রোকসানা মনোয়ার : জলবায়ু
পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে পানির জন্য হাহাকার
লেগেই আছে। গ্রীষ্মকালে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। অতিরিক্ত লোনা পানির
ব্যবহারে জরায়ু সংক্রান্ত অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে নারীরা। এমন অবস্থায় ঋতুস্রাব
চলাকালে লোনা ও নোংরা পানির ব্যবহার কমাতে জন্মনিয়ন্ত্রণকরণ পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ
করছে উপকূলের কিশোরীরা।
তবে
বিষয়টি কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মত দিয়েছেন
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, চিকিৎসকের
পরামর্শ ছাড়া কিশোরীদের এভাবে পিল ব্যবহার তাদের মস্তিষ্কেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে
পারে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের ১৫ বছরের এক কিশোরী ৫
মাস ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণকরণ পিল খেয়ে নিজের মাসিক বন্ধ করে রেখেছে সে। বিষয়টি
পরিবারের অগোচরে।
ওই কিশোরী বলে, ‘পিরিয়ডকালীন
আমি সব সময় পুরোনো কাপড় ব্যবহার করি। সেগুলো ডোবার লোনা এবং অনেক নোংরা পানিতে ধুইতে
হয়। এসব থেকে বাঁচতেই পাশের বাড়ির এক ভাবির কাছ থেকে সুখী বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ
রাখি।
‘লোনা পানি ব্যবহার করায় আমার মাকে দীর্ঘদিন ধরে জরায়ু রোগে ভুগতে
দেখেছি। আমি এই রোগে ভুগতে চাই না। এটা খুব কষ্টের। তাই পিরিয়ড বন্ধ রাখতে ভালোই
লাগে।
ওই কিশোরীর পরামর্শে তার আরও দুই বান্ধবীও একইভাবে পিল খেয়ে পিরিয়ড
বন্ধ রাখে বলে জানায় সে।’
শহীদ
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মুনিরা
সুলতানা বলেন, ‘কিশোরী মেয়েরা যদি প্রেসক্রিপশন ছাড়া পিল খায়,
অবশ্যই সেটা ঠিক নয়। আমরা যখন ওরাল পিল কাউকে দিই,
তখন তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রাখি। পিলের জন্য সে যোগ্য কি না
পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে তারপর তা খাওয়ার পরামর্শ দিই।
‘এখন কেউ যদি শুধু পিরিয়ড বন্ধ করার জন্য পিল খায় সেটা ঠিক নয়। কারণ
ওষুধের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
‘পিল খেয়ে এক মাস পিরিয়ড বন্ধ করা যেতে পারে। তবে দিনের পর দিন
পিরিয়ড বন্ধ রাখলে তার ব্রেইনে যেখান থেকে স্টিমুলাস আসে,
সেখানে নেগেটিভ ইফেক্ট হবে। একটা সময়ে তার নিয়মিত পিরিয়ড হবে না।
যা তাকে বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
কৈখালী ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারী মনিরা জামিলা বলেন,
‘এসব এলাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে বড়ি সবচেয়ে
জনপ্রিয়। সাধারণত বিবাহিত মেয়েদেরই বড়ি সরবারহ করি। তবে অনেক সময় বোন,
ভাবি, মা, চাচিদের জন্য কিশোরী মেয়েরা এই বড়ি সংগ্রহ করতে আসে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার এবং আইসিডিডিআরবির চালানো ন্যাশনাল
হাইজিন বেসলাইন সমীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে,
বাংলাদেশে ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী এবং কিশোরী তাদের মাসিকের সময়
পুরোনো কাপড়ের টুকরা ব্যবহার করেন।
ওই সার্ভেতে বলা হয়, দেশের
৪০ শতাংশ মেয়ে মাসিক ঋতুচক্রের সময় তিন দিন স্কুলে যায় না। এই ৪০ শতাংশের তিন
ভাগের এক ভাগ মেয়ে জানিয়েছে, স্কুলে
না যাওয়ার কারণে তাদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১৯ সালে প্রকাশিত অন্য একটি গবেষণায় বলা হয়,
দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার নারী ও কিশোরীরা মাসিকের সময় ব্যবহৃত
কাপড় লবণ পানিতে ধুয়ে আবারও সেটি ব্যবহার করেন। এভাবে বারবার লোনা পানিতে মাসিকের
কাপড় ধোয়া এবং সেই কাপড়ের ঘন ঘন ব্যবহার মেয়েদেরকে স্বাস্থ্যগত হুমকির মধ্যে
ফেলে। এগুলো কখনও কখনও চর্মরোগ এবং অন্যান্য যৌন সমস্যার জন্যও দায়ী।