সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের
অধীনে ভোটের দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য
দিয়ে দাবি আদায়ের কথা বললেও ক্রমেই কঠোর কর্মসূচির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন
শীর্ষ নেতারা। সেক্ষেত্রে হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসূচির
ভাবনাও আছে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ফয়সালা করতে চায় দলটি।
সেক্ষেত্রে
তফসিল পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ঘোষণা হলেই হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচিতে
যাবে বিএনপি। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে
সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কর্মসূচির ধরণ ও সময় পরিবর্তন হতে পারে বলেও
জানা গেছে।
দলীয় সূত্র বলছে, জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
ইতোমধ্যে একাধিক কমিশনার এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন- আন্দোলন ও
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চাপের মুখে নিজেদের অধীনে নির্বাচনের অবস্থান থেকে সরকার সরে
আসবে। তাই আপাতত হার্ডলাইনে না যাওয়ার চিন্তা ভাবনা আছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায়
তফসিলের আগেই হরতালের মতো কর্মসূচি আসতে পারে।
যদিও
এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা হলেই তারা হরতালের কর্মসূচি আসবে এমনটা চিন্তা আছে
নীতিনির্ধারকদের। তবে কর্মসূচি যাই হোক তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকবে
দায়িত্বপ্রাপ্তদের ওপর। যারা সক্রিয় থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে
হাইকমান্ড।
কর্মসূচির
বিষয় আলাপকালে স্থায়ী কমিটির সদস্য একজন সদস্য বলেন, ‘আন্দোলনের তো মাত্রা
থাকে। সেটা তুঙ্গেও উঠবে। কিন্তু সেই সময় তো দরকার। আমরাও হরতালসহ কঠোর কর্মসূচির
চিন্তা ভাবনা করছি।
সেটা কবে নাগাদ ঘোষণা করা হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই নীতি নির্ধারক বলেন, তফসিল কবে ঘোষণা
করবে সেটা নির্বাচন কমিশন জানে। আমরা আমাদের মাত্রা ঠিক করে তফসিলের আগেও কঠোর
কর্মসূচির দিতে যেতে পারি। অনেক ধরণের আলোচনা চলছে।
দলটির
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিনজন নেতা হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য
প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা
শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি নিয়ে কোনোভাবে এগুবে তাও ঠিক করবে বিএনপি।
স্থায়ী
কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, রোডমার্চের মধ্য দিয়ে আমরা সবাইকে জাগিয়ে তোলার
চেষ্টা করছি। বেশ সাড়াও পাচ্ছি। চলমান কর্মসূচি শেষ হোক। সবাইকে নিয়েই উপযুক্ত
কর্মসূচি ঠিক করা হবে। এবার আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, তারা চাইছেন তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুর
রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের
রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে তাদের। এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও,
সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে
কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে।
অবশ্য
সরকারি দল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব কর্মসূচি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে গেলে
পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কার বিষয়টিও মাথায় রাখছেন বিএনপি নেতারা।
অন্যদিকে
একযোগে বিএনপির মহাসচিবসহ একাধিক শীর্ষ নেতা বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) হরতালের
কর্মসূচি আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
চেয়ারপারসনের
কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের মতো কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যতদিন আপনি (শেখ হাসিনার সরকার)
থাকবেন এটা আরও সংঘাতের দিকে যাবে, খারাপের দিকে যাবে এবং সংঘাত আরও বাড়তে থাকবে।
এখনও তো সংঘাত শুরু হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা পরিষ্কার
বোঝা যাচ্ছে জনগণ রুখে দাঁড়াবে।
মির্জা
ফখরুল বলেন, শত প্ররোচনার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এটার শেষ
পরিণতি কী হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণ কি হচ্ছে তার ওপর।
মহাসচিবের
বক্তব্যের পর এদিকে সিলেটের রোডমার্চে অংশ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর
চন্দ্র রায়, ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী হরতাল, অবরোধের
মতোন কঠোর কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
ভৈরবে সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা
এখনও হরতাল দেইনি। হরতাল দেওয়া দরকার আছে? অবরোধ দেওয়ার দরকার আছে? আপনারা
পালন করবেন?’ তিন প্রশ্নের
উত্তরে নেতাকর্মীরা বলেন, ‘হ্যাঁ’।
এ
সময় গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন,
ঠিক আছে আপনাদের রায় পেলাম। আমরা হরতাল করি নাই, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। এবার ডু অর ডাই হবে।
অন্যদিকে
প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতাল
অবরোধ করে দেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
রিজভী
বলেন, এক দফা দাবি আদায়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি
পালন করে যাচ্ছি। সরকার যদি আমাদের রোডমার্চ, মিছিলে জনগণের
সম্পৃক্ততায় কোনো বার্তা না পায় বা না বুঝে তাহলে দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ করে
দেশ অচল করে দেওয়া হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।