নিজস্ব প্রতিনিধি.রাজবাড়ী ঃ
রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় পিতার মৃত্যুর চার মাস পর ছেলে কর্তৃক জাল হেবা দলিল সৃজনের অভিযোগে ছেলে মোঃ রহিম মিয়া ও দলিল লেখক গনেশ চন্দ্র বৈদ্যকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
রবিবার ( ২৪ জুলাই ) রাজবাড়ীর ১ নং আমলী আদালতে অভিযুক্ত মোঃ রহিম মিয়া ও দলিল লেখক গণেশ চন্দ্র বৈদ্য উপস্থিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় জামিনের আবেদন জানালে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুমন হোসেন তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীর ১ নং আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন পাশর্^বর্তী গোপিনাথদিয়া এলাকার বাসিন্দা বাসটার্মিনাল সংলগ্ন ম্যাকানিক্যাল গ্যারেজ ব্যবসায়ী মোঃ হারুন অর রশীদ।
জানাগেছে, মামলা দায়েরের পর আদালত গত ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি রাজবাড়ীর উপ-পুলিশ পরিদর্শক কাজী শাওন দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। সিআইডি রাজবাড়ীর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ মোজাম্মেল হক গত ৭ মার্চ প্রতিবেদন আদালতে অগ্রগামী করেন।
মামলার আরজীতে উল্লেখ করা হয়, রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন শ্রীপুর মৌজার মধ্যে এসএ-৪১৫ যাহা প্রস্তাবিত ৪১৫/৩ নং খতিয়ানভূক্ত , আরএস-৭৯০ নং দাগে ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে ৮৫৪২, ২০১০ সালের ৯ মে তারিখে ৩৭৩৪, ২০১০ সালের ১২ জুলাই তারিখে ৫৭১৫, ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তারিখে ২৭৯৩, ২০১১ সালের ২৬ অক্টোবর তারিখে ৮১৪২, ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রæয়ারী তারিখে ১৭১৫ এবং ২০১৩ সালের ৫ মার্চ তারিখে ১৮০১ নং কবলা দলিল মূলে ১২.২৬ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে সরেজমিন ভোগদখলদার হন। পরবর্তীতে বাদী হারুন অর রশীদ নাম পত্তন পূর্বক প্রস্তাবিত ৪১৫/৩ নং খতিয়ান প্রাপ্ত হয়ে উক্ত জমি হতে ৯.০৭ শতাংশ জমি সোনালী ব্যাংক লিঃ রাজবাড়ী উপজেলা কমপ্লেক্স শাখায় মর্টগেজ প্রদান করেন।
কিন্তু গত ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ইং তারিখে রাজবাড়ী সদর সাব-রেজিষ্টার অফিস হতে রেজিষ্ট্রিকৃত ২২২৪ নং হেবা ঘোষণা দলিল, মৌজা শ্রীপুর, জেএল নং-এস.এ ৯৭, বিএস-১৫৬ নং, খতিয়ান নম্বর-এসএ ৪১৫, বিএস ডিপি ৪১২ নং খতিয়ানভূক্ত , দাগ নম্বর এসএ-৭৯১, বিএস-১৬২৯ নং দাগে জমি ১৩.৮৭ শতাংশ জমির কাত ০৫.৫০ শতাংশ জমি আসামী মোঃ রহিম মিয়া হেবা দলিলমূলে সৃজন করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজবাড়ী সদর সাব রেজিস্টার অফিসে সংরক্ষিত ভলিউম যাচাই করে উল্লেখিত হেবা ঘোষণা দলিল (নং-২২২৪ তারিখ-১৩/০৩/২০১৮) সম্পাদনার বিষয়ে নিশ্চিত হন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজবাড়ী পৌরসভায় মৃত আঃ আজিজ মিয়ার মৃত্যু সনদ যাচাইকালে পৌরসভার প্যানেল মেয়র নির্মল কৃষ্ণ চক্রবর্তী শেখর একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন। উক্ত প্রত্যয়ন পত্রে রাজবাড়ী পৌরসভার গত ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর ইং তারিখে ২৪ নং বহির ৪৮৯৭ নং ক্রমিকের মৃত্যু নিবন্ধনে আঃ আজিজ মিয়ার মৃত্যুর তারিখ ০৫/১১/২০১৭ উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পুত্র রহিম মিয়া কর্তৃক হেবা দলিল সম্পাদিত হয়েছে ১৩/০৩/২০১৮ ইং তারিখে। এছাড়া উক্ত দলিলে উল্লেখিত স্বাক্ষী চরলক্ষীপুর এলাকার জনৈক আলমগীর হোসেন ও ভবানীপুর এলাকার নুর হোসেন এর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে সমনের আদেশ দেন। ধার্য্য তারিখে আসামীদ্বয় আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কায়ছুন্নাহার সুরমা গত ২২/০৫/২০২২ ইং তারিখে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার আদেশ দেন।
অভিযোগ রয়েছে, আসামীদ্বয় সুকৌশলে রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে মৃত আঃ আজিজ মিয়ার একটি জাল মৃত্যু সনদ প্রস্তত করেন। ওই জাল সনদ আদালতে উপস্থাপন করে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে আসামীদ্বয় জামিন হাসিল করেন। ওইদিন বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পরবর্তী ধার্য তারিখে হাসপাতালের মৃত্যু রেজিষ্টার তলব করেন।
রবিবার (২৪ জুলাই) আসামীদ্বয় রাজবাড়ীর ১ নং আমলী আদালতে পুনরায় জামিনের আবেদন জানালে আদালত হাসপাতালের রেজিস্টার পর্যবেক্ষণ করেন। একই সময় বাদীপক্ষের আইনজীবীগণ হাসপাতালের মৃত্যু রেজিস্টারের ১৭৬/১ নং ক্রমিকে জাল ও তঞ্চুকতার আশ্রয় নিয়ে ১১/৫/২০১৮ তারিখে আঃ আজিজ মিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন মর্মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে হাসপাতালে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেছেন। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শেষে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামীদ্বয়কে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।