Logo
শিরোনাম
নওগাঁর সীমান্তে গুলিতে নিহত যুবকের মৃতদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ মোরেলগঞ্জে প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে গৃহিনীকে রাস্তায় ফেলে মারপিট: ইমাম আটক সুনামগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সাংসদ নজির হোসেনের দাফন সম্পন্ন উত্তরায় মাভাবিপ্রবি টেক্সটাইল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এর ইফতার মাহফিল নওগাঁয় গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে স্বামী, শাশুড়ী ও দেবরকে আটক করেছে র‌্যাব নওগাঁয় হত্যার দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ধামরাইয়ে অগ্নিকাণ্ডে এক পরিবারের ৪ জন অগ্নিদগ্ধ নড়িয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত জের ধরে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ ভেনিস বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত রামগড়ে বিজিবি'র উদ্যোগে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

মিজোরাম ভারতের দুর্গম, আমাদের সুগম

প্রকাশিত:শুক্রবার ২১ এপ্রিল ২০২৩ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ |

Image

ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের একটি হলো মিজোরাম। রাজ্যটির উত্তরে আসাম ও মণিপুর, পূর্বে ও দক্ষিণে মিয়ানমার, পশ্চিমে বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরা। এটি একটি স্থল বেষ্টিত রাজ্য। এর আয়তন ২১,০৮৭ বর্গকিলোমিটার। আসামের সাথে এর ১৬৪ কিলোমিটার, ত্রিপুরার সাথে ৯০ কিলোমিটার, মণিপুরের সাথে ৯৫ কিলোমিটার, মিয়ানমারের সাথে ৪০৪ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের সাথে ৩১৮ কিলোমিটার স্থল সীমানা রয়েছে। ভারতের ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী মিজোরামের জনসংখ্যা ১০,৯১,০১৪ জন। রাজ্যটির জনসংখ্যার ৮৭ ভাগ খ্রিষ্টান, ৮ ভাগ বৌদ্ধ, ৩ ভাগ হিন্দু ও ২ ভাগ মুসলিম। শিক্ষার হার ৯২ শতাংশ। ব্রিটিশ ভারতে মিশনারিদের তৎপরতায় মিজোরা খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ সময় থেকে মিজোদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়তে থাকে।

মিজোরাম একসময় দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হিসেবেই বিবেচিত হতো। এ অঞ্চলের মোঙ্গলীয় মহা জাতিসত্তার আদিবাসী মিজো থেকে অঞ্চলের নাম হয়েছে মিজোরাম। ভারতবর্ষে প্রথম যে মিজোরা প্রবেশ করেছিল তাদেরকে কুকি বলা হয়। ভারতে প্রবেশকারী এ জাতি গোষ্ঠীর দ্বিতীয় দলকে নব্য কুকি নামে অভিহিত করা হয়। আর এ জাতিসত্তার সর্বশেষ যে দলটি ভারতে প্রবেশ করেছিল তাদেরকে অভিহিত করা হয় লুসাই নামে। কুকি, নব্য কুকি এবং লুসাইদের সম্মিলিত নাম হলো মিজো।

মিজোরামের তাপমাত্রা শীতকালে ১১-২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি অবধি ওঠে। মিজোরাম রাজ্যটি আটটি জেলায় ও ২৩টি মহকুমায় বিভাজিত। জেলাগুলো হলো মামিত, কোলাশিব, আইজল, চম্ফাই, সেরাছিপ, লুঙ্গলেই, লাওঙ্টলাই এবং সাহা।

মিজোরামের প্রাদেশিক ভাষার নাম মিজো। মিজোরামের অধিকাংশ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এ ভাষার সাথে হমার, মারা, লাই, পাইতে, গ্যাঙটে ইত্যাদি আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। এ ভাষার কোনো বর্ণমালা ছিল না। খ্রিষ্টান মিশনারিরা মিজো বর্ণমালার উদ্ভাবন ঘটিয়েছে। ভাষাটির মূল বর্ণগুলো রোমান বর্ণমালা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এ ভাষায় ব্যবহৃত বর্ণমালায় মোট ২৫টি বর্ণ রয়েছে। এ ভাষার মানুষ মিজোরাম ছাড়াও মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে রয়েছে। বাংলাদেশের মিজো ভাষার মানুষ বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে।

মিজোরামের রাজধানী আইজল। শহরটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। পাহাড়কে অক্ষত রেখে কিভাবে শহর হয় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আইজল। রাতের আইজল যেন এক স্বপ্নপুরী। পাহাড়ের কোলঘেষে গড়ে ওঠা বসতবাড়ির বিদ্যুৎ বাতিগুলোকে দূর থেকে জোনাকীর মতো মনে হয়। আইজলের পাহাড়ের খাজে খাজে রয়েছে সড়ক। সড়কগুলো ২০-২৫ ফুট প্রশস্ত। সড়কের দুধারে ৫-৬ ফুট পরিধির পায়ে হাঁটার পথ রয়েছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সড়ক ও হাঁটার পথে পৃথিবীর উন্নত দেশের ন্যায় ভাঙাচোরা লক্ষ করা যায় না। শহরে বসবাসরত মানুষের অধিকাংশেরই নিজস্ব বাহন রয়েছে। শহরে বসবাসরত লোকজনের বেশভূষা চলনে-বলনে রয়েছে পাশ্চাত্যের ছাপ।

ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে নারীদের অধিক সক্রিয় দেখা যায়। আইজলে বসবাসরত মানুষের ৯০ শতাংশের অধিক খ্রিষ্টান হওয়ায় শহরটির সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য গির্জা রয়েছে। আর এ কারণে এ শহরটিকে গির্জার শহরও বলা হয়। আইজলের প্রাণকেন্দ্রে একটি মসজিদও রয়েছে। মসজিদের সন্নিকটে মুসলিম ব্যবসায়ীদের কিছু দোকান রয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বিমানবন্দর। কোলকাতা থেকে সরাসরি বিমানে আইজল যাওয়া যায়। এছাড়া আগরতলা থেকে আইজলের বিমান যোগাযোগ বিদ্যমান রয়েছে।

মিজোরামের যে শহরগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করে এর অন্যতম হলো রেইক। রেইক আইজল হতে ৩০ কিলোমিটার দূরে মামিত জেলায় অবস্থিত। রেইকে যাওয়ার পথে পড়ে মিজোরামের প্রধান নদী খোয়াথল্যাংতুইপুই যা কর্ণফুলী নামেও পরিচিত। নদীটির উৎসমুখ মামিত জেলার শৈতা গ্রামে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে তলাবং এর কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আইজল হতে রেইক যাওয়ার পুরো পথটি ঝর্ণাধারার মধ্যে ঘন সবুজ বনাঞ্চল আবৃত। পাহাড়ের ওপর সুউচ্চ নীল আকাশ আর প্রান্তরের সবুজের মিশ্রণে যে অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যের দেখা মিলে এটি এ ধরায় বিরল। রেইক ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় এপ্রিল মাস। এ মাসটিতে এখানে স্থানীয় প্রিয় ফুলের নামে হয় আন্তরিয়াম উৎসব। এ উৎসবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রস্তুতকৃত সামগ্রীর সমাহার ঘটে। উৎসবকে ঘিরে লোকগীতি ও নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে দেশজ শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।

পর্যটনের দিক হতে মুইফাং মিজোরামের জনপ্রিয় একটি পার্বত্য শহর। আইজল হতে মুইফাং এর দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। রেইক থেকে আইজল হয়ে মুইফাং যাওয়া যায়। মুইফাং যাওয়ার পথে পড়ে সবুজ গালিচায় আচ্ছাদিত উঁচু-নিচু প্রান্তর। মুইফাং এর চতুর্দিকে রয়েছে পাহাড়। পাহাড়গুলোর অরণ্যের অনেকাংশেই এখনো মানুষের পদচিহ্ন পড়েনি। বিক্ষিপ্ত জনবসতির মানুষজন এলাকায় আগত পর্যটকদের সাথে ভাব বিনিময় করতে চাইলেও ভাষা সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয় না।

পর্যটনের দৃষ্টিকোণ হতে অপর গুরুত্বপূর্ণ শহর হলো চম্ফাই। মুইফাং হতে চম্ফাই যাওয়ার পথে মিজো বয়নশিল্পের কেন্দ্র থানজোয়ালের দেখা মিলে। এখানে প্রতিটি ঘরে উজ্জ্বল রং এর মিজো পোশাক, চাদর, ব্যাগ প্রভৃতি প্রস্তুত হয়। চম্ফাই শহরের সন্নিকটে রয়েছে মিজোরামের সর্ববৃহৎ ভেন্টাং জলপ্রপাত। চম্ফাই শহরটি পাহাড় দিয়ে ঘেরা একটি উপত্যকা। মিজোরামের সর্বাধিক সমতল ভূমি রয়েছে এ উপত্যকায়। মিজোদের প্রধান খাদ্য ভাত। চম্ফাই উপত্যকায় যে ধানের চাষ হয় তা সমগ্র মিজোরামের চালের জোগান দেয়।

আসামের গুয়াহাটি থেকে সড়ক পথে মিজোরাম যাওয়া যায়। আবার মেঘালয়ের জোওয়াই হয়ে শিল চর দিয়েও সড়ক পথে মিজোরাম যাওয়া যায়। বাংলাদেশীরা জাফলং হতে ভারতের ডাউকি হয়ে জোয়াই অতিক্রম করে মিজোরামে যেতে পারেন। মিজোরাম সম্প্রতি রাজ্যটির শিলসুরি এবং বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার সাজেকে একটি বর্ডার হাট স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। মিজোরামের প্রস্তাবে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। বর্ডার হাটটি বাস্তবায়ন করা হলে উভয় দেশের মধ্যে পণ্য বিনিময় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, নির্মাণ সামগ্রী, প্লাস্টিক ও খাদ্যপণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে মিজোরামে। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ মিজোরাম হতে পাথর, হলুদ, আদা, মরিচ, বাঁশ প্রভৃতি আমদানি করতে পারে। লুসাই পাহাড়ের অবস্থান মিজোরামে। কর্ণফুলী নদী লুসাই পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে সাগরে পতিত হয়েছে। এ কর্ণফুলী নদীর তীরেই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর অবস্থিত। কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়েই বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাপ্তাই এ স্থাপিত হয়েছে।

ব্রিটিশ শাসনামলে মিজোরাম লুসাই পাহাড় নামে অভিহিত ছিল। সে সময় এটি আসামের অংশ ছিল। ১৯৭২ সালে মিজোরাম কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল হিসেবে আসাম হতে আলাদা হয়। অতঃপর দিল্লি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী এমএনএফের (মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট) মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে মিজোরাম আলাদা রাজ্যের মর্যাদা পায়। এমএনএফ ভারতের বিরুদ্ধে টানা ২০ বছর গেরিলা অভিযান চালিয়েছিল। গেরিলা যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন মিজোদের জাতীয় নেতা লালডেঙ্গা। ভারতের সাথে আপস-রফার পর লালডেঙ্গা মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। আইজল শহরের কেন্দ্রস্থলে লালডেঙ্গার আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।

১৩ লাখ জনগোষ্ঠীর পাহাড়ি রাজ্য মিজোরামের সাথে ভারতের বাকি অংশের সংযোগ যে মহাসড়কটির মাধ্যমে স্থাপিত হয়েছে তা আসামে অবস্থিত। ভারতের মূল ভূখণ্ড হতে পশ্চিম বাংলা হয়ে আসামের মাধ্যমে মিজোরামের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্গম, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। আর এ কারণেই মূল ভারত হতে পশ্চিম বাংলা ও আসাম হয়ে মিজোরামে যেকোনো পণ্য পরিবহন করতে হলে তা সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। মিজোরামের রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ এ সমস্যাটি হতে উত্তরণের জন্য রাজ্যটির নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনাগ্রহে তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। মিজোরামের রাজ্য সরকার ও সাধারণ মানুষ মনে করে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ করা গেলে রাজ্যটি ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে এবং রাজ্যের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটবে।

মিজোরামের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারতের মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন রাজ্যে অধ্যয়ন করতে হলে তাদের জন্য যাতায়াত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় তারা তাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় এবং কারিগরি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতা তাদের উচ্চশিক্ষার পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে।

মিজোরামের সাধারণ মানুষ মনে করে তারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠী হতে ধর্ম, ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির দিক হতে সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র। আর এ কারণেই তারা উপেক্ষিত, অবহেলিত এবং অনগ্রসর। দীর্ঘদিনের উপেক্ষা ও অবহেলার কারণে তাদের মধ্যে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে তারা এর দ্রুত উপসম চায়। অন্যথায় তারা মনে করে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ তাদের নিজেদেরই বেছে নিতে হবে।

 


আরও খবর

৯৫ শতাংশ বুকিং বাতিল ছাঁটাই শুরু

রবিবার ২৬ নভেম্বর ২০২৩




বার বার অবস্থান বদলাচ্ছে আব্দুল্লাহ

প্রকাশিত:রবিবার ১৭ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ |

Image

২৩ নাবিকসহ ভারত মহাসাগরে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া বাংলাদেশী জাহাজটির অবস্থান বারবার বদল করছে জলদস্যুরা।

গত মঙ্গলবার জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নেয়ার পর নোঙ্গর করার পরও অন্তত তিনবার স্থান বদলেছে এমভি আব্দুল্লাহ। জলদস্যুরা বর্তমানে জাহাজটিকে সরিয়ে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূলে নোঙ্গর করেছে।

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।

দুদিন পর জাহাজটিকে নিয়ে যাওয়া হয় সোমালিয়া উপকূলে। সেখানে একদিন অবস্থান করেছিল জাহাজটি। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার জাহাজটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এমভি আবদুল্লাহকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গ্যারাকাড উপকূলে নোঙর করা হয়েছিল। পরে সেখানে আরেকটা সশস্ত্র গ্রুপের হাতে তাদেরকে সোপর্দ করা হয়। এখন সেখান থেকে নাবিকসহ জাহাজটিকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার আরেক দফা স্থান পরিবর্তনের পর বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার গদবজিরান শহর থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে জাহাজটি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) স্যাটেলাইট ইমেজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাহাজটির সর্বশেন অবস্থান পর্যবক্ষেণ করছে গত মঙ্গলবার থেকে।

জাহাজটির এই গতিপথ ও অবস্থান দেখে বিএমএমওএ বলছে, জাহাজটি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর প্রথমেই তারা বাংলাদেশী পতাবাহী জাহাজটিকে দেড় দিনের মাথায় সোমালিয়া উপকূলের কাছাকাছি নিয়ে।

জলদস্যুদের কবলে পড়ার পরদিন বুধবার এটি ছিল সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু উপকূলের কাছাকাছি অবস্থানে। পরবর্তীতে সেটিকে আরো উত্তর দিকে সরিয়ে প্রথমে নেয়া হয় গারদাকে। এরপরই ভারতীয় নৌবাহিনী জাহাজটি ঘিরে নজরদারি বাড়ালে সেটি আবারো সরিয়ে নেয়া হয় গদজিরান উপকূলে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, চারদিকে নেভাল সার্ভিলেন্স বাড়িয়ে দেয়ার কথা তারা শুনেছে। এ কারণে তারাও তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করছে এবং একেবার জাহাজের স্থান পরিবর্তন করে ফেলছে।

জলদস্যুদের ছবি প্রকাশ করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী


এমভি আব্দুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকে এবং এরপর সোমালিয়া উপকূলে প্রবেশের আগ পর্যন্ত কাছাকাছি দূরত্বে থেকে অনুসরণ করছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজ।

এই তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটারে) প্রকাশ করে ভারতীয় নৌবাহিনী।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্র এক্স একাউন্ট থেকে যে ছবিটি প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে চারজন অস্ত্রসহ টহল দিচ্ছে। তাদের সবার অবস্থাই ছিল জাহাজের মাস্টার কেবিনের ছাদে।

টুইটারের এই পোস্টে ভারতীয় নৌবাহিনী জানায়, গত ১২ মার্চ এমভি আব্দুল্লাহ থেকে সাহায্যের সিগন্যাল পেয়ে তারা একটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফ্ট-এলআরএমপি পাঠিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় বিমানটি পরে আর এমভি আব্দুল্লাহর সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারেনি।

তারা জানায় পরবর্তীতে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করে। যেটি ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক নিরাপত্তায় কাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে এই জাহাজটি এমভি আব্দুল্লাহকে নজরদারি শুরু করেছে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর ওই পোস্টে আরো বলা হয়েছে সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে পণবন্দী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্রুদের নিরাপত্তায় খেয়াল রাখছে তারা। জাহাজটি সোমালিয়া জলসীমায় পৌঁছানো পর্যন্ত ভারতীয় নৌবাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বলেও জানানো হয় ওই পোস্টের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন,ওরা লং রেঞ্জ সার্ভিলেন্সের জন্য হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ছবিটি নিয়েছে। কোনো দেশের জলসীমায় এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সে দেশের নৌবাহিনী এসেসমেন্টের জন্য ফ্লাইট পাঠিয়ে এমন ছবি নিয়ে থাকে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর এই ছবি দেখে নিজেদের জাহাজ বলে নিশ্চিত করেছেন মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপ।

শনিবার কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজর মিজানুল ইসলাম বলেন,ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের টুইটার একাউন্টে যে ছবি প্রকাশ করেছে সেটি আমাদের এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ছবি।

অপারেশন আটলান্টার তথ্য


শুধু ভারতীয় নৌবাহিনী নয়, জলদস্যুদের হাতে আটক জাহাজটিতে নজর রাখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স-ইইউএনএভিএফওআর। জাহাজটি দস্যুদের কবলে পড়ার দুই দিন পর গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্থাটি।

এই বিজ্ঞপ্তিতে তারা হেলিকপ্টার দিয়ে জাহাজটি পর্যবেক্ষণের একটি ছবিও প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়, এমভি আব্দুল্লাহকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স।

সমুদ্রে জলদস্যুতা এবং সশস্ত্র ডাকাতি দমনে প্রয়োজনীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে ইউএস-নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে যৌথ কার্যক্রম রয়েছে, তার নাম অপারেশন আটলান্টা।

অপারেশন আটলান্টা থেকে বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবব্দুলাহর ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে সংস্থাটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, সামুদ্রিক নিরাপত্তায় সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ও সোমালিয়া এই অঞ্চলের অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ করছে।

এতে জানানো হয়েছে, ছিনতাই হওয়া জাহাজের নাবিকেরা এখন পর্যন্ত সুস্থ আছে।

প্রাথমিকভাবে জাহাজটি ছিনতাই হওয়ার সময় ২০ জন জলদস্যু থাকলেও এখন ১২ জন জলদস্যু থাকার বিষয়টি তারা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমালি উপকূলের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় জলদস্যুরা সাধারণত তিনটি ক্যাম্প ব্যবহার করে। এই ক্যাম্পগুলো ঘিরেই চলে তাদের ছিনতাই কার্যক্রম। ঠিক এই অঞ্চলেএমভি রুয়েন নামের আরেকটি জাহাজও ছিনতাই করে জলদস্যুরা। ওই দলের সদস্যরাই এমভি আবদুল্লাহর ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিজ্ঞপ্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স জানিয়েছে এমভি আব্দুল্লাহর ওপর নজর রাখতে ইইউ'র একটি জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।

জলদস্যুদের ফোনের অপেক্ষায় মালিকপক্ষ


গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুরে হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর কয়েক দফায় স্থান পরিবর্তন করে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূলে নোঙ্গর করে আছে জাহাজটি।

এর আগে দফায় দফায় স্থান পরিবর্তন করলেও জলদস্যুদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মুক্তিপণ দাবি করা হয়নি।

সর্বশেষ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাহাজের নাবিকদের তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে দেয়া হয় খুব অল্প সময়ের জন্য। এসময় তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার কথা জানিয়েছে।

জাহাজে থাকা চীফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই মোহাম্মদ আসিফ খানের সাথে সর্বশেষ শুক্রবার তার ভাইয়ের কথা হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় আসিফ খান বলেন,গতকাল সন্ধ্যায় আর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। সন্ধ্যায় আমার সাথে কথা হয়েছে স্যাটেলাইট ফোনে। সর্বোচ্চ দেড় মিনিট কথা বলেছি। খুব বিস্তারিত জানতে পারিনি।

জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপ আশা করছে, খুব তাড়াতাড়ি জলদস্যুরা তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করবে।

কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজর মিজানুল ইসলাম জানান, এ ধরনের পরিস্থিতিতে জলদস্যুরা একটা নিরাপদ স্থান খুঁজে তারপর যোগাযোগ শুরু করে মালিকপক্ষের সাথে। একই সাথে পরিবারের সদস্যদের সাথেও তারা কথা বলার সুযোগ দেয়।

মিজানুল ইসলাম বলেন,যতক্ষণ পর্যন্ত জলদস্যুদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অফার না পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি। কিন্তু দস্যুদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ধরনের অফার পাওয়া যায়নি।


আরও খবর



অবরুদ্ধ বিএসএমএমইউ ভিসি

প্রকাশিত:শনিবার ১৬ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ |

Image

কর্মচারীদের সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদকে তার কার্যালয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ কর্মচারী অবরুদ্ধ করে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীরা

শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে কর্মচারীরা শারফুদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ অবরুদ্ধের কথা অস্বীকার করেছেন

কর্মচারী নেতা দিপু বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে তার রুমে অবরুদ্ধ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমরা একটি কর্মচারী নীতিমালা চাচ্ছি। বর্তমান প্রশাসন গত তিন বছর ধরে টালবাহানা করে সময় পার করছে। বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ আগামী ২৮ মার্চ শেষ হবে। অথচ তিনি এখনও বলছেন তোমরা কাজে যাও আমি দেখব।

উপাচার্যের বিরুদ্ধে কথা না রাখার অভিযোগ করে তিনি বলেন, বর্তমান উপাচার্যের সময়কালে সর্বশেষ সিন্ডিকেটের সভা আগামী ২০ তারিখ। সেটা সমস্ত অবৈধ কাজের মধ্যে করে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে টালবাহানা।

তবে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ অবরুদ্ধ হয়নি বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ

বিষয়ে জানতে চাইলে জনসংযোগ বিভাগে কর্মরত সুব্রত বিশ্বাস ঢাকা মেইলকে বলেন, একটা জটলা রয়েছে। কর্মচারীরা কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে স্যারের কাছে এসেছে। তবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। স্যারসহ আমাদের কার্যালয়ে লোকজন আসা যাওয়া করছে

জনসংযোগ বিভাগের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনরতরা। তারা জানান, উপাচার্য ভেতরে আছেন। আমরা এখানে ৪০০-৫০০ জন কর্মচারী অবস্থান করছি। জনসংযোগ বিভাগ টাকা খেয়ে ভিসির অনৈতিক কাজে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে


আরও খবর



জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৬ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ |

Image

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনে লাখো মানুষের ঢল নামে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয়ের দৃপ্ত শপথ নিয়ে হাতে লাল সবুজের পতাকা আর ফুলের শোভায় সাধারণ মানুষ উদযাপন করছে স্বাধীনতার আজ ৫৪ বছর। 

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধের শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান। এরপর শহিদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ সর্ব-সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

এর পরপরই জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষের ঢল নামে।

শহীদ বেদী ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। লাল-সবুজের পতাকায় ছেয়ে যায় চারপাশ। মানুষের হাতে হাতে ফুলের তোড়ায় রঙিন হয়ে উঠে সৌধ প্রাঙ্গণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। চারদিক থেকে মানুষের স্রোত যেন গিয়ে মেশে স্মৃতিসৌধে। মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। 


আরও খবর

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

মঙ্গলবার ২৬ মার্চ ২০২৪




রাজাপুরে ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক, পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারিরা জড়িত থাকার অভিযোগ:

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ |

Image

হাসিবুর রাহমান :

ঝালকাঠির রাজাপুরে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক পড়েছে। এ উপজেলায় চলতি মাসের সম্প্রতি ৬ টিসহ গত আড়াই মাসে ১১ ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। চুরি হওয়ায় বর্তমানে ৪টি স্থানের ট্রান্সফর্মার না থাকায় ২ শতাধিক পরিবার অন্ধকারে রয়েছেন। চুরি হওয়া স্থানে নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে গ্রাহকদের টাকায় নতুন ট্রান্সফর্মার কিনতে হচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ থাকাকালীন ও লোডশেডিংয়ের সময় ট্রান্সফর্মার চুরি হচ্ছে, যা কোন সাধারন মানুষের পক্ষে চুরি করা সম্ভব নয়, এর সাথে পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারিরা জড়িত রয়েছে। উপজেলার মধ্য চাড়াখালী গ্রামের আল আমিন জানান, কয়েকদিন আগে মধ্য চাড়াখালী ১৫ কেবির ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে অন্তত ৩৫ পরিবার বিপাকে পড়েছে। নিমহাওলা এলাকার জাহিদ ও হিরন খান জানান, গালুয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের খায়রে হাট নিমহাওলা এলাকার ১০ কেবি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে ওই এলাকার ১৫ পরিবারেরও বেশি পরিবার অন্ধকারে রয়েছে। ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের ইসা আকন পলাশ জানান, ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের ৫ কেবি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে ১৫ পরিবার দুর্ভোগে রয়েছে।


বদনিকাঠি গ্রামের মুন্না জানান, বদনিকাঠি খান বাড়ির ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে অনেক পরিবার অন্ধকারে রয়েছে। সত্যনগর তুলাতলা এলাকার আখি, লিজা জানান, সত্যনগর তুলাতলা এলাকার সাড়ে ৩৭ কেবির ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে অন্তত ৭৫ পরিবার কয়েকদিন ধরে অন্ধকারে রয়েছে। চরম ভোগান্তিতে থাকলেও নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হচ্ছে না। এখনও গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনতে হবে বলে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন জানিয়েছে। বাগড়ি বাশতলা গ্রামের রিংকু সিকদার, নাদিম, আলিম ও আলম জানান, বাগরি বাশতলা গ্রামের ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে যায় পরে ৪৫ জন গ্রাহকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনে স্থাপন করতে হয়েছে। এতে প্রায় এক সপ্তাহ অন্ধাকারে থাকতে হয়েছে সবাইকে। লাইন চালু থাকাকালিন সাধারন মানুষের পক্ষে ট্রান্সফর্মার চুরি করা সম্ভব নয়, এর সাথে পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারিরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের আরও অভিযোগ, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেয়া হয়, ওই সময় ট্রান্সফর্মার চুরি। পল্লী ঠিকাদারের কর্মচারি, পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজসে একের পর এক ট্রান্সফর্মার চুরি হচ্ছে। আর ট্রান্সফর্মার চুরি হলে পল্লী বিদ্যুতের অফিস থেকে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে হয়। নতুন ট্রান্সফর্মার বিক্রির একটি কৌশল হলো ট্রান্সফর্মার চুরি বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের। এছাড়াও উপজেলার বড়ইয়া পালট, চুনপরি ও সাতুরিয়া ইউনিয়নে ট্রান্সফর্মার চুরির খবর পাওয়া গেছে। অধিকাংশ স্থানের ট্রান্সফর্মারের ভেতরের তামার কয়েল নেয় চোরেরা। গ্রাহকরা জানান, কিছুদিন পর পর একের পর এক ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটেইে চলছে। কিন্তু প্রতিরোধে বা চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কোন মাথাব্যাথা নেই। চোরের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অসহায় হয়ে পড়েছে। তাতে অনেক দিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফ্রীজের মাছ, গোশতসহ বিভিন্ন পণ্যের ক্ষতি হয় চরমভাবে। এ ছাড়াও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় চরম বিঘœ ঘটে। গ্রাহকরা আরও জানান, ট্রান্সফর্মার চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেও কোন লাভ হচ্ছে না। রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২ টি, ফেব্রæয়ারি মাসে ৩ ও চলতি মার্চ মাসে এ পর্যন্ত ৬ টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। সাড়ে ৩৭ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার, ২৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় এক লাখ টাকা, ১৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৭৯ হাজার টাকা, ১০ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৬৫ হাজার টাকা ও ৫ কেবির ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৪০ হাজার টাকা। পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িতের অভিযোগ অস্বীকার করে এ বিষয়ে রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম (ওএন্ডএম) মধুসূদন রায় জানান, বর্তমানে ৪ টি স্থানের ট্রান্সফর্মার চুরি হওয়ার পর নতুন করে স্থাপন করা হয়নি। এতে অন্তত দেড় থেকে ২ শ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছে। চুরি হওয়া স্থানে প্রথম বার গ্রাহকদের অর্ধেক ও দ্বিতীয় বার সম্পূর্ণ টাকা গ্রাহকদের দিতে হয়, এটা কষ্টের বিষয়। চুরি ঠেকাতে গ্রাহকদের সচেতনতার পাশাপাশি পাহাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও চুরি ঠেকাতে মাইকিং করা হবে। এ বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও জরুরি। পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগীতা চাওয়া হবে। জানতে চাইলে মুঠোফোনে রাজাপুর থানার ওসি মুঃ আতাউর রহমান জানান, পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে ট্রান্সফর্মার চুরির বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রান্সফর্মার চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চোরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরও খবর



মুসলিম বিশ্বের কল্যাণ কামনা প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১২ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ |

Image

আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্বের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।

সোমবার রাতে রমজান উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ আমাদের জাতীয় জীবনে পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষা কার্যকর করার তাওফিক দান করুন। মাহে রমজান আমাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি। সবার জীবন মঙ্গলময় হোক। পবিত্র মাহে রমজানে আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করছি।

দেশবাসী ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সিয়াম সাধনা ও সংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান আমাদের মাঝে সমাগত। পবিত্র এ মাসে আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে ও সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্যলাভ এবং ক্ষমা লাভের অপূর্ব সুযোগ হয়। সিয়াম ধনী-গরিব সবার মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে।

বাণীতে পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছলতা ও সংঘাত পরিহার এবং জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, সব ধরনের কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করি। সিয়াম পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করি ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।


আরও খবর