
রুট পারমিট ছাড়া বাস চালানো অবৈধ। তারপরও রুট
পারমিট ছাড়াই রাজধানীতে চলছে দুই সহস্রাধিক বাস। এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। কোনো অদৃশ্য অনুমোদনে এসব বাস চলছে কি না তা নিয়ে উঠছে
প্রশ্ন। অন্যদিকে আবার রুট পারমিট না পেয়ে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন বাস নামাতে
পারছে। এতে গণপরিবহন সংকটও কাটছে না। উল্টো সড়কে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা।
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি বলছে, অবৈধভাবে নগরীতে বাস চালানোর সুযোগ নেই। অবৈধ
সব যানবাহন বন্ধ করা হবে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, রুট পারমিট ছাড়া চলাচল নিষিদ্ধ, অভিযানে এসব বাস ডাম্পিং করা হবে।
সম্প্রতি দিয়াবাড়ী-সদরঘাট পর্যন্ত চালু হয়েছে
নতুন এসি সার্ভিস ‘আকাশ পরিবহন’। আগে ‘এফ আর’ পরিবহন নামে দারুসসালাম-সদরঘাট পর্যন্ত এ
বাসগুলো চলত। রাতারাতি কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রুট পারমিট ছাড়াই ৩০টির বেশি
বাস চালানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই বাস কোম্পানির বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেওয়ারও
বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। অর্থাৎ দুই
কিলোমিটার গেলেও একজন যাত্রীকে ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কোম্পানির দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল
করলে ধরেন গোপাল নামে এক ব্যক্তি। রুট পারমিট ছাড়াই কীভাবে বাস পরিচালনা করা হচ্ছে
জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোম্পানির কেউ নই। পরিবহন মালিক সমিতি এসব
বাস পরিচালনা করে। আমি দেখাশোনা ও মেরামতের দায়িত্বে নিয়োজিত। তাহলে অভিযোগের
জন্য আপনার নম্বর বাসে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব বিষয়ে কোনো কথা বলব না।
সাইনবোর্ড-জিরানী বাজার রুটের ‘স্বাচ্ছন্দ্য’ পরিবহনও স্বাচ্ছন্দ্যেই চলছে রুট পারমিট ছাড়া।
এই পরিবহনের অধীনে বাস চালাতে দৈনিক কোম্পানিকে গেট পাস বা জিপি বাবদ দিতে হয় ৯০০
টাকা। সবকটি বাস থেকে মাসে চাঁদা আদায় হয় প্রায় ১৯ লাখ টাকা। জানা গেছে, স্বাচ্ছন্দ্য পরিবহনের অধীনে ৭০টির বেশি বাস
রয়েছে। এর অন্তত ৬০টির সংশ্লিষ্ট পথে চলাচল করার রুট পারমিট নেই। ২০১৬ সালে
কোম্পানিটি চালু হওয়ার সময় মাত্র ১০টি বাসের রুট পারমিট নিয়েছিল। করোনার আগে এটি
বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালের পর রুট পারমিট অনুমোদনের জন্য কোনো সভা হয়নি। রাইদা
পরিবহনের বেশকিছু বাসের রুট পারমিট না থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রুট পারমিট ছাড়াই কীভাবে বাস চলছে। জানতে চাইলে
ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আকাশ পরিবহন নতুন নয়, পুরনো কোম্পানি। প্রায় চার বছর ধরে রুট পারমিট
বন্ধ থাকায় নতুন করে রুট পারমিট নেওয়া যাচ্ছে না। আবেদন করেও রুট পারমিট মিলছে না।
তাই অনেক পরিবহন এখন রুট পারমিট ছাড়াই বাস চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যানজট
রোধে নতুন বাস কোম্পানি অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায়
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি তা বহাল রেখেছে। বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ১৭তম
সভায় রুট পারমিটহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকার দুই সিটি
করপোরেশন। ওই সভা শেষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম
বলেছিলেন, রাজধানীতে ১ হাজার ৬৪৬টি গাড়ি রুট পারমিট ছাড়া
চলাচল করছে। এসব বাসের বিরুদ্ধে করপোরেশন, পুলিশ, বিআরটিএকে নিয়ে যৌথ অভিযান চালানো হবে। রুট
পারমিট ছাড়া কোনো বাসকে আমরা চলতে দেব না।
ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি গত
বছরের অক্টোবরে নতুন করে গঠন করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন
পুলিশ কমিশনার। দুই বছরের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন মাস
পরপর একবার সভা করে কার্যবিবরণী বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানোর কথা; কিন্তু কমিটি কার্যত তেমন কোনো কাজই করতে পারছে
না।
এ কমিটির সদস্য হানিফ খোকন। তিনি বলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি নতুন বাস রুট
অনুমোদন না দেওয়ায় ঢাকা মেট্রোর যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি তা চূড়ান্ত অনুমোদনের
জন্য বিআরটিএর কাছে সুপারিশ পাঠাতে পারছে না।
তিনি বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি মানুষ
যাতায়াত করে। অথচ গণপরিবহন সংকট চরমে। বড় বাস ও মিনিবাসের রুট পারমিট না দেওয়ায়
অনেক কোম্পানি নামতে পারছে না। ফলে পরিবহন সংকট থেকেই যাচ্ছে। আমরা আশা করব সরকার
বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, রুট পারমিট ছাড়া কোনো বাস চলার কথা নয়। যদি চলে
তাহলে মোবাইল কোর্টের অভিযানে ধরে ডাম্পিং করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো আপস নেই। কারণ
রুট পারমিট ছাড়া বাস চালানো একেবারেই নিষিদ্ধ।
রিুট পারমিট ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির বাসের নাম
জানানোর পর বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, সবকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করব। তারা
কীভাবে চলছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। অনেক সময় বিভিন্ন
কোম্পানির বাস অনুমোদিত রুট অমান্য করে অন্য রুটে চলতে দেখা যায়। সেগুলোর
বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিই।