নিজস্ব প্রতিবেদক :
মধ্যসত্ত্বভোগীদের পকেটেই ঢুকছে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা-ইজিবাইকের চাঁদার টাকা। যে টাকা রাজস্বরূপে যেতে পারতো সরকারের কোষাগারে। দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতিতে যখন সারাদেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পাশাপাশি অটোরিকশা-ইজিবাইকের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা প্রায় আড়াইকোটি মানুষের জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, সেখানে তাদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও সবমিলিয়ে বাৎসরিক ৫শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগীদের একটি চক্র। অথচ সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে এসব যানবাহনে কাগুজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে সরকার। এরপরও ট্রাফিক পুলিশের মামলা, ডাম্পিংসহ সার্বিক বাধা উপেক্ষা করেই সড়কে চলাচল করছে এসব যানবাহন। এর নেপথ্যে কাজ করছে মধ্যসত্ত্বভোগীরা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকেও মাঝে মাঝেই অভিযান, মামলা, ডাম্পিং জরিমানা হলেও অধিকাংশ সময়ই খোদ সরকারই থাকছে নীরব। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে চক্রটি। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোরিকশা-ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়ে মধ্যসত্ত্বভোগীদের লাগাম টানতে পারে সরকার। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। স্বাভাবিকভাবে জীবিকাহ নির্বাহ করার সুযোগ পাবে সারাদেশের অন্তত আড়াইকোটি মানুষ। আর ঢাকায় দশ লাখেরও বেশি মানুষ।
সূত্র বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ২ লাখ রিকশা ইজিবাইক চলাচল করছে। আর এর সাথে জড়িত প্রায় ১০ লাখ মানুষের ভাগ্য। তাদের প্রত্যক্ষ জীবিকার মাধ্যম এটি। এসবের চলাচলে কাগুজে বিধিনিষেধ থাকলেও বাস্তবে এর কার্যকরিতা নেই। বরং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার অনীহা আর উদ্যোহীনতায় কিংবা চাঁদার টাকার ভাগ পাওয়ায় চলাচলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এতে রিকশা-ইজিবাইক চালক ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকার। মধ্যসত্ত্বভোগীদের এমন সুবিধা বন্ধ করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সীমিত আকারে হলেও এলাকাভিত্তিক রিকশা-ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদানের জন্য সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দপ্তরে আবেদন করে জাতীয় রিকশা ভ্যান শ্রমিক লীগ নামের একটি সংগঠন।
জানা গেছে, এসব রিকশা-ইজিবাইক কেন্দ্র করে সারাদেশেই স্টিকার ব্যবসায় নেমেছে মধ্যসত্ত্বভোগী চক্রটি। যারা স্টিকারের মাধ্যমে বছরে ৫শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ সরকার চাইলে এসব যানবাহনের পার্টস আদামনির সময় যে রাজস্ব পায় তার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারে অনায়াসেই।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন বলেন, দেশে ৫০ লাখেরও বেশি রিকশা-ইজিবাইক রয়েছে। মন্দার অর্থনীতিতে উপর্জানের বড় হাতিয়ার এটি। সীমিত আকারেও যদি এসবের লাইসেন্স দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে আড়াইকোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। আমরা চাই সরকার যেন সীমিত আকারে হলেও চলাচলের সুযোগ দেয়।
সূত্র বলছে, এসব যানবাহন যাতে সরকারের অনুমতি না পায় সে জন্য মধ্যসত্ত্বভোগীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। নামসর্বস্ব শ্রমিক সংগঠনের নেতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতা ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের যোগসাজস রয়েছে। রয়েছে পুলিশেরও সংশ্লিষ্টতা। পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারাও চাঁদার ভাগ নিচ্ছেন।