদস্য রয়েছে। যার বেশিরভাগের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর। পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।
নারীদের দিয়ে মাদক বিক্রি করা এ গ্যাংয়ের একটি কৌশল। এ গ্যাংয়ের মাদক কারবারিতে বাধা দেওয়ায় হামলার শিকারও হয়েছেন অনেকে।
পল্লবীর তালতলা মোড়, নাভানা আবাসিক ভবন, ও সবুজ বাংলা আবাসিক গেট এলাকায় আশিক গ্রুপের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। আশিকের নেতৃত্বে এ গ্রুপে শামীম, রায়হান, আল-আমিন, রাব্বি, রনি, মহিন ও সুমনসহ ১২-১৩ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। আশিক গ্রুপকে লিড দিচ্ছে পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন ঢালী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি কোনো কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ বা প্রশ্রয় দেই না। বরং কিশোর গ্যাং উৎপাত রোধে কাজ করছি। যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীরা এসব কিশোর গ্যাংদের মদদ দিচ্ছে।’
বি-ব্লক, ঈদগাহ মাঠ এলাকায় রয়েছে- পিন্টু-কাল্লু গ্রুপ। অন্তত ২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে এ গ্রুপে। বাউনিয়া বাঁধ বি-ব্লকের কাল্লু, ‘ডি’ ব্লকের উজ্জ্বল, সজিব, সাজ্জাদ, শুক্কুর, ‘ই’ ব্লকের জন্টু এবং ‘এ’ ব্লকের হাসান অন্যতম। অভিযোগ রয়েছে এ গ্যাংয়ে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সদস্য সুলতান। এ বিষয়ে খলিলুর রহমানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কিশোর গ্যাংকে মদদ দেওয়া বিষয়টি অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা সুলতান বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি। এর মানে এই নয় যে, কিশোর গ্যাংদের প্রশ্রয় দিব। হয়তো প্রতিপক্ষের বিরোধের জের ধরে আমাকে জড়ানো হচ্ছে।’
রানা মুন্সি নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মিরপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। গ্যাংয়ের বেশির ভাগ সদস্য কিশোর হলেও তাদের পরিচালনা করেন কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা। বিশেষ করে মাদক কারবারি, ছিনতাই ও রাজনৈতিক অপকর্মে তাদের ব্যবহার করা হয়। এসব গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে হামলা-দামলা এমনকি মামলারও শিকার হতে হয়।
পল্লবীর ই-ব্লকে রয়েছে রোমান্টিক গ্রুপ। কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা ভুলু এ গ্রুপের লিডার। মনু, জসিম ওরফে ক্যাডার জসিম, পল্টু, দেলোয়ার ও গুড্ডু এ প্রুগের অন্যতম সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে মাদক কারবার ও মারামারির অভিযোগ রয়েছে। রোমান্টিক গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন ভন্টুর নাম ওঠে আসে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান। আমার কাছে সবাই আসে, তাই বলে কী আমি সবাইকে মদদ দেই! আমাদের এখানে কোনো গ্রুপ নেই। এখানে কোনো কিশোর গ্যাং নেই।