
রাজধানীর অলি-গলিসহ প্রধান সড়কগুলোতেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সংযোগ সড়কে তো আছেই। মূল সড়কেও দাপটের সাথে চলছে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা। এমনকি রাজধানীর অভিজাত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। তাদের চলার ভংগি এমন, কাউকেই তোয়াক্কা করার সময় নেই। রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে তার সেই নির্দেশের কোনো বাস্তবায়ন নেই। অন্য স্বাভাবিক দিনের মতো রাজধানীর সড়ক, অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করেছে।
বিপজ্জনক উল্লেখ করে বিভিন্ন সময় এসব রিকশা চলাচল বন্ধের দাবি উঠলেও তা কমছে না। এবার খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এসবের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরেও অবাধে চলছে এসব যান। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল দিনদিন বেড়েই চলেছে। এসব গাড়ির নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলের কারণে প্রতিদিনই ঘটছে কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা। সরকারের নির্দেশনা দিলেও, এখনো তা কার্যকর হয়নি। পুলিশ প্রশাসনের সামনেই চলছে সব। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আটো রিকশার দৌরাত্ম্যে অসহায় সাধারণ মানুষ। এসব যানের অনিয়িন্ত্রিত চলাচলে যানজট লেগেই থাকে সারাক্ষণ। চালকদের ভাষ্য, তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সড়কে এ যান চালাচ্ছেন। তবে বন্ধের ঘোষণা এলে চাঁদার রেট বেড়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতির সময়ে অবৈধ এই যানবাহন চলতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হচ্ছে না। এছাড়া বাহন নিরাপদও নয়। সাধারণ রিকশার অবকাঠামো কিছুটা পরিবর্তন করে তৈরি এসব রিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এতে প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজধানীতে প্রায় দুই লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এগুলোর জন্য একদিকে যেমন বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রায়ই হচ্ছে দুর্ঘটনা। এসব যান নিয়ন্ত্রণে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ফলে এসব রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকেও অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ, মগবাজার এবং মিরপুর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিক্য বেশি। এসব জায়গায় শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এসব যান। দিনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার চুক্তিতে পাওয়া যায় ব্যাটারিচালিত রিকশা। অবশ্য রিকশাপ্রতি মাসে ২ হাজার টাকার মতো চাঁদা গুনতে হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশায় সয়লাব রাজধানীর মূল সড়ক। অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল করতে দেখলেই পুলিশ আটক করলেও বাহনগুলোর চলাচল অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, আরামবাগ, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, মালিবাগসহ কয়েকটি সড়কে রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। রামপুরা, খিলগাঁও, বাড্ডা, নয়াবাজার, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাংলামটর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, কামরাঙ্গীরচর, চকবাজার, নাজিরাবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, দনিয়া, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্যাডেল রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি লাগিয়ে চলাচল করছে। এলাকায় মোড় দখল করে নিয়েছে ওই বাহনটি। রাতে অন্যান্য গাড়ির চাপ কমে গেলে ব্যাটারিচালিত এসব গাড়ি নামতে থাকে। চলতে থাকে সকল রুটেই। কোন রুটেই বাধা নেই তাদের যেতে।
শ্যামপুর, জুরাইন, কদমতলী, ডেমরা, সায়েদাবাদ, সদরঘাট, মোহাম্মদপুর, দারুসসালাম, কাফরুল, পল্লবী, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলগাঁও, সবুজবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, তুরাগ, হাজারীবাগ, আদাবর থানা এলাকার অলি-গলিতে অবাধে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলতে দেখা যায়। অনেক এলাকায় পুলিশের সামনেই এসব যান দাপট নিয়ে চলছে। এমনকি অলি-গলি ছাড়িয়ে অটোরিকশাগুলো মূল সড়কে চলে আসায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটও। মিরপুর-১০ নম্বরের সড়কজুড়ে দেখা মিললো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য। স্পষ্ট হলো, মন্ত্রীর কড়া নির্দেশ এখানে উপেক্ষিত। শুধু ১০ নম্বর না, অবৈধ অটোরিকশার অবাধ বিচরণ পুরো মিরপুর জুড়ে। পুরো এলাকা ঘুরেও চোখে পড়েনি অটোরিকশা বন্ধে কোনো বিশেষ অভিযানের।
নূর ইসলাম নামের এক চালক বলেন, সরকার যখন বন্ধের ঘোষণা দেয়, এই সুযোগে যারা এসব নিয়ন্ত্রণ করে তারা প্রথমে কয়দিন বন্ধ রাখতে বলে। পরে চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এই অটো চালিয়ে সংসার চলে। যদি না চালাতে পারি তাহলে সমস্যায় পড়ে যাব।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা ছিল। ট্রাফিক যেসব এলাকাতে থাকে সেসব এলাকাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা যাতে কোনোভাবে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই সচেষ্ট আছি। ব্যাটারিচালিত রিকশার মূল উৎপত্তিস্থল চার্জিং পয়েন্ট এবং যেখানে গ্যারেজ আছে, যেসব ব্যক্তি এগুলোর সঙ্গে জড়িত সেসব ব্যক্তিরও তালিকা প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা
কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ব্যাটারিচালিত যানের
জন্য সড়কে একদিকে যেমন বাড়ছে যানজট, তেমনি দুর্ঘটনার নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১০
সালের পর থেকেই এই ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়কে বাড়ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ না করায় সড়কে বেড়েই
চলেছে ব্যাটারিচালিত যান। ব্যাটারি, মোটর আমদানি করার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দেশে এসব
যান ঢুকে গেছে। কোনোভাবেই সিটিতে চালানো যাবে না।