শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :
নওগাঁর রাণীনগরের “সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট” একটি সমবায় ভিত্তিক একটি কৃষি প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যই নতুন নতুন জাতের উচ্চ মূল্যের ফসল ফলিয়ে সমবায় ভিত্তিক এই কৃষি প্রতিষ্ঠানটি নিজ এলাকা সহ দেশের কৃষি জগতে অগ্রনী ভূমিকা রাখায় কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।
''সুফলা নওগাঁ'' বর্তমানে দেশের নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে অনুপ্রেরণার বাতিঘর হিসেবে আলো ছড়িয়ে আসছে।
উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম বারের মতো এই প্রজেক্টে নতুন সংযোজনের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে টিস্যুকালচারের জি-৯ জাতের উচ্চ ফলনশীল কলা। দেশের সাধারণ কলার চেয়ে অধিক লাভজনক হিসেবে জি-৯ জাতের কলা বর্তমানে এই অঞ্চলের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে চলেছে। এই কলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে জি-৯ জাতের কলা পাঁকার এক সপ্তাহ যাবত সংরক্ষণ করা সম্ভব। এছাড়াও সাধারণ কলার চাইতে এই কলার পুষ্টিগুনও অনেক বেশি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
প্রজেক্টের পরিচালক হাবিব রতন বলেন তরুন বেকার এবং প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে ২০১৯ সালে সম্মিলিত ভাবে গড়ে তোলেন “সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট” নামের ব্যতিক্রমী কৃষি প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ৬ মাস অর্থ সংগ্রহের পর উপজেলার চকাদিন গ্রামে দুই একর জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে শুরু হয় মিশ্র ফল বাগান সৃজনের কাজ। বর্তমানে তা সম্প্রসারিত হয়ে চার একর জমিতে বিস্তার লাভ করেছে। করোনাকালীন সময়ে বীজ-বিহীন চায়না-৩ লেবু চাষে সবচেয়ে বেশি পরিচিত করে তোলে সুফলা নওগাঁকে। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে দেখতে হয়নি। বর্তমানে প্রজেক্টটি সম্প্রসারিত করে অন্যান্য স্থানে চাষ করা হচ্ছে নানা জাতের উচ্চ মূল্যের ফসল। বর্তমানে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে উচ্চ ফলনশীল দীগন্ত জি-৯ জাতের কলা ও বানানা ম্যাংগো আম চাষ।
জি-৯ জাতের কলা চাষ নিয়ে হাবিব রতন আরো জানান, উত্তরবঙ্গের মধ্যে এই প্রথম নওগাঁ জেলায় টিস্যুকালচারের জি-৯ জাতের কলার বাণিজ্যিক বাগান সুফলা নওগাঁর হাত ধরেই সূচিত হয়েছে। রোগ-বালাই প্রতিরোধী ও রপ্তানী যোগ্য জি-৯ জাতের কলার চাষ দারুন লাভজনক। প্রচলিত কলার গাছে প্রতিটি কাঁদিতে কলা পাওয়া যায় ৬০-১২০টি আর জি-৯জাতের কলার প্রতিটি কাঁদিতে ২০০-২৪০টি কলা পাওয়া যায়। সম্ভাবনাময় জি-৯কলা চাষ সম্প্রসারণে আগ্রহী কৃষকদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা এবং প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। আলট্রা হাইড্রেনসিটিতে ব্যানানা ম্যাংগো আম বাগানও সৃজন হয়েছে। তারা এই অঞ্চলের কৃষিকে আরো আধুনিক ও লাভজনক করতে আধুনিক প্রযুক্তিতে উচ্চ মূল্যের সবজিও চাষ করছেন এবং সেগুলো বিস্তারের আশায় আশেপাশের অঞ্চলের আগ্রহী কৃষকদের মাঝেও চারা সহজেই পৌছে দিচ্ছেন। বর্তমানে তাদের প্রজেক্টে আধুনিক ফল যেমন মাল্টা, কমলা, ড্রাগন ও অন্যান্য ফলের আধুনিক জাত চাষ করা হচ্ছে। ফলে এই প্রজেক্টে ১২-১৫ জন স্থানীয় বেকার মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিদিনই এই অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষি উদ্যোক্তারা তাদের প্রজেক্ট পরিদর্শন করছেন। তাদের এই প্রজেক্ট দেখে অনেকেই আধুনিক লাভ জনক কৃষির প্রতি ঝুঁকছেন আর তাদের সহযোগিতা নিয়ে গড়ে তুলছেন নতুন নতুন কৃষি প্রজেক্ট।
সিলেট থেকে এই প্রজেক্ট পরিদর্শন করতে আসেন কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল মোমিন। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় জানান দেশের কৃষিকে আরো আধুনিক ও কৃষকদের অল্প পরিশ্রমে এবং কম খরচে অধিক লাভবান করতে সুফলা নওগাঁ প্রজেক্টের অবদান অনেক। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে কৃষি উদ্যোক্তাদের মাঝে কম মূল্যে বিভিন্ন ফসলের চারা সরবরাহ করাসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ও জি-৯ জাতের কলার চাষসহ উচ্চ মূল্যের বিভিন্ন ফল চাষে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে সুফলা নওগাঁ। আমিও তাদের কাছ থেকে অনেক উচ্চ ফলনশীল জাতের চারা সংগ্রহ করেছি।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা হক বলেন, সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট কৃষির জগতে এক ব্যতিক্রমী নাম। আধুনিক কৃষির অনুপ্রেরণা হচ্ছে সমবায় ভিত্তিক এই প্রজেক্টটি। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সুফলা নওগাঁকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। পড়ালেখা শেষ করে চাকরীর পেছনে না ছুটে সুযোগ থাকলে সুফলা নওগাঁর মতো কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তোলা সম্ভব। ডিজিটাল যুগে এখন সবকিছুই হাতে মুঠোয়। এছাড়া নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সহযোগিতাও প্রদান করা হচ্ছে। তাই সুফলা নওগাঁর মতো এমন কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তোলা সম্ভব হলে একদিকে যেমন দেশের কৃষি ও কৃষকরা আধুনিক হবে তেমনি ভাবে কৃষকরাও ফসল চাষে অধিক লাভবান হতে পারবেন।