Logo
শিরোনাম

নওগাঁয় ডিবি'র অভিযানে ৭৫০ পিচ ইয়াবা সহ নারীসহ দু'জন আটক

প্রকাশিত:সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :

নওগাঁয় বিস্কুটের প্যাকেটের ভিতরে করে অভিনব পন্থায় লুকিয়ে বহন করাকালে ৭শ' ৫০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট সহ সানোয়ার হোসেন (৩৮) ও নার্গিস (২৮) নামে দু'জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি পুলিশ)। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টারদিকে নওগাঁর মহাদেবপুর থানাধীন নওহাটামোড় পুলিশ ফাঁড়ির পাশে খোর্দনারায়নপুর নামক এলাকায় নওগাঁ টু রাজশাহী মহাসড়কের উপর থেকে তাদের আটক করেন ডিবি।

আটককৃত সানোয়ার রহমান রাজশাহী জেলার কাশাডাঙ্গা থানার ফজলুর ছেলে এবং আটককৃত নার্গিস নওগাঁ সদর উপজেলার বটতলী এলাকার আব্দুল জব্বার এর মেয়ে।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা ডিবি'র অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মান্নান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এস, আই মানুন সঙ্গীয় ফোর্সসহ নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খোর্দনারায়নপুর নামক এলাকায় পাকা সড়কের উপর অভিযান চালিয়ে ৭শ' ৫০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ সানোয়ার রহমান ও নার্গিস নামের দু'জন মাদক ব্যবসায়ীকে  আটক করেন।

আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।


আরও খবর



মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশি আটক

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫ |

Image

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের মেদান ইম্বিতে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাতে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। অভিযানে ৫০৬ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬৫ জন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক জাকারিয়া শাবান জানান, মেদান ইম্বি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অভিবাসীদের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এখানকার অনেক দোকানঘরের ওপরের তলা ভাড়া নিয়ে অবৈধ অভিবাসীরা বসবাস করতেন।

অভিযানকালে পালানোর চেষ্টাকালে দুই বিদেশি পুরুষ আহত হন। এছাড়া উঁচু হিলের জুতা পরা এক নারীও পালাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ডিপার্টমেন্টের ইমার্জেন্সি মেডিকেল রেসপন্স সার্ভিস ইউনিট তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হওয়া অভিযানে ৮৯৫ জনকে পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ৭৪৯ জন ছিলেন বিদেশি নাগরিক এবং ১৪৬ জন স্থানীয়। আটকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি ছাড়াও নেপালি (১৪২ জন), ইন্দোনেশিয়ান (১০৯ জন) এবং কিছু ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান নাগরিকও রয়েছেন।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, আটকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বৈধ কাগজপত্র না থাকা, ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া এবং ওয়ার্কিং ভিজিট পাসের অপব্যবহার। অনেক কর্মীকে দেখা গেছে যাদের জোহরের ওয়ার্কিং ভিসা থাকলেও তারা কুয়ালালামপুরে অবস্থান করছিলেন।

পরিদর্শনে আরেো দেখা গেছে, বিদেশি শ্রমিকরা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। ছোট ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে পাঁচ-ছয়জন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি বাড়িতে ৩০ জন পর্যন্ত ভাড়াটিয়া বসবাস করছিলেন।


আরও খবর



লক্ষ্মীপুরে সামাজিক বনায়নের অর্থ বিতরণ, ৩১ জন পেলেন টাকা

প্রকাশিত:সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ১৪ মে ২০২৫ |

Image

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :

লক্ষ্মীপুরে উপকূলীয় বন বিভাগের আওতায় সামাজিক বনায়নের বিক্রিত বাগানের লভ্যাংশ উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৩১ জন উপকারভোগীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে টাকা প্রদান উদ্বোধন করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জামশেদ আলম রানা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উপকারভোগীদের হাতে অর্থ প্রদানের স্মারক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা মিঠুন চন্দ্র দাসসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের আওতায় ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে সৃজিত লক্ষ্মীপুরের বসুরহাট-ছয়আনি সড়কের ছয় কিলোমিটার এলাকায় সৃজিত বাগানটি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। বিক্রয়মূল্য ছিল ৩২ লাখ ২৮ হাজার ৬২০ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী এর ৫৫ শতাংশ অর্থ উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপকারভোগীদের থেকে লভ্যাংশ প্রাপ্তির আবেদন সমূহ যাচাই-বাছাই শেষে ৩১ জন উপকারভোগীর প্রত্যেকের ব্যাংক  একাউন্টে ৩০ হাজার ১৪৫ টাকা জমা প্রদান করা হচ্ছে। বিক্রয়ের অর্থ থেকে ১০ শতাংশ বন রাজস্ব, ১০ শতাংশ টিএফএফ (ট্রি ফার্মিং ফান্ড), ২০ শতাংশ ভূমিমালিক সংস্থা এবং ৫ শতাংশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

চেক পেয়ে প্রাপ্তির অনুভূতি জানালেন উপকারভোগীরা:

সদর উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের নুরজাহান বেগম জানান,

"অনেকদিন পরে হলেও আমাদের প্রাপ্য অর্থ পাবো জেনে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। আমরা অনেক কষ্ট করেছি, তবে আজকে আমাদের পরিশ্রমের ফল পেলাম। এজন্য বন বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।"

একই উপজেলার পূর্ব জাফরপুর গ্রামের মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম বলেন,

"বন সংরক্ষণে অংশগ্রহণের কারণে আজ আমাদের জন্য এই বড় সুযোগ এসেছে। দীর্ঘদিন পর আমাদের প্রাপ্য অর্থ খবর পেয়ে, আমরা অনেক খুশি। ধন্যবাদ জানাই বন বিভাগকে।"

একই উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের ছায়েদুল হকের স্ত্রী ছেমনা খাতুন বলেন,এই অর্থ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্য এটি শুধু কিছু টাকা নয়, এটি আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। বন বিভাগের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ যে তারা আমাদের এই সুযোগ দিয়েছে।"

উল্লেখ্য যে, সামাজিক বনায়নের আওতায় গাছ রোপণ ও সংরক্ষণে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট।


আরও খবর



ঝালকাঠিতে পরিবেশ বিধিমালা লঙ্ঘন অপরাধে বন্ধ করা হয় অবৈধ ইটভাটা

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৫ এপ্রিল 20২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ |

Image

হাসিবুর রহমান ঝালকাঠি প্রতিনিধি :

বাংলাদেশে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা চালু করা অবৈধ এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। হাইকোর্টের ১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখের রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলে ইটভাটা অবৈধ বলে গণ্য হবে এবং তা উচ্ছেদ করতে হবে। 

এই আদেশের পর থেকে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করছেন পরিবেশ অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাউকাঠি গ্রামে ফারুক সরদারের মেসার্স ষ্টার ব্রিকস নামের ইটের ভাটায় অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ইয়াসমিন। ভ্রাম্যমান আদালতে প্রসিকিউশন প্রদান করেন পরিবেশ অধিদপ্তর ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো.আমিনুল হক। 

গনমাধমে এতথ্য জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনজুমান নেছা বলেন, 'ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত-২০১৯) এর ৫ ধারা লংঘন করার অপরাধে প্রতিষ্ঠান মালিককে একলক্ষ টাকা নগদ জরিমানা করা হয়। একই সাথে ফায়ার সার্ভিসের মেশিনের মাধ্যমে পানি দিয়ে চুল্লীর আগুন নিভিয়ে ও কাঁচা ইট ধ্বংস করে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।


আরও খবর



পাঁচ দশকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

প্রকাশিত:শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ |

Image

দেশে ১৯৭৬ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর পর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়। সে হিসাবে পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপের পারদ চড়ছে চলতি বছরও। পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বাড়ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে সে তুলনায় বাংলাদেশে বৃদ্ধির হারটা একটু বেশি। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এভাবে উচ্চ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে ভেঙে পড়তে পারে জনস্বাস্থ্য।

 

একজন মানুষ ঠিক কতটা তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, তা নিয়ে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার একটি গবেষণা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা অনেকের ওপর পরীক্ষাটি চালিয়েছেন। তাদের ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৫৭ শতাংশ আর্দ্রতায় টানা ৯ ঘণ্টা রেখে দেখেছেন, বেশির ভাগই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেউ টানা ৯ ঘণ্টা থাকতেই পারেনি, আর যারা বেশি সময় ছিল তাদের বমি, ডায়েরিয়া, ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে।

দেশে বিগত কয়েক বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশন বেড়ে গেছে অনেক বেশি। রাজধানী ঢাকার মতো জনবহুল শহরে মানুষের শারীরিক ও মনোজগতে বড় পরিবর্তন হচ্ছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মানুষ ও প্রাণিকুলে মহামারীসহ নানা রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‌জনস্বাস্থ্যের ভাষায় স্বাস্থ্য হলো মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার নাম। প্রকৃতি কোথাও আক্রান্ত হলে সেটা মানুষকেও কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত করবেই। আমাদের তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে চলছে, প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য তো বটেই, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও এটা হুমকি। আমরা গত কয়েক দশকে অনেক নতুন নতুন রোগ-বালাইয়ের নাম শুনেছি। তাছাড়া অনেক বিরল রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়তে দেখা গেছে। এগুলো সবই প্রকৃতিকে আক্রান্ত করার ফল।

বাংলাদেশে যেভাবে প্রকৃত তাপমাত্রা ও অনুভূত তাপমাত্রা বাড়ছে, এতে গোটা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমরা বলি, মানুষ হলো প্রকৃতির সন্তান। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির একটা কারণ তো আছেই। এর বাইরে যেভাবে দ্রুত তাপমাত্রা বেড়ে চলছে, এটা চলতে থাকলে ইকোসিস্টেমে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে আমরা বায়ুদূষণের কারণে ভুগছি। বায়ুদূষণের কারণে যেসব রোগ-বালাই বাড়ছে, সেগুলো সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আমরা ডেঙ্গু নিয়ে ভুগছি। ডায়রিয়ার প্রকোপও বাড়ছে। এগুলো সবই অতিরিক্ত তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে গত বছর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালএ পাঁচ দশকের তাপমাত্রা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রির বেশি। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলে, ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি। আর রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে দেশের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়েই বেড়েছে। সেই সময় থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে প্রতি বছর গড়ে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত বিপর্যয়সহ নানা কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঢাকায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে গণপরিসর, সবুজ ও জলাশয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়াকে।

দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয় এপ্রিলকে। এ বছর চলতি মাসে দেশে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালও দেশের সাত জেলায় তাপপ্রবাহ ছিল। তাপ বাড়ার এ প্রবণতা আজও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে যেভাবে প্রকৃত তাপমাত্রা ও অনুভূত তাপমাত্রা বাড়ছে এতে গোটা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলাবায়ু পরিবর্তনের কারণ ছাড়াও মানবসৃষ্ট নানাবিধ কারণে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা ব্যাপকতর হচ্ছে বলে জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌বাংলাদেশে এপ্রিলে গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকে। মে মাসে তীব্র গরম থাকার পর জুনে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে বর্ষার আগমন ঘটলে তাপমাত্রার তীব্রতা কমতে থাকে। গত বছরটা ছিল আমাদের জন্য ব্যতিক্রম। তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত গরম তার স্বাভাবিক মাত্রাতেই আছে।

আন্তর্জাতিক ওয়েদার বিশ্লেষণ বলছে, এ বছর তাপমাত্রা গতবারের মতো রেকর্ড ভাঙবে না। বৃষ্টিবাদলও হবেএমনটা জানিয়ে ড. মনিরুজ্জামান বলেন, এখানে সমস্যা যেটা হচ্ছে, ঢাকাসহ দেশের নগর এলাকায় মানবঘটিত কারণে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে ইটভাটা, অত্যধিক কলকারখানা, আনফিট যানবাহন, বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতে এসির সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে তীব্র বায়ুদূষণ, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য পোড়ানোএসবই গরমের অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা হয়তো আগের চেয়ে অল্প বেড়েছে, কিন্তু গরমের অনুভূতি ৫-৭ ডিগ্রির মতো বেশি মনে হয়। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করাসহ টেকসই উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশের মতো এলাকায় মরুভূমির গরম অনুভূত হবে। ফলে এখানের জনস্বাস্থ্য ও কৃষি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির আধার, বৃক্ষ নিধন আর কংক্রিটের আচ্ছাদনের কারণে ঢাকা পরিণত হয়েছে আরবান হিট আইল্যান্ডে। ফলে নগরীর তাপমাত্রা ৩৪-৩৬ ডিগ্রি থাকলেও তার অনুভূতি ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছে। যে কারণে গরমের মৌসুমে এ নগরীর তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। বিভিন্ন এলাকায় পানিরও তীব্র সংকট তৈরি হয়। বাড়ে রোগ-বালাইয়ের প্রবণতাও।

প্রায় চারদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় উষ্ণ তাপপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যে কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেও তাতে তাপ কমেনি। আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, এখন যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে তা আজ পর্যন্তও চলতে পারে। রোববার থেকে দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তাতে কিছুটা কমতে পারে তাপমাত্রা।

ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও উষ্ণ তাপপ্রবাহের বেশ কয়েকটি কারণ দেখছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, এর মূলে রয়েছে ভূমি আচ্ছাদনের (সবুজ, পানি ও ধূসর বা কংক্রিট আচ্ছাদন) মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট, কংক্রিটের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা অনুপস্থিত, কাচনির্মিত ভবন ও এসিনির্ভর ভবনের নকশা তৈরি, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, বনায়ন না করাসহ বহুবিধ কারণ রয়েছে। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্প-কারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতিক্ষুদ্র কণার কারণেও নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রাকৃতিকভাবেই ঢাকা শহরে কয়েক দশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় বিদ্যমান ছিল। কিন্তু নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। নির্মল বাতাস, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, শীত ও গরমের তীব্রতা থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দেয়া নগর কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব বলে মনে করেন খোদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, নগরবাসীকে পরিবেশগত ক্ষতি থেকে বাঁচাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রথমত, আমরা গণপরিসর ও জলাশয় ব্যবস্থাপনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। যেগুলো বেদখল, সেগুলো উচ্ছেদ চালিয়ে দখলমুক্ত করছি। আবার নতুন নতুন জায়গায় গণপরিসর সৃষ্টি করছি। দ্বিতীয়ত, রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আমরা সবুজায়নের কাজ করছি। এতে বস্তিবাসী আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।

তাপপ্রবাহের কারণে দেশে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। এতে ফল ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি গবেষকরা বলছেন, রোদ বা সূর্যের আলো কৃষির জন্য ক্ষতিকারক নয়, বরং উপকারী। কিন্তু অতি তাপমাত্রা বা তাপপ্রবাহ কিংবা শৈত্যপ্রবাহ কৃষির জন্য সহায়ক নয়। সেই অসহিষ্ণু পরিস্থিতির ওপর দিয়েই যাচ্ছে এখন দেশের মানুষ।

কৃষিবিদরা বলছেন, তাপপ্রবাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ভালো ফলনের জন্য ফলমূল ও ফসলের গাছের গোড়ায় পানি পৌঁছানো জরুরি। গাছের গোড়ায় পানি নিশ্চিত করা গেলে তাপমাত্রা আরো ২-৪ ডিগ্রি বৃদ্ধিতে গাছের কোনো ক্ষতি হবে না। গাছের ক্ষতি না হলে ফল ও ফসলেরও কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা না। কিন্তু তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে বৃষ্টির প্রবণতাও। বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তাপপ্রবাহ তথা হিট শকে মাঠের বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে, বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে ধানে চিটা ধরার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ধানে ফুল অবস্থায় পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধানগাছের গোড়ায় সর্বদা দুই-তিন ইঞ্চি পানি ধরে রাখা দরকার।

আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, জামরুলসহ সব ধরনের ফল ও ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আম ও লিচু ঝরে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে কৃষিবিদরা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে পোকামাকড় ও রোগ-বালাই তেমন না থাকলেও দীর্ঘমাত্রায় তাপপ্রবাহে ধান নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, এতে আমাদের দেশেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমরা যেভাবে কংক্রিট আচ্ছাদন দিয়েছি, তাতে তাপমাত্রাকে সহনশীল রাখার চেষ্টা না করে আমরা তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণ মূলত অতিমাত্রায় কংক্রিটের আচ্ছাদন। সেই সঙ্গে সবুজ, জলাশয় ও গণপরিসর কমে আসা। তাপমাত্রা মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্য আর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে। আপাতত অতিরিক্ত তাপ থেকে স্বস্তি দিতে তীব্র গরমের দিনে ওয়ার্ক ফ্রম হোম, স্কুল বন্ধ রাখা, রাস্তায় সুপেয় পানি সরবরাহ করাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আমরা পরিকল্পনা করছি রাজধানীতে গাছের আধিক্য কীভাবে বাড়ানো যায়। তবে এ তাপপ্রবাহ সমস্যার স্বল্পমেয়াদি কোনো সমাধান নেই। রাজধানীর ক্ষেত্রে মধ্যমমেয়াদি সমাধান হলো ঢাকাকে সবুজায়ন করা আর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হলো বিকেন্দ্রীকরণ, যার নীতিগত সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে।



আরও খবর



সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করুন

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৫ এপ্রিল 20২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫ |

Image

রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। সাংবিধানিক সংস্কারসহ জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল দল ও সমাজশক্তি তথা শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহের সাথে আলোচনা করে ব্যাপকভিত্তিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা আবশ্যক বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব।

জাতীয় সনদ নির্বাচনের আবশ্যিক শর্ত পূরণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন পারস্পরিক পরিপূরক বিধায় সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা আবশ্যক। এই পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতি একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্যে ধাবিত হবে। সংস্কার ও নির্বাচন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জাতীয় রাজনীতির মৌলিক প্রশ্নে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির অনৈক্য বা বিভেদ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।

আজ শুক্রবার উত্তরাস্থ বাসভবনে জেএসডির স্থায়ী কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে ক্যাথলিক গুরু ফ্রান্সিস পোপের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন— দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মিসেস তানিয়া বর, অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট কে এম জাবির ও কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ।


আরও খবর