মোটা চাল কেটে ‘মিনিকেট’ নামে ব্র্যান্ডিং করে ‘বড় প্রতারণা’র ছকে শহুরে মানুষের পকেট কাটা বন্ধ হচ্ছেই না। বারবার বিষয়টি নিয়ে কথা উঠলেও তা আমলে নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় শিগগিরই মিনিকেট চালের বাজারজাত বন্ধে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, এই চালের যেহেতু কোনো ভ্যারাইটি নেই, তাই আমরা সুপারশপ এবং রাইস মিলগুলোতে চিঠি দেব, যাতে এর বাজারজাত বন্ধ করা হয়। এটা বন্ধের জন্য সময় দেওয়া হবে। পরবর্তীতে আমরা অভিযান শুরু করব।
এক সময় উচ্চ ফলনশীল চিকন জাতের চালের জন্য মিনি প্যাকেটে করে বীজ সংগ্রহ করা হতো। সেই মিনি প্যাক থেকে এসেছে মিনিকেট। এখন সরকারের সায় নিয়ে এই চাল বাজার থেকে তুলে নিতে মিলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অধিদপ্তর।
সম্প্রতি সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিত্যপণ্যের উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও সুপার শপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্যাকেটজাত নিত্যপণ্যের মূল্য বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সব কিছু ছাপিয়ে মিনিকেট প্রসঙ্গটিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
একই দিন সচিবালয়ে আলাদা অনুষ্ঠানে ‘মিনিকেট’ নামে বাজারে প্রচলিত চালের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বাজার থেকে মিনিকেট চাল সরাতে সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ তারা পেয়ে গেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যারা ধান গবেষণায় যুক্ত, তারা জানিয়েছেন, মিনিকেট নামে চালের কোনো ভ্যারাইটি নেই। এটি একটি প্রতারণার ছক। এর ব্র্যান্ডিং করে মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে মিনিকেট চালের বাজারজাতকরণ বন্ধের জন্য ভোক্তা অধিকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবালয়ে “মিনিকেটের উৎপত্তি সম্পর্কে মানুষ যদি জানত, তাহলে মিনিকেট চাল খুঁজতে যেতে না। এক সময় আমরা উচ্চ ফলনশীল চিকন জাতের চালের জন্য মিনি প্যাকেটে করে কিছু বীজ সংগ্রহ করি। সেই মিনি প্যাক থেকে এসেছে মিনিকেট। এই হলো মিনিকেটের ইতিহাস। এটা অনেকবার বলা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার মিনেকেট নামটা উচ্ছেদ করার জন্য মোবাইল কোর্ট চালাতে পারে। আমরা একটা আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য দিয়েছি। খসড়া অনুমোদন পেয়েছে। এখন সেটা ভেটিংয়ের অপেক্ষায় আছে। ব্র্যান্ড যেটাই হোক, বস্তার গায়ে অবশ্যই ধানের জাতের কথা উল্লেখ করতে হবে।
এদিকে, সুপার শপে খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন পণ্য মোড়কীকরণ করে বিক্রি করতে গিয়ে দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও ভোক্তা অধিকারের ভাষ্য। তবে মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া সুপার শপ প্রতিনিধিরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, খোলা বাজারে যে চাল ১২০ টাকা বিক্রি হয়, সেটা কিন্তু তিন হাতের লভ্যাংশ দেওয়ার পরই বিক্রি হয়। আপনারা এর সঙ্গে হয়তো একটা প্যাকেট যোগ করেছেন। সেজন্য খরচ হয়তো ৫ টাকা বাড়তে পারে। কিন্তু সেজন্য আপনি ৩০ টাকা লাভ করে বসতে পারেন না। তাছাড়া আজকের বাজারের সঙ্গে মেলালে আপনার হবে না। কারণ আপনি ধানটা কবে কিনে রেখেছিলেন, সেটা স্মরণ করেন। দিনাজপুরে ধানের মজুদের একটা ঘটনা ঘটেছে। সেটা নিয়ে আমি বলতে চাই না। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এভাবে মজুদ করে, আর বাজারের সঙ্গে তুলনা দেয়, তাহলে তো হবে না।