বিশ্বের
দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা এখন পূর্ণাঙ্গ
বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। সব দেশের ওপর পালটা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেও চীনের
পণ্যে স্থগিত না করে উল্টো শুল্ক ২১ শতাংশ বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীনকে রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন গোপনীয় অস্ত্র আছে,
যার ভয়াবহতা সম্পর্কে কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা।
যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর চীন প্রায়
৪৩৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ১৪৪ বিলিয়ন ডলারের
পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে। নতুন শুল্কের কারণে উভয় দেশের শিল্প ক্ষেত্রে তীব্র
সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। মার্কিন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত খরচ, কর্মী ছাঁটাই এবং
প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা
করছেন, দুই দেশের শুল্ক যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ৮০ শতাংশ
বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এতে বৈশ্বিক
জিডিপি ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
এদিকে মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের
সবচেয়ে শক্তিশালী গোপন অস্ত্র আছে। তিনি বলেছেন, এসব অস্ত্রের ভয়াবহতা সম্পর্কে
কেউ কখনো ধারণাও করতে পারবে না। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সামরিক ক্ষমতার
পাশাপাশি আরও শক্তিশালী অস্ত্র আছে।
বুধবার ওভাল অফিসে এক
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, চীনের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে
আপনি আতঙ্কিত কি-না। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বের
অন্যতম একজন স্মার্ট লোক। তিনি এমন কাজ করবেন না। ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র
খুবই শক্তিশালী দেশ। এই দেশটির এত ক্ষমতা ও অস্ত্র আছে যে, বিশ্বের কেউ সেই
সম্পর্কে ধারণাই করতে পারে না।
এদিকে চীন ও ইউরোপের
কাছেও অস্ত্র আছে। সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সয়া বীজ। এই বীজ যে কোনো আকারে পুরো
বীজ, পশুখাদ্য বা তেল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি শিল্পের একটি মূল উপাদান। এটি
আমেরিকার কৃষি আয়ের অন্যতম বড় উৎস এবং দেশের জিডিপির প্রায় ০.৬ শতাংশের সমান।
মার্কিন কৃষি বিভাগ অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সয়া বীজ উৎপাদনকারীর সংখ্যা
৫ লাখেরও বেশি এবং এই শিল্পের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার পূর্ণকালীন
কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই শিল্পের মূল্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১শ’
২৪ বিলিয়ন ডলার, যা অনেক দেশের অর্থনীতির চেয়েও বেশি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের
ধারাবাহিক শুল্ক আরোপের জবাবে চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে কঠোর প্রতিক্রিয়া
দেখিয়েছে। বেইজিং স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা এই শুল্ক যুদ্ধের বিরুদ্ধে শেষ
পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। চীন অভিযোগ করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ
জোরপূর্বক ও অনৈতিক এবং তারা এই বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। তীব্র বাকযুদ্ধের পাশাপাশি চীন এখন কৌশলগতভাবে
অন্যান্য দেশের সঙ্গে জোট গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে আমেরিকার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ
সৃষ্টি করে এই শুল্কনীতি প্রত্যাহার করা যায়।
চীনা কর্তৃপক্ষ
জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে তারা বাণিজ্য জোরদার
করতে আলোচনায় বসেছে। তবে চীনের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে,
তারা চীনের সঙ্গে একজোট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্পের ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্ক প্রয়োগ স্থগিত করার ঘোষণার পর পাল্টা
ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপীয় কমিশনের
প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচ্চ
আমদানি শুল্কের কার্যকরের বিষয়ে ৯০ দিনের জিন্য স্থগিত রাখার ঘোষণার পর ইউরোপীয়
ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রেকে আলোচনার সুযোগ দিতে চায়।