Logo
শিরোনাম

নানা সংকটে জর্জরিত মহাখালী বাস টার্মিনাল

প্রকাশিত:শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫ |

Image

রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর যাত্রীদের নিয়ে এখান থেকে বাস ছেড়ে যায় এবং ছেড়ে আসে। প্রতিদিন গড়ে আসা-যাওয়া করে এক হাজার দূরপাল্লার বাস, যাতে পরিবহন হয় ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী। অথচ টার্মিনালটিতে যাত্রীসেবা বলতে কিছুই নেই। বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা নামমাত্র। মাত্র তিনটি শৌচাগার, তাও ব্যবহারের অনুপযোগী। যাত্রীদের জন্য থাকা বিশ্রামাগারটি দখলে নিয়েছে ভবঘুরে ও মাদকসেবীরা।

কিশোরগঞ্জগামী যাত্রী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোনো যোগাযোগ খাতই উন্নত নয়। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবকিছুতেই ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। স্টেশনগুলো অপরিচ্ছন্ন, খাবার হোটেল কিংবা টয়লেটগুলোয় অধিকাংশ সময়ই যাওয়া যায় না। অতিজরুরি না হলে কেউ যেতেও চায় না। আবার যারা যাচ্ছেন তাদের অভিজ্ঞতা কতটা যে বাজে হয়, সেটি বলে প্রকাশ করা যাবে না। বিশেষ করে নারী ও শিশু যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে এক্ষেত্রে।

মহাখালী বাস টার্মিনালটি পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মধ্যে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার বাস চলাচল করলেও টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৪০০ গাড়ির। আর বৃহস্পতিবার, শুক্র ও শনিবার ১ হাজার ২০০ পর্যন্ত বাস এ টার্মিনালে প্রবেশ করে ও ছেড়ে যায়। ফলে বেশির ভাগ বাসই রাখতে হয় টার্মিনালসংলগ্ন সড়কে। মহাখালী থেকে তেজগাঁওয়ের তিব্বত পর্যন্ত সড়ক ও লিংক রোডগুলোয় এসব বাস রাখায় যানজট সৃষ্টি হয় বনানী পর্যন্ত।

সড়কে গাড়ি রাখা প্রসঙ্গে মহাখালী-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী একটি বাসের চালক জানান, সব গাড়ি টার্মিনালে জায়গা হয় না। তাই গাড়িগুলো কখনো কখনো টার্মিনালের বাইরে রাখতে হয়। তবে রাস্তার ওপরে কোনো গাড়িই বেশিক্ষণ রাখা হয় না। ট্রাফিক পুলিশ সবসময় নজর রাখে। যত্রতত্র গাড়ি থামানো বা যাত্রী ওঠানামারও এখন সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে সামান্য যানজট হয়, তবে সেটি বড় না।

বাস টার্মিনালের যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে ময়লা-আবর্জনা। সেই সঙ্গে ভ্যানগাড়ি ও ভাসমান দোকান বসিয়ে টার্মিনালের আশপাশে অনেকটা জায়গা দখল করে রেখেছে বহিরাগতরা। ব্যস্ত টার্মিনালটির স্যানিটেশন নিয়ে তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি রয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকারও অভিযোগ। নিম্নমানের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ে ভোগান্তি। পরিবহন শ্রমিকদের জন্যও এ টার্মিনালে কোনো বিশ্রামাগার নেই।

এ বিষয়ে কথা হলে পরিবহন কর্মীদের বেশ কয়েকজন তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তারা জানান, যাত্রীরা বাস টার্মিনালের স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিনিয়ত। এসবসহ নানা সমস্যার বিষয়ে বাস টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশনকে সমাধানের জন্য একাধিকবার তাগাদা দিলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, মহাখালী টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় রয়েছে দুটি শৌচাগার। একটি নারীদের এবং অন্যটি পুরুষদের ব্যবহারের জন্য। তবে সেগুলো খুবই নোংরা ও দুর্গন্ধময়। তার পাশেই রয়েছে উন্মুক্ত গোসলের জায়গা, যেটি পরিবহন শ্রমিক ও টার্মিনালের কর্মীরা ব্যবহার করেন।

এ নিয়ে ডিএনসিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, মহাখালী টার্মিনালে টয়লেট সংকট নেই। পর্যাপ্ত টয়লেট আছে। সংকট তখনই বলা যাবে যখন দেখা যাবে মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ তো লাইন ধরে নেই। তার মানে সেখানে সংকট নেই। তবে এগুলো অপরিষ্কার, এর সঙ্গে আমিও একমত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত সকালে হয়তো একবার পরিষ্কার করে, সারা দিন আর করে না। কিছুক্ষণ পর পর পরিষ্কার করতে গেলে বেশি লোকবল নিয়োগ দিতে হবে, ফলে খরচও বেশি হবে। এজন্য তারা এসব করে না হয়তো।

জানা গেছে, মহাখালী বাস টার্মিনালটির ইজারা নিয়েছে এসএফ করপোরেশন। এটি পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ। অনেক চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে টার্মিনালে ইজারাদারের হয়ে কাজ করা সবুজ নামের এক তরুণ বলেন, টার্মিনালটি পর্যাপ্ত পরিপাটি করে রাখা হয়। যাত্রী বা পরিবহনসংশ্লিষ্ট কারো কোনো অভিযোগ কখনই আমরা পাইনি।

টার্মিনালে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রেও চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। এ নিয়ে ট্রাফিক বিভাগের কোনো উদ্যোগ বা নির্দেশনা কাজে আসছে না। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ ও বাস মালিকরা বলছেন, টার্মিনালের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাস বৃদ্ধির কারণে রাস্তায় রাখতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা। আবার অনেক দূরপাল্লার চালক টার্মিনালে প্রবেশে গাড়ির লম্বা লাইন থাকলে রাস্তার পাশেই গাড়ি রেখে বিশ্রামে চলে যান বলে অভিযোগ।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, গাড়ি নিয়ে আমরা বিড়ম্বনায় রয়েছি। টার্মিনালে সাড়ে তিনশ থেকে চারশ গাড়ি রাখার জায়গা। কিন্তু প্রতিদিন এর দ্বিগুণের বেশি গাড়ি চলাচল করে। আমরা এগুলো রাখব কোথায়? সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অসংখ্যবার বলেছি, আমাদের গাড়ি রাখার বিকল্প ব্যবস্থা করেন। তারা এখনো করেনি। এতে বাধ্য হয়েই সড়কে গাড়ি রাখতে হচ্ছে। বাইরে গাড়ি রাখলে তো আমাদেরও ক্ষতি, তেলসহ গাড়ির ছোটখাটো যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রায় একই কথা বলেছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বাবুল।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঠামোগত ত্রুটির কারণেই টার্মিনালে যাত্রীদের অধিক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এজন্য কাঠামোগত সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, বাস টার্মিনাল শুধুই অবকাঠামো নয়। এটিকে অপারেশনও করতে হয়। মানে যাত্রীদের প্রয়োজনে এটিকে বিভিন্নভাবে পরিচালনা করতে হবে। আমাদের দেশের কাঠামোই যাত্রীবান্ধব নয়, পুরো হযবরল অবস্থা।

তিনি আরো বলেন, টার্মিনালে নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম থাকবে, যেখান থেকে গাড়িতে যাত্রীরা উঠবেন এবং সেখানেই এসে বাসগুলো যাত্রী নামাবেন। কিন্তু আমাদের এখানে এমন অবকাঠামো নেই। প্লাটফর্মভিত্তিক এমন অবকাঠামো থাকলে নাগরিক সুবিধা দেয়া খুবই সহজ হয়। যাত্রীদের কোথায় পানি, টয়লেট বা বিশ্রামাগার প্রয়োজন, সেগুলো নজর রাখাও সহজ হয় তখন।


আরও খবর



২০০ কেজি ওজনের বোমা নিষ্ক্রিয় করলো সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিম

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ |

Image

 নিজস্ব প্রতিবেদক :

মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানাধীন বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালের একটি ১৫০-২০০ কেজি ওজনের মিলিটারি অর্ডিন্যান্স (এরিয়েল বোম) সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর  সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এটি বাংলাদেশে উদ্ধারকৃত সবচেয়ে বড় বোমা।

সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়,গত ২৮ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি. সকাল ৬:৪৫ ঘটিকার দিকে জনৈক জামাল উদ্দিনের জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি খননের সময় বোমা সদৃশ বস্তু দেখতে পান ভেকু চালক। জমির মালিক বস্তুটি মাটি দিয়ে ঢেকে রাখেন। সংবাদ পেয়ে গজারিয়া থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে এটি বোমা হিসেবে শনাক্ত করে। পরবর্তীতে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। 

সিটিটিসি সূত্রে আরো জানা যায় ২৯ এপ্রিল বিকাল ৪:৩০ ঘটিকার দিকে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১২ সদস্যের একটি চৌকস দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বোমাটি পরীক্ষা করে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায়, উদ্ধারকৃত বস্তুটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার  অত্যন্ত বিপজ্জনক এরিয়েল বোমা এবং ওজন আনুমানিক ১৫০-২০০ কেজি। বোমাটি স্থানান্তর করা সম্ভব না হওয়ায় এবং জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বোমাটি  ঘটনাস্থলেই নিষ্ক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে রাত ৮:০০ ঘটিকার দিকে  যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সফলভাবে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে।নিষ্ক্রিয়করণের সময় আশপাশের কিছু টিনের ঘর সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এই সাহসী ও পেশাদারিত্বপূর্ণ কার্যক্রম স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। এ ঘটনা দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর দক্ষতা ও প্রস্তুতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। 

এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।


আরও খবর



ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ |

Image

‘গণ-অভ্যুত্থানের পর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য’ জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, এ সংস্কার আলোচনা এ সংগ্রামেরই ধারাবাহিকতা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা নির্ধারণ করতেই আমরা আজ এখানে।

জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সাথে সংলাপ শুরুর আগে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করেছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা নির্ধারণ করতেই আমরা আজ এখানে। গণঅভ্যুত্থানের পর এ কাঠামোগত পরিবর্তন সুনির্দিষ্ট করা ও বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য।

এরপর সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, কাঠামোগত সংস্কারের জন্য সংস্কার কমিটি গঠন করেছে। মত-দ্বিমত থাকলেও এর জন্য আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। সরকারকে এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বড় ধরনের সংস্কারে হাত দিলে জনগণকে নির্বাচন উপহার দেওয়া সংকটে পড়তে পারে। নির্বাচনকে প্রধান কাজ হিসেবে নিতে হবে। পাশাপাশি এখন পুরো ঐকমত্য করা সম্ভব না, যতটুকু ঐকমত্য করা যায় ততটুকুই করতে হবে।


আরও খবর



রাণীনগরে মহান মে দিবস পালিত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ |

Image

কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ): 

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস পালিত হয়েছে। দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কর্মসচির প্রথমেই সকালে উপজেলা প্রশাসন ও থানা গৃহ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বরেন্দ্র গেইটে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় থানা গৃহ নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক মো. আবু বক্কর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, রাণীনগর থানার ওসি আব্দুল হাফিজ মো. রায়হান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোসারব হোসেন।

এছাড়া র‌্যালিতে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল হক লিটন, সাখাওয়াত হোসেন, শ্রমিক ইউনিয়নের সকল সদস্য, উপজেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

অপর দিকে রাণীনগর উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মহান মে দিবস পালন উপলক্ষ্যে র‌্যালি ও শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করেন। বেলা ১১টায় রাণীনগর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি নাছির উদ্দিন, জেলা পরিবহন সভাপতি আসলাম হোসেন, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা মোস্তফাা ইবনে আব্বাস, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আনজির হোসেন, সেক্রেটারি শামিনুর ইসলাম শামীম প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে সেখান থেকে বিশাল এক র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।


আরও খবর



একটি দলের ওপর ভরসা করে অশ্বডিম্ব পেয়েছি

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ |

Image

পতিত সরকারের পতনের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির নেতা ও তথ্য সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যাতে তিনি আক্ষেপের সুরে লিখেছেন, একটি দলের ওপর বেশি ভরসা করে আমরা অশ্বডিম্ব পেয়েছি। ০৯ মে দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে মাহফুজ আলম লিখেছেন, একটি দলের এক্টিভিস্টরা বারবার লীগ নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা রাজি ছিল না, এটা বলে বেড়াচ্ছেন। মিথ্যা কথা। ক্যাবিনেটে প্রথম মিটিং ছিল আমার। আমি স্পষ্টভাবে এ আইনের অনেকগুলো ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। নাহিদ-আসিফও আমার পক্ষে ছিল স্বভাবতই। দল হিসাবে বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হলে একজন উপদেষ্টার জবাব ছিল ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মতো পশ্চাতপদ উদাহরণ আমরা আমলে নিতে পারি কিনা। এ যুক্তি যিনি দিয়েছিলেন, একটি দলের এক্টিভিস্টরা আজ সমানে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রদের কুপোকাত করতে। অথচ, উনার সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। মিছে বিরোধ লাগানোর অপচেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।

তিনি লিখেছেন, বলে রাখা ভালো, দুজন আইন ব্যাকগ্রাউন্ডের উপদেষ্টা (একজন ইতোমধ্যে মারা গিয়েছেন) ও আমাদের বক্তব্যের পক্ষে ছিলেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টাও পক্ষে ছিলেন। গতকাল বিকেলে কথা হয়েছে। দল হিসাবে লীগের বিচারের প্রভিশন অচিরেই যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন ওই উপদেষ্টা। উনাকে ধন্যবাদ।

তথ্য উপদেষ্টা লিখেছেন, মিথ্যা বলা বন্ধ করুন। ঘোষণাপত্র নিয়ে আপনাদের দুই মাস টালবাহানা নিয়ে আমরা বলব। ছাত্রদের দল ঘোষণার প্রাক্কালে আপনারা দলীয় বয়ানের একটি ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। সমস্যা নেই, আমরাও চাই সবাই স্বীকৃত হোক। কিন্তু, এখন সেটাও হতে দেবেন না। দোষ আমাদেরও কম না। আমরা আপনাদের দলীয় প্রধানের আশ্বাসে আস্থা রেখেছিলাম।

‘পুনশ্চ: আমরা নির্বাচন পেছাতে চাই না। ডিসেম্বর টু জুনের মধ্যে নির্ব্বাচন হবেই,’ যোগ করেন তিনি।

মাহফুজ আলম লিখেছেন, আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্ররা নিজেদের আদর্শ ও পরিকল্পনা নিতে পারে না বরং এখান থেকে ওখান থেকে অহি আসলে আমরা কিছু করি, তাহলে আপনারা হয় ছাত্রদের খাটো করে দেখছেন, নয়তো ছাত্রদের ডিলেজিটিমাইজ করার পরিকল্পনায় আছেন। সেই আগস্ট থেকেই আমরা জাতির জন্য যা ভালো মনে করেছি, সবার পরামর্শ নিয়েই করেছি। বরং, ওই দলকেই আমরা বেশি ভরসা করেছি। সবার আগে উনাদের সাথেই পরামর্শ করেছি। ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব। সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ!

তিনি আরও লিখেছেন, আমরা ওই দলকে বিশ্বাস করতে চাই। ওই দলের প্রধানকে বিশ্বাস করতে চাই। উনি আমাদের বিশ্বাসের মূল্য দিয়ে লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ও ঘোষণাপত্র প্রকাশে দেশপ্রেমিক ও প্রাগমাটিক ভূমিকা রাখবেন বলেই আস্থা রাখি। ওই দলকে নিয়ে কে কি বলবে জানি না কিন্তু আমরা চাই ওই দল ছাত্রদের সাথে নিয়ে দেশের পক্ষে, অভ্যুত্থানের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐকমত্যের নেতৃত্ব দিক। দেশপ্রেমিক ও সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তি হিসাবে নেতৃত্ব দিলে ছাত্ররা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় উনাদের সঙ্গে চলবেন। ঐক্যবদ্ধ হোন। নেতৃত্ব দিন। এ প্রজন্মকে হতাশ করবেন না। এ প্রজন্ম এ দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।


আরও খবর



পাঁচ দশকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

প্রকাশিত:শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ |

Image

দেশে ১৯৭৬ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর পর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়। সে হিসাবে পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপের পারদ চড়ছে চলতি বছরও। পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বাড়ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে সে তুলনায় বাংলাদেশে বৃদ্ধির হারটা একটু বেশি। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এভাবে উচ্চ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে ভেঙে পড়তে পারে জনস্বাস্থ্য।

 

একজন মানুষ ঠিক কতটা তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, তা নিয়ে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার একটি গবেষণা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা অনেকের ওপর পরীক্ষাটি চালিয়েছেন। তাদের ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৫৭ শতাংশ আর্দ্রতায় টানা ৯ ঘণ্টা রেখে দেখেছেন, বেশির ভাগই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেউ টানা ৯ ঘণ্টা থাকতেই পারেনি, আর যারা বেশি সময় ছিল তাদের বমি, ডায়েরিয়া, ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে।

দেশে বিগত কয়েক বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশন বেড়ে গেছে অনেক বেশি। রাজধানী ঢাকার মতো জনবহুল শহরে মানুষের শারীরিক ও মনোজগতে বড় পরিবর্তন হচ্ছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মানুষ ও প্রাণিকুলে মহামারীসহ নানা রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‌জনস্বাস্থ্যের ভাষায় স্বাস্থ্য হলো মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার নাম। প্রকৃতি কোথাও আক্রান্ত হলে সেটা মানুষকেও কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত করবেই। আমাদের তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে চলছে, প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য তো বটেই, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও এটা হুমকি। আমরা গত কয়েক দশকে অনেক নতুন নতুন রোগ-বালাইয়ের নাম শুনেছি। তাছাড়া অনেক বিরল রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়তে দেখা গেছে। এগুলো সবই প্রকৃতিকে আক্রান্ত করার ফল।

বাংলাদেশে যেভাবে প্রকৃত তাপমাত্রা ও অনুভূত তাপমাত্রা বাড়ছে, এতে গোটা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমরা বলি, মানুষ হলো প্রকৃতির সন্তান। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির একটা কারণ তো আছেই। এর বাইরে যেভাবে দ্রুত তাপমাত্রা বেড়ে চলছে, এটা চলতে থাকলে ইকোসিস্টেমে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে আমরা বায়ুদূষণের কারণে ভুগছি। বায়ুদূষণের কারণে যেসব রোগ-বালাই বাড়ছে, সেগুলো সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আমরা ডেঙ্গু নিয়ে ভুগছি। ডায়রিয়ার প্রকোপও বাড়ছে। এগুলো সবই অতিরিক্ত তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে গত বছর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালএ পাঁচ দশকের তাপমাত্রা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রির বেশি। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলে, ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি। আর রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে দেশের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়েই বেড়েছে। সেই সময় থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে প্রতি বছর গড়ে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত বিপর্যয়সহ নানা কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঢাকায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে গণপরিসর, সবুজ ও জলাশয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়াকে।

দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয় এপ্রিলকে। এ বছর চলতি মাসে দেশে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালও দেশের সাত জেলায় তাপপ্রবাহ ছিল। তাপ বাড়ার এ প্রবণতা আজও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে যেভাবে প্রকৃত তাপমাত্রা ও অনুভূত তাপমাত্রা বাড়ছে এতে গোটা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণ ছাড়াও মানবসৃষ্ট নানাবিধ কারণে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা ব্যাপকতর হচ্ছে বলে জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌বাংলাদেশে এপ্রিলে গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকে। মে মাসে তীব্র গরম থাকার পর জুনে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে বর্ষার আগমন ঘটলে তাপমাত্রার তীব্রতা কমতে থাকে। গত বছরটা ছিল আমাদের জন্য ব্যতিক্রম। তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত গরম তার স্বাভাবিক মাত্রাতেই আছে।

আন্তর্জাতিক ওয়েদার বিশ্লেষণ বলছে, এ বছর তাপমাত্রা গতবারের মতো রেকর্ড ভাঙবে না। বৃষ্টিবাদলও হবেএমনটা জানিয়ে ড. মনিরুজ্জামান বলেন, এখানে সমস্যা যেটা হচ্ছে, ঢাকাসহ দেশের নগর এলাকায় মানবঘটিত কারণে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে ইটভাটা, অত্যধিক কলকারখানা, আনফিট যানবাহন, বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতে এসির সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে তীব্র বায়ুদূষণ, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য পোড়ানোএসবই গরমের অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা হয়তো আগের চেয়ে অল্প বেড়েছে, কিন্তু গরমের অনুভূতি ৫-৭ ডিগ্রির মতো বেশি মনে হয়। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করাসহ টেকসই উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশের মতো এলাকায় মরুভূমির গরম অনুভূত হবে। ফলে এখানের জনস্বাস্থ্য ও কৃষি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির আধার, বৃক্ষ নিধন আর কংক্রিটের আচ্ছাদনের কারণে ঢাকা পরিণত হয়েছে আরবান হিট আইল্যান্ডে। ফলে নগরীর তাপমাত্রা ৩৪-৩৬ ডিগ্রি থাকলেও তার অনুভূতি ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছে। যে কারণে গরমের মৌসুমে এ নগরীর তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। বিভিন্ন এলাকায় পানিরও তীব্র সংকট তৈরি হয়। বাড়ে রোগ-বালাইয়ের প্রবণতাও।

প্রায় চারদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় উষ্ণ তাপপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যে কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেও তাতে তাপ কমেনি। আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, এখন যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে তা আজ পর্যন্তও চলতে পারে। রোববার থেকে দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তাতে কিছুটা কমতে পারে তাপমাত্রা।

ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও উষ্ণ তাপপ্রবাহের বেশ কয়েকটি কারণ দেখছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, এর মূলে রয়েছে ভূমি আচ্ছাদনের (সবুজ, পানি ও ধূসর বা কংক্রিট আচ্ছাদন) মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট, কংক্রিটের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা অনুপস্থিত, কাচনির্মিত ভবন ও এসিনির্ভর ভবনের নকশা তৈরি, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, বনায়ন না করাসহ বহুবিধ কারণ রয়েছে। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্প-কারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতিক্ষুদ্র কণার কারণেও নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রাকৃতিকভাবেই ঢাকা শহরে কয়েক দশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় বিদ্যমান ছিল। কিন্তু নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। নির্মল বাতাস, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, শীত ও গরমের তীব্রতা থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দেয়া নগর কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব বলে মনে করেন খোদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, নগরবাসীকে পরিবেশগত ক্ষতি থেকে বাঁচাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রথমত, আমরা গণপরিসর ও জলাশয় ব্যবস্থাপনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। যেগুলো বেদখল, সেগুলো উচ্ছেদ চালিয়ে দখলমুক্ত করছি। আবার নতুন নতুন জায়গায় গণপরিসর সৃষ্টি করছি। দ্বিতীয়ত, রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আমরা সবুজায়নের কাজ করছি। এতে বস্তিবাসী আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।

তাপপ্রবাহের কারণে দেশে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। এতে ফল ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি গবেষকরা বলছেন, রোদ বা সূর্যের আলো কৃষির জন্য ক্ষতিকারক নয়, বরং উপকারী। কিন্তু অতি তাপমাত্রা বা তাপপ্রবাহ কিংবা শৈত্যপ্রবাহ কৃষির জন্য সহায়ক নয়। সেই অসহিষ্ণু পরিস্থিতির ওপর দিয়েই যাচ্ছে এখন দেশের মানুষ।

কৃষিবিদরা বলছেন, তাপপ্রবাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ভালো ফলনের জন্য ফলমূল ও ফসলের গাছের গোড়ায় পানি পৌঁছানো জরুরি। গাছের গোড়ায় পানি নিশ্চিত করা গেলে তাপমাত্রা আরো ২-৪ ডিগ্রি বৃদ্ধিতে গাছের কোনো ক্ষতি হবে না। গাছের ক্ষতি না হলে ফল ও ফসলেরও কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা না। কিন্তু তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে বৃষ্টির প্রবণতাও। বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তাপপ্রবাহ তথা হিট শকে মাঠের বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে, বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে ধানে চিটা ধরার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ধানে ফুল অবস্থায় পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধানগাছের গোড়ায় সর্বদা দুই-তিন ইঞ্চি পানি ধরে রাখা দরকার।

আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, জামরুলসহ সব ধরনের ফল ও ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আম ও লিচু ঝরে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কৃষিবিদরা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে পোকামাকড় ও রোগ-বালাই তেমন না থাকলেও দীর্ঘমাত্রায় তাপপ্রবাহে ধান নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, এতে আমাদের দেশেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমরা যেভাবে কংক্রিট আচ্ছাদন দিয়েছি, তাতে তাপমাত্রাকে সহনশীল রাখার চেষ্টা না করে আমরা তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণ মূলত অতিমাত্রায় কংক্রিটের আচ্ছাদন। সেই সঙ্গে সবুজ, জলাশয় ও গণপরিসর কমে আসা। তাপমাত্রা মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্য আর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে। আপাতত অতিরিক্ত তাপ থেকে স্বস্তি দিতে তীব্র গরমের দিনে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, স্কুল বন্ধ রাখা, রাস্তায় সুপেয় পানি সরবরাহ করাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আমরা পরিকল্পনা করছি রাজধানীতে গাছের আধিক্য কীভাবে বাড়ানো যায়। তবে এ তাপপ্রবাহ সমস্যার স্বল্পমেয়াদি কোনো সমাধান নেই। রাজধানীর ক্ষেত্রে মধ্যমমেয়াদি সমাধান হলো ঢাকাকে সবুজায়ন করা আর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হলো বিকেন্দ্রীকরণ, যার নীতিগত সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে।



আরও খবর