শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :
নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিদ্যামাধুরী শিক্ষায়তন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ না পেলেও বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর ঘরে শিক্ষক হিসাবে ফারুক হোসেন নামের এক জনের নাম আপলোড করা হয়েছে। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসাবে কখনোই নিয়োগ পাননি। তবে অভিযোগ উঠেছে ব্যাকডেটে তার নিয়োগ দেখানো হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পরিমল রায় দাবী করেন ভুলবসত তার নাম গিয়েছে।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, বিদ্যামাধুরী বিদ্যায়তন বালিকা বিদ্যালয়টিয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত। নবম ও দশম শ্রেণীর এমপিওভুক্ত হয়নি। এরমধ্যে গত ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে ব্যাকডেটে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে ফারুক হোসেন নামের একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তার দুইদিন পর ৯ জানুয়ারি সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানে গেলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ভারতী রাণী ও ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তার স্বামী পরিমল রায় দাবী করেন তাদের প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ে কোন শিক্ষককে তারা নিয়োগ দেননি। তাদের প্রতিষ্ঠানে ওই পদ শুন্য রয়েছে। এসময় ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হাজিরা খাতায় ও ব্যানবেইজের তথ্য ফরমে ফারুক হোসেন নামের কোন শিক্ষকের তথ্য পাওয়া যায়নি। এ সময় প্রধান শিক্ষকের ম্যাসেঞ্জার থেকে প্রতিনিধির ম্যাসেঞ্জারে এ সব তথ্য পাঠাতে অনুরোধ করলে তিনি ম্যাসেঞ্জারে প্রতিনিধিকে তথ্যগুলো প্রেরণ করেন। যা প্রতিনিধির ম্যাসেঞ্জারে বিদ্যমান। এরপর প্রতিনিধির হাতে আসা গত বছরের আপলোডকৃত ব্যানবেইস-এ শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য। সেখানে দেখা যায় ফারুক হোসেনকে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে গত ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখে যোগদান দেখানো হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত ২০২১ সালের ৩১ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন স্বাক্ষরিত পরিপত্রের মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) পদে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ পদে নিয়োগের লক্ষে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষমতা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কে। তারপর থেকে এ পদে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
এবিষয়ে ২০২২ সালের ৭জানুয়ারি ফারুক হোসেনের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, তিনি বিদ্যামাধুরী বিদ্যায়তন বালিকা বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের পদে নিয়োগ নেননি। তিনি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়। তিনি তার পূর্বে থেকে একটি এনজিওতে কর্মরত অবস্থায় রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটা বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভারতী রাণী বলেন ফারুক হোসেনকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি রেগুলার নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক নন। তাহলে ব্যানবেইজে শিক্ষক হিসাবে তার নাম কিভাবে আসলো? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিভাবে তার নাম এসেছে এবিষয়ে দেখে জানাবো। তবে তিনি কবে জানাবেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে বললে রেগে যান।
বিদ্যালয়ের সভাপতি পরিমল রায় বলেন, তাকে আরও আগে থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবার ভুলবসত হয়তো শিক্ষক হিসাবে তার নাম ব্যানবেইজে আপলোড হয়েছে। এরপর ব্যানবেইজ থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম শেখ বলেন, আমি এই উপজেলায় ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি যোগদান করি। তখন থেকে এ পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের কোন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। আর ব্যানবেইসে শিক্ষক হিসাবে ফারুক হোসেনের তথ্য কিভাবে আপলোড করলো তা আমি জানিনা। তথ্য আপলোড করার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানের। নিয়োগ না নিয়েও তিনি কিভাবে তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসাবে একজনের নাম সংযুক্ত করলেন তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।