
রোকসানা মনোয়ার : নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছে একটি বহুমাত্রিক আকর্ষণ-সমৃদ্ধ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে।
বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। প্রতি বছরের মতো এবারও অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
ভ্রমণপিপাসুরা বলেন, তুলনামূলক বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের হলেও পর্যটন আকর্ষণে যে বৈচিত্র্য তা সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। এ দেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম নীরবচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত-কক্সবাজার, পৃথিবীর একক বৃহত্তম জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল-সুন্দরবন, একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের স্থান সমুদ্রকন্যা-কুয়াকাটা, দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ রঙের নয়নাভিরাম চারণভূমি-সিলেট, আদিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও কৃষ্টি আচার-অনুষ্ঠানসমৃদ্ধ উচ্চ সবুজ বনভূমি ঘেরা চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল, সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তরাঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। ফলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। পর্যটনশিল্পের সবটুকু সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মডেল হতে পারে।
এ ছাড়া ‘পর্যটনের নতুন ভাবনা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি (বিএমসি) ৭ দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যালের আয়োজন করছে। কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বসছে আনন্দ-উৎসবের এ মেলা। প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল আয়োজনে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ অন্যতম সহযোগী (স্পন্সর) হিসেবে থাকছে।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২২ সাল নাগাদ পর্যটনশিল্প থেকে প্রতি বছর ২ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হবে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫১টি দেশের পর্যটকরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন, যা মোট জিডিপির ১০ শতাংশ অবদান রাখবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পর্যটনশিল্পের অবদান। পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১১০ কোটি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আর বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজারে টিকে থাকতে পারে, তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির রূপরেখা।
২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটনশিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুরো দেশকে আটটি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণে ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোয় প্রায় প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন, আধুনিক হোটেল-মোটেল নির্মাণ, মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সোনাদিয়াকে বিশেষ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, ইনানি সৈকতের উন্নয়ন, টেকনাফের সাবরাংয়ে ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ, শ্যামলাপুর সৈকতের উন্নয়ন, ঝিলংঝা সৈকতের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, কুতুবদিয়ায় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ, চকরিয়ায় মিনি সুন্দরবনে পর্যটকদের গমনের জন্য যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের আধুনিকায়ন ইত্যাদি। এ ছাড়া আরো চারটি নতুন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার। এসব বাস্তবায়ন হলে আগামীতে দেশের পর্যটন খাত আরো চাঙা হবে বলে আশা করা যায়।