বাংলাদেশে
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসছে ফেব্রুয়ারিতেই। নেতৃত্বে নাহিদ
ইসলামের নাম আলোচনায় আছে।
ফেব্রুয়ারিতে
নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেবে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
নেতারা। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর থেকে শুরু করে চট্টগ্রামে শহীদ ওয়াসিম আকরামের
কবর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে লংমার্চের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
দলের নেতা কে হবেন?
এই দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। এই আলোচনায় সামনের
দিকেই আছেন তথ্য, টেলিকম ও আইসিটি উপদেষ্টা। বলা হচ্ছে, তিনি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে
নতুন এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন। তবে শিক্ষার্থীদের কোনো পক্ষ বিষয়টি
পুরোপুরি নিশ্চিত করেনি।
নাহিদ ইসলাম কি
উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন? জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক
কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এখনো
বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়নি। দলের নাম ও কারা নেতৃত্বে আসবেন তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ছাত্র
উপদেষ্টাদের কেউ যদি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে রাজনৈতিক দলের দায়িত্বে আসতে চান আমরা তাদের
স্বাগত জানাব। তবে এখন পর্যন্ত যেহেতু তারা সরকারে আছে, ফলে তাদের আমরা আলোচনায়
ডাকছি না। প্রথম দিকে কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগরের নেতৃত্ব ঠিক করা হচ্ছে। এরপর
পর্যায়ক্রমে আমরা সারাদেশেই নতুন দলের কমিটি করব।
কাদের নিয়ে এ দল?
যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বা অংশ নিয়েছেন তাদের একটি অংশ এই
দলের অংশ হবে। এর বাইরে অন্যান্য দলের বা মতাবলম্বীদেরও এই দলে যোগ দেবার সুযোগ
থাকছে বলে জানা গেছে।
নতুন এই রাজনৈতিক দলের
নেতৃত্বে আর কারা আসবেন- এ প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শুধু যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে ফ্যাসিবাদ,
গুম, খুন ও দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত ছিল তাদের দলে নেয়া হবে না। এর বাইরে যেকোনো
দল থেকে আসা নেতাকর্মীদের স্বাগত জানানো হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন
পাটওয়ারী বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ৩২৮টি থানা কমিটি করেছি। কিছুদিনের
মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ শেষ হবে।’
এই নেতাদের কেউ কেউ
বলেন, তাদের প্রধান টার্গেট বিএনপি। বিএনপির দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের দলে
টানতে তারা কাজ করছেন। বিএনপি ভোটকেও টার্গেট করেছেন তারা।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র
সামান্তা শারমিন বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সিন্ডিকেট ও
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করেন এমন সব
নাগরিকের জন্য নতুন রাজনৈতিক দলের দুয়ার উন্মুক্ত। শুধু বিএনপি নয়, অন্য যেকোনো
দলের যে কেউ জুলাই চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে এলে স্বাগত জানানো হবে। তবে যারা অতীতে ফ্যাসিবাদী
রাজনীতি তথা আওয়ামী লীগে যুক্ত ছিলেন, তাদের নেয়া হবে না। বিভিন্ন কমিটিতে কয়েকজন
অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য গোপন করে ঢুকে পড়েছিলেন। তা জানামাত্র
বহিষ্কার করা হয়েছে।
রাজনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে?
নতুন যে রাজনৈতিক দল আসছে, এটা কতটা প্রভাব ফেলবে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া
গেছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করবে নতুন রাজনৈতিক দল এমন আশা করেন নাগরিক
কমিটির সদস্যরা।
জানা গেছে, মূলনীতি এবং
কর্মসূচি যাই হোক, চাঁদাবাজি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বিরক্ত থাকায়, এ
ইস্যুতে আত্মপ্রকাশের আগে লংমার্চ কর্মসূচি দিচ্ছেন তারা। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রগুলো জানিয়েছে, দল গঠনের পরও নাগরিক কমিটি এবং
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সক্রিয় থাকবে। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকলেও নতুন
রাজনৈতিক দলের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।
সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পতন হলেও
চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধ হয়নি। এতে গণঅসন্তোষ রয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের
চাঁদাবাজি-দখলের জন্য দায়ী করে তারা বলছেন, এটা জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে।
এদিকে, এই
দল ঘিরে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।
বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘তারা
যেভাবে রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছে তাতে তো অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে
বিএনপি মহাসচিব যে কথা বলেছেন, তা সত্যি হচ্ছে। এখন কিন্তু জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক
দলের নেতারাও একই কথা বলছেন। একজন সাধারণ মানুষকেও যদি প্রশ্ন করেন, সরকারের মধ্যে
থেকে, বিশেষ করে উপদেষ্টারা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করে, তাহলে কি প্রশ্ন উঠবে না?
আমরা পত্রিকায় দেখছি, সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের জন্য কাজ করছে। ফলে
সরকার যেমন নিরপেক্ষতা হারাবে, তেমনি ছাত্রদের এই দলও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন,
‘এই রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে আমরা উপদেষ্টাদের যুক্ত করিনি।
তারা যদি আসেন তাহলে পদত্যাগ করেই আসবেন।’
নাহিদ ইসলামও ইতোমধ্যে
একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের কেউ রাজনৈতিক দলের সাথে
কাজ করতে গেলে পদত্যাগ করেই যাবেন। তবে প্রশাসনে যারা বিএনপিপন্থী আছেন তাদের নিয়েও
প্রশ্ন তুলেছেন নাহিদ ইসলাম।
এদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির
(সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এর আগে তো অনেক ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, তখন কিন্তু
আমরা ছাত্রদের রাজনৈতিক দল করতে দেখিনি। এখন যারা রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন তারা
কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। কারণ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে
আন্দোলন হয়েছিল সেখানে কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সবগুলো রাজনৈতিক দলও অংশ
নিয়েছিল। হাসিনার বিদায়ের পর শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ ঘরে ফিরে গেছে। রাজনৈতিক
দলগুলোও নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকে আমরা
স্বাগত জানাই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা নিয়ে তারা যে দল করতে যাচ্ছে
সেটা মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। আবার তাদের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য কী এগুলো লিখিত
দিক। তখন বুঝা যাবে। তবে দলছুটদের নিয়ে গড়া কোনো দলই সফল হতে পারেনি। ফলে তাদের দল
গঠনের প্রক্রিয়া পর্যন্ত আমাদের দেখতে হবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে