Logo
শিরোনাম

অপরিকল্পিত ব্যয়, দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়

প্রকাশিত:শুক্রবার ২১ এপ্রিল ২০২৩ | হালনাগাদ:বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

মাজহারুল ইসলাম মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, গবেষক :

উন্নয়ন প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ অধিক জরুরি। এ ধরনের প্রশাসনের দুর্বল দিকগুলো যথাযথ সংস্কার করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি তাদের জীবন ধারার মানোন্নয়নে এ ধরনের প্রশাসন ব্যবস্থা কার্যকরীকরণ বর্তমান দেশের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

জনগণের ক্ষমতায়ন, আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা ব্যতীত বিক্ষিপ্ত এবং অপরিকল্পিতভাবে টাকা ব্যয় করে দারিদ্র্যবিমোচন করা সম্ভব নয়। সব পর্যায়ে গণতন্ত্রায়নের জন্য প্রয়োজন নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। যে ব্যবস্থায় অসহায় গরিব মানুষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে ক্ষমতায় যেতে পারে। যেখানে পুঁজিবাদীদের কুদৃষ্টি এ কাজের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ও দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়। দেশের অর্ধেক মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে স্থিতাবস্থায় রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য দরিদ্র জনগণের দিকে লক্ষ করে হলেও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকরী ও শক্তিশালীকরণ পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণের প্রসার সাধনে সরকার, ব্যাংক এবং এনজিওদের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা অধিক জরুরি।

এমনিতেই এ দেশের জনগণ চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানাবিধ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে কোনোরকম দিন অতিবাহিত করছে। এর মধ্যে আবার দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, বাড়িভাড়া ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সেগুলোর দারুণ সঙ্কটের কারণে বর্তমানে এ দেশের জনগণ এক প্রকার দিশেহারা ও ওষ্ঠাগত হয়ে পরেছে।

বর্তমানে পুঁজিবাদীদের কথামতো মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করতে গিয়ে আমাদের মতো দেশগুলো তাদের শর্তের ফাঁদে পড়ে আত্মঘাতী ধ্বংসাত্মক দিকে আমরা ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছি, যা সত্যিই ভয়াবহ ভীতির কারণ। এ ক্ষেত্রে এ দেশে পুঁজিবাদীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সপ্রসারণ, প্রচার ও প্রসার করছে ঠিকই কিন্তু পক্ষান্তরে আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের বাজার ধনী রাষ্ট্রগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে তৈরি করছে হাজারো শর্তের দেয়াল। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প পথ দেখতে হবে, এ ধরনের বিশাল বৈষম্য রোধে নতুন অর্থনৈতিক নীতি প্রবর্তন করতে হবে এবং নতুন অর্থনৈতিক দর্শনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যেখানে সামাজিক বাজার অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্র মূল প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে।

এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারকেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনা সংবিধান নির্দেশিত পথে যথাযথ পরিচালিত করতে হবে- এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারকদের কোনো প্রকার টালবাহানা চলবে না, এর জন্য স্থানীয় সরকারের অনুকলে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও ক্ষমতায়ন যথাযথ প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভব হলে ৪০ শতাংশ রাজস্ব বাজেট সরাসরি স্থানীয় সরকারকে দিতে হবে। সব সিডিউল ব্যাংকের কমপক্ষে ৫-৬ শতাংশ দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য দিতে হবে। স্থানীয় সরকারকে গ্রামীণ জনগণের জন্য উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তৈরি করতে হবে। স্থানীয় সরকারের সাথে গ্রামীণ অর্থনীতি ও গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে জাতীয় অর্থনীতির সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এগুলো করতে পারলে দারিদ্র্যবিমোচনের পথ সুগম হবে ও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আমরা আশা রাখি।

দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে ভূমি সংস্কারের দিকেও সরকারকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের জন্য অধিক বরাদ্দ এবং বিনিয়োগ বোর্ডকে কার্যকরী করতে হবে। কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রফতানির জন্য সরকারকে বিশেষ সহযোগিতা দানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামীণ অবহেলিত জনগণের জন্য দুর্যোগ তহবিল ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। এক পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। জিডিপিতে শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। শর্তহীন বাজার অর্থনীতি বাতিল করতে হবে। উৎপাদিত পণ্য ও কৃষিক্ষেত্রের ওপর অধিক ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশের সামাজিক পরিবর্তনের ধারক যেমন- ক্ষুদ্র চাষি, প্রবাসী শ্রমিক, ক্ষুদ্রশিল্প মালিক, গামের্ন্ট ও টেক্সটাইল শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী ও পেশাজীবী গোষ্ঠী এদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে। এদের বাদ দিয়ে দেশে দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব নয়। তাই রাষ্ট্রের উচিত দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য এদের হাতকে আগে অধিক শক্তিশালী করা।

বর্তমানে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, আমলা, উচ্চবিত্ত- এদেরকে কথায় নয়, সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হতে হবে এবং ধনী ও গরিব, গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য রোধে একদৃষ্টি মনোভাব ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মূলত এ বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে ভমি ব্যবস্থার অসম মালিকানা ও বণ্টনের মাধ্যমে, ট্যাক্সের টাকা প্রতিরক্ষাসহ নীতিনির্ধারকদের ব্যক্তিগত অন্যান্য খাতে অধিক ব্যয়ের মাধ্যমে। যদিও আমরা সবাইকে ভালোভাবে জানি, এ দেশে পুঁজিবাদীদের স্বার্থরক্ষা করে এই রাষ্ট্রের একার পক্ষে দারিদ্র্য হ্রাস করা করা সম্ভব নয়। তারপরও আশা রাখি, যদি এ দেশের নীতিনির্ধারকরা দারিদ্র্যবিমোচনকে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাজেন্ডায় রেখে কৃষিপ্রধান আমাদের এই দেশে প্রয়োজনীয় কৃষি ব্যবস্থার সংস্কার, সর্বজনীন আধুনিক শিক্ষা, কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা সবার জন্য নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও স্থানীয় উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনের বাজেট প্রণয়ন জরুরি এবং তা যথাযথ বাস্তবায়ন করার পথ তৈরী করা যায় তবে দারিদ্র্যবিমোচনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে পুঁজিবাদের থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত না এই থাবা থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি ততদিন পর্যন্ত দারিদ্র্য হ্রাস করা সম্ভব হবে না।

এ কাজটি বাস্তবায়নে সরকারকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক- সব পর্যায়ের ব্যক্তির মতামত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক দর্শনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং দারিদ্র্যবিমোচনে উদ্যোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধানের পথ আবিষ্কার করতে হবে।

অতি স্বল্পসময়ের মধ্যে আমাদের এই ছোট দেশের ঈষর্ণীয় অগ্রগতি ও বড় বড় সাফল্য যা অন্য দেশকে ভাবিয়ে তুলছে। আবার অনেকের কাছে আমাদের এই অগ্রগতি তাদের চোখের শূলে পরিণত করছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে দেশকে নিয়ে না ষড়ষন্ত্র চলছে, যা কাম্য নয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বড় সাফল্য। আমাদের দেশের কৃষকরা পারে বাম্পার ফসল ফলাতে, আমাদের আছে বিশাল মানবসম্পদ- এদেরকে যদি একটু সহযোগিতা করা যায় এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়, তবে এ দেশের ঘুরে দাঁড়াতে তেমন বেশি সময় লাগবে না। যে দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি এবং যে দেশের মাটি থেকে সোনা ফলে, সে দেশ কেন পিছিয়ে থাকবে, ঋণের জন্য পুঁজিবাদীদের ঋণের বিশাল ফাঁদে পা দেবে?

আমাদের সামাজিক পুঁজিকে কাজে লাগাতে উদ্যোগী হতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো যেভাবে নিজেদের ভাগ্য নিজেরা রচনা করেছে- এই দর্শনে আমাদের কর্মপরিধি ঠিক করতে হবে। দেশে বিরাজমান টলমলে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের চেয়ে সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক গণতন্ত্র যেসব দেশে বিরাজমান সেসব দেশের জনগণ তাদের সর্বনিম্ন চাহিদা মিটিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। যার কোনো কর্মসংস্থান নেই সে-ও দারিদ্র্যের অভিশাপে অভিশপ্ত হন না। এ ক্ষেত্রে সমাজই এগিয়ে আসে ওইসব দুস্থ ও দারিদ্র্যদের সাহায্যে এবং তাদের প্রয়োজন মেটাতে।

আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা এ ধরনের সৃষ্টিশীল উদ্যোগ গ্রহণের দিকে নজর দেয়ার সময়ই পায়নি। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ- ক্ষমতার উৎস এসব জনগণের ভাগ্য নির্মাণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করুন এবং এ দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। শুধু আপনাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত ও দলীয় পর্যায়ের প্রভাব-বৈভব হিসেবে না দেখে দেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনীতিকে মজবুত ও স্থিতিশীল করুন, পুঁজিবাদী ও প্রভুরাষ্ট্রের শক্তির মনতুষ্টির চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন এবং এ দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ওপর আস্থা ও ভরসা রাখুন।

গ্রামীণ অবহেলিত জনমানুষের ভাগ্য নির্মাণে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা ব্যতীত দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ জাতীয় উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অনুরোধ- আপনাদের রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে প্রভুরাষ্ট্রের গোলামি ভুলে দেশের সার্বিক উন্নয়নে দেশকে ভালোবাসুন, পাশাপাশি ক্ষমতার উৎস জনগণের সার্বিক মঙ্গলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন, দারিদ্র্যবিমোচনই হোক আপনাদের দেশ ও জাতির অর্থনীতির মুক্তির জন্য প্রধান অ্যাজেন্ডা।

 


আরও খবর

আত্মহননের সাংবাদিকতা

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০24




পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দাবি

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

ছয় দফা দাবিতে দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শিক্ষকদের বের করে দিয়ে ঢাকা পলিটেকনিকে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক (অস্থায়ী) সাব্বির আহমেদের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপরেখা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একযোগে শাটডাউন কর্মসূচি চলবে।

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দাবি হলো :

১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।

৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫. স্বতন্ত্র কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।


আরও খবর



প্রিয় বন্ধু হবেন যেভাবে

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

জগৎখ্যাত মনীষী এরিস্টটলের অমর এই বাণী “দুর্ভাগ্যবান তারাই, যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই’’। এই বাক্যটি চলার পথে সর্বদা আমাদের বন্ধুত্বের গুরুত্বের কথা স্বরণ করে দেয়। সেজন্য জীবনে চলার পথে সকলের একজন হলেও বন্ধু প্রয়োজন। কেননা, বন্ধুহীন মানুষ চার্জ ছাড়া মোবাইলের মতো।

তাইতো বিখ্যাত মনীষী নিৎসে বলেছেন, ‘‘একজন বিশ্বস্ত বন্ধুত্ব হচ্ছে প্রাণরক্ষাকারী ছায়ার মতো। যে তা খুঁজে পেলো, সে যেন একটি গুপ্তধন পেলো।”

হাসি-তামাশা, হট্টগোল, খুনসুটি, মান-অভিমান, বিরক্তি, হিংসা ও ভালোবাসা এসব মিলেই তৈরী হয় একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ঠিক তেমনি দিন শেষে সব ভুলে প্রকৃত বন্ধুত্বের বন্ধনটা ঠিকই টিকে থাকে এবং নতুন সকালে ফের শুরু হয় বন্ধুত্বের সেই খুনসুটি।

বন্ধুত্ব এমন একটা সম্পর্ক যা হৃদয়ের গভীরে নিমেষেই দাগ কেটে যায়। সুতরাং প্রত্যেকের জীবনে অন্তত একজন বন্ধু থাকা প্রয়োজন, যে তার আবেগ-অনুভূতির মূল্যায়ন করবে।

প্রযত্নে প্রিয়বন্ধু

কি করে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠা যায় সেটা কেউ-ই হয়ত ছকে দিতে পারবে না৷ সঠিক বন্ধু পেলে সেটা বুঝে নিতে হবে৷ যদিও বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম হয় না৷ সবটাই বেনিয়ম৷ কিন্ত্ত বেনিয়মেও নিয়ম শব্দ আছে৷ ফলে ভালো বন্ধু হওয়ার এবং বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার কৌশল জেনে নিন।

দুজনে আলাদা

ওরা তো মানিকজোড়৷ এমন কথা আপনি এবং আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধুটিও মাঝেমধ্যেই শোনেন? বাহ খুব ভালো৷ কিন্ত্ত তার মানে এই নয় যে আপনারা দুজনে একই মানুষ৷ আপনারা দুজনে আলাদা মানুষ সেটা কখনওই ভুলবেন না৷ ফলে মতের অমিল হতেই পারে৷ অমিল হলে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই৷ তাছাড়া দুজনের জীবনও আলাদা৷ ফলে একে অপরকে স্পেস দিন৷ যদি সব করেও দুজনের কথা না বলে মন খারাপ হয় এবং একে অপরকে ছাড়া ভালো না লাগে তাহলে আপনারা সত্যিই মানিকজোড়৷

বন্ধুত্ব সাবলীল

পাশাপাশি দু'জনকে বসিয়ে বন্ধুত্ব করতে হবে বলে বন্ধুত্ব করা যায় না৷ প্রেমের মতোই বন্ধুত্বও সাবলীল এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া৷ ফলে প্রিয় বন্ধুরা কখনওই একসঙ্গে চুপচাপ থাকে না৷ তারা প্রানবন্ত এবং উচ্ছল থাকে৷ যদি কথাই বলতে ইচ্ছা না করে তাহলে সেই বন্ধুত্ব না করাই ভালো৷ জোর করে অন্তত বন্ধুত্ব হয় না৷

চিরকালের

প্রিয় বন্ধু চিরকালের৷ হতেই পারে দু'জনে আলাদা কলেজ গিয়েছেন৷ আলাদা শহর হয়ে গেল৷ কিন্ত্ত নিজেদের সংসারে ব্যস্ত হয়ে গিয়ে তারা কখনওই একে অপরকে ভুলে যাবেন না৷ বরং আরও বেশি করে একে অপরকে মনে করবেন এবং সময় পেলেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করে খুনসুটি করবেন এমন হতে হবে বন্ধুত্ব৷ রাগ অভিমান করে পরস্পরকে ভুলে গেলে সেটা কখনওই প্রকৃত বন্ধুত্ব নয়৷ যে কোনও উপায়ে সংযুক্ত থাকুন এবং মনের ভাব আদানপ্রদান করুন৷

ভালো হোক

ভালো বন্ধু সবসময় বন্ধুর ভালো চায়৷ নিজের ভালো হোক সকলেই চায়, তবে তার জন্য বন্ধুর ক্ষতি হোক এমন ভাবা কিন্ত্ত প্রকৃত বন্ধুর পরিচায়ক নয়৷ প্রকৃত বন্ধু চাইবেন তার নিজের উন্নতির পাশাপাশি আপনারও উন্নতি হোক৷ যেখানে কিংবা যত দূরেই থাকুন না কেন বন্ধুর কল্যাণ কামনাই প্রিয় বন্ধুর পরিচায়ক৷

পাশে আছি

রাত ৩টের সময়েও প্রয়োজনে বন্ধুর পাশে থাকা অপর বন্ধুর কর্তব্য৷ যে বন্ধুর জন্য আপনি এমন করতে পারবেন এবং যে বন্ধু আপনার পাশে সর্বদা থাকতে পারবে সেই আপনার প্রকৃত বন্ধু৷ ফলে এইরকম বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করুন৷


আরও খবর



দেশজুড়ে ট্রান্সকমের পণ্য বর্জনের ডাক

প্রকাশিত:সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন জনতা। এসময় সমাবেশ ও বিক্ষোভ থেকে দেশে ইসরায়েলি পণ্য সরবরাহকারী গ্রুপ ট্রান্সকমের পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে কেএফসি, পিৎজা হাট, পেপসি ও সেভেন আপের মতো কিছু পণ্যের আউটলেটে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়েছে।

সোমবার সারা বিশ্বে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 'নো ওয়ার্ক, নো স্কুল' কর্মসূচি হিসেবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সিলেট

সিলেট নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় কেএফসিতে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে সেখানে দুই দফা হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় কেএফসিতে থাকা কোমল পানীয় দুতলা থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয়। পরে সেগুলো ফাটানো হয়।

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল হক বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’

নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতম গণহত্যার প্রতিবাদে ডাকা বৈশ্বিক ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে সিলেটে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে সোমবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছেন সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। এসব সমাবেশ থেকে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। এসময় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি এলাকায় পিৎজা হাট ও কেএফসিতে ইট-পাটকেল ও জুতা নিক্ষেপ করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে প্রতিষ্ঠান দুটির সামনের অংশের কাচ ভেঙে যায়। এছাড়া মিছিল থেকে রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকানে থাকা কোকা কোলা ও পেপসিকো কোম্পানির সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়।

এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মিছিলটি নাসিরাবাদ অতিক্রম করার পরপরই সানমার ওশান সিটির পাশে থাকা কেএফসিতে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও জুতা নিক্ষেপ করে তারা। এতে রেস্তোরোর কাচ ভেঙে যায়। এছাড়া চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় থাকা পিৎজা হাটের একটি শাখার সামনের কাঁচাও ভাঙচুর করেছে বিক্ষোভে আসা মানুষজন। এরপর জিইসি মোড়ে অবস্থিত হোটেল জামানে কোকা কোলার সাইনবোর্ড থাকায় সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এতে হোটেলটির সামনের অংশের কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। পরে তারা পিৎজা হাটেও ভাঙচুর চালায়।

অন্য আরেক মিছিল থেকে নগরীর লালখান বাজার এলাকায় স্পোর্টস ব্র্যান্ড পুমার সাইনবোর্ড, বাটার সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া নগরীর কাজির দেউড়ী মোড় থেকে জামালখান অভিমুখী আরেকটি মিছিল থেকে রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকানে থাকা কোকা কোলা ও পেপসিকো কম্পানির ফ্রিজ ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্রিজে থাকা পেপসি, সেভেন আপসহ বিভিন্ন কোমল পানীয় রাস্তায় ছিটিয়ে দেয়।

কক্সবাজার

‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি রেখে কক্সবাজার শহর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেল জোন সড়কের কাছে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার মালিক ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএফসি ও পিৎজা হাটের আউটলেটে ভাঙচুর চালায়।

বিক্ষুব্ধ জনতা ‘এগুলো ইসরায়েলের দোসর’ বলে উল্লেখ করেন। এসময় সেভেন আপের সাইনবোর্ড দেখেও ভাঙচুর চালানো হয়।

মিছিল শেষে কলাতলি গোল চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা এখন থেকে ইসরায়েল ও ইসরায়েলের দোসরদের পণ্যসামগ্রীও বয়কটের ঘোষণা দেন। কেএফসি, পিৎজা হাট, পেপসি, সেভেন আপের মতো কিছু ইসরায়েলি পণ্যের বাংলাদেশি সরবরাহকারী ট্রান্সকম গ্রুপ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ইসরায়েলের এমন অমানবিক কর্যক্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতাদের চুপ থাকা লজ্জাজনক। আজ থেকে ইসরায়েল সম্পৃক্ত সব পণ্য বয়কট করা হবে।

তারা আরো বলেন, ‘সেই সঙ্গে যত দিন পর্যন্ত ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে না, তত দিন নিরীহ ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকবে কক্সবাজারের সর্বস্তরের জনতা।

বগুড়া

বগুড়ায় ইসরায়েলি পণ্য বাটা শো-রুমসহ দেশটির কোমল পানীয় রাখা দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার শহরের সাতমাথা এলাকায় ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে সকালে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বগুড়ায় ফুঁসে ওঠে তৌহিদি ছাত্র-জনতা। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদিন জানান, বিক্ষোভ মিছিল থেকে দু-একজন বাটার শো-রুমের কাচে ঢিল ছুড়ে মারে। এতে কিছু কাচ ভেঙে যায়। তবে সার্বিক পরিবেশ শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বরিশাল

যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বরিশালে গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা দেওয়া কেএফসির বরিশাল ব্রাঞ্চে ভাঙচুর চালান। ছাত্র-জনতা কেএফসির কার্যক্রম বরিশাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়।

সোমবার সকাল ১১টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনের সড়কে ছাত্র-জনতার ব্যানারে কর্মসূচি শুরু হয়। সড়ক অবরোধ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কে কেএফসির সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা অবস্থান নেয়। তারা অভিযোগ করেন, কেএফসি ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা করে। যে অর্থের একাংশ যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। জনতা কেএফসি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা কেএফসির সামনের সড়কে জোহরের নামাজ আদায় করেন। একইস‌ঙ্গে মোনাজাতে গাজাবাসীর জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।

বিকাল সোয়া ৩টার দিকে কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্রতিষ্ঠানটির ছাদে উঠে কেএফসির লোগো ভেঙে ফেলেন। পাশাপা‌শি ব্যানার নিয়ে যান। এছাড়া দেয়ালে বয়কট কেএফসি লিখে দেন তারা।

তারা রেস্টুরেন্টটির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে সোমবার বিকাল ৫টার দিকে বরিশালে কেএফসির একমাত্র শাখাটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধরা কেএফসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। কেএফসির লোগো ভেঙে ফেললেও বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

খুলনা

খুলনায় ইসরায়েল বিরোধী মিছিল থেকে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের কেএফসি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা কেএফসি থেকে ইসরায়েলি পণ্য ও বিভিন্ন কোমল পানীয় বের করে রাস্তায় এনে ভেঙে ফেলে। পরে মিছিলকারীরা আবারো শিববাড়ির দিকে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ময়লাপোতাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল যেতে থাকে শিববাড়ি মোড়ের দিকে। এ সময় ময়লাপোতা থেকে একাধিক মিছিল যাওয়ার সময় কে বা কারা কেএফসিকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই সেখানে অন্যান্যরাও হামলা করে। এ সময় মিছিলের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা চেষ্টা করেও হামলা থেকে কেএফসিকে রক্ষা করতে পারেননি। এক পর্যায়ে কেএফসির মধ্য থেকে কোমল পানীয় বের করে এনে ভেঙে গুড়িয়ে ফেলা হয়। এ সময় রাস্তা পানিময় হয়ে যায়। পরে মিছিলকারীরা আবারো শিববাড়ির দিকে যেতে থাকে।


আরও খবর



রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন বেহাত না হয়

প্রকাশিত:শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা যেন বেহাত না হয়, এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ শুধুমাত্র সরকারের নয়, দেশের সব নাগরিকের।

শনিবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আছি। আমাদের এই সুযোগ যারা তৈরি করে দিয়েছেন, বীর শহীদরা, তাদের কাছে আমাদের ঋণ আছে। যাতে কোনো অবস্থাতেই এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়ে যায়। যেন এ সুযোগকে কেন্দ্র করে আমরা এমন এক বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি, যেখানে কোনো অবস্থাতেই কাউকে নিপীড়নের মুখে না পড়তে হয়, বিচার বা বিচার বর্হিভূত ব্যবস্থার মধ্যে যেন তাকে মোকাবিলা করতে না হয়৷ সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমাদের যাত্রা।

তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে যখন ফ্যাসিবাদী শাসনের নিপীড়ন বাংলাদেশকে জর্জরিত করে ফেলেছিল, সে সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। বিচারিক এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে বিচার বর্হিভূতভাবে আপনাদের (জামায়াতে ইসলামী) নেতাকর্মীরা নিপীড়ন, অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তারপরও আপনারা সাহসিকতার সঙ্গে সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছেন, সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। সেজন্য আপনাদের অভিনন্দন। আপনাদের প্রতি আমাদের সবার সমর্থন থাকছে।

এ সময় চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে যে নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে তা যেন ব্যার্থ না হয় সেজন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, জাতি এক নতুন বাংলাদেশ চায়। ৫৪ বছরের বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেকের মধ্যে হতাশা রয়েছে। এ লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রত্যাশা করে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামে আপনাদের (জামায়াতে ইসলামী) আবদান নিঃসন্দেহে সবার স্মরণে থাকবে। দেশ এবং জাতি নতুন করে আবার পুর্নগঠিত হবে, যখনই আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে পারবো সেখানেও আপনাদের ভূমিকা থাকবে, এটা আমরা আশা করি।

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই উদ্যোগ সরকারের উদ্যোগ নয়, এটি বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙক্ষার ফল। এরই অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজন এবং তাগিদ রাজনৈতিক দল, জনসমাজ, ছাত্র, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এসেছে। সেই প্রক্রিয়ায় আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ করায় আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।

এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক,ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।


আরও খবর



মুরগির বাচ্চা সিন্ডিকেটের কোটি কোটি টাকার লুটপাট

প্রকাশিত:বুধবার ০২ এপ্রিল 2০২5 | হালনাগাদ:বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাতের প্রান্তিক খামারিরা এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। ঈদকে কেন্দ্র করে অধিক দামে মুরগির বাচ্চা কিনতে বাধ্য হলেও এখন সেই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য চরম বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে ব্রয়লারের দাম নেমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না তারা। অথচ বড় কর্পোরেট গ্রুপগুলো ঈদের আগে বাচ্চার দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা খামারিদের দুর্দশাকে আরও গভীর করেছে।

প্রান্তিক খামারিরা বর্তমানে মুরগি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, অথচ তাদের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতিটি মুরগিতে তারা ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত লোকসান দিচ্ছেন। এই ক্ষতি কতদিন বহন করা সম্ভব? সরকার কেন এখনো প্রান্তিক খামারিদের দুঃখ দুর্দশা পরিস্থিতির দিকে নজর দিচ্ছে না?

এই অন্যায্য পরিস্থিতির মধ্যে আরও এক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে—খামারে খামারে ভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব। নিম্নমানের, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা বাচ্চাগুলো সহজেই ভাইরাসের শিকার হচ্ছে, ফলে মৃত্যুহার বাড়ছে। অধিকাংশ খামারির মুরগি মারা যাচ্ছে, যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাচ্ছে।

একদিকে খামারিরা উৎপাদন খরচের বিপরীতে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ভাইরাসের কারণে মুরগি মারা যাচ্ছে। ফলে তারা প্রতিটি দিক থেকে লোকসানের মুখে পড়ছেন। একদিকে কোম্পানির সিন্ডিকেট, অন্যদিকে বাজার সিন্ডিকেট, সব মিলিয়ে প্রান্তিক খামারিরা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন।

এভাবে চলতে থাকলে তারা ধীরে ধীরে উৎপাদন থেকে সরে যেতে বাধ্য হবেন। দেশের পোল্ট্রি খাত সম্পূর্ণভাবে কর্পোরেট গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, যার ফলে সাধারণ জনগণ উচ্চমূল্যে মাংস ও ডিম কিনতে বাধ্য হবে।

সরকারের উচিত দ্রুত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, প্রান্তিক খামারিদের জন্য ভর্তুকি ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এবং নীতিমালার মাধ্যমে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অযৌক্তিক মুনাফা নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যথায়, পোল্ট্রি খাত থেকে প্রান্তিক খামারিদের বিদায় নেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা এবং এর ফলাফল দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।


আরও খবর

সবজিতে আর স্বস্তি নেই

মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫