জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সাম্প্রদায়িক উস্কানি দাতাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে...
-ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী
প্রখ্যাত অলীয়ে কামেল, শায়খুল ইসলাম, হুজুর গাউছুল ওয়ারা, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভাণ্ডারীর (ক.) ৮৮তম ৫দিনব্যাপী বার্ষিক খোশরোজ শরীফ সোমবার বাংলা ২৭শে মাঘ (১০ ফেব্রুয়ারী) লাখো ভক্ত আশেকানের আমিন আমিন ধ্বনিতে বিশ্ব মানবতার শান্তি ও মুক্তি কামনায় আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার দরবার শরীফে সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার খোশরোজ শরীফের সমাপনী দিবসের কর্মসূচিতে ছিল, বাদে ফজর রওজা শরীফে গোসল, গিলাফ ছড়ানো, পুষ্পমাল্য অর্পন, খতমে কোরআন, খতমে গাউসিয়া, মিলাদ মাহফিল, জিকির আজকার, ভক্তদের ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, যৌতুক ও মাদকের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর, বিকালে হযরত গাউছুল ওয়ারা শায়খুল ইসলাম হযরত শাহসুফি সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভান্ডারীর জীবন ও দর্শনের ওপর আলোচনা, মিলাদ কিয়াম, ছেমা মাহফিল, তবারুক বিতরণ ও ভোর রাতে আখেরী মোনাজাতসহ নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রাতে মাইজভাণ্ডার রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া দরসে নেজামী আলিম মাদ্রাসা ও হেফজখানার বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে এ বছর হেফজ সমাপ্তকৃত ১১জন হাফেজে কুরআন কে পাগড়ি পরানোর মাধ্যমে দস্তারে ফজিলত ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতি বক্তব্যে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া মনজিলের বর্তমান গদীনশীন পীর ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি চেয়ারম্যান হযরত শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী মাইজভাণ্ডারী বলেন, যুগে যুগে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন নবী-রাসূল এবং আউলিয়ায়ে কেরামগণ। অথচ বর্তমানে অন্যায় অবিচার হঠকারিতা উগ্রবাদিতা অন্যের সম্পদ ভাঙচুর লুটপাট মব জাস্টিসের নামে নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা করা এসব নিত্যদিনের খবরের কাগজের শিরোনাম হচ্ছে। কোন কোন বিপথগামী ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী এসব ফৌজদারী অপরাধ সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্য ধর্মের অপব্যাখ্যা করে এসব বে-ইনসাফি কর্মকাণ্ডকে উস্কে দেয়। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, ইসলামী শরিয়ত আইন প্রয়োগের ক্ষমতা সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেয়নি। এমনকি কোনো মসজিদের ইমাম, মুফতি ও সমাজপতিদের ওপর আইন প্রয়োগের ক্ষমতা অর্পণ করেনি। কোনো মানুষ অপরাধ করলে তার বিচার রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থার মাধ্যমেই হবে। সব ইসলামী আইনজ্ঞ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে যিনি আইন প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন, তিনি হলেন রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁর প্রতিনিধি। বিএসপি চেয়ারম্যান বলেন, ইসলামী শরিয়ত অপরাধের শাস্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দিয়ে শেষ করেনি; এর সঙ্গে সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণিত হওয়ারও শর্ত দিয়েছে। সুতরাং কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তা প্রমাণের আগে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, রাষ্ট্রও তাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রাখে না। ইসলামী দণ্ডবিধির একটি মূলনীতি হলো, সন্দেহ শাস্তি রহিত করে। ইসলামী শরিয়তের সুস্পষ্ট বিধান অনুসারে, সাধারণ মানুষের জন্য আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অতএব, প্রচলিত গণপিটুনির কারণ যা-ই হোক না কেন, ইসলামী শরিয়তে তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (ক.) আজীবন ইনসাফের আলোকে সমতা ভিত্তিক সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই করেছেন। খোশরোজ শরীফ উপলক্ষ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও ফটিকছড়ি থানা পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। খোশরোজ শরীফে দেশ–বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো ভক্তের সুবিধার্থে থাকা–খাওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা, নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও ভিডিও চিত্র ধারনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়।আগত দেশ বিদেশের আশেক-ভক্ত, জায়েরীনদের জন্য থাকা-খাওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা, পার্কিং, নিরাপত্তা, নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য লাইটিং এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক ও এলাকাবাসীর সহায়তায় সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণভাবে খোশ রোজ শরীফের কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয় । খোশরোজ মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন, শাহজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ মেহবুব-এ মইনুদ্দীন আল হাসানী, শাহ্জাদা আলহাজ্ব হযরত সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানী, হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের মহাসচিব এডভোকেট কাজী মহসীন চৌধুরী, আনজুমান-এ রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া কেন্দ্রীয় মহাসচিব খলিফা আলহাজ্ব আলমগীর খান মাইজভাণ্ডারী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রুহুল আমিন ভূইয়া, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক মো: ইব্রাহিম মিয়া মাইজভাণ্ডারী, সাংবাদিক কামরুজ্জামান হারুনসহ অন্যান্যরা। মাহফিলে হুজুর কেবলার জীবন, কর্ম ও দর্শনের ওপর আলোচনায় অংশ নেন, ঘিলাতলা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন হযরত মাওলানা বাকী বিল্লাহ আল আজহারী,অধ্যক্ষ আল্লামা গোলাম মুহাম্মদ খান সিরাজী, আমতল সিদ্দিকীয়া মইনীয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা বাকের আনসারী, মুফতী মাওলানা মাকসুদুর রহমান, মাওলানা নাজের হোসাইন, খলিফা মাওলানা হাসান মাইজভাণ্ডারী, হাফেজ খাজা বাহাউদ্দীন মাইজভাণ্ডারী, শায়ের মাওলানা মনছুর আলী, হাফেজ মাওলানা কেরামত আলী মাইজভান্ডারী প্রমুখ। সালাত সালাম শেষে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মুক্তি এবং দেশ ও বিশ্ববাসীর ওপর আল্লাহর রহমত কামনায় আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করেন শাহ্সূফী মাওলানা সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী (মা.জি.আ.)।