রিফাত আহমেদ রাসেল, নেত্রকোনা
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আসা স্কুলের শিক্ষার্থী উপবৃত্তি, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা অভিনব কায়দায় আত্মসাৎর অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর। উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বন্দঊষান গ্রামের দীর্ঘদিন ধরে নানা কৌশলে মানুষের এই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী মোঃ নিজাম উদ্দিন (৪৪)।
লিখিত এক অভিযোগ পত্রে প্রতারিত চিত্র তুলে ধরেছেন একই গ্রামের বাসিন্দা মোঃ বিল্লাল মিয়া। তবে লিখিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানান বলে দাবি অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিনের।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বন্দঊষান রেজিঃ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃ নিজাম উদ্দিন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বন্দউষান বাজারে ঔষধ বিক্রির দোকান ও বিকাশ- নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা করে আসছেন। প্রত্যন্ত গ্রাম হাওয়ায় গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং এ আসা টাকা উত্তোলনে শরণাপন্ন হন তার।
এই সুযোগে কাজে লাগিয়ে রমরমা প্রতারণা জাল বিছিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মোবাইলে আসা উপবৃত্তির টাকা, বিধবা নারীদের ভাতা, পঙ্গু ভাতার নিয়মিত নিজাম উদ্দিনের দোকানে উত্তোলন করেও সঠিক হিসাব পাচ্ছেন না তারা। তবে গ্রাহকের মোবাইল ফোন থেকে অগোচরে এবং নানা কৌশল অবলম্বন করে নানা সময় টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রায় সময় মোবাইল ব্যাংকিং এ থাকা আসলেও অর্ধেক টাকা গ্রাহককে দিয়ে বাকি অর্ধেক নানা কৌশলে হাতে নিতেন অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিন।
সোমবার সরেজমিন এলাকাটি ঘুরে ভুক্তভোগিদের কথা জানা যায়, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের ঠকিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ। এমনকি সুবিধাভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ, রকেট, নগদ একাউন্টের পিন নাম্বার গ্রাহকদের কাছে গোপন রাখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ফলে টাকা উত্তোলনে শুধু তার কাছেই আসতে হয় গ্রাহকদের। সেই সুযোগে অভিনব কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। তবে গেল কিছুদিন আগে প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিন অনেকেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী আব্দুল হানিফ বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমরা লেখাপড়া জানি না। মোবাইলের বিষয়ে তো একদম বুঝি না। আমার সন্তানের উপবৃত্তির টাকা তুলতে দোকানে যায় পরে ১ হাজার টাকা আমাকে দেয়। কিছুদিন পর জানতে পারি আমার ১৫ শত টাকা আসছে পরে এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে দোকানে গিয়ে বললে তারপর ৫ শত টাকা দেয়।
অপর দিকে বিল্লাহ হোসেন এক ব্যাক্তি বলেন, গত ১০-১২ বছর ধরে গ্রামের মানুষের সাথে প্রতারণা ও আসছে এতোদিন আমরা বোঝতে পারেনি যে আমাদের এভাবেই ঠকিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় পর তার এই প্রতারণার বিষয়টি ধরতে পেরেছি। এই প্রতারকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ দাবী জানায় আমরা।
গ্রাহকদের টাকা প্রতিনিয়ত হিসাব মতো বুঝিয়ে দিয়েছি বলে জানা নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, কতিপয় কিছু ব্যক্তি আমাকে হেও প্রতিবর্ণ করার জন্য এবং সমাজে খাটো করার জন্য মিথ্যা একটি অভিযোগ সাজিয়ে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। আমি বাজারে ছোট্ট একটি ব্যবসা করি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসাও রয়েছে অনেক গ্রাহক আমার কাছে তাদের উপবৃত্তি ও বিভিন্ন ভাতার টাকা উত্তোলন করেন যার আইডি পাই হিসাব তাদের বুঝিয়ে দিতেই।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযোগটির সত্যতা রয়েছে। অনেক মানুষ ইতিমধ্যে আমাকে এই অভিযোগের ব্যাপারে অবগত করেছেন। আমি তাদের উর্ধ্বতন প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানোর জন্য বলেছি। লোকটি এলাকার মানুষের সাথে প্রতারণা আসছে। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।