শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুরে ধানী, ভিটা ও বাগানের জমিতে পুকুর খনন অব্যাহত থাকলেও রহস্যজনক কারনে প্রশাসন রয়েছে নিরব। উপজেলায় গত দু'দশকে পুকুর খননে ফসলি জমি কমছে প্রায় দের হাজার হেক্টর। এক শ্রেণীর পরিবেশ বিবর্জিত ও সমাজ বিরোধী মাটি ব্যাবসায়ী এলাকার সহজ সরল মানুষকে নানা প্রলোভনে পুকুর খননে উৎসাহিত করছে। অভিযোগ রয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর সকালে মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের দঃ লক্ষীপুর গ্রামের অতুল কবিরাজ ও প্রতুল কবিরাজ সহ তাদের ভাইদের পূর্বের একটি পুকুর এর পার্শ্বে ভিটা-মাটিতে থাকা বিশাল একটি আম বাগান কাটার পাশাপাশি ভিকু মেশিনের মাধ্যমে পুকুর খনন শুরু করেন। ঘটনাটি স্থানিয়রা সংবাদকর্মীদের জানালে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আম বাগান কেটে পুকুর খননের দৃশ্য দেখতে পেয়ে মুঠোফোনে ঘটনাটি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানিয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে জানান।
সুত্র জানায়, নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার এলাকার জৈনক শাহিন আলম ও তার কিছু সহযোগী সহ মহাদেবপুর উপজেলার আরো উপজেলার ১৪/১৫ জন ব্যক্তি পুকুর খনন ও মাটি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। এসব মাটি ব্যবসায়ীরা আমন মৌসুমে কৃষকের ধান ঘরে তোলার আগেই মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে সহজ সরল মানুষদের নানা ভাবে উৎসাহিত করছে যে, তাদের জমিতে ধান চাষ না করে পুকুর খনন করলে "ধান চাষের চেয়ে" বেশি লাভবান হওয়া যাবে। এমন নানা প্রলোভনে পড়ে গ্রামের সাধারন মানুষ বা কৃষকরা তাদের প্রলোভনে পড়ে তিন ফসলি জমি সহ এমনকি ভিটামাটি বা বাগানেও পুকুর খননে উৎসাহীত হচ্ছে। আর মাটি ব্যবসায়ীদের ভিকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে সেই মাটি ইট ভাটা সহ বিভিন্ন স্থানে চড়ামূল্যে বিক্রি করছেন। যার ফলে এ উপজেলায় কমে যাচ্ছে দিন দিন ফসলি মাটি, বাড়ছে পুকুর।বিগত কয়েক বছর ধরে আবাদী বা ভিটা মাটি সহ বাগান থেকে পুকুর খনন অব্যহত থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী কর্তা ব্যাক্তিগন নিরব দর্শকের ভুমিকা থাকছে।
সুত্র মতে, উপজেলার ১০ ইউনিয়নে আমন ধান কেটে নেয়ার পরে ফাঁকা জমিতে শুরু হয় পুকুর খননের মহা-উৎসব। এবারও উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে পুকুর খননে বিগত বছর গুলোর ধারা বাহিকতা অব্যাহত রেখেছে মাটি ব্যবসায়ীরা। মাটি ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে একদিকে তিন ফসলের জমি কমছে। অপর দিকে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পরিবেশ ধংশের পাশাপাশি মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টর (কাঁকড়া) এবং ১০ চাকার ডাম্পার ট্রাক অবৈধ ভাবে জেলার আঞ্চলিক মহা সড়ক সহ গ্রামীন সড়কগুলো ব্যাবহার করায় একটিকে হচ্ছে সড়ক নষ্ট অপরদিকে বাড়ছে দূর্ঘটনা, সাধারন মানুষেরও বাড়ছে দূর্ভোগ। ট্রাক্টর বা ড্রাম ট্রাক যোগে "মাটি না ঢেকে" বহনের কারনে সড়ক দূর্ঘটনায় মাত্র কিছু দিনের ব্যবধানে ৪ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা, স্বামী-স্ত্রী ও বাবা-ছেলে সহ আরো কয়েক জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় এবং মাটিবাহী অবৈধ্য ট্রাক্টর বন্ধ সহ বৈধ্য বাহন যোগে মাটি ঢেকে বহনের দাবিতে এলাকার সচেতন সমাজ ও প্রথম সংবাদ বন্ধু ফোরাম এর উদ্যোগে মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া "নওহাটামোড়" বাজারে কিছুদিন পূর্বে পরপর দু' বার মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
অপর দিকে অতিরিক্ত মাটি ভর্তি যানবাহন চলাচলে লোকাল রাস্তা গুলোর পিচ-পাথর উঠে যাওয়ায় দিন দিন এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে। দেশের খাদ্য চাহিদা পুরনে সহায়ক হিসেবে ধান চাষের পাশাপাশি রবিশষ্য উৎপাদনে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিষেধাজ্ঞা অমান্য হচ্ছে এ উপজেলায়। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ৩৯৭ দশমিক ৬৭ বর্গ কিঃমিঃ আয়োতনের এ উপজেলায় ৩০৭টি মৌজা এবং ২৯৮ টি গ্রামে ৩০ হাজার ৩৫০ হেক্টর তিন ফসলি কৃষি আবাদী জমি রয়েছে। সূত্র মতে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে গত দু'দশকে পুকুর খননের ফলে তিন ফসলি জমি কমছে প্রায় দের হাজার হেক্টর। পুকুর খননের ফলে প্রায় দের হাজার হেক্টর তিন ফসলের জমি কমছে এর সত্যতা অস্বীকার করে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মোমরেজ আলী বলেন এ পরিসংখ্যানে ত্রুটিপূর্ণ। মহাদেবপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) নুসরাত জাহান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি নীতিমালা লংঘন করে পুকুর খননের বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে তিন ফসলের জমিতে যে ভাবে পুকুর খনন শুরু হয়েছে তাতে করে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম খাদ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলা দ্রুত খাদ্য ঘাটতিতে পরার আশংকা রয়েছে। এই জেলা খাদ্য ঘাটতিতে যাতে না পরে এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক, মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভুমি) এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।